Site icon Trickbd.com

আব্দুল হামিদ: সর্বশেষ উসমানীয় সুলতান (মুসলিম আইডেন্টিটি পর্ব – ০২)

দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ সুলতান। ৩৩ বছরের শাসনের পর ১৯০৯ সালে তাকে পদচ্যুত করা হয়। তাকে থেসালোনিকিতে নির্বাসিত করা হয়েছিল, তবে পরে তাকে ইস্তাম্বুলে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। ১৯১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দ্বিতীয় আবদুল হামিদ: শেষ মুসলিম খলিফা

সুলতান আব্দুল হামিদ

সুলতান আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় ছিলেন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ৩৪তম সুলতান এবং কনস্টান্টিনোপল থেকে শাসন করা সর্বশেষ সুলতান।

তিনি ১৮৭৬ সালে সুলতান হন, তার ভাই মুরাদ পঞ্চম এর পদত্যাগের পর, এবং ১৯০৯ সালে উনার পদত্যাগ পর্যন্ত শাসন করেন।

আবদুল হামিদকে প্রায়ই এফেকটিভ ওসমানীয় সুলতান হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়।

তিনি ইসলামিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন যা প্রায়শই বিশ্বের বড় শক্তির সাথে সংঘর্ষের কারণ হয়েছিল। ব্রিটেন কখনো ওসমানীয় সম্রাজ্যের ডেভলপমেন্ট সহ্য করতে পারেনি, এই জন্য ব্রিটিশ, ইহুদীদের জাতির পিতা থিওডর হার্জল ও সিক্রেট সোসাইটির অন্যতম ফ্রিম্যাসনরা একত্রিত হয়ে সুলতান আব্দুল হামিদকে অনেক বার হত্যা করার চেষ্টা করে, এমনকি ফ্রিম্যাসনরা চেয়েছিল ওসমানীয় ও বালকান্দের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা করার কিন্তু সুলতান আব্দুল হামিদের চৌকশ রণ কৌশলের কারণে তাঁরা এই কাজেও ব্যার্থ হয়।

১৯০৮ সালে, আব্দুল হামিদের শাসনের বিরুদ্ধে বলকান অঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং দ্রুত সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

৩১শে আগস্ট, ১৯০৯ সালে, আব্দুল হামিদকে ইয়াং তুর্কিরা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য রাজপথে আন্দোলন শুরু করে, সুলতান আব্দুল হামিদ সম্রাজ্যের ফিউচারের কথা ভেবে, তিনি ইয়াং তুর্কিদের উপর আক্রমণ না করে নিজেই সিংহাসন থেকে সরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার পর সিংহাসনে আসেন মেহমেদ ৫।

তিনি একজন সংস্কারক ছিলেন যিনি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের আধুনিকায়নে বিশ্বাসী ছিলেন।

এটি করার জন্য, তিনি তার গোপন পুলিশ, ইলদিজ হামিদিয়ের উপর নির্ভর করেছিলেন।

এই পুলিশ বাহিনী যারা ওসমানীয় সম্রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তাদের পরিকল্পনাকে নষ্ট করার জন্য সক্রিয় ছিল।

সুলতান আবদুল হামিদ সামরিক বাহিনীতেও পরিবর্তন আনেন।

তিনি হামিদিয়ে নামে একটি নতুন সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন, যা শুধুমাত্র তার প্রতি অনুগত ছিল। এই সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে এবং প্রদেশগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের আধুনিকীকরণের চেষ্টা করেছিলেন, এবং তিনি মুসলিম ও অমুসলিম সবার প্রিয় ছিলেন।

তিনি মেসন্স নামক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।

ব্রিটিশ ও ইহুদি অনেকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করে।

মুসলিম উম্মাহর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার কারণে তাকে আজও স্মরণ করা হয়।

যখন থিওডর হার্জল ফিলিস্তিন কেনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রস্তাব দেন সুলতান আব্দুল হামিদ বলেন “আমি দেশের এক ইঞ্চিও বিক্রি করব না, কারণ এটা আমার নয়, সব মুসলমানের। তারা তাদের রক্ত ​​দিয়ে এই সাম্রাজ্যের মূল্য দিয়েছে। এবং আমরা আমাদের রক্ত ​​দিয়ে তা রক্ষা করব। ইহুদীরা তাদের লক্ষ লক্ষ ডলার রাখুক। সাম্রাজ্য বিভক্ত হলে তারা বিনামূল্যে ফিলিস্তিন পেতে পারে, কিন্তু তা হবে আমাদের মৃতদেহের উপর।

দ্বিতীয় আবদুল হামিদের নির্বাসনের পর, ওসমানীয় সাম্রাজ্য দ্রুত ভেঙে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্রুত পতন ঘটায় এবং ১৯২৩ সালে তুরস্ক একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

মন্তব্য

সুলতান আবদুল হামিদ তার বক্তৃতা, মুসলিম উম্মাহর জন্য তার ভালোবাসা এবং কাজের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ব্রিটিশ এবং মেসন তাকে ইতিহাস থেকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও, বাস্তবে এটি কেবল তাদের স্বপ্নে হবে।

সুলতান আবদুল হামিদকে সব মুসলিম উম্মাহ চিরকাল স্মরণ করবে।

আমরা তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।