Site icon Trickbd.com

শরীরচর্চা মানেই জিমে যাওয়া নয়…

কথায় বলে, শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তা-ই সয়। তাই বলে, উইকেন্ডে পার্টি, যখন-তখন ‘জল’পথে ভ্রমণ, অতিরিক্ত ‘রাম’ভক্তিকে শরীর মাথানত করে মোটেও স্বাগত জানাবে না। সময়ে-অসময়ে বিরিয়ানি, মশলাদার ‘চাট’, কাবাব, চিপস মনের আনন্দে সাঁটিয়ে যাবেন, আর আপনার সাধের উদর আপনাকে লোকলজ্জা থেকে বাঁচাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে, তা তো হয় না বাবা! উদরের পূর্তি ঘটলে সে তো চরম ফূর্তিতে ফুলেফেঁপে উঠবেই। কিন্ত, ব্যস্ত স্কেডিউলের মধ্যে এক চিলতে যেটুকু সময় বার করা যায়, তার অনেকটাই চলে যায়, সিনেমা, শপিং মল, বন্ধু-বান্ধদের সঙ্গে গেট-টুগেদারে। এমনতর রুটিন সামলে লোকসমক্ষে যখন নিজের বাড়-বাড়ন্ত চেহারা নিয়ে একটু খোঁটা হজম করেন, তখন নিশ্চয়ই ভাবেন যে, ‘কালই জিম জয়েন করব।’ ভাবাই সার। সোমবার সকালে অফিসের পেন্ডিং-কাজের সাগরে ডুব দিয়ে আর অরূপরতন খোঁজার অবকাশ থাকে না। কষ্টে-সৃষ্টে এক-দু’বার যা-ও বা নানা রকম মেশিন-সমৃদ্ধ জিমখানা-র দর্শন করা যায় কিন্তু রেগুলারিটি? বালাই যাট।

অতএব, কঠিন প্র্যাকটিসের মুখে ঝামা ঘষে আপনার আদুরে পেলব ‘ভুঁড়ি’ বেঁচেবর্তে থাকে বহাল তবিয়তে। কিন্তু এহেন জীবনযাত্রার মধ্যেও মাথায় রাখবেন, শরীরচর্চা শুধুমাত্র স্লিমট্রিম থাকার জন্য দরকারী নয়, সুস্থ থাকার জন্যও বটে। তিরিশ ছুঁই-ছুঁই সময় থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চায় না থাকলে চল্লিশে পৌঁছনোর আগেই কোলেস্টেরল, সুগার থাবা বসাবে আপনার জীবনে। তাই এখনও রোগা আছি ভেবে নাকে তেল দিয়ে উড়ে বেড়ানো নেহাত কাজের কথা নয়। কিন্তু এত জ্ঞান শোনার পরে চোখ পাকিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন যে, কেরিয়ারের পিক-ফর্মে জিমে যাওয়ার সময় কি গাছে ফলবে? উত্তরে একটা কথাই বলব, শরীরচর্চা করা মানেই যে জিমে যাওয়া, এমনটা নয়। বাপ-ঠাকুরদার আমলে কাচ লাগানো হিমশীতল জিম সেন্টার ছিল না। তাই আপনার ক্ষেত্রেও কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে, জিমে না গেলে সুস্থ থাকবেন না।

হাঁটা

চিরকালীন সুস্থ থাকার উপায় হিসাবে পরিচিত এই পন্থা। শরীরের পক্ষে একটি অত্যন্ত ভালো ব্যায়াম হাঁটা। তথ্যটি সবাই জানেন। কিন্তু অল্প দু’পা এগোতে গেলেও ট্যাক্সি, ওলা, অটো, নিদেন পক্ষে রিকশা ডাকতেও কসুর করি না আমরা। অথচ এমন একটি এক্সারসাইজ করতে আপনার এক নয়া পয়সাও খরচ হয় না। পারলে রোজই টানা কিছু সময় হাঁটতে থাকুন। দরকার হলে একটু ব্রেক নিন। হালকা রেস্ট নিয়ে আবার হাঁটুন। হাঁটার জন্য যদি বাড়ির আশপাশে নির্দিষ্ট কোনও ভালো জায়গা না-ও পান, নিদেনপক্ষে বাড়ির ছাদেই অভ্যেস করুন। দেখবেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আপনার এনার্জি লেভেল অনেকটাই বেড়ে গেছে।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা

লিফটওয়ালা অফিস আর এস্কেলেটর-সমৃদ্ধ মাল্টিপ্লেক্সের চক্করে ‘সিঁড়ি’  বিলুপ্তপ্রায় শব্দের তালিকায়। এর উপরে যদি ফ্ল্যাট বা রেসিডেনসিয়াল কমপ্লেক্সটিতেও লিফট-সুবিধা থাকে, তা হলে তো সোনায় সোহাগা। তবে এবেলা অনলাইন আপনাকে এই অভ্যেসে কাঁচি চালাতেই অনুরোধ জানাবে। কারণ, বয়স থাকতে এই হ্যাবিট করে ফেলতে পারলে নিজের অজান্তেই ভবিষ্যতের অনেক ‘ব্যথা’ থেকে গা বাঁচিয়ে পালাতে পারবেন। তাই আলসেপনা না দেখিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামার কাজ শুরু করে দিন। দরকার হলে দম নিয়ে ধীরে ধীরে উঠুন। নামার কাজটা অবশ্য তুলনামূলক সহজ। কিন্তু শুধু একটা দিয়ে তো হবে না। আপনাকে ওঠা-নামা দুটোই একসঙ্গে করতে হবে।
খেলুন

 

বাড়ির সামনে যদি উঠোন থাকে বা পার্ক, আর যদি ছোট বাচ্চা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। এদের সঙ্গে কিছু ঘাম-ঝরানো খেলা খেলুন। এ ধরনের খেলা জিমনেশিয়াম ব্যায়ামের থেকেও অনেক বেশি উপকারী। এখন মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিগুলিতে নিজস্ব খেলার দল থাকে। বছরে বেশ কিছু নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টও হয়। সম্ভব হলে এই সমস্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার করার চেষ্টা করুন। লেট-ইভনিং-এ ক্লাবে গিয়ে আড্ডা মারার সময়ে গল্পে আর পানে পুরো মনোনিবেশ না-করে, কিছুটা সময় লন টেনিস বা টেবিল টেনিসে দিন। খেলার থেকে ভাল ব্যায়াম আর কিছু হতেই পারে না।
ঘরের ভেতরেই জিম

দামি যন্ত্রে ঠাসা শরীরচর্চা-কেন্দ্র প্রয়োজন হয় না। মৌলিক ব্যায়ামের কিছু জিনিসপত্র কিনে এনে বাড়িতেই জিম বসাতে পারেন। ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়েও ব্যায়ামের উপকরণ বানানো যায়। প্লাস্টিক বোতলে বালি ভরে তাকে ভার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চেয়ার বা টেবিলে নীচে পা আটকে দিয়ে পেটের ব্যায়াম করতে পারেন। এরই সঙ্গে মাটিতে ম্যাট পেতে কিছু বেসিক যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। এখন বাজারে এই ধরনের শরীর চর্চার জন্য একাধিক অ্যাপ, ডিভিডি পাওয়া যায়। অনলাইনেও শেখা যায়। অতএব, যে কোনও একটা রুমের দরজা বন্ধ করে সামনে ল্যাপটপ চালিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার যোগা এবং এক্সারসাইজ শুরু করে দিন। দেখবেন, এনার্জি লেভেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক শান্তি আসবে। কনসেনট্রেশন লেভেলও বাড়বে।
ঘরোয়া কাজে মন দিন

এটি একান্তভাবে মহিলাদের জন্য বলা। বাড়ির বিভিন্ন কাজ কখনো-সখনো মায়ের হাত থেকে কেড়ে নেন। কাজের মাসি আসেনি বলে মাথায় হাত দিয়ে বসে না-পড়ে বা নতুন ডিনার সেট বার না-করে নিজেই একটু উদ্যোগ নিন। ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছার মধ্যে দিয়ে প্রেস্টিজ ডাউন হয় না, বরং নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে আলাদা সম্মান আছে। তবে ঘর মুছতে গিয়ে আবার হাল-ফ্যাশনের ‘মপার’ ব্যবহার করে শর্টে কাজ সারবেন না যেন। একেবারে মা-মাসিদের মতোই ন্যাতা-বালতি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়ুন। জানবেন, ঝুল ঝাড়া, ঘর ঝাড়ার মধ্যে কিন্তু শরীরচর্চার গোপনমন্ত্র লুকিয়ে আছে।

এর পরেও যদি জিমে অ্যাডমিশন নিতে চান, নিতেই পারেন। কিন্তু নিয়মিত যেতে পারছেন না, সেই অজুহাতে শরীরকে মহাশয় ভেবে বসবেন না। কারণ আপনি ভুলে গেলেও, নিউটনের থার্ড ল কিন্তু আপনাকে ভুলবে না।