- আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নামাজের নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে আজকের লেখায় আপনাদের সকল কে স্বাগতম ।
একজন মুসলিমের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। এর গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যাধিক। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এই নামাজের হিসাব নেয়া হবে।
যে এখানে আটকে যাবে। তার আর রক্ষে নাই। এই নামাজের অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে জামায়াতের সাথে আদায় করা।
হাদীসে এসেছে একাকী পড়ার চেয়ে জামাতের ফজিলত বেশি সাতাশ গুণ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, অনকে মুসলিম ভাই নামাজ পড়তে জানেন না। নামাজের নিয়ম কানুন জানা নাই। এটা দুঃখজনক হলেও সত্য। যারা মাদরাসার লাইনে পড়েননি। তাদের এ সমস্যাটা প্রকট।
তাই ভাবেন নিয়ম জানি না কীভাবে পড়বে। সুতরাং তারা নামাজই পড়েন না। তাদের জন্যই আজকের নিবন্ধ। টোটাল নামাজের নিয়ম কানুন নিয়ে আমরা কথা বলবো ইনশাআল্লাহ । আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন।
ফজরের নামাজ
একজন মুমিনের দিনের শুরুটাই হয় আল্লাহর গুণকীর্তণ করার মাধ্যমে। এতে তার সারাদিন কাটে প্রশান্তির মধ্যে। সকালের নির্মল বায়ু সেবনের সুযোগ পায় কেবলমাত্র নামাজীরাই। সূর্য ওঠার আগে বিছানা ত্যাগ করার ভেতর স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও রয়েছে।
ফজরের নামাজের সময়ঃ
সুবহে সাদিক হলে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। দিন ছোটো বড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে এ সময়ও এদিক সেদিক হয়। আর সূর্যোদয় পর্যন্ত বাকি থাকে। সূর্যোদয় হলে আর ফজরের নামাজ পড়ার সময় থাকে না ।
ফজরের আজানঃ
সুবহে সাদিক হলে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। দিন ছোটো বড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে এ সময়ও এদিক সেদিক হয়। সাধারনত জামায়াত শুরুর সময় থেকে ৪৫ মিনিট আগে ফজরের আজান হয়ে থাকে ।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত?
ফজরের নামাজ ৪ রাকাত। দু রাকাত সুন্নাত। দু রাকাত ফরজ। অন্যান্য ওয়াক্তের সুন্নাতের তুলনায় ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা ভিন্ন। আর ফজর ও ইশার জামাতের মর্যাদাও অন্যান্য ওয়াক্তের জামাতের তুলনায় বেশি।
এর কারণও আছে। এই দুই সময় মানুষ সাধারণত বাসায় থাকে। পরিবারকে সময় দেয়। বিশ্রাম করে। তাই যথেষ্ট অবহেলা ও গাফলতি হয়। এজন্য হাদিসে বিশেষভাবে ফজর ও ইশার জামাতের ব্যাপারে উৎসহিত ও অনুপ্রাণিত করেছ।
ফজরের সুন্নাতের গুরুত্বঃ
আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। বিশ্বনবী সা: বলেছেন। ফজরের দু রাকাত সুন্নাত দুনিয়া ও দুুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে। এসবের থেকে উত্তম। [সহিহ মুসলিম, হদিস ৭২৫]
তিনি আরো বলেন। নবীজী সা: ফজরের দু রাকাত (সুন্নাত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন যা অন্য কোনো নফল (বা সুন্নাত) নামাজে দিতেন না। [সহিহ মুসলিম, হদিস ৭২৪]
আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে। তবে আমরা এ দুটি হাদিস দ্বারা ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব যথাযথ উপলব্দি করতে পেরেছি। এবার আসি কীভাবে তা আদায় করবো।
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়মঃ
যে কোনা নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ। নামাজের ভেতরে এবং বাহিরে মোট তেরটি ফরজ রয়েছে। নামাজ পড়ার পূর্বেই সাতটি ফরজ আদায় করতে হয়। বাকি ছয়টি নামাজের মধ্যে। বাইরের ফরজগুলো হলো
১.শরীর পাক।
২. কাপড় পাক।
৩. নামাজের জায়গা পাক।
৪. সতর (পুরুষের নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। নারীর হাতের কব্জি, পায়ের পাতা ও মুখমন্ডল ব্যাতীত পুরো দেহ) ঢাকা।
৫. কেবলামুখী হওয়া।
৬. সময়মত নামাজ পড়া।
৭. নামাজের নিয়ত করা।
এই সাতটি ফরজ নামাজের বাইরের। এ সাতটির মধ্যে ছয়টি কাজ আমরা সবাই বুঝি। সহজেই আমল করতে পারি। সর্বশেষ নামাজের নিয়ত নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলি। কেউ কেউ এ কথাও বলি। নিয়ত পারি না। সুতরাং কীভাবে নামাজ পড়বো। তাই তারা নামাজেই আসেন না। অত্যন্ত খারাপ কথা।
নিয়ত বলতে আমরা মনে করি আরবিতে নিয়ত করতে হবে। নাওয়াইত্আুন…। এইভাবে মুখে উচ্চারণ করে আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। ফরজ নয়। ফরজ হলো মনে মনে নামাজের নিয়ত করা।
বাসা থেকে আমরা নামাজের নিয়ত করে যে মসজিদে আসি এতেই নিয়ত হয়ে যায়। ওজু করে যে নামাজের জন্য তৈরি হই। এতেই নিয়ত হয়ে যায়। আরবিতে যেটা বলি তা মুস্তাহাব। না বললেও নামাজ হয়ে যাবে। অনেক মুরব্বিকে দেখা যায় তারা ভুল করেন। আরবিতে নিয়ত করেন ঠিক তবে অশুদ্ধ।
ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করে রুকুতে গেছেন। মুরব্বি আসলেন। তার দায়িত্ব দ্রুত তাকবীরে তাহরিমা বেধে রুকুতে যাওয়। কন্তু তিনি আরবিতে নিয়ত করতে করতে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেন। মুরব্বির নিয়ত শেষ হয়নি। রাকাত ছুটে গেলো। ফাঁকে আরেকটি কথা বলে রাখি। রুকু করা ফরজ।
কেউ আছেন দৌঁড়ে এসে রাকাত ধরেন। জামাতে সালাতে। ইমাম সাহেব রুকু শেষ করেছেন। আর তিনিও হাত বেধে রুকুতে গেলেন। ইমাম সাহেব কিন্তু রুকুতে নেই। তিনি গেলেন। এই রুকুটি ইমামের সাথে হয়নি। তিনি এ রাকাতটি পাননি। ভুল করে তিনি মনে করেন রাকাত পেয়েছেন। শেষে তার সালাতই হলো না।
কেউ এসে দেখলেন ইমাম রুকু ছেড়ে উঠে গেছেন। এখন ইমামের অনেক কাজ। দুই দুটি সিজদা। দু রাকাত হলে বৈঠক। ভুল করে কেউ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। ইমামকে আপনি যে অবস্থাই পান না কেনো, নিয়ত বেধে তার সাথে জুড়ে যাবেন। একটি সিজদা করলেও আপনি অফুরন্ত সওয়াব পাবেন। নামাজের এ ভুলগুলো আপনিও করতে পারেন।
সুতরাং যারা আরবিতে নিয়ত বাধতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তারা এভাবে নিয়ত করবেন।
ফজরের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রকআতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
ফজরের নামাজের নিয়ত বাংলাঃ
আর যারা আরবিতে করতে না চান। তারা বাংলায় এভাবে করবেন। ‘আমি কেবলামুখী হয়ে ফজরের দু রাকাত সুন্নাত আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।’
ফজর জামাত দাঁড়িয়ে গেলে কি সুন্নাত পড়বে?
যেহেতু ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। সুতরাং এটা ছাড়া যাবে না। কেউ মসজিদে এসে যদি দেখে জামায়াত দাঁড়িয়ে গেছে। তখন সে অনুমান করবে সুন্নাত পড়ে সে জামায়াত ধরতে পারবে কি না। কমপক্ষে তাশাহহুদে গিয়ে হলেও। তাহলে আগে সুন্নাত পড়েই জামায়াত ধরবে। আর যদি মনে করে জামায়াতের কোনো অংশই পাবে না। তখন সোজা জামায়াতে শরিক হবে। আর সুন্নাতটি সূর্য ওঠার পর পড়ে নিবে। আর যদি আশংকা হয় পরে পড়া হবে না। তাহলে জামায়াত শেষ করে পড়ে নিবে।
ফজরের দু রাকাত ফরজ নামাজের নিয়তঃ
‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রকআতাই সালাতিল ফাজরি, ফারদুল্লাহি তাআলা ( জামাতে পড়লে,‘ ইকতিদাইতু বিহাজাল ইমাম ’ যোগ করতে হবে।) মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
ফজরের নামাজে ইমামতির নিয়তঃ
ইমাম। দায়িত্বপূর্ণ একটি পদ। নেতৃত্বের জায়গা। ইমাম সাহেব তাই ইমামতির নিয়ত করতে হয়। ইমাম সাহেব আরবিতে নিয়ত করলে ‘আনা ইমামুল লিমান হাদারা ওয়ামাই ইয়াহদুরু’ যোগ করবে।
ফজরের নামাজের নিষিদ্ধ সময়ঃ
সুবহে সাদিক হলে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। দিন ছোটো বড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে এ সময়ও এদিক সেদিক হয়। আর সূর্যোদয় পর্যন্ত বাকি থাকে। সূর্যোদয় হলে আর ফজরের নামাজ পড়ার সময় থাকে না ।
জোহরের নামাজঃ
দীর্ঘ বিরতির পর যে সালাতটি আদায় করা হয়, তা জোহরের নামাজ।
যোহরের নামাজের ওয়াক্তঃ
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। সাধারণত দুপুর বারোটার দিকে ওয়াক্ত শুরু হয়। তবে আমাদের দেশে দুপুর একটা কি সোয়া একটায় জোহরের আজান হয়। জরুরি হলে ওয়াক্ত আসার পরই জোহর সালাত আদায় করা যাবে। আর এর শেষ সময় হচ্ছে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
যোহরের নামাজ কয় রাকায়াত?
জোহর নামাজ দশ রাকাত। প্রথম চার রাকাত সুন্নাত। এরপর চার রাকাত ফরজ। সবশেষে দু রাকাত সুন্নাত।
যোহরের নামাজ পড়ার নিয়মঃ
এখন আমরা আলোচনা করবো যোহরের নামাজ আদায় করতে হয় । এবং যোহরের নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়।
প্রথম চার রাকাত সুন্নাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল জোহরি। সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
জোহরের ফরজ চার রাকাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল জোহরি। ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
জোহরের শেষ দু রাকাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রকআতাই সালাতিল জোহরি, সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
আসরের নামাজঃ
আসরের নামাজ খুবই গুরুত্বর্ণ একটি ওয়াক্ত।
অসরের নামাজের সময়ঃ
জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর আসর শুরু হয়। সূর্য হলদেটে হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে। কেউ যদি সেদিনের আসর পড়তে না পারে তাহলে সে মাকরূহ ওয়াক্তে পড়তে পারবে। সূর্যস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের সময় যেকোনো নামাজ পড়া হারাম।
আসরের নামাজ কয় রাকাত?
আসরের নামাজ চার রাকাত। কেউ চাইলে আগে চার রাকাত সুন্নাত পড়তে পারে। এটা ঐচ্ছিক। পড়লে সওয়াব পাওয়া যাবে। না পড়লে গোনাহ হবে না।
আসরের নামাজ পড়ার নিয়মঃ
প্রতিটি ফরজ নামাজ যেভাবে পড়তে হয় । আসরের নামাজও ঠিক সেভাবেই পড়তে হয় । আলাদা কোন নিয়ম নেই।
আসর নামাজের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল আসরি। ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
মাগরিবের নামাজঃ
আসরে নামাজরে পড়েই আসে মাগরিবের নামাজের পালা। সূর্যাস্তের পরই মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।
মাগরিবের নামাজের শেষ সময়ঃ
সূর্যাস্তের পরই মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। পশ্চিম আকাশে শাফাক তথা লাল আভা থাকা পর্যন্ত এর সময় বাকি থাকে। মাগরিবের নামাজ আজানের পরপরই পড়া দরকার। খুব বেশি দেরি না করে।
মাগরিবের নামাজ কত রাকাত?
মাগরিবের নামাজ পাঁচ রাকাত। তিন রাকাত ফরজ। দুই রাকাত সুন্নাত।
মাগরিব নামাজরের ফরজ তিন রাকাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা ছালাছা রকআতাই সালাতিল মাগরিব। ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
মাগরিবের দু রাকাত সুন্নাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রকআতাই সালাতিল মাগরিব, সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়মঃ
প্রথমে অজুসহকারে দাঁড়িয়ে যান। নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠান। তাকবিরে তাহরিমা বলার পর বাঁ হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে ছানা পড়ুন ।
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহ (আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম)। এরপর বিসমিল্লাহ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)
এবার সুরায়ে ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে অনুচ্চৈঃস্বরে আমিন বলুন। হানাফি মাজহাব মতে আমিন আস্তে পড়া উত্তম। তবে জোরে আমিন বলার ব্যাপারে ইমামদের মতামত পাওয়া যায়। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অনাকাঙ্ক্ষিত।
সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৯৫)
এই পরিমাণ তিলাওয়াত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিবরণও ফিকহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯)
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা ওঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)
সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মাঝে কপাল মাটিতে রাখুন। নিজের পেটকে রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
এরপর সিজদা থেকে ওঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাতকে রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়ুন। অতঃপর জমিতে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান। এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো।
এখন দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলো। এতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না। তবে আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যাবেন। তখন আপনার হাত থাকবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
অতঃপর নিম্নের তাশাহুদ পড়বেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৮)
উচ্চারণ : ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’
তাশাহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করবেন। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলবেন।
তবে তাশাহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মেরও হাদিস পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।
যদি দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ হয়, যেমন—ফজরের নামাজ ইত্যাদি, তাহলে তাশাহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬১৩)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিম, ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পাঠ করবেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)
যেমন—এই দোয়া পড়তে পারেন। এটাকে দোয়ায়ে মাসুরা বলা হয় (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
অথবা এই দোয়া পড়বেন—উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান-নার।’
এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর সময় আপনার পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।
যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর আর কিছু পড়বেন না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)
তবে তৃতীয় রাকাতে সুরায়ে ফাতিহা পড়বেন।
আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরায়ে ফাতিহা পড়বেন। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবেন।
এশার নামাজঃ
মাগরিবের পরে ওয়াক্তই হলো ইশার ওয়াক্ত। এ নামাজ দিনেরে শেষ নামাজ।
এশার নামাজের শেষ সময়ঃ
মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হলেই ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়। মধ্য রাত পর্যন্ত পর্যন্ত এর সময় বাকি থাকে। কেউ এরমধ্যে পড়তে না পাড়লে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়তে পারবে। রাতের এক প্রহর চলে যাওয়ার পরই ইশার নামাজ পড়া উত্তম।
এশার নামাজ কত রাকাত?
ইশার নামাজ নয় রাকাত। চার রাকাত ফরজ। দুই রাকাত সুন্নাত। তিন রাকাত বিতর।
ইশার চার রাকাত ফরজের নিয়ত করবেন কীভাবে?
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল ইশা। ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
এশার সুন্নাত দু রাকাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রকআতাই সালাতিল ইশা, সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
বিতর নামাজঃ
বিতর নামাজের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা ছালাছা রকআতাই সালাতিল উইতরি, ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
জুমার নামাজ পড়ার নিয়মঃ
জুমআর নামাজ সপ্তাহে একদিন। শুক্রবার। জোহরের বিপরীতে বিকল্প হিসেবে এই নামাজ পড়া হয়। এটা ফরজ। শুক্রবার জোহর নামাজ নেই। জুমআর সালাতের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
জুমার নামাজের সময়ঃ
জুমআর নামাজের ওয়াক্ত জোহরের সময়।
জুম্মার নামাজ কয় রাকাত
জুমআর নামাজও জোহরের মত দশ রাকাত। তবে একটু ব্যতিক্রম। চার রাকাত সুন্নাত। দুরাকাত ফরজ। এরপর আবার চার রাকাত সুন্নাত। এছাড়াও আরো কিছু তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলুল মাসজিদ ও সুন্নাত পড়া যা।
জুমার নামাজের নিয়তঃ
জুমআর চার রাকাত কবলাল জুমআর নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল কাবলাল জুমআতি। সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
এরপর আরবি খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবা শেষে দুরাকাত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করতে হবে। জুমআর জন্য জামায়াত শর্ত। একাকী জুমার নামাজ পড়া হবে না।
জুমআর ফরজ দু রাকাতের নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উসকিতা আন জিম্মাতি ফারদাজ্জুহরি বিআদাই রকআতাই সালাতিল জুমআতি। ফারদুল্লাহি তাআলা। ইকতি দাইতু বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।’
চার রাকাত বা‘দাল জুমআর নিয়তঃ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রকআতাই সালাতিল বা‘অদাল জুমআতি। সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার
ইদের নামাজঃ
এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো ইদের নামাজ নিয়ে।
ইদের নামাজ পড়ার নিয়মঃ
ঈদের নামাজ অন্যান্য নামাজের মতোই। তবে একটু ব্যতিক্রম। জানাজার নামাজে এবং ঈদের নামাজের সাথে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। ব্যতিক্রম নিয়মটা না জানার কারণে। ঈদের দিনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ঈদের নামাজ আদায় করা।
ইমাম আযান ও ইকামাত ছাড়াই তাকবিরে তাহরিমাহ দিয়ে সালাত শুরু করবেন। আপনি হাত কাঁধ বা কানের লতি বরাবর তুলবেন এবং হাত বাধবেন। তারপর ছানা পড়বেন। এরপর ইমাম ৩ বার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
ইমামের তাকবিরের সাথে সাথে আপনি প্রত্যেকবার-ই হাত তুলবেন (সাথে সাথে নিচু গলায় তাকবির (আল্লাহু আকবার)বলবেন) এবং হাত না বেধে ছেড়ে দেবেন। তবে ইমাম তৃতীয়বার তাকবির বলার পর আপনি হাত বাধবেন (যেভাবে আপনি সাধারণত ৫ ওয়াক্ত সালাতে বাধেন)।
এই তিন তাকবিরের পর ইমাম কুরআন তিলাওয়াত করবেন যা আপনি অতি মনোযোগ সহকারে শুনবেন। এরপর সাধারণ সালাতের মতই সালাতের প্রথম রাকাত শেষ হবে।
সিজদা থেকে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য ওঠার পর ইমাম কুরান তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করবেন (সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা) আপনি শান্তভাবে ও মনোযোগ সহকারে তা শুনবেন। যখন ইমাম তিলাওয়াত শেষ করবেন তখন তিনি ৩ বার তাকবির বলবেন (এবার এই ৩ তাকবির রুকুতে যাওয়ার আগে বলবেন)। প্রত্যেক তাকবিরে আপনি আগের মতই হাত তুলবেন এবং “আল্লাহু আকবার” বলার পর হাত ছেড়ে দেবেন।
এই ৩ তাকবির বলার পর ইমাম আরেকবার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবেন রুকুতে যাওয়ার জন্য। এই (৪র্থ) তাকবিরে আপনি হাত তুলবেন না। এবং “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে চলে যাবেন। সালাতের বাকী অংশ সাধারণ ৫ ওয়াক্ত সালাতের মতই শেষ করবেন।
যথারীতি নামাজ শেষ হলো। এবার দুটি খুতবা হবে। আরবিতে। তা শোনা ওয়াজিব। খুতবার সময় মোটেও কথা বলা যাবে না। কথা বলা হারাম। কেউ কথা বললে তাকে থামানোর জন্যও কথা বলা যাবে না। সর্বোচ্চ ইশারায় থামতে বলা যেতে পারে।
জানাযা নামাজঃ
জানাযার নামাজ ফরজে কিফায়া। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাযার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার।
জানাযার নামাযের নিয়ম
মৃত ব্যাক্তিকে সামনে রেখে তার মাগফিরাত কামনার জন্য সকলে একত্রিত হয়ে যে দুআ পড়া হয়, তাকে জানাযার নামাজ বলে । আদবের সহিত বিনয়ের সাথে দাঁড়াবে। তারপর নিয়ত করবে, (যেমন, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে জানাযার ফরযে কেফায়ার নামাজ চার তাকবীরের সহিত কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পিছনে আদায় করছি।
এভাবে নিয়তের পর ১ম তাকবীর বলবে, তারপর ছানা অথবা সূরা ফাতিহা পড়বে :
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক।
অনুবাদ : হে আল্লাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করছি। তোমার নাম মঙ্গলময় এবং তোমার সম্মান ও মর্যাদা অতি শ্রেষ্ঠ, তোমার জন্য প্রশংসা, তুমি ব্যতীত আর কেউ উপাস্য নাই।
ছানার পর ২য় তাকবীর বলবে, তারপর দরুদে ইব্রাহীম পড়বে।
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ – اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারন : আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা- সাল্লাইতা আলা- ইব্রাহীমা ওয়া আলা- আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামী-দুম্মাজী-দ। আল্লাহুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা- ইব্রাহীমা ওয়া আলা- আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামী-দুম্মাজী-দ।
অনুবাদ : যে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত অবতীর্ণ কর যেইরূপ রহমত হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
দরুদে ইব্রাহীমের পর ৩য় তাকবীর বলবে, তারপর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ পড়বে।
জানাজার নামাজের দোয়া
اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَانَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا َارْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ্ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমীন।
অনুবাদ : হে আল্লাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত বালক ও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে ইসলামের হালতে জীবিত রাখিও। আর যাহাদিগকে মৃত্যু মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও।
মাইয়্যিত যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দুআ পড়বে।
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًا وَمُشَفَّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ্ আল হুলানা ফারতাঁও ওয়াজ্ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরা, ওয়াজ্ আল হুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়া।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
মাইয়্যিত যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দুআ পড়বে।
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهَا لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعةَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ্ আল হা-লানা ফারতাঁও ওয়াজ্ আল হা-লানা আজরাঁও ওয়া যুখরা, ওয়াজ্ আল হা-লানা শাফিআতাউ ওয়া মুশাফ্ফায়াহ্।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
মৃত ব্যক্তির জন্য দুআর পর ৪র্থ তাকবীর বলবে, তারপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
সালাতুল ইশরাক ও সালাতুজ দোহা নামাজের নিয়ম
বুরাইদা (রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা। সাহাবায়ে কেরাম (রা) বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি (সা) বললেন, “মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাআত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট। [আবু দাউদ; কিতাবুল ‘আদাব, অধ্যায়ঃ ৪১, হাদীস নং:৫২২২]
উপরিউক্ত হাদীসটি মুলত চাশতের সালাত বা সালাতুদুহার অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বোঝা যায় যে, চাশতের সালাত তথা সালাতু˜ দুহা ৩৬০ টি সাদাকার সমতুল্য।
আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত,
“রাসূল (সা) ততক্ষন পর্যন্ত চাশতের সালাত পড়তে থাকতেন, যতক্ষনে আমরা ভাবতে শুরু করাতাম যে তিনি (সা) এই সালাত আর কখনো বাদ দেবেন না। আবার যখন এই সালাত আদায় করা বন্ধ রাখতেন, আমরা ভাবতাম হয়ত তিনি এই সালাত আর কখনই আদায় করবেন না।” (তিরমিযি)
ইশরাকের বা চাশতের নামাজ কত রাকাতঃ
চাশতের সালাতের রাকাআতের সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহ্র রাসূল (সা) আলী (রা) এর বোন উম্মে হানী (রা) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাআত পড়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাআত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। [সহীহ্ আল বুখারী; “সালাত সংক্ষিপ্তকরন অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং:২০৭]
ইশরাক্ক ও চাশতের সালাত আদায়ের উপযুক্ত সময়ঃ
“ইশরাক্ক এর সালাতই হল “চাশতের সালাত” বা “সালাতু˜ দুহা। “দুহা শব্দের অর্থ প্রভাত সূর্যের ঔজ্জল্য, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। এই সালাত প্রথম প্রহরের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই পড়া হয় বলে একে “সালাতুদ দুহা বা “চাশতের সালাত বলা হয়। তবে প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে “সালাতুল ইশরাক্ক বলে। এই সালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূল (সা) এই সালাত কখনো পড়তেন, আবার কখনো ছেড়ে দিতেন। উল্লেখ্য যে, এই সালাত “সালাতুল আউয়াবীন নামেও পরিচিত।
শেইখ ইবন বাজ্ (র) বলেছেন,
“ইশরাক্ক সালাত শুরু থেকেই চাশতের সালাত হিসেব আদায় হয়ে আসছে। [ মাজমূ ফাতাওয়াহ্ আল শেইখ ইবন বাজ্, ১১/৪০১ ]
চাশতের সালাতের সময় হচ্ছে, সূর্য একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ঠিক পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। শেইখ ইবন ঊসাইমীন (র) এর মতে,
” চাশতের সালাত আদায়ের সময় হল সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।” [ আল-শারহ্ আল-মু¤তি, ৪/১২২ ]
অতএব, এই পুরো সময়টাই হচ্ছে চাশতের সালাত বা সালাতু˜ দুহা এর সময়।সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কেননা,নবী কারীম (সা) বলেছেন,“এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উটও সেই তাপ অনুভব করতে পারে।” [সহীহ্ মুসলিম; কিতাবু¯ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৬৩০] শেইখ ইবন বাজ্ঃ মাজমূ ফাতাওয়াহ্, ১১/৩৯৫
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের সালাত বা সালাতু˜ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়টা।
তাহাজ্জুদ নামাজঃ
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম। – তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওযা যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
সুন্নত নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানরা আবশ্যক হিসেবে এ নামাজ আদায় করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল। সাহাবায়ে কেরামও এ নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। এ নামাজে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রবৃদ্ধি ও প্রশান্তি লাভ হয়। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে এ নামাজ আদায় করা হয় বিধায় একে তাহাজ্জুদ বলে অভিহিত করা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল ?
তাহাজ্জুদ নফল পর্যায়ের সুন্নত। যা আমল করতে না পারলে কোনো গোনাহ নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
এ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ করা হয়েছে। উম্মতকে যেহেতু রাসুলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাহাজ্জুদের এ তাগিদ পরোক্ষভাবে সমগ্র উম্মতের জন্য করা হয়েছে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে ‘আর রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ আদায় করতে থাকুন। এটা আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পাওনা। আশা করা যায় আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)
রমজানের চাহিদা তাকওয়া সৃষ্টির মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়া। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তাকওয়ার পথ সবচেয়ে বেশি সুপ্রসন্ন হয়। এজন্য যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের আমল করে, কুরআনে তাদের মুহসিন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করে তাদের আল্লাহর রহমত ও পরকালে চিরন্তন সুখ-সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা রাতের অল্প অংশেই ঘুমাত এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করত।
মহানবী (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামাজ বলে ঘোষণা করেছেন, যা মুসলিম শরিফের সুস্পষ্ট বর্ণনায় রয়েছে। তিনি মদিনায় আগমনের পর তাঁর প্রথম ভাষণেই সফলতার চাবিকাঠি হিসেবে রাত জাগরণের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে লোকসব! ইসলামের প্রচার ও প্রসার কর, মানুষকে আহার দান কর, আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোমরা নামাজ আদায় করতে থাকবে। তবেই তোমরা সফল হবে, নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ‘তাহাজ্জুদ সালাতের ব্যবস্থা কর, এটা নেক লোকের স্বভাব, এটা তোমাদের আল্লাহর নৈকট্য দান করবে, গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, আর শরীর থেকে রোগ দূর করবে। (মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত ?
তাহাজ্জুদ সালাত দুই রাকাত থেকে বার রাকাত পর্যন্ত পড়ার প্রচলন রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হজরত নবী করিম (সা.) রমজান এবং রমজানের বাইরে আট রাকাতের বেশি কিয়াম করতেন না। হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা এই বর্ণনার ব্যাখ্যায় কিয়াম বলতে তাহাজ্জুদের নামাজকেই বুঝিয়েছেন। নবী করিম (সা.) এই আট রাকাত সব সময় শেষ রাতে আদায় করতেন। এটি ‘কিয়ামুল লাইল নামে প্রচলিত রয়েছে এবং আল্লাহওয়ালাদের অনেকেই রমজানে ‘কিয়ামুল লাইল জামাতের সঙ্গে আদায় করে থাকেন।
তাই তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হঠাত করে গভীর রাতে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা নিতান্তই কঠিন কাজ। তবে বছরের এগারো মাস শেষ রাতে জেগে তাহাজ্জুদ পড়া কষ্টকর হলেও রমজানে এটি মোটেও কঠিন নয়। রমজান মাসে যেহেতু শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য জাগতে হয়, তখন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার একটি সুবর্ণ সুযোগ চলে আসে। এ রমজানে অভ্যস্ত হয়ে সারা বছর তাহাজ্জুদের আমল জারি রাখা সম্ভব। এ সুযোগ কাজে লাগানোর বিকল্প নেই।
সালাতুত তাসবীহ নামাজ পড়ার নিয়ম
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলেন, “হে আব্বাস! আমার চাচা আমি কি আপনাকে একটি দান বা বকশিশ দিব, আপনার সামনে একটি তফফা পেশ করব, আমি কি আপনাকে এমন একটি আমল বলে দিব যা পালন করলে আপনি ১০ টি উপকার লাভ করবেন অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আপনার অতিত- ভবিষ্যতের, নতুন-পুরাতন, ভুলে বা জেনেশুনে, ছোট বড়, গোপনে বা প্রকাশে করা সকল গুনাহ এ মাফ করে দিবেন। সেই আমল হল আপনি ৪ রাকাত সালাতুত তাসবিহ আদায় করবেন। যদি আপনার দ্বারা সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এই নামাজ পরবেন, যদি প্রতিদিন পড়তে না পারেন তবে প্রত্যেক জুমার দিন, আর সেটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার এই নামাজ পরবেন। আর সেটাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার হলেও পরে নেবেন।
সালাতুল তাসবিহ পড়ার নিয়ম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রাঃ) ও অন্যান্য ওলামা হতে এই নামাজের ফজিলত নকল করা হয়েছে এবং তাদের নিকট হতে এই তরিকা বর্ণনা করা হয়েছে- “ছানা পড়ার পর এই কালেমা গুলি ১৫ বার সুবহানাল্লহি ওআল হামদুলিল্লাহি ওআলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর পড়বেন। অতঃপর আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ, সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা মিলানোর পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার পরবেন।
রুকুতে গিয়ে ১০ বার পরবেন, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার, বসে ১০ বার এবং আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার পড়বেন। এভাবে ৭৫ বার পড়া হয়ে গেল। তারপর দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা পড়ার পূর্বে ১৫ বার পড়ে পূর্বের নিয়মে পড়া হবে। যদি কোন জায়গায় সংখ্যা কম হয়ে যায় বা ভুলে যাওয়া হয় তবে পরবর্তী রুকুতে তা আদায় করতে হবে। আর ২ সিজদার মাঝখানে বা রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর দাঁড়িয়ে ভুলে যাওয়া তাসবিহ আদায় না করা। যদি নামাজে সাহু সিজদাহ দিতে হয় তবে সাহু সিজদার মাঝে এই তাসবিহগুলা পড়া লাগবেনা। তবে যদি কোন কিছু রাকাত ভুলে যাওয়া হয় তবে সেখানে আদায় করলে চলবে। এই তাসবিহগুলা পড়ার সময় আঙ্গুলে গোনা যাবেনা। তবে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে সংখ্যা কে মনে রাখা যেতে পারে।
কসর নামাজ পড়ার নিয়ম
কসর আরবি শব্দ আর এর অর্থ হলো কম করা, কমানো। ইসলামী শরিয়তে কোনো ব্যক্তি যদি ৪৮ মাইল বা তারও বেশি দূরত্বের সফরে বাড়ি থেকে বের হয় তাহলে সে মুসাফির। আর সে যদি সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তবে সে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বে।
যেমন- জোহর, আসর, এশা- এটাই হলো সংক্ষেপ করা বা কসর নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই সংক্ষেপ করার মধ্যেই অধিক কল্যাণ রেখেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই। (সূরা নিসা-১০)।
এ প্রসঙ্গে হজরত আনাস রা: বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে মদিনা থেকে মক্কাভিমুখে রওনা হয়েছিলাম। তিনি ফরজ নামাজ দুই রাকাত আদায় করলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা মদিনায় ফিরে এলাম। এ সময় হজরত আনাস রা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনারা কি সেখানে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, আমরা ১০ দিন অবস্থান করেছিলাম। (বুখারি)। মুসলিম মিল্লাতের জন্য নামাজের কসর মহান আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। স্রষ্টার দয়া, অনুগ্রহ।
১. কেবল চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ যেমন- জোহর, আসর ও এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়বেন।
২. মুসাফির ইমামতি করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দেবে যে, সে মুসাফির এবং দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে এবং মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে নেবেন।৩. মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন তাহলে ইমামের অনুসরণে তিনিও চার রাকাত পড়বেন।
৪. মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে।
৫. প্রত্যেক নামাজের নিয়ত করতে হবে, কোন ওয়াক্তের কসর পড়বেন।
৬. মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম।
৭. ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং আগেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না, এভাবে ১৫ দিন বা তার বেশি দিন থাকলেও কসর পড়বেন।
৮. দুই রাকাত, তিন রাকাত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
৯. কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তিনি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবেন না এবং তার জন্য কসরের হুকুমও প্রযোজ্য হবে না।
কসর নামাজের ফজিলত : কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ করেই সহজ বিধান দিয়েছেন। ইসলাম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মুক্তির জন্য। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও ছাড় দিয়েছে।
মূলত এই কসর নামাজের বিধানের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় শিক্ষা রয়েছে, তাহলো কোনো অবস্থায়ই ফরজ ইবাদত অলসতার কারণে বা সমস্যা থাকার কারণে পুরোপুরি ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
কসরের নামাজের ফজিলত
কসরের নামাজের ফজিলতের কথা বলে রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সফরে নামাজকে কসর করো-এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান (বায়হাকি)।
ইমামে আজম আবু হানিফা রহ: বলেন, ‘সফরে চার রাকাত নামাজকে দুই রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ দুই রাকাতের বিনিময়ে চার রাকাতের প্রতিদান তো দেবেনই, সেই সাথে মুসাফির অবস্থায় নামাজ পড়ার সওয়াব অনেক বেশি। তাই সফরে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে না।
মানুষ আল্লাহ তায়ালার প্রিয় সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকাই তার একান্ত কর্তব্য। সেহেতু মানুষের তথা মুসলিম জাতির দায়িত্ব হলো যেখানে যে অবস্থাতেই সে থাকুক না কেন, আল্লাহ তায়ালার এবাদতে ব্যাপৃত থাকতে হবে। কেউ কেউ মুসাফির হওয়া সত্ত্বেও নামাজকে কসর করতে ইতস্ততবোধ করেন। তারা বলেন, নামাজ যখন পড়বো তখন কম কেনো। বেশি সুফিগিরি দেখাতে চান। কিন্তু শরীয়ত যখন য হুকুম করে তখন তা বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে নেয়াই মুসলিমের কাজ। তায়াম্মুমের মুখাপেক্ষী ব্যক্তিও দ্বিধা করেন তায়াম্মুম করতে। এমনটা উচিত নয়।
তারাবীহ নামাজের নিয়ম
তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।
তারাবীহ নামাজের হুকুমঃ
রমজান মাসের এশার নামাজের পর ২০ রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজকে তারাবীহ নামাজ বলা হয়। তারাবী শব্দটি আরবী । তারাবীহাহ্ তার বহুবচন, যার অর্থ ক্ষণিক বিশ্রাম। রমজানের এই নামাজে প্রতি ৪ রাকায়াতের পরে কিছু সময় অর্থাৎ ৪ রাকায়াত নামাজের সম পরিমাণ সময় বিলম্ব ও বিশ্রামের নিয়ম থাকায় এ নামাজে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে ।
তারাবীহ নামাজের ফজিলতঃ
রাসূল (সাঃ) বলেন, “(হে আমার উম্মতগণ), তোমরা জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং উহার রাত্রে তারাবীহের নামাজ সুন্নাত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে ঈমানের সাথে কেবল সোয়াবের আশায় এ মাসে দিনের বেলায় রীতিমত রোজা রাখবে এবং রাত্রিতে রীতিমত তারাবীহের নামাজ পড়বে তার বিগত সব সগীরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে।” অতএব, এ পবিত্র মাসে অধিক নেকী সঞ্চয় করে লওয়া উচিৎ। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান নেকী পাওয়া যায়।
তারাবীহ নামাজের সময়ঃ
যে রাতে রমজানের চাঁদ দেখা যাবে সে রাত থেকে তারাবীহ নামাজ শুরু করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেলে তারাবীহ বন্ধ করতে হবে। তারাবী নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে । যদি কেউ এশার নামাজের পূর্বে তারাবী পড়ে তাহলে তারাবী হবে না। (দুররুল মুখতার)
তারাবীহ নামাজের জামায়াতঃ
রাসুল (সাঃ) রমজানে তিন রাত ২৩, ২৫ এবং ২৭ শে রাত তারাবীহ নামাজ জামায়াতে পড়িয়েছিলেন। তারপর তিনি যখন সাহাবীদের মধ্যে বিরাট উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুরাগ দেখলেন তখন মসজিদে এলেন না। সাহাবাগন তখন তাঁ দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলেন। তখন নবীজি বললেন, আল্লাহ তোমাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় আরও বরকত দিন । আমি এ আশংকায় মসজিদে যাইনি যে, এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে না যায় এবং সর্বদা তোমরা তা পালন করতে না পার। কারণ, নফল নামাজ ঘরে পড়াতে বেশী সওয়াব ও বরকতের কারণ হয় (বুখারী)।
এ হাদিস থেকে প্রমানিত হয় যে, রাসূল (সাঃ) ৩ রাত জামায়াতের পরে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) রীতিমত জামায়াত কায়েম করেন এবং সাহাবায়ে কিরাম তা মেনে নেন। পরবর্তীকালে কোন খলিফাই এ সুন্নতের বিরোধিতা করেননি। এ জন্য আলেম সমাজ এ নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া বলেছেন।
তারাবীহ নামাজের নিয়াতঃ
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْتراويح سُنَّةُ رَسُوْلُ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই ছালাতিত তারাবীহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃ কিবলামুখী হয়ে দু’রাকায়াত তারাবীর নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করছি “আল্লাহু আকবার”।
তারাবির নামাজের দোয়া
তারাবীহ নামাজে প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর বসে নিম্ন লিখিত দোয়াটি মনে মনে পাঠ করবেঃ
سُبْحَانَ ذِى الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوْتِ سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَىِّ الَذِيْ لَا يَمُوْتٌ، سُبُّوْحٌ قُدُوْسٌ رَّبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَاءِكَةِ وَلرُوْحِ، اللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ، يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ-
উচ্চারণঃ সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা যিল ইজ্জাতি, ওয়াল আজমাতে, ওয়াল হায়বাতি,ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়া জাবারুত। সুবহানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা, সুববুহুন ক্কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ ।
জগতের প্রভু সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং বভত্তর। আমি সে প্রতিপালকের গুনগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যাঁর কখনও মৃত্যু ঘটে না। পুতঃপবিত্র তিনি। তিনি আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকুল এবং আত্মাসমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি ।
তারাবীহ নামাজের মাসয়ালাঃ
০১। তারাবীহ নামাজের নিয়ত এভাবে করতে হবে আমি দুথরাকায়াতের সুন্নাত তারাবীহ নামাজের নিয়ত করছি। এমনিভাবে দশ সালাম সহ ২০ রাকায়াত নামাজ পুরা করতে হবে।
০২। তারাবীহ নামাজের পর বেতেরের নামাজ পড়া উত্তম । কিন্তু কোন কারণে যদি কিছু তারাবীহ পড়ার পূর্বে অথবা সমস্ত তারাবীহ পড়ার পূর্বে বেতেরের নামাজ পড়াও জায়েজ হবে।
০৩। যদি কোন মুক্তাদির বিলম্বে নামাজে যোগ দেবার করণে তার কিছু তারাবীহ বাকী থাকতে ঈমাম বেতেরের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন, এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উচিৎ হবে ঈমামের সাথে বেতেরের নামাজ পড়া এবং তারপর বাদ পড়া তারাবীহ পড়া।
০৪। চার রাকায়াত পড়ার পর এত সময় পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব যত সময়ে চার রাকায়াত পরা হয়েছে।
০৫। যদি এশার ফরজ না পড়ে তারাবীতে শরীক হয় তাহলে তার তারাবী দুরস্ত হবে না ।
০৬। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল এবং তারাবীহ জামায়াতে পড়ল না, সে-ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারে।
০৭। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল না সে তারাবীহ ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারবে।
০৮। বিনা কারণে বসে বসে তারাবীহ নামাজ পড়া মাকরূহ ।
০৯। ফরজ ও বেতের এক ঈমাম এবং তারাবীহ অন্য ঈমাম পড়াতে পারে।
১০। তারাবীহ দ্বিতীয় রাকায়াতে বসার পরিবর্তে ঈমাম দাঁড়িয়ে গেল, যদি তৃতীয় রাকায়াতে সিজদার পূর্বে তার মনে পড়ে যায় অথবে কোন মুক্তাদি মনে করিয়ে দেয় তাহলে ঈমামের উচিত বসে যাওয়া এবং তাশাহুদ পড়ে এক সালাম ফিরিয়ে সিজদায় সাহু দেবে, তারপর নামাজ পুরা করে সালাম ফেরাবে। তাতে দুথরাকায়াত সহীহ হবে। আর যদি ত্তৃীয় রাকায়াতের সিজদা করার পর মনে পড়ে তাহলে এক রাকায়াতের সাথে মিলিয়ে চার রাকায়াত পুরা করবে।
১১। যারা এশার নামাজ জামায়াতে পড়েনি, তাদের জন্য তারাবীহ জামায়াতে পড়া দুরস্ত নয়।
১২। কেউ যদি মসজিদে এমন সমইয়ে পৌছে যখন এশার ফরজ হয়ে গেছে, তাহলে প্রথমে সে এশার ফরজ পড়বে এবং পরে তারাবীতে শরীক হবে। তারাবিথর যে সব রাকায়াত বাদ যাবে সেগুলো হয় বিরতির সময় পড়ে নেবে অথবে জামায়াতে বেতের পড়ার পর পড়ে নেবে।
১৩। তারাবীতে কুরআন পড়ার নিয়ম হলো, কোন সূরায় বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তে হবে। পুরা কুরআন পাঠকারীকে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে এবং শ্রবণকারীকে শুনতে হবে। এজন্য হাফেজকে উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
১৪। কেউ কেউ তারাবীহতে তিনবার ক্কুলহু আল্লাহ পড়ে। তা পড়া মাকরূহ ।
১৫। কুরআন খতম করার পর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় কুরআন শুরু করা সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) বলেন, আল্লাহ এ কাজ পছন্দ করেন যে কেউ কুরআন খতম করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রথম থেকে আবার শুরু করে “আলিফ লাম মিম ………
…………মুফলিহুন পর্যন্ত পড়বে।
তারাবীর সময় বেতেরের নামাজের জামায়াতঃ
শুধু রমজান মাসে বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়া প্রমাণিত আছে। রমজান মাস ছাড়া অন্য মাসে বেতের জামাতে পড়া জায়েজ নেই। যারা একাকী তারাবীহ নামাজ পড়ল তারাও জামায়াতে বেতের পড়তে পারে। কিন্তু যারা তারাবী জামায়াতে পড়ল তাদে জন্য বেতের জামায়াতে পড়া দরকার। বেতের নামাজ তারাবীর পরে অথবা আগে পড়া যায়।
তারাবীহ নামাজে কুরআন খতমঃ
পবিত্র রমজান মাসে একবার কুরআন ক্রমানুসারে খতম করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (ইলমুল ফিকাহ)
রাসূল (সাঃ) প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল (আঃ) কে পুরা কুরআন শরীফ শুনাতেন। যে বছর তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, সে বছর তিনি জিবরাইল (আঃ) কে দু বার কুরআন শুনিয়েছেন।
উপসংহারঃ আল্লাহ তাহলা যেন আমাদের আজকের আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জিবনে আমল করে আখেরাতের কল্যাণ হাসিল করার তৌফিক দান করুন আমিন ।