আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !
সুপ্রিয় পাঠক ও দ্বীনি ভাই ,
কেমন আছেন ? আমি রিফাত । আজ আপনাদের সাথে একটি সুন্দর ইসলামিক ঘটনা শেয়ার করতে চাই । হাদীসে এই ঘটনাটি পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে । আশা করি আপনারও অনেক ভালো লাগবে ।
…………………………………….
বনী হাশেম গোত্রে রোকানা নামে এক মুশরিক পালায়োন ছিল। সে খুব শক্তিশালী ও সাহসী ছিল। ওকে কেউ কোনো দিন পরাভূত করতে পারেনি। সে ইজম নামে এক জংগলে থাকতো । ওখানে ছাগল চর়াতো ।
একদা নবি করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একাকী সেই জংগল দিয়ে যাচ্ছিল। রোকানা তাঁকে দেখে সামনে এসে বললো, ” হে মুহাম্মাদ ! তুমিতো সেই ব্যক্তি, যে আমাদের দেবতা ‘লাত’ ও ‘উজ্জার’ কুৎসা রটনা কর এবং ঘৃনা কর এবং স্বীয় এক খোদার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। তোমার প্রতি যদি আমার সহানুভূতি না থাকতো , তাহলে আজ আমি তোমাকে মেরেই ফেলতাম । যাক আমার সাথে কুস্তি লড়তে এসো তুমি তোমার খোদাকে ডাক আর আমি আমার ‘লাত উজ্জাকে’ ডাকতেছি। দেখি তোমার খোদার কাছে কত শক্তি আছে। ”
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ডেকে বললেন , ” তুমি যদি সত্যি কুস্তি লড়তে চাও, তাহলে চল, আমি প্রস্তুত আছি।”
রোকানা এ জবাব শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। পরে ভীষণ অহংকারের সাথে কুস্তি লড়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেল । রাসুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম ধাক্কায় ওকে ফেলে দিলেন এবং ওর বুকের উপর বসে গেলেন । রোকানা জীবনে এই প্রথমবার ধরাশয়ী হয়ে বড় লজ্জিত ও আশ্চর্যাম্বিত হয়ে গেল ।
সে বললো, ” হে মুহাম্মাদ ! আমার বুক থেকে উঠে যাও। আমার লাত ও উজ্জাত আমার দিকে খেয়াল করেনি !!! আর একবার কুস্তি লড়ার সুযোগ দাও। ”
হুযূর ওর বুক থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। রোকানাও দ্বিতীয়বার কুস্তির জন্য দাঁড়ালো। এবারও রোকানাকে চোখের পলকে ফেলে দিলেন।
রোকানা বললো, ” হে মুহাম্মাদ! মনে হয় আজ আমার লাত ও উজ্জাত আমার উপর নারাজ। তোমার খোদা তোমাকে সাহায্য করতেছে। যাক চল, আর একবার লড়ে দেখি। এবার লাত ও উজ্জাত নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করবে। ”
হুযূর পাক ( ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় বারও কুস্তি লড়ার জন্য রাজি হয়ে গেলেন এবং তৃতীয় বারও ওকে পরাভূত করলেন। এবার রোকানা লজ্জিত হলো এবং বললো, ” হে মুহাম্মাদ ! আমার ছাগলগুলোর মধ্যে থেকে যতটি চাও নিয়ে যাও। ”
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বললেন,” রোকানা আমার তোমার সম্পদের প্রয়োজন নেই। তবে মুসলমান হয়ে যাও, যাতে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পার। ”
সে বললো, ” হে মুহাম্মাদ! মুসলমানতো হয়ে যেতে পারি কিন্ত মনে সংকোচবোধ হচ্ছে মদীনা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মহিলারা ও শিশুরা বলবে – যে এত বড় পালোয়ান পরাজিত হলো এবং মুসলমান হয়ে গেল ! ”
এদিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর তালাশে বের হলেন এবং হুযূর ইজমের জংগলের দিকে তাশরীফ নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে খুবই চিন্তিত ছিলেন। কেননা ওদিকে রোকানা পালোয়ান থাকে । সে হয়তো হুযূরকে কষ্ট দিতে পারে। যাই হোক হুযূরকে ফিরে আসতে দেখে উভয়ে হুযূরের খেদমতে হজির হলেন এবং বললেন , ” ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি ওদিকে কেন গেলেন, আপনি কি জানেন না যে ওদিকে ইসলামের পরম শত্রু রোকানা থাকে?”
হুযূর এটা শুনে মুচকি হেসে বললেন, ” যখন আমার আল্লাহ সব সময় আমার সাথে আছে, তখন রোকানাকে ভয় করার কি আছে? ”
রোকানার বাহাদুরির কাহিনী শুন-এ বলে তিনি সমস্ত কাহিনী শুনালেন। আবুবকর সিদ্দিক ( রাঃ) ও ওমরে ফারুক (রাঃ) এ ঘটনা শুনে খুবই খুশী হলেন এবং আরয করলেন, ” হুযূর, সে এমন পালোয়ান ছিল যে আজ পর্যন্ত ওকে কেউ ফেলতে পারেনি। ওকে ফেলাটা একমাত্র আল্লাহর রসূলের কাজ।
.
আমাদের হুযূর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক ফযীলত ও কামালিয়াতের ভান্ডার। দুনিয়ার কোন শক্তি হুযূরের সামনে অটল থাকতে পারেনা। বিরোধীতাকারীরাও হুযূরের ফযীলত ও কামালিয়াত সম্পর্কে জ্ঞাত কিন্ত দুনিয়াবী লজ্জার কারনে স্বীকার করে না।
_তথ্যসূত্রঃ
[আবু দাউদ ২০ পৃঃ ২ জিঃ]
” যখন প্রশ্ন ওঠে ধর্ম ও খোদার মর্যাদার ,
তখন ভেবো না কিছু , উঠে দাঁড়াও শক্ত মুষ্টি নিয়ে ,
এ জীবন হবে বৃথা যদি-
দ্বীনের পথে জীবনটা না দেই তবে ! ”
-রিফাত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! যিনি সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হতো না । যিনি শাহাদাত বরণের আগে ও পরে কখনো নিজের চিন্তা করেননি বরং উম্মতের চিন্তায় পাগল হয়ে যেতেন ! যার জন্যে সবকিছুর চেয়ে আমাদের মর্যাদা বেশি !
আমরা সেই রাসুলের উম্মাত !
কি করতে পেরেছি তাঁর জন্য !
কয়জন মানি সুন্নাত !
কয়জন প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় ,
রাসুলের মর্যাদায় বাঁধে !
আমরা জানি , যে , যাই বলুক , যার্রা পরিমাণ মর্যাদা কমবেনা তাঁর ( রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তবু আমরা কেন চুপ থাকবো , তাঁকে অপমান করার চেষ্টা করলে !
সবাই একবার রাসুলের নামে দুরূদ প্রেরন করি
ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম !