উত্তর আমেরিকার সম্পর্ক বিষয়ক প্রভাবশালী গবেষক জন ও জুলি গটম্যান। সুখী ও অসুখী দাম্পত্য জীবন নিয়ে তারা যুগ যুগ গবেষণা করছনে। তবে কোন সংসার টিকবে বা ভেঙে যাবে তা ৯০ শতাংশ নিশ্চয়তার সঙ্গে ধারণা করা যায়। এর জন্যে মাত্র ৫ মিনিট দম্পতিদের লক্ষ্য করলেই চলবে। বিশেষ করে ঝগড়া-বিবাদ দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করতে ওস্তাদ। গটম্যান দম্পতি জানান, সুখী দম্পতিরা যে ঝগড়া করেন না তা নয়। অসুখী দম্পতিদের চেয়েও তাদের মধ্যে বেশি বিবাদ হতেই পারে। তবে সুখীদের মূল রহস্যটা হলো, এই বিবাদ নিয়্ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তারা ক্ষতটাকে নিরাময় করে নেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। কাজেই নিয়মিত ঝগড়া লেগে থাকলেই যে সম্পর্কের ইতি ঘটতে চলেছে, তা নয়। আসল বিষয় হলো, আপনি কিভাবে ঝগড়া করছেন এবং তার ইতি ঘটাচ্ছেন। সম্পর্ক আগের মতোই রাখতে মাত্র দুটো পরামর্শ দিয়েছেন দুই বিশেষজ্ঞ।
১. ইতিবাচক হয়ে উঠুন : বিতর্কে যে সব সময় নেতিবাচক কথা বলা ও আচরণ প্রদর্শন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এর মাঝেও সঙ্গী-সঙ্গিনীর ভালো দিক সম্পর্কে মন্তব্য করুন। আবার পুরনো আমলে খুঁটিনাটি ভুলের বিষয় নতুন করে তুলে আনা উচিত নয়। হালকা কৌতুকের মাধ্যমেও কঠিন বিষয়টাকে সহজ করা যায়। এর মাধ্যমে ইতিবাচক ইতি ঘটতে পারে ঝগড়ার। এ সবই দীর্ঘমেয়াদি দাম্পত্য জীবনের লক্ষণ। এ ছাড়া দুজনের মনে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে যে, ঝগড়া-বিবাদ কখনোই ক্ষতিকর নয়। দুজন এক সঙ্গে থাকার মাঝে ঝগড় মোটেও বড় বিষয় নয়। এর মাধ্যমে প্রচণ্ড ক্ষোভ, ভয় বা যন্ত্রণার উদ্রেক ঘটতে পারে না। এই সামন্য বিবাদ কেন দুজনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থার হুমকি হবে? গটম্যান দম্পতি জানান, একজন মানুষ অপর একজনকে যত বেশি ভালোবাসতে থাকেন, তার কাছ থেকে তত কম বিপরীত মত পোষণ আশা করতে থাকেন। এটি ভুল একটি চিন্তা। দুজনের তীব্র ভালোবাসার বিষয়টি সব সময় একই থাকে। মাঝখানে বিবাদ- বিতর্ক আসতেই পারে। এটি জীবনের অংশ। এগুলো ভালোবাসার পরিমাপক নয়। তবে সবাই এভাবে চিন্তা করতে পারেন না। কেউ বরং অন্যভাবেও ভেবে নিতে পারেন। যেমন- সঙ্গী-সঙ্গিনীর ওপর তীব্র ক্ষোভ দেখানো অনেকের কাছে চরম ভালোবাসার লক্ষণ। আবার, আবার কোনো বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়াকে অনেকেই অবহেলা বলে মনে করেন। আসলে দুজনের প্রতি দুজনের আকর্ষণকে আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে। দুজনের মধ্যকার পার্থক্যের বিষয় প্রকাশ করার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। বরং এগুলো প্রকাশের মাধ্যমে প্রয়োজনে আরো দু্ই পা পেছনে গিয়ে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায়।
২. আগ্রহী থাকুন : দুই বিশেষজ্ঞ জানান, দাম্পত্য জীবনে হতাশা চলে আসলেও এ বিষয়ে আরো বেশি জানার আগ্রহ বোধ করতে হবে। সম্পর্কের শুরুতে একে অপর সম্পর্কে সব জেনে ফেলতে চান। পরে অসঙ্গতি চোখ পড়লেই হতাশা চলে আসে। তখন মনে হয়, মানুষটা এমন ভাবিনি। আসলে এমন ভাবনার শেষ নেই। যতই জেনে থাকুন, আরো অনেক জানার বাকি থেকেই যায়। তাই নতুন কিছু দেখলে হোঁচট খাওয়ার কিছু নেই। আমরা ঝগড়া লাগলে অভ্যাসবশত তা করেই যায়। হতাশা আরো ভর করতে থাকে। অনেকেই অপরের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে বলে। সত্যিকার বিষয়টি হলো, এ অবস্থায় বাস্তবিক সমবেদনা জানানোটা খুবই কঠিক কাজ। মূলত অপরের বিষয়টা বুঝতে হলে তার দৃষ্টিতে বিচার করা, তার যুক্তি উপলব্ধি করা ইত্যাদি বিশ্লেষণের বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে। ঝগড়ার সময় কেবল দোষ ছোঁড়াছুঁড়ির খেলায় না গিয়ে অন্যভাবেও এগোনো যায়। এতে করে নতুন একটি পরিস্থিতির উদয় হতে পারে যা হয়তো কখনো দেখা হয়নি। নতুন নানা চিন্তা ও উপায় বেরিয়ে আসবে। দুজন কিছু বিষয়ের চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন। যেমন- ঝগড়া শুরু হলেই দুজন একটি সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে বসবেন। এ সময় দুজনের বক্তব্য প্রদর্শনের সময় অঙ্গভঙ্গি ও আচরণে ভিন্নতা থাকবে। দুজন ক্ষোভের কথা উচ্চ কণ্ঠে না বলে ফিসফিস করে বলার চেষ্টা করুন। এ ধরনের পদ্ধতির প্রয়োগে দুজনের সম্পর্ক আরো অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।