Site icon Trickbd.com

আযানের সময় মহিলারা মাথায় কাপড় না টানলে কি হয়। সকল মুসলমানের জানা উচিত

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আযানের সময় মহিলারা মাথায় কাপড় না টানলে কি হয়

আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকেই আছেন মাথায় কাপড় দেন না আবার আযান হলে মাথায় কাপড় দেন।আযান শেষ হলে মাথায় কাপড় নামিয়ে ফেলেন। তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বলেন : আযান সময় মাথায় কাপড় না দিলে শয়তান চুলে ফাকে এসে আশ্রয় নেয়। এই কথা আসলে কতটুকু সত্য? এসম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য জানাতে আজকে আমাদের এই পোস্ট আপনার জন্য।

হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন → নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।( তিরমিজি ১১৭৩)

পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন → তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে ( বায়হাকী ১৩২৫৬)

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন → তোমারা তোমাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রর্দশন করো না ( সূরা আহযাব ৩৩)

আল্লামা ইবনে কাসীর ( রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যার বলেন → নারীর প্রকৃত অবস্থানক্ষেত্রে হচ্ছে তার গৃহ। নারী প্রয়োজনে বাহিরে যেতে পারবে কিন্তু প্রয়োজন ব্যতীত অযথা গৃহের বাইরে যাবে না বরং গৃহেই অবস্থান করবে (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৬/৪০৯)

যাইহোক এ কথাটি সত্যি, যে আমাদের এই উপমহাদেশে বিশেষ করে আমাদের এই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এই উপমহাদেশে দেখা যায় অনেক বোনেরাই সচারাচর মাথায় কাপড় দেন না বা হিজাব ব্যবহার করেন না, অনেক মুসলিম বোন পর্দাও করেন না।

কিন্তু যখনই আযান দেওয়া হয় সাথে সাথে মাথায় কাপড় টেনে দেন এবং হিজাব ব্যবহার করেন। এবং এই ব্যাখ্যায তারা বলেন যে, এই সময় যদি মাথায় কাপড় না দেওয়া হয় তাহলে শয়তান মাথায় চুলের ফাঁকে আশ্রয় নিতে পারে।

এটি আসলে কতটা ইসলাম সিদ্ধ এবং কোরআন হাদিসের উপরে ভিত্তি বহুল? এ বিষয় চলুন জেনে নিই।

শুরুতে আপনাদের সূরা আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন → তাঁরা যেন তাদের জ্বিলাবাবের কিউদাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।

অর্থাৎ নারীরা মাথা ঢেকে রাখা এবং মাথায় কাপড় দেওয়ার ব্যাপার নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন → তারা যখনই লোকালয়ে আসে, তখন যেন তারা তাদের চাদরের কিয়দাংশ মাথায় উপরে টেনে দেয়। এ আয়াতে “জ্বালাবিব” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা জ্বিলবাব শব্দের বহুবচন।

আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্হঃ লিসানুল আরাবের ১/২৭৩ নম্বর পৃষ্ঠার রয়েছে জ্বিলবাব এই চাদরকে বলা হয় যা নারীরা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। তাফসির বিদদের বক্তব্যতেও থেকে জানা যায় জ্বিলবাব এমন কাপড়কে বলা হয় যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের শরীর ঢেকে রাখেন। আর জ্বিলবাব অর্থ বড় চাদর যা মাথাসহ মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করে ফেলে। ( তাফসিরে কুরতুবি ১৪/২৪৩)

আমাদের দেশে এ চাদর আপনি খুব কম ব্যবহার পাবেন। কেননা সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে আরব এবং এই উপমহাদেশে, দু ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু ইসলামি সংস্কৃতি বলে → আপনি যে পোশাকই পরেন না কেন! তা যেন আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর তথা আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া সংবিধান পরিপূর্ণ রূপে পালন হয়।

আবার আমাদের নারীরা আযানের সময় যেভাবে মাথা ঢেকে নেন, এটা মূলত আমাদের সাংস্কৃতি ঐতিহ্য। যদি কোনো নারীর বাসা বাড়িতে অসর্তকতা অবস্থায় মাথার কাপড় না থাকে, তাহলে আযানের সময় সে যদি সর্তক হয় এবং মাথায় কাপড় টেনে নেয় তাহলে এটা ঈমান ও আল্লাহ ভীতির পরিচায়ক।

কেননা আযান আল্লাহ তায়ালা বড়ত্ব ও মহত্ত্ব সংবলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি। আযান হলো : ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ তাওহিদের প্রতীক। পবিত্র কোরআনে এসেছে → কেউ আল্লাহর প্রতীকেন সম্মান প্রদর্শন করলে সেটা তো তার হৃদয়ের খোদা ভীতি প্রসূত। ( সূরা হজ্ আয়াত নম্বর ২৩)

তাহলে তো বুঝলাম, যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথায় কাপড় টেনে দেওয়া ঈমানদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ আকবার ধ্বনি শুনে যদি মাথায় কাপড় টানা হয় সেটি সম্মান প্রদর্শনের চুড়ান্ত পর্যায়।কিন্তু এখন যদি কোনো বোন মনে করেন যে এ কাজটি আমাকে করতেই হবে,এটি আমার জন্য ফরজ। না করলে শয়তান আমার চুলের ফাঁকে এসে আশ্রয় নিবে তাহলে বিষয়টি অন্যদিকে দাঁড়াবে।

একথাটি কোনোভাবেই সত্য নয় যে,শয়তান চুলের ফাঁকে আশ্রয় নেয় যদি আযানের সময় মাথায় কাপড় না টানা হয় । সত্য হচ্ছে শয়তান সব অবস্থায় মানুষের কাছে প্রশ্রয় নিতে পারে। আযানের সময় ঢুকতে পারে, আযানের আগে পরেও ঢুকতে পারে আর আযানের আগে ও পরে ঢোকার সম্ভাবনা তো বেশি। এমনও তো হতে পারে, শয়তান আযানের সময় না ঢুকে অন্য সময়ে আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে।

কারণ আযানের সময় শয়তান হুশ থাকে না, শয়তান দৌড়াতেই থাকে। এজন্য মাথায় সবসময় কাপড় দেবেন। তবে বিশেষ করে মুসলিম বোনের জন্য ঘরের বাহিরের বের হলে মাথা ঢেকে রাখা ইসলামের বিধান এবং এটা সবসময়ের জন্য।

তাই সেই ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুসরণ করাটাই উচিত। তাই চুড়ান্তভাবে আমরা বলতে পারি, আযানের সময় মাথায় কাপড় না দিলে মাথায় চুলের ফাঁকে শয়তান এসে প্রবেশ করবে, ইবলিশ বাসা বাঁধবে এই তথ্যটি একেবারেই ভ্রান্ত।

তবে একথা মনে রাখতে হবে নারীরা সবসময় ঘরের বাহিরে ঢিলেঢালা হিজাব পরিধান করবেন। কেননা, (১) হিজাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে কুদৃষ্টি, ইভটিজিং ও মর্যাদা হানিকর আচরন থেকে নারীকে রক্ষা করা। কাজেই হিজাব নারীর জন্য কিছুটা সীমাবদ্ধতা তৈরি করলেও এটি তার নিরাপত্তা নিশিত করে।

(২) আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের নির্দেশ হচ্ছে ইসলামি সমাজে সবার পবিত্রতা ও সম্মান রক্ষা করা। এই নির্দেশ পালনের জন্যই নারীকে ঘর থেকে বাইরে বের হলে উপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে। অর্থাৎ ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।

(৩) ইসলাম নারীকে ঘরের মধ্যে পুরোপুরি আটকে থাকতে বলেনি। বরং হিজাব পরিধান করে তারা প্রয়োজন ঘরে থেকে বের হতে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন → যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ ( সূরা আহযাব ৫৩)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন → দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী, যাদেরকে আমি দেখিনি। ( তারা ভবিষ্যতে আসবে) প্রথম শ্রেণী ( অত্যাচারীর দল) আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারী দল যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্তুত উলঙ্গ থাকবে। যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের মস্তকর ( খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে।

তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধ ও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুমুগ্ধ এত এত দূরবর্তী স্হান থেকেও পাওয়া যাবে। ( মুসলিম, বাইহাকী,মুসনাদে আহমদ,আস সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদিস নাম্বার ১৩২৬)

প্রিয় ভাই ও বোনেরা লাইক কমেন্ট শেয়ার করে ইসলামি দাওয়াতে আপনিও অংশগ্রহণ করুন।প্রিয় বন্ধুরা জানার স্বার্থে দাওয়াতি কাজের স্বার্থে আর্টিকেলটি অবশ্যই শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।হতে পারে আপনার একটি শেয়ার বহু মানুষ উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।