রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানেও অনূভূত হয় এই ভূমিকম্প। বাংলাদেশ সময় রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে এর মাত্রা ছিল ৭.২। বাংলাদেশ থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের মাওলাইকে এর উৎপত্তিস্থল।
শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে ফাটলের খবর পাওয়া গেছে। কেরাণীগঞ্জের আগানগরের বাসিন্দা বর্ষা বিশ্বাস বাংলামেইলকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই দেখি মাথা ঘুরছে। বুঝতে পেরে দৌড়ে নিচে নামি। পড়ে উপরে গিয়ে দেখি বিল্ডিংয়ে কয়েক জায়গায় ফাটল ধরেছে। আগে যেগুলো ছিল না।’
গত সপ্তাহেও বাংলাদেশে একবার ভূমিকম্প অনূভূত হয়। ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ঐ ভূমিকম্পটি মৃদু হলেও আজকেরটি ছিল শক্তিশালী। চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে দেশে। ঘন ঘন এমন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের অশনি সঙ্কেত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূ-তাত্ত্বিকরা বলছেন, ‘ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান, ইউরেশীয় একাধিক ভূ-ফাটল লাইনের বিস্তার ও অব্যাহত সঞ্চালনের কারণে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয় হিসেবে চিহ্নিত। সাম্প্রতিককালে উপর্যুপরি মৃদু, হালকা, মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনের কারণে এ অঞ্চলের ভূ-ফাটল লাইনগুলো নাজুক ও শিথিল হয়ে পড়ছে, যা অদূর ভবিষ্যতে আরও প্রবল মাত্রায় ভূমিকম্পের আলামত বহন করছে।
বিগত এক-দেড়শ বছরে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার তীব্র ক্ষমতাসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেট ও ভূ-ফাটল (ফল্ট) লাইনের অন্তর্গত হওয়ার কারণে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার ত্রিদেশীয় এ অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, ভূ-গঠন অনুসারে এর অবস্থান পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ে। বিশ্বে সাধারণত একই ভূ-কম্পন প্রবণ এলাকায় ৫০, ৭০, ১০০, ১৫০ বছর পরপর প্রবল বা শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
বাংলাদেশ ও এর সন্নিকটে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পন-প্রবণ অঞ্চলটিতে বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭ ও ৮ মাত্রায় কমপক্ষে ৭টি ভূমিকম্প এবং একাধিক ভয়াল সুনামি আঘাত হানে, এমন রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২টির উৎপত্তিস্থল (ইপি সেন্টার) ছিল বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরেই এবং অপর ৫টি ভূমিকম্পের উৎস ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫০ কিমি দূরত্বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে বেশ উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারত ও মিয়ানমারে ভূ-পাটাতন ও ভূ-ফাটল ঘন ঘন স্থানচ্যুত হচ্ছে। এর ফলে শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্প বলতে গেলে অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
বুধবার সন্ধ্যার ভূমিকম্পটি যথেষ্টেই শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এর উৎপত্তিস্থল বেশ দূরে হওয়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে যেকোন মুহূর্তে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।’