Site icon Trickbd.com

বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার সহজ উপায় !

Unnamed

পর্বঃ ১ ভূমিকা
আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি সেটা হচ্ছে- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি নয় । কি ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন? কারণ সবাই পরিশ্রম করে। দিনে ১০-১২ ঘন্টা পড়ে। পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলে কিন্তু তারপরেও সফল হয় না। তাহলে কি সমস্যা? সমস্যা হচ্ছে আমাদের চিন্তাধারায়। আসলে আমরা সবাই পরিশ্রম করি কিন্তু কেউ কৌশলি পরিশ্রম করি না। সঠিক বাক্য হচ্ছে- কৌশলি পরিশ্র…ম সৌভাগ্যের প্রসূতি। তাই আপনাকেও সফল হতে হলে প্রথমে কৌশলী হতে হবে। আমি যখন পরীক্ষা দেই মাত্র ৫ মাস সময় পেয়েছিলাম প্রস্তুতি নেবার জন্য এর মধ্যে এমবিএ এর পড়াশোনা, বিসিএস এর পড়াশোনা সহ আরও অনেক ঝামেলা ছিল। সেই ৫ মাস একটু কৌশল অবলম্বন করে পড়েছিলাম তাই সফল হয়েছিলাম। কি কি কৌশল অবলম্বন করেছিলাম তা আপনাদেরকে বলবো কিন্তু তার আগে প্রথমেই দরকার ইচ্ছাশক্তি। আপনি যতই কৌশলী হন না কেন যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি না থাকে তাহলে আপনি হোঁচট খাবেন মাঝপথে।
এখন ইচ্ছাশক্তি কেমন হওয়া উচিত? এরজন্য একটি গল্প বলি আপনাদের। এক ছেলে একজন গুরুর কাছে গিয়ে বলল- আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে চাই, আমাকে কি করতে হবে? গুরু সেই ছেলেটিকে নিয়ে একটি পুকুরে নামলেন। তারপর সেই ছেলেটির কাঁধে যাতা দিয়ে পানিতে চুবিয়ে রাখলেন। ছেলেটি প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে পানির উপরে মাথা তুলার জন্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর সে হ্যাচকা টান দিয়ে পানির উপরে মাথা তুলতে সক্ষম হল। উঠেই সে গুরুকে বলল- আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিব না কারণ আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন। গুরু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- এটাই তোমার প্রথম শিক্ষা। তারপর ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন- আমি যখন তোমাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে রাখলাম তখন তোমার একমাত্র ইচ্ছা কি ছিল সেই মূহুর্তে? ছেলেটি বলল- তখন আমার একমাত্র ইচ্ছা ছিল যে করেই হোক পানির উপরে মাথা তোলা এর জন্য আমি প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। তখন গুরু বললেন- শিক্ষার জন্য তোমাকে এমন ইচ্ছা শক্তি প্রথমে অর্জন করতে হবে তাহলে তুমি শিখতে পারবে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আপনাকে প্রথমে ইচ্ছাশক্তি অর্জন করতে হবে। আর ইচ্ছাশক্তি অর্জন করতে পারলে- আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পড়বেন কেউ আপনাকে বলে দিবে না পড়ার কথা।
তাই প্রথমে ইচ্ছাশক্তি ঠিক করুন যে- আমাকে যে করেই হোক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে আর এরজন্য আমি পরিশ্রম করতে রাজি আছি। এরপর পরিশ্রমের কৌশল ঠিক করুন।
পর্বঃ ২ কিভাবে হয় পরীক্ষা ?
সরকারী ১ম শ্রেণী চাকরি সমমানের বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (এডি) পদে নিয়োগের জন্য সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। যেকোন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারী এই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেহেতু প্রতিযোগী বেশি তাই প্রতিযোগিতাও হবে বেশি। আপনাকে একই দিনে প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। মোট ৩ ঘন্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১ম ঘন্টায় ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং বাকী ২ ঘন্টায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নাম্বার যোগ হয় না। এই পরীক্ষায় শুধু বাছাই করা হয়। যারা বাছাই তালিকায় থাকবেন শুধু তাদেরই লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা হবে। তাই প্রিলিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার টার্গেট না করে নিরাপদ নম্বর ৭০ টার্গেট করে লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার টার্গেট করা উচিত।
লিখিত পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বর এর। এই ২০০ নম্বর পরীক্ষায় যারা সর্বোচ্চ নাম্বার পাবেন তাদের এক অংশকে ভাইভা এর জন্য ডাকা হবে। ভাইভা এর নম্বর হচ্ছে ২৫, তাহলে মোট পরীক্ষা হচ্ছে ২২৫ (লিখিত+ভাইভা) এই ২২৫ এ যারা সর্বোচ্চ নাম্বার পাবেন তারাই চাকরি পাবে। অনেকে প্রিলিতে বেশি জোর দেয়। আমার মতে প্রিলিতে বেশি জোর না দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় বেশি জোর দেয়া উচিত। প্রিলির মাধ্যমে যেহেতু শুধু বাছাই করা হয় আর এর নাম্বার যোগ হয় না তাই নিরাপদ নাম্বার পাওয়ার টার্গেট করা উচিত। এই টিউনে শুধু প্রিলি নিয়ে আলোচনা করি।
প্রিলি ১০০ নম্বর এর নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা। আপনাকে কিন্তু কোন ধরনের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দিবে না তাই আপনাকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই ১০০ নম্বর এর মধ্যে সাধারণ জ্ঞান ২০, কম্পিউটার ১০ এপ্টিচিউট টেস্ট ১০, গণিত ২০, বাংলা ২০ এবং ইংরেজি ২০ এভাবে মোট ১০০ নম্বর এর পরীক্ষা। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত সেটা হল শুধু বাংলা অংশ বাদে সম্পূর্ণ প্রশ্ন ইংরেজিতে হয় তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তর এর .৫০ নম্বর শুদ্ধ উত্তর কাটা যায় আর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি সুবিধা হল প্রতিটি ভুল উত্তর এর জন্য .২৫ কাটা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাকে যেমন ইংরেজিতে ১২ পেতে হবে এখানে এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি মোট যদি ৭০ পান ১০০ এর মধ্যে তাহলে আপনি লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সুযোগ পাবেন। এখন এই প্রিলির জন্য কিভাবে পড়া শুরু করবেন? প্রথমে বিগত বছরের প্রশ্ন গুলো শেষ করুন।
পর্বঃ ৩ নৈর্ব্যক্তিক কিভাবে পড়বেন ?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন এমন একটি জিনিস তা আপনি যতই পড়বেন আপনি তা ততই ভুলে যাবেন। এগুলো পড়ার কিছু নিয়ম আছে যা আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুসরণ করি। পরীক্ষার হলে আপনি যখন বসবেন তখন চারটি উত্তর এর ভিড়ে আপনি দ্বিধাদ্বন্দে ভুগবেন। এই দ্বিধাদ্বন্দের ভেতর যারা কনফিউজড না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবেন তারাই সফল হবেন। আপনাদের মজার ঘটনা শোনাই। ২০১১ সালের শেষের দিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ করা হল। ৩৩ তম বিসিএস প্রিলিতে একটি সহজ প্রশ্ন আসলো তা হল- বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়? এর চারটি অপশন হিসেবে দেয়া হলঃ উত্তর ঢাকা, দক্ষিণ ঢাকা, ঢাকা, শেরেবাংলা নগর। আপনারা অবাক হবেন অনেকেই পরীক্ষার হলে এই প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগেছে। অনেকেই উত্তর দেয় নাই এই প্রশ্নে কনফিউজড হয়ে,অনেকে শেরেবাংলা নগর দিয়েছে ঠিক এভাবেই আপনি নিজেও কনফিউজড হবেন।
তাই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন পড়ার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করুন যা আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুসরণ করি। সেই নিয়মগুলো হলঃ ১) শুধু উত্তর পড়ুনঃ অনেকেই অপশন সহ প্রশ্নের উত্তর পড়তে দেখি এতে আপনি বেশি কনফিউজড হবেন। প্রথমে প্রশ্ন পড়ুন এরপর এর উত্তর। অন্য কি অপশন আছে সেটা দেখার দরকার নাই।
২) নিজেকে পুরুষ্কৃত করুনঃ নিজের ভেতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করুন। এভাবে নিজেকে বলুন আমি যদি এই প্রশ্নের উত্তর গুলো এখন বলতে পারি তাহলে আমার প্রিয় কোন খাবার খাব। নিজেকে পুরস্কৃত করলে নিজের ভেতর স্পৃহা বাড়ে।
৩) অন্যকে প্রশ্ন ধরুনঃ বন্ধুদের সাথে যখন আড্ডা দিবেন তখন একে অপরকে নৈর্ব্যক্তিক জিজ্ঞেস করুন। এই আড্ডার সময় যে জিনিসগুলো পড়া হবে তা বেশি মনে থাকবে।
৪) পরীক্ষা দিন নিজে নিজেঃ বাসায় ঘড়ি ধরে পরীক্ষা দিন। এতে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক হবে। অনেকেই সময়ের কারণে সম্পূর্ণ উত্তর দিতে পারে না।
৫) হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করুনঃ আমার বাসায় আসলে আপনি দেখতে পাবেন একটি হোয়াইট বোর্ড ঝুলানো। আমি সেই বোর্ডে কঠিন শব্দগুলো টুকে রাখি বা সারাদিন কি কি পড়বো তা লিখে রাখি। এতে নিজের ভেতর একটি তাড়না কাজ করে।

৬) জাবর কাটুনঃ কাজের ফাঁকে আমাদের অনেক সময় থাকে বা অনেক কাজ আছে যেখানে আমাদের মাথাকে কাজে লাগাতে হয় না। তখন সেই সময়কে কাজে লাগান। যেমন রিকশায় যখন বসে থাকেন বা প্রকৃতির ডাকে যখন সাড়া দেন তখন সেই সময়কে কাজে লাগান। জাবর কাটার মত পড়াগুলো মনে মনে রিভিশন দিন। ইডিয়মস বা ভোকাবুলারি মনে করে সেগুলোর উত্তর বলুন।
পর্বঃ ৪ প্রিলিমিনারি
বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০০ এর মধ্যে ৭০ হচ্ছে নিরাপদ নম্বর। গতবার যেমন যারা ৬০ পেয়েছে তাদের লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়িত হয়েছে। এখন এই ৭০ পাবার জন্য কিভাবে পড়বেন? আমি একটা হিসেব দিতে পারি এভাবেঃ কম্পিউটার এ ১০, বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৬, সাধারণ জ্ঞানে ১৫, গণিতে ১০, এপ্টিচিউট টেস্টে ৪ (একটু কঠিন) এভাবে ১০+১৫+১৬+১৫+১০+৪ =৭০ খুব সহজেই পাওয়া যায়। এবার কিভাবে পড়বেন, কোন কোন বই পড়বেন?
প্রথমেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। এরজন্য নীলক্ষেত থেকে Bangladesh Bank Recruitment Guide- By Mohammad Arifur Rahman এর বইটি কিনতে পারেন।
কম্পিউটারঃ বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে প্রায়ই আসে। তাই সেগুলো সমধান করুন। বাজারে একটি বই পাবেন কম্পিউটার থেকে আসা চাকরির প্রশ্ন সেই বইটি কিনতে পারেন। বইটির নাম Easy Computer। নীলক্ষেতেই পাবেন। কম্পিউটারে ১০ পাবার টার্গেট করবেন আর পরীক্ষায় এই অংশ সবার আগে উত্তর দিবেন।
বাংলাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌমিত্র শেখর এর বাংলা বইটি বেশ ভালো। বাগধারা, শব্দার্থ, সঠিক বানান, লেখকের নাম প্রায়ই আসে। সেগুলোর উপর একটি বেশি জোর দিবেন।
ইংরেজিঃ সাইফুর’স ভোকাবুলারি বইটি কিনতে পারেন এছাড়াও এম্পি থ্রি এর ইংরেজি বইটিও ভালো। ইডিয়মস, ভোকাবুলারি এর উপর বেশি জোর দিবেন।
গণিতঃ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দিবে না। তাই হিসাব নিকাশ মুখে মুখে করার চর্চা করুন। শর্টকাট ম্যাথ নামে একটি বই পাবেন বাজারে সেই বই বেশ উপকারে দিবে। ম্যাথ সবার শেষে উত্তর দিবেন। গনীত বুঝে করবেন, মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না কখনো। না বুঝলে যে বুঝে তার সহায়তা নিন।
সাধারণ জ্ঞানঃ কারেন্ট এফ্যায়ার্স নিয়মিত পড়বেন। এছাড়াও বিসিএস সহ বিগত সময়ে আসে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন গুলো পড়বেন। সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন মনে রাখার অনেক গুলো কৌশল মানে ছড়া বা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি আছে যা ব্যবহার করতে পারেন। আমার কাছেও কিছু কৌশল আছে। সময় পেলে দিব
এপ্টিচিউট টেস্টঃ এখানে আপনার বুদ্ধিমত্তা, এনালিটিক্যাল এবিলিটি দিবে। এর জন্য আইবিএ এর ভর্তি বই পড়তে পারেন।
ফেইসবুকে বাংলাদেশ ব্যাংক এর বেশ ভালো গ্রুপ আছে। সেখানে অবশ্যই জয়েন করবেন। তারা কিভাবে পড়ছে এবং আপনি কিভাবে পড়ছেন তা শেয়ার দিবেন। ফেইসবুক গ্রুপ স্টাডি করার জন্য একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম।
পর্বঃ ৫ লিখিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার নম্বর ২০০, এখন কি কি আসে লিখিত পরীক্ষায়? আপনাকে ২টি অনুবাদ করতে হবে ইংলিশ টু বাংলা এবং বাংলা টু ইংলিশ। ২টি অনুবাদে নম্বর ৬০ এরপর ৩টি অংক আসবে এর নম্বর ৩০, একটি ইংলিশ কম্প্রিহেনশন আসবে এর নম্বর ৩০, এছাড়াও একটি বাংলা প্রবন্ধ লিখতে হবে এর নম্বর ৩০, একটি ইংরেজি পত্র লিখতে হবে এর নম্বর ২৫ এবং সর্বশেষ একটি ইংরেজি প্রবন্ধ লিখতে হবে এর নম্বর ২৫ এভাবে মোট নম্বর ২০০
একটি কথা খুব খেয়াল রাখবেন যে আপনাকে প্রশ্নের ভেতরই উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার লেখার জায়গা সীমিত, আপনাকে কোন অতিরিক্ত পৃষ্ঠা দেয়া হবে না। আপনি যদি মনে করেন আমি মনের মাধুরি মিশিয়ে বেশি লিখবো আর আমাকে পৃষ্ঠা গুণে নাম্বার দিবে তাহলে ভুল হবে। অনেকের একটি জিনিস সমস্যা হয় সেটি হচ্ছে অংক করতে গিয়ে। ছোট্ট একটু জায়গায় আপনাকে অংক করতে হবে। একবার ভুল করে ফেললে পরবর্তীতে আর কেটে নতুন করে করতে পারবেন না। তাই সাবধান। আগে মস্তিষ্কে অংক কষে ফেলুন মনে মনে এরপর সেই ছোট্ট জায়গায় অংক টুকে ফেলুন।
ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধে অনেক নাম্বার কিন্তু জায়গা পাবেন মাত্র ৪ পাতা ২টি লেখার জন্য। তাই First Impression এর প্রতি আপনাকে নজর দিতে হবে। সার কথা লেখার উপর জোর দিতে হবে। শুরুটা সুন্দর করতে হবে যাতে ভালো নম্বর পান। সীমিত জায়গায় সব কিছু সুন্দর করে লিখে ফেলাটাও পরীক্ষার একটি অংশ। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
পর্বঃ ৬ লিখিত প্রস্তুতিঃ বাংলা প্রবন্ধ
যেকোন কাজে সফলতার জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। নিজেকে দাম দিতে হবে। আপনার প্রতি আপনার যদি আস্থা না থাকে তাহলে আমার এই পরামর্শ কোন কাজে আসবে না। প্রথমে এই বিশ্বাস আনুন যে, আপনিও পারবেন। আপনার মধ্যেও তেজ আছে, সাহস আছে প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার। যদি এই বিশ্বাস আনতে পারেন তাহলে এই টিউন সম্পূর্ণ পড়েন। অন্যথায় নিজের মত করে প্রস্তুতি নেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে অনেক কিছু খেয়াল করে পড়তে হবে। লেখার মান ভালো করতে হবে। দুই পৃষ্ঠা লিখতে হবে আপনাকে ৩০ নম্বর এর জন্য। তাই মান সম্পন্ন লেখা না হলে ভালো নম্বর তুলতে পারবেন না। তাহলে লেখার মান কিভাবে বাড়াবেন? এবং কিভাবে পড়বেন? আজ বাংলা প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করি বরং। এই প্রবন্ধগুলো সাধারণত অর্থনীতি বিষয়ক থেকে আসে বা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত হয়ে থাকে। যেমন ২০১১ সালে নিরাপদ সড়ক নিয়ে একটি প্রবন্ধ আসে যার নম্বর ছিল ৩০ এবং লেখার জন্য আপনি জায়গা পাবেন মাত্র ২ পৃষ্ঠা। এই ধরনের রচনা লেখার জন্য আপনাকে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। যত বেশি তথ্য দিবেন তত ভালো। একদম ছোট ছোট সরল বাক্য না লিখে যৌগিক বাক্য লেখা ভালো। ছোট ছোট সরল বাক্য লেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আপনাকে লেখায় আপনার দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। তবে যাই লেখেন না কেন তা যেন পূর্নাঙ্গ হয়। অনেকে ভূমিকা না দিয়েই লেখা শুরু করেন আবার অনেকে উপসংহার টানেন না। তাহলে একটি প্রবন্ধে কি কি বিষয় থাকা উচিত?
ভূমিকা, প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে সংজ্ঞা বা সেই বিষয়ে আলোকপাত, প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা, পরামর্শ, এবং উপসংহার
উপরোক্ত এই ৬টি পয়েন্ট অবশ্যই একটি প্রবন্ধে থাকতে হবে। এই ৬টি পয়েন্ট মাথায় রেখে এই সম্পর্কে চার পাঁচ লাইন লিখলেই আপনার ২ পাতা পূর্ণ হয়ে যাবে এবং প্রবন্ধটি পূর্নাঙ্গ হবে। বিশ্বব্যাংক বা বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করে তথ্য বা মনিষীদের বক্তব্য ব্যবহার করলে আরও সুন্দর হবে।
First Impression এর উপর জোর দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার ভূমিকা যেন সুন্দর হয়। ভূমিকা ইতিবাচক করে লিখবেন। বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা লিখবেন। যেমন- হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনা দিলেও সেই বাংলাদেশ অনেক দেশের জন্য আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে “নেক্সট ইলাভেন” এর একটি দেশ বলা হয় যারা আগামী অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিবে।
এভাবে শুরু করতে পারেন। লেখাতে তথ্য দিবেন বেশি বেশি। বাসায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখে তা আপনার বন্ধুদের দেখান। কেমন লাগলো তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। দশজনের কাছে যে লেখা ভালো লাগে তা পরীক্ষকের নিকট ভালো লাগবে।
পর্বঃ ৭ লিখিত প্রস্তুতিঃ গণিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নম্বর আসে অঙ্ক। এই অঙ্ক আপনাকে করে দেখাতে হবে শুধু উত্তর লিখলে হবে না। তার উপর আপনি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই এই বিষয়ে একটু সিরিয়াস হওয়া উচিত। একটা জিনিস মনে রাখবেন যারা ৩ টি অঙ্ক সঠিকভাবে করতে পারে তারাই লিখিত পরীক্ষায় এগিয়ে থাকে কারণ এখানে খাসা নম্বর। আপনার অঙ্ক হলে ৩০ এ ৩০ পাবেন। তবে এর মানে এই নয় যে, আপনি অঙ্ক না পারলে আপনার সম্ভাবনা নেই। তবে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সেই পথ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। যাইহোক অঙ্কের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন?
আমার অভিজ্ঞতা যদি বলি, আমি ৩৩ তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা দেবার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা হল। তাই আমি কিন্তু এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছিলাম। বিসিএস এর গণিতের প্রস্তুতি বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজে লাগিয়েছিলাম। আপনাদের অনেকের ক্ষেত্রে সেই রকম নাও হতে পারে। তাই সবার কথা বিবেচনা করে আমি আমার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। আশা করি উপকৃত হবেন।
অনেকের অঙ্কের প্রতি ভীতি আছে। অঙ্ক ভয় পান। তারা প্রথমে অঙ্ককে ভালোবাসুন। অঙ্ককে প্রতিদিন আই লাভ ইউ বলুন। তারপর শুরু করুন। ক্যালকুলেটর আলমারিতে তালা দিয়ে রাখুন। বাসায় চর্চা করার সময় মুখে মুখে হিসাব করার চেষ্টা করুন। নীলক্ষেত থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন সম্বিলিত বই পাবেন সেটা কিনে প্রথমে সেই বই শেষ করুন। অনেকে অঙ্ক মুখস্থ করার চেষ্টা করেন। ভুলেও সেই কাজ করতে যাবেন না। বুঝে বুঝে করুন। না বুঝলে বন্ধুদের সাহায্যে নিন। কোন কিছু শেখার প্রতি কোন লজ্জা রাখবেন না। আমি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর ছাত্র। আমি নিজেও অঙ্ক কম বুঝি। আমি সাইন্স ফ্যাকাল্টির এর ছোট ভাই এর কাছ থেকে অঙ্ক বুঝে নিতাম যে তখন মাত্র ১ম বর্ষে পড়ত আর আমি বিবিএ শেষ করেছিলাম তখন। বাসার ছোট বোন হাসাহাসি করেছিল এত বড় ছেলে ছোট ভাই এর কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছে। আমি সেই হাসি বা লজ্জাতে কান দেই নাই। বড় ছোট সবার কাছ থেকেই শেখা যায়। যখন কোন কিছু বুঝবেন না তখন ঐ বিষয়ে পারদর্শী কারো কাছে যান, তার বয়স কম হলেও লজ্জা পাবেন না।
আমি অঙ্ক যে মুখস্থ করছি না তা কিভাবে বুঝতাম? আমি নিজেই অদৃশ্য ক্লাস নিতাম। মনে মনে ভাবতাম আমার সামনে অনেক অনেক ছাত্র-ছাত্রী বসে আছে আর আমি তাদের ক্লাস নিচ্ছি। যদি ওদের আমি অঙ্কটি বুঝাতে পারি তাহলে এরমানে আমি অঙ্কটি বুঝেছি। অদৃশ্য ক্লাস নিতে হবে কেন? আপনি বাস্তবেই ক্লাস নেন। আপনার বন্ধুকে অঙ্কটি বোঝান গ্রুপ স্টাডি করার সময়। মনের ভেতর শেখার এক চেষ্টা রাখুন সবসময় এবং বিশ্বাস রাখুন আপনি পারবেন।
বিগত বছরের অঙ্কগুলো শেষ করতে পারলেই তো প্রস্তুতি শেষ কারণ ঐ নিয়মে একটু পরিবর্তণ করে অন্য অঙ্ক আসে। তাই যখন একটি অঙ্ক করবেন তখন সেই অঙ্ক একটু পরিবর্তণ করে বা সংখ্যা পরিবর্তণ করে নিজে করার চেষ্টা করুন দেখুন পারেন কিনা। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করা শেষ হলে সাইফুর’স ম্যাথ এবং A 2 Z অব ব্যাংক জব বইটি শেষ করতে পারেন।
আমি এর আগেও বলেছি, পরীক্ষার প্রশ্নেই আপনাকে উত্তর দিতে হবে। তাই আগে মাথায় অঙ্কের ছক করে ফেলুন তারপর খাতায় করুন। ভুল করে ফেললে আর লেখার জায়গা পাবেন না। আর নিয়মিত চর্চা করুন। ফেইসবুকে দেখবেন অনেকে বিভিন্ন অঙ্কের সমাধান চায় সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে পড়াশোনা করুন তাহলে পড়াশোনা করে মজা পাবেন।