আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম !
সুপ্রিয় পাঠক , হে ঈমানদারগণ , সুখ দুঃখ সব কিছুই আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ । সুখ দুঃখের মধ্যে কোনো একটি ছাড়া আমাদের জীবন সম্ভব নয় বরং অপূর্ণ । সুখ দুঃখ সবকিছুই আল্লাহর পরীক্ষা মাত্র । আপনি আপনার সুখের সময় আল্লাহ তাআলাকে কতটুকু সরণ করছেন , দুঃখ কষ্টের সময় কতটুকু সরণ করছেন । এটাই তো পরিক্ষা !
তাছাড়া ভেবে দেখুন তো সুখ যদি না থাকতো তাহলে কি দুঃখ কি জিনিস তা বুঝতাম ??
আর যদি দুঃখ না থাকতো তাহলে ” সুখ ” শব্দটির অস্তিত্ব থাকতো না। তাইনা ?
তাই নিশ্চিত দুঃখ হলো আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । একারণেই এ সময়ে একদম হতাশ হবেন না । আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন । বিশ্বাস রাখুন আল্লাহ তাআলা যা করবেন সেটাই আপনার মঙ্গল । আপনার ইমান যত দৃঢ় হবে , আপনি তত সহজে দুঃখ কষ্টের সময় পাড়ি দিয়ে জীবনে সুখের সন্ধান পেয়ে যাবেন । অনেক কিছু বলে ফেললাম , এবার একটি গল্প বলি , অনেকে শুনে থাকবেন তবুও শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন । তাহলে আপনার ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ।
………………. গল্প …………………..
জনৈক বাদশাহর একজন উযীর ছিল, যিনি সকল বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করতেন।
একদিন বাদশাহর একটি আঙ্গুল কেটে তা থেকে রক্ত গড়াতে লাগল। এ অবস্থা দেখে উযীর বললেন, ” এটা অবশ্যই কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ।”
একথা শুনে বাদশাহ উযীরের উপর রাগান্বিত হয়ে বললেন, ” আমার আঙ্গুল কেটে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আর আপনি এর মধ্যে কল্যাণ দেখতে পাচ্ছেন?”
বিষয়টা বাদশাহকে এত বেশী ক্রোধান্বিত করল যে, তিনি উযীরকে কারান্তরীণ করার নির্দেশ দিলেন।
কিন্তু উযীর স্বভাবতই বললেন, “এটা অবশ্যই কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ। ”
কিছুদিন পর এক শুক্রবারে অভ্যাসবশত বাদশাহ বেড়াতে বের হয়ে একটি বিশাল জঙ্গলের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর
তিনি জঙ্গলের গহীনে বেড়াতে গিয়ে মূর্তিপূজারী একটি গোত্রের দেখা পেলেন। সেদিন ছিল তাদের পূজার দিন। তারা মূর্তির প্রতি উৎসর্গ করার জন্য কাউকে খুঁজছিল। হঠাৎ তারা বাদশাহকে পেয়ে গেল এবং উৎসর্গ করার জন্য তাকে ধরে নিয়ে গেল।
কিন্তু তারা তার একটি আঙ্গুল কর্তিত দেখতে পেয়ে বলল, ” এ ত্রুটিযুক্ত মানুষ উৎসর্গ করা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না’।”
ফলে তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফিরে আসার পথে বাদশাহর উযীরের সেই কথা ‘এটা অবশ্যই কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ’ মনে পড়ল।
ফলে তিনি রাজ্যে ফিরে এসেই উযীরকে মুক্ত করে দিলেন এবং ঘটনাটি বর্ণনা করে বললেন, ” সত্যিই আঙ্গুল কেটে যাওয়াটা আমার জন্য কল্যাণকর হয়েছে। তবে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আমি আপনাকে কারাগারে পাঠানোর সময় আপনি বলছিলেন ‘এটা অবশ্যই কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ’। এক্ষণে আপনি কারাগারে গিয়ে কি কল্যাণ লাভ করলেন? ”
উযীর বললেন, ” আপনার উযীর হিসাবে সবসময় আমি আপনার সাথে থাকি। আর আমি যদি কারাগারে না যেতাম, তবে অবশ্যই আপনার সাথে জঙ্গলে যেতাম। ইতিমধ্যে তারা আমাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে আমার মধ্যে কোন খুঁত পেত না। তখন তারা আপনাকে বাদ দিয়ে আমাকেই উৎসর্গ করত। এভাবেই কারাগারে গমন করা আমার জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠলো!! ” সুবহানাল্লাহ !!
সম্মানিত পাঠক , সবসময়ই বিশ্বাস রাখবেন যে , আল্লাহ তাআলা যা করেন তা ভালোর জন্য করেন । এরূপ বিশ্বাস আর ইমানের ফলে যা ঘটবে সেটা অবশ্যই ভালো কিছু হবে । আপনি এরূপটা পর্যবেক্ষন করে দেখুন , সবকিছুর ভেতরেই আল্লাহর কল্যাণ নিহিত । আপনি সেটা অনুধাবন করতে পারছেন কতটুকু সেটা আপনার উপর নির্ভর করে ।
জাযাকাল্লাহ অথবা জাযাকাল্লাহু খায়রান হল একটি শব্দ যা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ “আল্লাহ তোমাকে উত্তম পুরস্কার/ প্রতিদান দিন”। এর উত্তরে বলতে হয় ‘ওয়া ইয়্যাকা বা ওয়া ইয়্যাকুম’ অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন । এভাবে আমরা এই ছোট্ট দোয়াটি বিনিময় করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত পেতে পারি ।
সুতরাং লেখাটি পড়ে আপনার ভালো লাগলে এবং সামান্য উপকৃত মনে করলে কমেন্টে লিখুন – ” জাযাকাল্লাহু খয়রান ” আশা করছি আপনার কাছ থেকে ।
আল্লাহর হেদায়েত আপনার সাথেই আছে ।
ইসলামিক গল্প , ইতিহাস , পোস্ট , ইসলামের যাবতীয় সবকিছুই যদি ভালো লাগে , তবে এটাই তো আল্লাহর হেদায়েত !
। আর হেদায়েত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয় । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই হেদায়েত এর মধ্য দিয়ে নিয়ে যাক আমাদের গন্তব্যে । আর জান্নাত হলো সেই গন্তব্য ।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি । দোয়া করবেন । আল্লাহ ভরসা ।
যাজাকাল্লাহু খাইরান !
আলহামদুলিল্লাহ ।
সুবহানাল্লাহ ।
আল্লাহ হাফেজ !