Site icon Trickbd.com

মৃত সাগর আর সমকামিতার মধ্যে সম্পর্ক কি ? আসুন জেনে নেওয়া যাক মৃত সাগরের রহস্য ! আমারাও কি আগামীতে এমন ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি ?

Unnamed

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !

সুপ্রিয় পাঠক , কেমন আছেন । আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন ।

ডেড সি বা মৃত সাগরের নাম শুনেছেন ? সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ যার সর্বোচ্চ গভীরতা ৩০৪ মিটার । মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত এই মৃত সাগরের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে জর্ডান এবং পশ্চিম সীমান্তে যথাক্রমে ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন। এর পৃষ্ঠভাগ ও তীরদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২৯ মিটার নিচে অবস্থিত। তাই একে ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নিম্নভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়।

 

 

 

এই সাগর বা হৃদ যায় বলেন না কেন এখানকার পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এ পানির সাথে বিভিন্ন উপাদানের( ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড) মিশ্রনের কারণে ডেড সির পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশি। আর এই উচ্চ প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনো কিছু ডোবে না।

 

এখন বলি এটি বিশাল লবণাক্ত জলভূমিকে কেন সবাই মৃত সাগর বলে, এর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৩৪.২%, যা সমুদ্রের পানির চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত। এই অত্যধিক লবণাক্ততার কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে জলজ প্রাণীরা বসবাস ও জীবনধারণ করতে পারে না, তাই এই সাগরে কোনো প্রাণের বাস নাই বললেই চলে। এ কারণে এই জলভূমির নাম মৃতসাগর।

 

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ীঃ
সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে সডম ও গোমাররাহ নামের লোকালয় মহান আল্লাহর হুকুমে বিশাল এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যায় ।

ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগের । ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই স্থানটি বর্তমানে মৃত সাগর নামে পরিচিত । আল্লাহর নবী হজরত লুত (আ.)-এর বারবার সাবধান বাণী দেওয়া সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি ! পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌন ক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো ! (নাওযুবিল্লাহ !)
কোরআনুল কারিমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনা বিধৃত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আল কুরানের মধ্যে এরশাদ করেছেন,

” আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম । তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘ তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি । তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ “
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)

ফলে শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাআলা এ জনপদের চার লাখ মানুষকে বাস্তুভিটাসহ বিধ্বস্ত করে দেন !
বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী স্কলার মুফতি তাকি উসমানি মৃত সাগর পরিদর্শনের পর লেখেন ,
” আমেরিকার বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলদেশে খননকার্য চালিয়ে মানুষের ব্যবহার্য পাথরের ঘটি, বাটি, চামচ উদ্ধার করেন । বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক প্রতিদিন মৃত সাগর দেখার জন্য আসে এবং শিক্ষা গ্রহণ না করে বিনোদন ও ফুর্তিতে মেতে ওঠে !’
(মুফতি তাকি উসমানি-
জাহানে দিদাহ-
মৃত সাগর অধ্যায়)

অবৈধ যৌনমিলন, অনৈতিক যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার মতো অমানবিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা অনেক বার মানবজাতিকে হুঁশিয়ার করেছেন !!!
মানবগোষ্ঠীকে অশ্লীলতা , ব্যভিচার ও সমকামিতা থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন ।
মহানবী (সা.) কিশোর-বালকদের চেহারার দিকে কুদৃষ্টিতে না দেখার নির্দেশ দিয়েছেন । কারণ তাদের চেহারায় বেহেশতের হুরের দীপ্তি আছে ।
তিনি বলেন, ” আমার উম্মতের ব্যাপারে যেটা সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো লুত সম্প্রদায়ের অনুরূপ পাপাচার । আমার উম্মতের কিছু লোক লুত জাতির অপকর্মে লিপ্ত হবে । যখন এরূপ হতে দেখবে তখন তাদের ওপরও অনুরূপ আজাব অবতরণের অপেক্ষা কোরো ।”

লুত সম্প্রদায়ের মতো যারা সমকামিতায় লিপ্ত হবে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ । নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, জিনা, ব্যভিচার, সমকামিতা ও মাদক গ্রহণের মতো ঘৃণিত ও অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও না যাওয়ার জন্য ইসলামের রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি ।
পাপাচার শুধু নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং যেসব বিষয় ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ করে, তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ইসলাম ধর্মে এগুলো গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

অপরাধ যেমন ঘৃণ্য, শাস্তিও তদ্রূপ কঠিন ও কঠোর ।
(তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআনঃ খণ্ড-৪,
পৃষ্ঠা ৮০৬; মাওলানা হাকিম আখতার (রহ.),
রুহ কি বিমারিয়াঁ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৯)

প্রিয় দ্বীনি ভাই আশা করি আপনি উপরের সবকিছুই সুন্দর করে পড়েছেন । খেয়াল করে দেখুন বর্তমানেও সমাজে কিন্তু এরকমই অবস্থা ! যেটির ফলাফল অনেক ভয়ংকর !

আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে , শেষ নবীর উম্মত হওয়ায় সাথে সাথে আমাদের এরূপ ভয়াবহ পরিণতির স্বীকার হতে হচ্ছে না । অন্যথায় আমরা যদি সেই যুগের মানুষ হতাম তাহলে তার চেয়ে কত বড় প্রলয় ও আজাবের সম্মুখীন হতাম !! ভেবে দেখুন আমরা কত পাপী ! আর আল্লাহর গজব যখন আসবে তখন কয়েকজন বড় পাপীর সাথে সাথে আমাদেরকেও সেই গজবের ভেতর পড়তে হবে । সেই পিঁপড়ার মতো । মূসা (আঃ) ও পিঁপড়ার ঘটনাটি নিশ্চয় আপনি জানেন ।
সুপ্রিয় পাঠক ,  বিপদ থেকে আমরা বার বার বেঁচে যাচ্ছি , শেষ নবীর উম্মত বলে ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়ার বরকতে । কিন্তু আমরা এত নিকৃষ্ট কিভাবে হতে পারি ।

সবার মন মানসিকতা যদি এমন হতো যে –

আমি নিজে অন্যায় করবো না ।
এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না , অন্যায় হতে দেব না ।
তাহলে ভাবুন সমাজটা কত সুন্দর হতো !
এভাবে সমাজে ধর্ষণ,অন্যায় বাড়তো না ।

মানুষ রূপে জানোয়ারদের জন্য সমাজটা যত ধ্বংস হবে , তার থেকে বেশি ধ্বংস হবে- যারা সেসব জানোয়ারদের প্রশ্রয় দেয় তাদের জন্য ।
দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে আমাদের । সুন্দর মন মানসিকতার অধিকারী হতে হবে ।
লেখায় কোনো ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।
Trickbd এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ ।
আল্লাহাফেজ ।