Site icon Trickbd.com

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত। না দেখলে মিস করবেন

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। ইসলামে এটাকে কর্জে হাসানা নামে অভিহিত করা হয়। মহান আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় ও পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে একটি কল্যাণকর, কার্যকরী ব্যবস্থা হল কর্জে হাসানা। অভাবীদের সাময়িক অভাব মোচন ছাড়াও গরীব, পুঁজি-হীন মানুষের কৃষি, বাণিজ্যিক কারবারের জন্য একটি কার্যকরী উপায়।

অর্থাৎ আল্লাহ্‌ পরকালে প্রতিদান করবেন যা ইহকালের মুনাফার তুলনায় অনেক বেশী। আর তার জন্য সম্মানিত পারিশ্রমিকও রয়েছে। এরকম অসংখ্য ফজিলতের কথা কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

যাকাতের ৭ম অংশ নির্দিষ্ট হয়েছে খণগ্রস্ত লোকদের সাহায্যার্থে। কুরআন এবং হাদিসে ঋণ দেয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করার পাশাপাশি এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। আজকের এই লেখায় এ সম্পর্কে কিছু অংশ তুলে ধরা হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ

কর্জে হাসানা কি

বিনা সুদে ঋণদানকে কুরআনী পরিভাষায় বলা হয়েছে কর্জে হাসানা। সাধারণত কর্জে হাসানা বলা হয় কোন বিত্তবান কর্তৃক কারও প্রয়োজন মেটানো ও তাকে উপকৃত করার মহৎ উদ্দেশ্যে বিনা লাভে ঋণ দেয়া।

এ বিষয়টি নৈতিক মূল্যবোধের বিষয় হওয়ায় ঋণদাতাকে ঋণগ্রহীতার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাতে প্রতিদান নেবার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কেননা, ঋণ গ্রহীতা হয়ত এজন্য ঋণ দাতাকে দাওয়াত করেছে কিংবা উপঢৌকন দিয়েছে যে, তাতে ঋণ দাতা তাড়াতাড়ি তার ঋণ পরিশোধ করবার জন্য চাপ দেবে না। এরূপ অবস্থার এটাও এক ধরনের সুদ হবে ।

অবশ্য আগে থেকে যদি উভয়ের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্ক থাকে তবে তা আলাদা কথা । এ ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার পক্ষ থেকে অসাধুতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার বিরাট আশংকা রয়েছে। এজন্য ইসলামে এ ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা’আলার পুরস্কার ও সম্মানের উল্লেখ করে শুধু উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

ঋণগ্রস্ত লোক সাধারণত দু’প্রকার। যথা-

প্রথমত, যারা নিজেদের নিত্য-নৈমিত্তিক প্রয়োজন পূরণ করার ব্যাপারে ঋণ গ্রহণ করে। এই ঋণগ্রস্ত লোক যদি নিজে ধনী না হয়, তবে তাদেরকে যাকাতের এ অংশ হতে সাহায্য করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, যেসব লোক মুসলমানদের সামষ্টিক কল্যাণে ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঋণ গ্রহণ করে, তারা ধনী হোক বা সম্পদ-হীন হোক ঋণ শোধ করার পরিমাণ অর্থ যাকাতের এ অংশ হতে তাদেরকে দেয়া যেতে পারে।

ঋণ প্রদানের গুরুত্ব ও ফজিলত

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে বিনা সুদে ঋণ ব্যবস্থা বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। যা ছিল বায়তুলমালের একটি বিভাগ ও একটি স্থায়ী বিধান। ইসলাম যেরূপ ব্যক্তিগতভাবে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার জন্য ইসলামী জনতাকে উৎসাহিত করেছে সেই সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের উপরও অনুরূপ দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে।

জমির মালিক যদি দারিদ্র্যের কারণে তার ভূমি চাষ করতে অক্ষম হয়, তাহলে প্রয়োজনমত তাকে বায়তুলমাল হতে বিনা সুদে ঋণ দিতে হবে। ইসলামী অর্থনীতি সুদকে হারাম ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয় নি। নাগরিকগণ যাতে বিনা সুদে প্রয়োজন পরিমাণ ঋণ লাভ করতে পারে তার সুষ্ঠ ও স্থায়ী ব্যবস্থাও করেছে। ইসলাম একদিকে যেমন সুদকে চিরতরে হারাম করে দিয়েছে, অপরদিকে যাকাতের অর্থ থেকে অভাবী লোকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

সুদের শর্তে ঋণ গ্রহণের কোন বাধ্যবাধকতাই অবশিষ্ট থাকতে দেয় নি। পারস্পরিক সহযোগিতায় দানের মাধ্যমে কর্জে হাসানা বাস্তবায়নের মন-মানসিকতা গড়ে তোলা প্রত্যেক মুমিনের কাজ। মহান আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করা অনেক উত্তম কাজ ‘ সূরা-বাকারায় মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন

(সূরা বাকারা. ২:২৭৬)

এ ঋণ মূলত আল্লাহকেই দেয়া হয় বলে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন:

দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহু গুণ বেশী এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার ।

(সূরা হাদীদ, ৫৭: ১৮)

অতএব, কোন লোক আল্লাহ্‌কে উত্তম ঋণ দিতে প্রস্তুত থাকলে এবং ঋণ দিলে, তিনি তাকে বহুগুণ বৃদ্ধিসহ ফিরিয়ে দেবেন, আসলে আল্লাহই সংকীর্ণ করেন এবং প্রশস্ত করেন। তারই (আল্লাহর) দিকে তো সকলের প্রত্যাবর্তন ।

বিপন্ন মানবতা: মুক্তির উপায় কি?

ঋণ দ্রুত পরিশোধ করার ব্যাপারে ইসলাম

উল্লেখ যে, যথার্থতার প্রশ্নে, রসূলুল্লাহ্‌ (সা) অপ্রয়োজনীয় ঋণ গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

রসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন:

সাম্য থাকা শর্তেও অন্যের পাওনা পরিশোধে বিলম্ব করা অন্যায়।

(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহুর নবী (সা) সব সময় এই দোয়া পড়তেন,

হে আল্লাহ্‌! আমাকে পাপ ও ঋণ থেকে মুক্ত রেখো। জনৈক ব্যক্তি রসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে নবী (সা), আপনি এতো বেশিবার ঋণ থেকে মুক্তি চাচ্ছেন কেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়, তখন সে মিথ্যা কথা বলে এবং ওয়াদা নষ্ট করে।

(বুখারী)

বস্তুত ইসলাম মানুষের ন্যুনতম চাহিদা পূরণের জন্য ভোগ্য খগের প্রয়োজনীয়তা

স্বীকার করে। চুক্তি-নীতি সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও। গ্রহীতার উচিত সকল বিষয়

স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা।

(সূরা বাকারা, ২:২৮২)

রসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন,

যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করা অবশ্য কর্তব্য।

(আবু দাউদ)

রসুলুল্লাহ (সা) আরও বলেছেন,

যে ব্যক্তি কোন কিছু কারও কাছ থেকে গ্রহণ করেছে, আদায় না করা পর্যন্ত তার বোঝা সে ব্যক্তির উপর চেপে থাকে।

(তিরমিযী)

মোটকথা, ‘কর্জে হাসানা’ প্রদানকারীর সাধুতা-অসাধুতার প্রতি লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করা তার জন্য অপরিহার্য। মূলত কর্জ গ্রহণকারীর চারিত্রিক বলিষ্ঠতার উপরই এ ব্যবস্থাটির প্রচলন নির্ভর করে।

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।

সূত্র: islamientertainment.com