বেশিরভাগ মোটা মানুষ তাদের ওজন একটু কমলেই খুশি হন। এক পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য অনেক শ্রমসাধ্য ব্যয়াম করেন তারা। ব্যয়াম করা ওজন কমানো ছাড়াও সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই প্রত্যেকের জন্যই উপকারী। তবে আপনি শুনে হয়তো অবাক হবেন যে এমন কিছু ফ্যাটি ফুড আছে যা খেলে ওজন কমে। আসলেই এমন কিছু চর্বিযুক্ত খাবার আছে যা খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার পরিবর্তে কমে।
ফ্যাট চার প্রকারের হয় যেমন- স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট হচ্ছে খারাপ ফ্যাট যা কক্ষ তাপমাত্রায় কঠিন হতে থাকে। লাল মাংস, পোল্ট্রি ও দুগ্ধ জাতীয় খাবারে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং বেক করা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। অপরদিকে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা কক্ষ তাপমাত্রায় তরল হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই সঠিক ফ্যাট নির্বাচন করতে পারলেই ওজন কমানো সম্ভব। ভালো বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ক্ষুধা দমন করে ও ক্যালোরি কমায় এবং হৃদ স্বাস্থ্যের ও বিপাকের উন্নতি ঘটায়। সুস্বাদু ও ওজন কমতে সাহায্য করে যে চর্বিযুক্ত খাবার গুলো তা সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।
১। গরুর মাংস – ঘাস খাওয়ানো হয় যে গরুকে সেই গরুর মাংসে ভালো ফ্যাট থাকে। নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায় যে, ঘাস খাওয়া গরুর মাংসে উচ্চমাত্রার ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়। ঘাস খাওয়া গরুর মাংস চর্বিহীন ও খুবই কম ক্যালরিযুক্ত।
২। অলিভ ওয়েল – অলিভ ওয়েল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উপাদান পলিফেনল এবং হৃদপিণ্ডকে সুদৃঢ় করার মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ। স্থূলতা বিষয়ক সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চমাত্রার শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় খাবারের চেয়ে ও অলিভ ওয়েলে উচ্চমাত্রার অ্যাডিপোনেক্টিন থাকে। অ্যাডিপোনেক্টিন এক ধরণের হরমোন যা শরীরের চর্বি ভাংতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় অন্য তেলের পরিবর্তে জলপাই তেল ব্যবহার করুন।
৩। নারিকেল তেল – নারিকেল স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ যা অর্ধেকের বেশিই লরিক এসিড থেকে আসে। লরিক এসিড একটি স্বতন্ত্র লিপিড যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং কোলেস্টেরলের স্কোর উন্নত করে। লিপিড জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, নারিকেল তেল পেটের মেদ কমাতে পারে। এই গবেষণাটির জন্য অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে বিভক্ত করা হয়। একটি দলের অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন ২ টেবিলচামচ নারিকেল তেল খেতে দেয়া হয়। অপর দলটিকে সয়াবিন তেল। উভয় দলের অংশগ্রহণকারীদেরই ওজন কমতে দেখা যায়। তবে শুধুমাত্র নারিকেল তেল গ্রহণকারীদেরই কোমর সঙ্কুচিত হতে দেখা যায়।
৪। ডার্ক চকলেট – হ্যাঁ, ভুঁড়ি কমতে সাহায্য করে ডার্ক চকলেট। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে যে, যখন একজন মানুষ খাওয়ার ২ ঘন্টা পূর্বে ডার্ক চকলেট খায় তখন মিল্ক চকলেট যারা খান তাদের চেয়ে ১৭% ক্যালোরি কম গ্রহণ করে। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন যে এটি হওয়ার কারণ ডার্ক চকলেটে বিশুদ্ধ কোকোয়া বাটার থাকে। কোকোয়া বাটার স্টেয়ারিক এসিড সমৃদ্ধ যা পরিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে। অপরদিকে অন্য চর্বিকে দ্রুত অন্ত্র নালীর মধ্য দিয়ে বাহির হয়ে যেতে সাহায্য করে। ডার্ক চকলেটে হজম হতে সময় লাগে তাই ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমতে সাহায্য করে।
৫। কাঠবাদাম – উচমাত্রার ফ্যাট থাকা সত্ত্বেও কাঠবাদাম ওজন কমতে সাহায্য করে বলে অসংখ্য গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওবেসিটি এন্ড রিলেটেড মেটাবলিক ডিজঅর্ডারস এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ছয়মাস যাবত দুটি দলে দুই ধরণের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার দিয়ে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা হল- কম চর্বিযুক্ত ও কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য ( ১৮% ফ্যাট) এবং অন্য দলটিকে মধ্যম মানের চর্বিযুক্ত (৩৯% ফ্যাট)খাবার দেয়া হয় যাতে কাঠবাদাম যুক্ত করা হয়। প্রথম দলটির চেয়ে দ্বিতীয় দলটির অংশগ্রহণকারীদের ওজন অধিক পরিমাণে কমতে দেখা যায়। এছাড়াও কাঠবাদাম ভক্ষণকারীদের কোমর ৫০% বেশি সংকুচিত হয়।
এই পাঁচটি খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন এবং নিজের ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকুন।