আস্সালামুআলাইকুম। আশা
করি সবাই আল্লাহ
তাআলার অশেষ রহমতে
ভালো আছেন। আপনাদের
দোয়ায় আমিও ভালো
আছি।
.
আশা করি Post টা সবার
উপকারে আসবে। সবাই
ধৈর্য ধরে সবাই পোষ্ট টা
পড়বেন আর কিছু না বুঝলে
কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করেন।
তো শুরু করা যাক।
.
দেখে বুঝে গেছেন কি
নিয়া আলোচনা করব।
.
আজকে আমি আপনাদের এমন একটি ইসলামিক গল্প শোনাবো যে, এক ব্যাক্তি ব্যাক্তি তওবা করেই মৃত্যুবরণ করেছে। গল্পটি সম্পূর্ণ না পড়লে কিছুই বুঝতে পারবেন না।
.
মানসুর ইবনে আম্মার বর্ণনা করেন যে, তার একজন বন্ধু ছিল যে অনেক গুণাহ করেছিল, নিজের উপর অবিচার করেছিল অতঃপর সে আল্লাহ তায়ালার তওবা করে। তওবা করার পর থেকে আমি তাকে দেখতাম, সে অনেক ইবাদত করতো, অনেক নামাজ পড়তো, অনেক রোযা রাখতো, অনেক তাহাজ্জদ পড়তো। হঠাৎ করে একদিন তাকে খুজে পাচ্ছিলাম না। আর তার খোজে তার বাড়ির দিকে গেলাম আমি দরজায় গিয়ে আওয়াজ দিলাম। ভিতর থেকে তার মেয়ে বের হয়ে আসলো এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলো কাকে খুজছেন? তখন আমি বললাম তোমার আব্বুকে যেয়ে বল অমুক এসেছে। অতঃপর আমাকে ভিতরে আসতে বলা হলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমি দেখলাম সে ঘরের মাঝখানে শুয়ে আছে। তার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে। তখন আমি তার এই অবস্থা দেখে বললাম, হে আমার ভাই আমার ভয় হচ্ছে, হে আমার ভাই তোমার এই অবস্থা দেখে আমার ভয় হচ্ছে। তুমি বেশি বেশি করে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে থাকো। এ কথা শুনে সে অনেক কষ্ট করে আমার দিকে তাকালো। অতঃপর বেহুশ হয়ে গেলো। যখন তার হুশ ফিরে আসলো আমি তাকে দ্বিতীয়বার আবারো বললাম, হে ভাই বেশী বেশী করে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতট থাকো। সে আবারো বেহুশ হয়ে গেলো। যখন তার হুশ ফিরে আসলো আমি তৃতীয়বার আবারো বললাম, হে ভাই বেশী বেশী করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে থাকো। সে চোখ খুলল আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, হে ভাই মানসুর আমার মাঝে আর এই কালেমার মাঝে প্রাচীর করে দেওয়া হয়েছে। আমি ইচ্ছে করলেও আমি এই কালেমা পাঠ করতে পারছিনা। তখন আমি বলে উঠলাম লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আমি তাকে বললাম, তুমি যে এত নামাজ পড়তে, এত ইবাদত করতে, এত আমল করতে, এত তাহাজ্জুদ পড়তে এগুলোর কি হলো।
.
তখন সে বলল, তুমি যে আমাকে ইবাদত করতে দেখতে, আমি কোনো কিছুই আল্লাহর জন্য করতাম না, আমি আমার সকল ইবাদত, আমি আমার সকল আমল এগুলো মানুষদের দেখানোর জন্য করতাম। আর আমার তওবা ছিল মিথ্যা তওবা। আমি মানুষদের দেখানোর জন্য তওবা করেছি
.
আমি মূলত বাহ্যিকভাবে মানুষদের দেখানোর জন্য ইবাদত করতাম কিন্তু আমি যখন একাকি থাকতাম, আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মদ পান করতাম। আমি নির্জন মুহূর্তে বিভিন্ন ধরণের গুণাহয় লিপ্ত হতাম। আমার মনে আছে একবার আমি গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলাম, আমার ধারণা হচ্ছিল আমি আর বাঁচবো না। তখন আমি আমি আমার পরিবারের লোকজনদের বললাম, আমাকে ধরে বাড়ির মাঝখানে নিয়ে আসো এবং আমার নিকট একটি কোরআন শরীফ নিয়ে আসো অতঃপর তারা আমাকে ধরে বাড়ির মাঝখানে নিয়ে গেলো এবং আমার নিকট কোরআন শরীফ নিয়ে আসলো। আমি কোরআনকে খুলে পড়তে লাগলাম এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম, হে পরম দয়ালু আল্লাহ এই কোরআনের মাধ্যমে তুমি আমাকে সুস্থতা দান কর, আমি তোমার সাথে ওয়াদা করছি, আমি তোমার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করছি আমি আর কোনোদিন গুণাহ করবো না, আমি আর কোনোদিন গুণাহর দিকে পা বাড়াবো না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুস্থতা দান করলেন। তখন আমি সুস্থ হলাম। তখন আমি আগের মতো আবারো গুণায় লিপ্ত হলাম, প্রতিনিয়ত গুণাহ করতে থাকলাম। আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদার কথা একেবারেই ভুলে গেলাম। এভাবে গুণাহ করতে করতে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। অতঃপর আমি দ্বিতীয়বার আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলাম। আমার আবারো মনে হচ্ছিল যে আমি আর বাঁচবো না, আমি আর পৃথিবীতে থাকতে পারবোনা। তখন আমি আমার পরিবারকে আবারো বললাম, আমাকে উঠানে নিয়ে চলো, আমার কাছে কোরআন শরিফ নিয়ে আসো, আমি প্রথমবারের মত দ্বিতীয়বার আবারো প্রার্থণা করলাম, আমি আবারো আকাশের দিকে দুহাত তুলে বললাম হে আমার প্রতিপালক, হে আমার পরোয়ারদেগার, এই কোরআনের মাধ্যমে তুমি আমাকে সুস্থতা দান করো। আল্লাহ তায়ালা আমার ডাকে আবারো সাড়া দিলেন। আমাকে রোগ থেকে মুক্তি দিলেন। আমি আবারো অঙ্গিকার করলাম যে, আমি আর কখনোই গুণাহ করবো না, আমি আর কখনোই গুণাহর দিকে পা বাড়াবো না। দ্বিতীয়বারেও আমি আমার অঙ্গিকারের কথা আবারো ভুলে গেলাম। আমি আবারো গুণায় নিমোজ্জিত হলাম। আমি আবারো গুণাহের সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। এরপর আবারো আমি তৃতীয়বারে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লাম। যা তুমি এখন দেখতে পাচ্ছো। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, আমাকে উঠানে নিয়ে চলো। কোরআন নিয়ে আসো। তারা আমাকে উঠানে নিয়ে গেলো, আমার কাছে কোরআন নিয়ে আসলো। এবার যখন আমি তিলাওয়াত করার জন্য কোরআনকে খুললাম। আমি দেখতে পেলাম, কুরআনের সমস্ত পৃষ্ঠাগুলো সাদা হয়ে গেছে। পুরো কোরআনের মাঝে একটি অক্ষরও আমার চোখে পড়লো না। আমি বুঝতে পারলাম আসমান ও জমীনের অধীপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাল উপর রাগান্বিত হয়েছেন। কারণ আমি বহুবার তার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছি। তিনি আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু আমি এর অপব্যবহার করেছি। আমি বুঝতে পারলাম আসমানের অধীপতি আমার উপর রাগান্বিত হয়েছেন। তাই আমি আসমানের দিকে হাত তুলে বললাম, হে আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করো, আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। আমি যখন এই কথা গুলো আমি শেষ করলাম। আমি শুনতে পেলাম কেমন যেনো আসমান থেকে আমাকে লক্ষ করে বলা হচ্ছে: তূমি যখন বিপদে পড়ো। তখন ই আমার কাছে আসো। আর যখন বিপদ শেষ হয়ে যায় তখন আবারো গুণায় লিপ্ত হও। তোমাকে আমি কতোবার বিপদ থেকে উদ্ধার করেছি, তোমাকে আমি কতোবার বিপদ থেকে রক্ষা করেছি, কিন্তু তুমি একবারো নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করোনি।
.
মানসুর ইবনে আম্মার বলেন, আমি এই কথা শুনে ক্রন্দন করতে করতে তার কাছ থেকে উঠে গেলাম। আমি যখন বাড়ি থেকে বের হবার জন্য দরজার কাছাকাছি পৌছলাম। তখন পিছন থেকে সংবাদ আসলো সে মারা গেছে। সে মৃত্যুবরণ করেছে। সে তওবা না করেই মৃত্যুবরণ করেছে। তার মাঝে ও তওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বলেছেন, হে ইমানদারগণ তোমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গুণাহ গুলোকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়।
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওবা করার সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু আমরা এই সুযোগকে অপমূল্যায়ন করছি। এমন একটি সময় হবে যখন আমাদের মৃত্যু চলে আসবে, তখন আমরা তওবা করতে চাবো কিন্তু আমাদের তওবা কবুল করা হবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে। এমন কি যখন তাদের মাথার উপর মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।
.
প্রিয় ভাই আর দেরি নয়, আসুন এখন তওবা করি, সুযোগ থাকতে তওবা করি, সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তওবা করে সেই তওবার উপর অবিচল থেকে মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দাণ করুন। আমিন।
লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।