আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা জানব প্রতিনিয়ত আমরা নামাজে যে ভুলগুলো করে থাকি তার বিস্তারিত।তাহলে শুরু করা যাক….
নামাযের মধ্যে আমরা যে ভুল গুলি করি সেগুলি কি কি?
১-নামাযে “কিয়াম” বা দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝে ৪ আঙ্গুল ফাকা রাখা
আমাদের দেশে নামায শিক্ষা দেওয়ার সময় বলা হয় – নামাযে “কিয়াম” বা দাঁড়ানো অবস্থায় পুরুষেরা দুই পায়ের মাঝে ৪ আঙ্গুল ফাকা রাখবে আর নারীরা দুই পা মিশিয়ে রাখবে। এইটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা কথা, কুরআন অথবা সহীহ হাদীসের কোথাও এই কথা লিখা নাই।
সঠিক হচ্ছে নারী অথবা পুরুষ নিজের শরীরের গঠন অনুযায়ী আরাম ও স্বস্তিদায়ক হয় এমন পরিমান জায়গা দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখবে। এতে সে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে, খুব বেশি ফাঁকা রাখবেনা আবার দুই পা এমনভাবে মিশিয়েও রাখবেনা যাতে করে দাড়াতেই কষ্ট হয়।
২-সিজদাতে দুই বাহুকে শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখা
নারী ও পুরুষের নামাযের নিয়ম, রুকু ও সিজদা একই রকম। যেই হাদীসগুলোতে আলাদা বলা হয়েছে মুহাদ্দিসিন একরাম সেইগুলোকে হয় জাল নয়তো জয়ীফ বলেছেন, তাই সেইগুলোর উপর আমল করা নাজায়েজ।অনেকে বিশেষ করে নারীরা সিজদার সময় মাটিতে দুই হাত বিছিয়ে দেয়। এই কাজটা হারাম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তুমি যখন সিজদা করবে তখন তোমার হাতে তালুদ্বয় (যমীনে) রাখবে আর দুই কনুই উঁচু করে রাখবে।”সহীহ মুসলিম।
অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন দুই হাতকে কুকুরের মতো বিছিয়ে না দেয়।”
বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী।
৩- সিজদার পুরো সময় পায়ের গোড়ালি মাটি থেকে তুলে রাখা
সিজদার সময় অবশ্যই দুই পা, দুই হাটু, দুই হাতের কবজি ও মুখমন্ডল (কপাল ও নাকসহ) মাটিতে স্পর্শ করে রাখতে হবে। তবে হঠাত করে পা উঠে গেলে নামায বাতিল হবেনা, তবে সিজদার পুরো সময় পায়ের গোড়ালি মাটি থেকে তুলে রাখলে নামায বাতিল হয়ে যেতে পারে। পায়ের পাতা সোজা করে রাখতে হবে, পায়ের অগ্রভাগ কিবলামুখী করে রাখতে হবে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সিজদাতে দুই পায়ের গোড়ালি জোড়া লাগানো অবস্থায় দেখেছি।ইবনে খুজাইমা, সহীহ।
এই সময় পায়ের আংগুলগুলো একটু ভাজ করে কিবলার দিকে রাখতে হবে।বায়হাকী।
৪-সিজদার সময় নাক মাটিতে না লাগানো
আমরা সিজদা করার সময় অনেক সময় খেয়াল করিনা, তাই নাক মাটিতে না রেখেই সিজদা করি।
সিজদার সময় নাক মাটিতে লাগিয়ে রাখতে হবে।
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নাক ও কপাল মাটিতে মজবুতভাবে ঠেকিয়ে রাখতেন।” আবু দাউদ, তিরমিযী, হাদীস সহীহ।
“ঐ বান্দার নামায সহীহভাবে আদায় হয়না যে কপালের মতো করে নাক মাটিতে ঠেকায় না।”
দারা কুতনী, তাবারানী ৩/১৪০/১।
৫- দু’ সিজদার মাঝে সোজা হয়ে না বসা
১ম সিজদা থেকে “আল্লাহু আকবার” বলে সোজা হয়ে উঠে বসবেন। এইসময় পিঠ সোজা করতে হবে, পিঠ বাকা রেখে দ্রুত দ্বিতীয় সিজদায় চলে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এইরকম করলে নামায কবুল হবেনা।
দুই সিজদার মাঝখানে দুয়া আছে –
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর।আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।
৬- তাশাহুদে নারী পুরুষ উভয়ে আলদা ভাবে বসা
১ম বৈঠকে আমাদের দেশে পুরুষেরা যেইভাবে বসে সেইভাবে বসা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নত। আর ৩/৪ রাকাত নামাযে ২য় বৈঠকে আমাদের দেশের নারীরা যেইভাবে বসে এইভাবে বসা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নত – বসার এই স্টাইলকে “তাওয়্যারুক” করা বলা হয়। নারী ও পুরুষের আলাদা বসার নিয়ম সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত না।
আজকের মতো এতটুকু।সবাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবেন।খোদাহাফেজ।