কখনো কি ভেবেছেন আপনার এলাকারই একটা ছেলে, হিন্দু! কারণ সে জন্মেছে হিন্দুর ঘরে। আর আপনি মুসলিম! কারণ আপনি জন্মেছেন মুসলিম ঘরে। আপনি ইসলাম মানেন, কারণ আপনার পিতা-পাতা ইসলাম ধর্মের। আর পাড়ার সেই ছেলেটি হিন্দু ধর্ম অনুসরণ করে, কারণ তার পিতামাতাকে সে ওটাই করতে দেখেছে।
এবার ভাবুন তো! আপনি আপনার পিতা মাতাকে অনুসরণ করার কারণে জান্নাত পাবেন। আর প্রতিবেশী হিন্দু ছেলেটি পাবে জাহান্নাম! কারণ সেও তার পিতা-মাতাকে অনুসরণ করে। নিজ নিজ অভিভাবককে অনুসরণ করে একজন পাবে পুরস্কার এবং অন্যজন হবে লাঞ্ছিত।
চিন্তার বিষয়..! সে তো আর ইচ্ছে করেই হিন্দু ঘরে জন্মগ্রহণ করেনি। তাহলে তার দোষটা কোথায়? নিশ্চয়ই স্রষ্টা অবিচারক নন। তাই তিনি কারো মাতা পিতা কিংবা অবস্থাকে সত্যের মানদন্ড হিসেবে দেননি।
মান দন্ড করা হয়েছে প্রতিটি সুস্থ বিবেককে!
আপনি যদি একেবারেই ছোট থেকে পিতা মাতার সঙ্গে না পান, না পান কোন ধর্মীয় সমাজের ছোঁয়া, এমনকি বড় হওয়ার পরেও কোন ধর্ম সম্পর্কে আপনাকে বলেনি। বলেনি সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছে সেটাও!
এই সবকিছু সীমানা পেরিয়ে যদি এমন হয়, আপনি কোনো মানব সভ্যতাই দেখেননি! আপনি আছেন এমন স্থানে, যেখানে একা শুধুই একা। হয়তো আমি বিরান মরুভূমিতে নয়তো কোন ঘন অরণ্যে। কিংবা একাই বেঁচে আছেন অজানা কোন এক সমুদ্রের মাঝে। যদি আপনি এই কল্পনার বাস্তব রূপেও থাকেন, তখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার স্রষ্টাকে অনুভব করা।
এবং আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। যেমনটা করেছিলেন পালক ইব্রাহিম। যাকে আমরা মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম নামে চিনি এমন করে যদি আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে বের করতে পারেন, বুঝতে পারেন আপনার সৃষ্টির উদ্দেশ্য, অনুভব করেন আপনার দায়িত্ব কর্তব্য, অনুসরণ করেন তার আদেশ-নির্দেশ, আত্মসমর্পণ করেন আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে, তবেই আপনি মুসলিম।
খান বংশের ছেলে খান হয়! মুন্সির ছেলে হয় মুন্সী! এমন করে চৌধুরী, শেখ, বিশ্বাস, ফকির, তালুকদার, মন্ডল, মোল্লা, ফরাজী ইত্যাদি। আপনি যেই বংশেরই লোক হন না কেনো, আপনি ওই বংশের জন্ম সেই বলেই আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু ইসলাম এ এমন কোন সুযোগ নেই। মুসলিমের ঘরে জন্মালেই মুসলিম থাকা যায় না। হ্যাঁ, আপনি যেকোন লোকের ঘরেই জন্মান না কেনো, আপনি মুসলিম হয়েই জন্মান।
এমনকি সৃষ্টির প্রতিটি শিশুই মুসলিম অবস্থায় জন্মায়। তবে আপনার আকুল হওয়ার পরেই আপনি বেচে নেন আপনার পছন্দ।
হয়তো সেটা ভুল অথবা সঠিক!
তাইতো শুধু আকুলধারী সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী অথবা বিবেকবানরা জিজ্ঞাসিত হবে। মুসলিম এবং অমুসলিম এর মাঝে পার্থক্য হলো-
একজন মুসলিম তার সৃষ্টি কর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আর অমুসলিম আত্মসমর্পণ করেনি। আত্মসমর্পণ মানে হলো আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, বুঝে আসুক বা না আসুক, ভালো লাগুক বা না লাগুক। আপনার কাছে সহজ লাগুক বা কঠিন, আপনার প্রভু আপনাকে যা আদেশ করেছে যা নিষেধ করেছে, তা সবকিছু নির্দ্বিধায় সংকোচ হীন ভাবে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নেওয়া! এটাকে আত্মসমর্পণ বলে।
এই বেইসিক কথাগুলো সবাই জানে। তবে একটু বাস্তবতায় এসে ভাবুন তো! কোন এক দোকানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছেন, পাশেই বসে আছে কোন এক বিধর্মী ব্যক্তি, এর মধ্যেই মাগরিবের আজান হয়ে গেল, কিন্তু আপনি দিব্যি আগেকার মতনই আড্ডায় মেতে আছেন।
বিধর্মী ব্যক্তিও নামাজে গেল না, কারন সে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। অপরদিকে আপনিও নামাজে যাননি। এবার বলুন তো আপনি কি আপনার প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন?
এমন দৃশ্য আমরা হাটে বাজারে, অফিস আদালতে, খেলার মাঠে অহরহই দেখে থাকি! বেচাকেনার ক্ষেত্রে মালে কম বেশি দেওয়ার সুযোগ আছে। কর্ম ক্ষেত্রে আছে বাড়তি আনার সুযোগ। নকল করার সুযোগ আছে পরীক্ষার হলে। আছে মিথ্যা বলে মায়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ। এমন হাজারো ক্ষেত্র আমরা প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করি।
কিন্তু এসব ব্যাপারে কয়জন আমরা আমাদের রবের কাছে আত্মসমর্পণ করি?
দিন কিংবা রাত সে যাই হোক। নির্জন কক্ষে একাই আছেন আপনি আপনার রুমে। মোবাইলে আছে ডেটা অথবা ওয়াইফাই এর দারুন সুযোগ। এমন নির্জনতায় পোশাকহীন দুনিয়ার চিত্র মনে উঁকি দিচ্ছে বারবার।
আর এই সুযোগটা কাজে লাগালেও আপনাকে কেউ দেখছে না! এই পরিস্থিতিতে আপনি কি আপনার রবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন? ভাই আমার! আপনি দাড়ি কেটে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অবমাননা করছেন। আর ভাবছেন আপনি রাসূলকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসেন?
আপনি তো আপনার সামান্য দাড়ির উপরেই তাকে প্রধান্য দিতে পারলেন না! হে বোন আমার! বোরকা পরা তথা সালিম পোশাক দিয়ে পর্দা করা আপনার রবের নির্দেশ। বেপর্দায় চলে চলে আর কত নিজেকে ধোঁকা দিবেন? এতসব আদেশ-নির্দেশ অগ্রজার্য করেও আর কত ভাববেন, আপনিও আর্ত সমর্পণ করেছেন?
আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি, আঘাত করতে চাইনি আপনার হৃদয়ে! শুধু জানতে চাইছি, আমরা কি সত্যিই আমাদের রবের কাছে আত্মসমর্পণকারী?
আমরা মুসলিম তথা আত্মসমর্পণকারী দাবি করছি। অথচ আমাদের পদে পদে হচ্ছে পদসখলন।এবারে আসি আমাদের সততার ক্ষেত্রে! কুরআন হাদিসের দলিল প্রমাণ কিংবা কোডেশন উল্লেখ করে বিস্তারিত বলা উচিত। কিন্তু আজ তা করছি না। বাংলায় শুধু নির্যাসটুকু বলছি। রুহু জগতে বসে আমরা প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলাম, আমরা তাকে মেনে চলবো, তার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী সব কাজ করব। কিন্তু দুনিয়ায় আসার পর আমরা সেই ওয়াদা রক্ষা করছি না।
একবার উপলব্ধি করেন তো! যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা রক্ষা করে না, সে ব্যক্তি আপনার আমার সাথে কোন সততার পরিচয় দিবে? কিভাবে তাকে বিশ্বাস করব? কেনই বা তাকে সৎ মানুষ বলে গণ্য করবো? যার আচরণে নেই কমলতা, যার কথায় নেই মাধুর্যতা, ছোটদের প্রতি নেই স্নেহ, নেই বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা! পান থেকে চুন খুসলেই যার মুখ দিয়ে বের হয় অশ্লীল কথা।
যার সামান্য স্বার্থের জন্যও মিথ্যা বলতে দ্বিধা করে না। তার আবার সততা কিসের? মিথ্যা কতটা জঘন্য, চলুন একটা গল্প শোনায়- তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি ক্লাসে এসে মোটামুটি গল্প গুজব করেই সময় কাটিয়ে দিতেন। ওই যে থাকে না বাচ্চাদের পড়ালেখার পরিবর্তে গল্প আড্ডা কিংবা দুষ্টামি করতেই বেশি ভালোবাসি!
তেমনই আর কি। একদিন ক্লাসে আমি তার সাথে একটা মিথ্যা বলেছিলাম। কোন ব্যাপারে সেটা মনে নেই। তবে তিনি সেদিন আমাকে এমন একটা কথা বলেছিলেন, যা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে। তিনি আমায় বলেছিলেন, মিথ্যা কথা বলা কি জানিস? আমি আমতা আমতা করে বলেছিলাম মিথ্যা কথা বলা পাপ। তিনি বললেন শুধু পাপ নয়, এটা মহাপাপ, কবিরা গুনাহ, মিথ্যা বলা হারাম।
আচ্ছা নিজের মায়ের সাথে জ্বেনা করা কি জানিস? আমায় চুপ থাকতে দেখে তিনি নিজেই জবাব দিলেন। মায়ের সাথে জেনা করাও হারাম, তাহলে কেনো সামান্য একটা মিথ্যা বলে এত বড় পাপী হবি? সেদিন আমার ছোট্ট হৃদয়ে বিশাল একটা ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সেদিন এই শপথ করেছিলাম জীবনে, আর মিথ্যা বলব না। মনে হয় আজও সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
১০ বছরের লক্ষ্য মাত্র ৬ মাসেই পূরণ করুন- https://www.pocobd.com/2022/11/how-to-become-rich.html
ক্যামেরা দীর্ঘ আয়ু করার টিপস-https://www.pocobd.com/2022/11/tips-to-maintain-a-camera.html
আজকের সম্পূর্ণ লেখাটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। কমেন্টে জানাতে পারেন আপনাকে যে কোনো নতুন আইডিয়া এবং সাজেশন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি.. আল্লাহ হাফেজ!