Site icon Trickbd.com

কুরবানীর পশুর গোশত বণ্টন করার পদ্ধতি; খাওয়ার ক্ষেত্রে ও সদকা করার ক্ষেত্রে

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

কুরবানীর পশুর গোশত বণ্টন করার পদ্ধতি; খাওয়ার ক্ষেত্রে ও সদকা করার ক্ষেত্রে

প্রশ্ন

আমি আশা করব যে, আপনি এমন কোন হাদিস উল্লেখ করবেন যে হাদিসটি কোরবানীর পশুর গোশত তিনভাগে বণ্টন করার শুদ্ধতাকে প্রমাণ করে।   

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসসমূহে কোরবানীর পশুর গোশ্‌ত সদকা করার নির্দেশ এসেছে; অনুরূপভাবে কোরবানীর পশুর গোশ্‌ত খাওয়া ও সংরক্ষণ করারও অনুমতি এসেছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় ঈদুল আযহার সময় বেদুঈনদের কিছু পরিবার দুর্বল হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা তিনদিনের পরিমাণ জমা রেখে অবশিষ্ট গোশত সদকা করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকেরা তো কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে পানপাত্র তৈরী করছে এবং এর চর্বি গলাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাতে কী হয়েছে? তারা বলল: আপনি তো তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেন: আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম। সুতরাং এখন তোমরা খাও ও সংরক্ষণ কর।[সহিহ মুসলিম (৩৬৪৩)] ইমাম নববী “শারহু মুসলিম”-এ বলেন: হাদিসের বাণী: “আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম” এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে যে বেদুঈন দল এসেছিল তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ। হাদিসের বাণী: আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম। এখন তোমরা খাও ও সংরক্ষণ কর” তিনদিনের অধিক সময় গোশ্‌ত সংরক্ষণ করার নিষেধাজ্ঞা বাতিল হওয়ার পক্ষে সরাসরি দলিল। এ হাদিসে কুরবানীর পশুর গোশ্‌ত সদকা করা ও খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। যদি কুরবানীটা নফল কুরবানী হয় তাহলে আমাদের মাযহাবের আলেমদের নিকট সঠিক হল: ন্যূনতম যতটুকু দিলে সদকা করেছে বলা সঠিক হবে ততটুকু সদকা করতে হবে; আর বেশির ভাগ অংশ দিয়ে সদকা করা মুস্তাহাব। তারা বলেন: পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ হল: এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ সদকা করা এবং এক তৃতীয়াংশ হাদিয়া দেওয়া। এ মাসয়ালায় অন্য একটি অভিমত হল: অর্ধেক খাওয়া ও অর্ধেক দান করে দেওয়া। এই মতভেদ হল: মুস্তাহাবের উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার ন্যূনতম পদ্ধতি। যদিও ন্যূনতম যতটুকু সদকা করলে সেটাকে সদকা করেছে বলা সঠিক হবে ততটুকু সদকা করাই যথেষ্ট; যেমনটি আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। আর কুরবানীর পশুর গোশ্‌ত খাওয়া মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। জমহুর আলেম হাদিসের নির্দেশ তোমরা খাও কে ব্যাখ্যা করেছেন মুস্তাহাব-অর্থে কিংবা বৈধতার অর্থে; বিশেষতঃ যেহেতু নির্দেশটি নিষেধাজ্ঞার পরে উদ্ধৃত হয়েছে।”[সমাপ্ত] ইমাম মালেক বলেন: খাওয়া, সদকা করা ও গরীবদেরকে কিংবা ধনীদেরকে গোশ্‌ত দেওয়ার নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নাই; কেউ চাইলে কাঁচা গোশ্‌ত দিতে পারেন কিংবা রান্নাকৃত গোশ্‌ত দিতে পারেন। শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ বলেন: অধিকাংশ সদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব। তারা বলেন: পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ হল: এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ দান করা ও এক তৃতীয়াংশ সদকা করে দেওয়া। তারা বলেন: অর্ধেক খাওয়াও জায়েয। সর্বাধিক শুদ্ধ অভিমত হল: কিছু পরিমাণ দান করা।”[নাইলুল আওতার (৫/১৪৫), আস্‌-সিরাজুল ওয়াহ্‌হাজ (৫৬৩)] ইমাম আহমাদ বলেন: আমাদের অভিমত হল আব্দুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস: “সে নিজে এক তৃতীয়াংশ খাবে, এক তৃতীয়াংশ খাওয়াবে (যে চায়); আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদেরকে দান করবে।” হাদিসটি আবু মুসা আল-ইসফাহানি “আল-ওয়াযায়িফ” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করার পর বলেন: এটি হাসান হাদিস এবং ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) এর অভিমত। সাহাবীদের মধ্যে অন্য কেউ এ দুইজনের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন মর্মে জানা যায় না।[আল-মুগনী (৮/৬৩২)]

কুরবানীর পশুর গোশ্‌ত কতটুকু দান করা ওয়াজিব— এ নিয়ে মতভেদের কারণ হল এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর বিভিন্নতা। কোন কোন হাদিসে যেমন বুরাইদা (রাঃ) এর হাদিসে নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশ্‌ত তিনদিনের বেশি সময় (খেতে) নিষেধ করেছিলাম; যাতে করে সামর্থ্যবান লোকেরা অস্বচ্ছল লোকদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা খেতে পার, খাওয়াতে পার এবং সংরক্ষণ করে রাখতে পার।”[হাদিসটি তিরমিযি তার সুনান গ্রন্থে (১৪৩০) বর্ণনা করার পর বলেন: এটি একটি হাসান সহিহ হাদিস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে যারা আলেম ও অপরাপর আলেমগণের এ হাদিসের উপর আমল রয়েছে।]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব