Site icon Trickbd.com

ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ কী?

ফুসফুস ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি ক্যানসার। ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ নিয়ে কথা বলেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের পরামর্শক ডা. সৌমেন বসু।

 

প্রশ্ন : ফুসফুসের ক্যানসার বলতে কী বুঝি? প্রাথমিক পর্যায় থেকে এটি কীভাবে ক্যানসারে রূপ নেয়?

উত্তর : আসলে প্রথমে বলতে হয়, ফুসফুসের ক্যানসার কী কারণে হয়, এ বিষয়ে। আসলে আমরা তো মূলত কোনো ক্যানসারের কারণই জানি না। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় আছে, যেটি হলে দেখা গেছে, এটি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সেখানে দেখা গেছে, ধূমপানের সাথে ফুসফুসের ক্যানসারের একটি শক্ত যোগসাজশ আছে। এটি একটি কারণ। এটি আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছি।

ফুসফুসের ক্যানসার হলে প্রথমেই মানুষ আমাদের কাছে আসেন না। অনেক দেরি করে আসেন। কেন? এরও কারণ রয়েছে। রোগটা যে ভেতরে হয়েছে সেটি তো মানুষ বুঝতে পারে না। আমরা সাধারণত নিজেরাই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কোনো কারণ ছাড়া এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করাই না। সে নিজে কিন্তু  বিষয়টি অনুভব করতে পারে না। তখনই অনুভব করে যখন তার কোনো কষ্ট হয়।

সেই কষ্টটা কী কী হতে পারে? শুকনো কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। বুকে ব্যথা হতে পারে। এই জিনিসগুলো হলেই সাধারণত মানুষ চিকিৎসকের কাছে যায়। তখন আমরা দেখি এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে, এ ছাড়া নতুন  যে পদ্ধতি এসেছে পেটসিটি তার মাধ্যমেও আমরা রোগকে নির্ণয় করতে পারি। এ ছাড়া বায়োপসিও করতে হয়। নয়তো কখনোই সেটি নির্ধারণ করা যায় না।

ডা. সৌমেন বসু।

প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন কষ্ট অনুভব করতে না পারলে রোগী চিকিৎসকের কাছে আসে না। তাহলে যখন সমস্যাটি নিয়ে আসে তখন কী চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়ার সময়টি থাকে?
উত্তর : কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে। তবে সেটি খুবই কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটি একটু অগ্রবর্তী পর্যায়ে চলে যায়। কারণ, ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা, যেটি রোগকে সারিয়ে তুলতে পারে, সেটি হলো সার্জারি। খুব ছোট পর্যায়ে না থাকলে সার্জারি করে কোনো লাভ হয় না। সেই্ কারণে সার্জারির কথা আমাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে। যদিও খুবই কম সংখ্যক রোগীই আছেন, যারা সার্জারির দিকে যেতে পারে।

আর সার্জারি যদি করা সম্ভব না হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী? ক্যানসার এমন একটি রোগ যেটি কিন্তু কেবল একটি জায়গায় হয় না।  তাই আমাদের সারা শরীরের যত্ন নিতে হবে, নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গের নয়। যেহেতু এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের এমন কিছু চিকিৎসা করতে হয়, যেটি সারা শরীরে কাজ করবে। এই জন্য ক্যামোথেরাপি দিতে হয়। এখন নতুন কিছু ওষুধ এসেছে, সেগুলোকে আমরা ব্যবহার করি। এখানে রেডিওথেরাপির একটি ভূমিকা রয়েছে।

রেডিওথেরাপির ক্ষেত্রে যখন আমরা রোগীকে পাই, পর্যায় ২ বা পর্যায় ৩ -এ। এখানে আমরা ক্যামো ও রেডিয়েশন একসঙ্গে করতে পারি। অথবা প্রথমে ক্যামোথেরাপি দিয়ে দিতে পারি। আর যখন রোগটি পর্যায় ৪- এ আসে, তখন রোগটি হাড় বা মস্তিস্কে ছড়িয়ে যায়। তখনো কিন্তু আমাদের রেডিয়েশন ব্যবহার করতে হয়। রেডিয়েশনের ব্যবহার একদম শেষ পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে।

প্রশ্ন : ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় কী?

উত্তর : ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করে দেওয়া  ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় অবশ্যই। তবে সব স্তর থেকেই জিনিসটি আসা দরকার। আপনি যদি জাতীয় পর্যায় চিন্তা করেন, ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কিন্তু জাতীয় ভাবে প্রতিরোধের কথাও বলা হচ্ছে। কারণ, যারা আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক তাদের কিছু ভূমিকা রয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটিতে যাঁরা আছেন তাঁদের কিছু ভূমিকা আছে এবং আমরা যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি তাঁদেরও কিছু ভূমিকা আছে। এই প্রতিটা জায়গায় আমাদের ভূমিকা আছে, যেখানে আমরা ধূমপানবিরোধী কার্যক্রমগুলো করতে পারি। মানুষকে যদি সঠিকভাবে বোঝানো যায়, এর কুফলটা কী, ধীরে ধীরে হলেও মানুষ কিন্তু বুঝতে পারবে। ধূমপান যদি বন্ধ করে দেওয়া যায়, রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে। শুধু ফুসফুসের রোগ নয়, শরীরের অনেক রোগই কিন্তু কমে আসবে এবং ফুসফুসের আরেকটি রোগ সিওপিডিও কমে আসবে। সেই জিনিসগুলো সব সম্ভব যদি আমরা একটি দিকে নজর দেই।

জাতীয় ও ব্যক্তিগত সব পর্যায়ে আমাদের এখানে কাজ করতে হবে। আমাদের আশপাশে যাঁরা আছেন তাঁদের সেই বার্তা দিতে হবে, এর কুফল কী জানাতে হবে।

প্রশ্ন : যে রোগীটি এ জাতীয় সমস্যায় ভুগছে তার জন্য আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?

উত্তর : আমরা সবসময় বলি ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য। বেশিরভাগ রোগীই ছেড়ে দেয়। তবে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। কারণ, এই চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখেছি কিছু মানুষ আছে যারা ধূমপান ছাড়তে পারে না। যাদের চিকিৎসা চলাকালীনও তারা ধূমপান করতে থাকে। তাদের আমরা বারবার ধূমপান করতে বারণ করি।

কারণ, ক্যামোথেরাপি বা রেডিয়েশন চলার সময় যদি সে ধূমপান করে, তখন কাজ করে না।এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব বেড়ে যায়। সেটা মানুষের বোঝার দরকার আছে।

দেশজুড়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের খোঁজ পেতে ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে ভিজিট করুন www.doctorola.com অথবা কল করুন 09 606 707 808 নম্বরে। Doctorola.com বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ও কল সেন্টার ভিত্তিক ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সার্ভিস।