Site icon Trickbd.com

টার্গেট যখন শিশুরা

Unnamed


ধূমপানে বিষপান
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,
মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন
অন্তত ২০ কোটি টাকার
মাদকসেবন করে থাকে। যার
বাজার মূল্য মাসে ৬০০ কোটি
টাকা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন
২০০৫ সংশোধন করা হলেও এখনো
এই আইনের সুফল ও যথাযথ প্রয়োগ
চোখে পড়ে না। প্রকাশ্যে
ধূমপান করলে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ
আইন অনুযায়ী ৩০০ টাকা
জরিমানা আদায়ের বিধান
থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ নেই।
হরহামেশাই শিশুদের কাছে
তামাকজাত পণ্য বিক্রির দৃশ্য
চোখে পড়ছে। আর বর্তমান সময়ে
স্মার্টনেসের অংশ হিসেবে
তরুণীরাও আসক্ত এই ভয়াবহ
মাদকে।
দৃশ্যপট ১:
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩নম্বর
রোডের বাসিন্দা শাহজালাল।
পেশায় একজন ব্যাংকার।
ব্যাংকার স্ত্রী সাবিহা ও পাঁচ
বছরের ছেলে অনিককে নিয়ে
ছোট সংসার তার। ছেলে অনিক
ধানমন্ডির একটি ইংরেজি
মাধ্যমের স্কুলে ক্লাস টু’তে
পড়ে। অন্য সব দিনের মতই বাড়ি
ফিরে ব্যাংকার দম্পতি দেখতে
পান অবাক করা দৃশ্য। তাদের
আদুরে শিশুটি বেডরুমে ইজি
চেয়ারে বসে সিগারেট
জ্বালিয়ে ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
বিষয়টি খুবই ভয়ানক এবং
অস্বাভাবিক। কিন্তু এটিই সত্য।
বাবা তখন একটু ধমকের স্বরে
জানতে চাইলে ছেলে অনিকের
সোজা উত্তর- ‘বাবা আমি শাহরুখ
খান’। দম্পতির আজ বুঝার
অপেক্ষা রইলো না ছেলে প্রিয়
তারকাকে অনুসরণ করতে গিয়েই
এ সর্বনাশ ডেকে আনছে।
দৃশ্যপট ২:
পরিবারের সবার অপেক্ষা নতুন
অতিথির মুখটি দেখার জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানরত একটি
দাতা সংস্থার ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তা জেবিন খান (৩৪)
প্রথমবারের মত মা হতে যাচ্ছেন।
অপেক্ষার প্রহর শেষে খবর এলো
একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান
হয়েছে তার। সবার মাঝে যখন
আনন্দের বন্যা বইছে তখনই খবর
এলো নবজাতককে আইসিইউ’তে
নিতে হবে শ্বাসজনিত সমস্যার
কারণে। কিন্তু পরিবারের পক্ষ
থেকে এ ব্যাপারে যথাযথ
ব্যবস্থা না নেয়ায় জন্মের
দুইদিনে’র মাথায় শিশুটির অকাল
মৃত্যু হয়। এতে পুরো পরিবারের

সকল আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।
চিকিৎসকেরা জানান,
মেয়েটি’র মৃত্যুর অন্যতম কারণ
ছিল গর্ভে থাকা অবস্থায়
মায়ের ধুমপান না ছাড়া।
দৃশ্যপট ৩:
বনানীর ১৭ নম্বর রোডে বেশক’টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে।
রোডটিতে রয়েছে বেশক’টি
সিগারেটের দোকান, যেগুলো
সন্ধ্যা গড়াতেই পরিণত হয়
বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রির
স্পটে। তবে দুঃখের বিষয় হলেও
সত্যি এ রোডটির মাদক আর
তামাকজাত পণ্য বিক্রি আর
সেবনের সিংহভাগই শিশু বা
কিশোর। সামিউল নামের সাত
বছর বয়সী এক শিশু জানান,
গুলশানের টিএন্ডটি বস্তি থেকে
ইয়াবা ও গাজাঁ এনে এই সড়কে
বিক্রি করছে প্রায় তিনমাস।
প্রতিদিন বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২
হাজার টাকা। বস্তির বড়ভাই
মিনহাজকে টাকা জমা দিলে
সামিউলকে রোজ হিসেবে ৩০০
টাকা দেয়া হয়। আইন-
শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নজর
এড়ানোর জন্যই রাজধানীসহ
সারাদেশে তামাক ও মাদক
বিক্রিতে শিশুদের ব্যবহার করা
হচ্ছে বলে জানান এর সঙ্গে
সংশ্লিষ্টরা। আর মাদক ব্যবসার
পাশাপাশি এসব সামিউলরাই
পরিণত হচ্ছে মাদসেবীতে।
দৃশ্যপট ৪:
রাজধানী উত্তরার স্কলাস্টিকা
স্কুলের রাস্তা ঘেঁষেই চোখে
পড়ে লাল রঙের টি-শার্ট পরা দুই
কিশোর-কিশোরীকে। বয়স
আনুমানিক ১৫-১৬। দু’জনই একটি
বিদেশি ব্রান্ড এর সিগারেটের
ব্রান্ড প্রোমোটার হিসেবে
কাজ করছে। স্কুলের
শিক্ষার্থীদের এটি বুঝানোই
তাদের প্রধান কাজ যে, তাদের
ব্রান্ড শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
খুবই লাইট সিগারেট। সবাই খেতে
পারে। আর এইসব তথাকথিত লাইট
ব্রান্ডের সিগারেটের প্যাকেটে
দাম পর্যন্ত লেখা থাকে না।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি
দাম নিতেও কার্পণ্য করছে না
ব্রান্ড প্রমোটররা। এদেরই
একজনের সঙ্গে আলাপকালে
জানান, এই স্কুলের সবাই
বড়লোকের সন্তান, তাই বিক্রিও
ভালো। যদিও সিগারেটের সব
ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ
করেছে সরকার।
দৃশ্যপট ৫:
একটি মাল্টিন্যাশনাল টোবাকো
প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক
অনুষ্ঠানের সংবাদ গণমাধ্যমে
যাতে প্রকাশ বা প্রচার না হয়
সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা
চালালাম। প্রায় প্রতিটি
গণমাধ্যমের শীর্ষ
কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি
এবং টেলিফোনে কথাও বললাম।
তাদের অনেকেই আশ্বস্ত করে
বললো, যেহেতু তামাকজাত
পণ্যের সঙ্গে এখন বিজ্ঞাপনের
কোনো সম্পর্ক নেই কাজেই এ
সংবাদ প্রচারে আমরা বাধ্য নই।
বিজ্ঞাপন বিভাগ থেকেও
কোনো চাপ আসবে না। আর
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে
আমরা এ সংবাদটি প্রচার বা
প্রকাশ করবো না। কিন্তু অবাক
করার বিষয় সিংহভাগ
গণমাধ্যমেই প্রচার/প্রকাশ হলো
সেই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক
অনুষ্ঠানের সংবাদ। তবে একেই
কি বলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা?
পরবর্তীতে অনেকের সাথে
টেলিফোনে আলাপকালে তারা
জানান, উপর থেকে নির্দেশ
ছিলো সংবাদটি ছাপার বা
প্রচারের।
উপরের ৫টি ঘটনা বিচ্ছিন্ন হলেও
এসবের একই সূত্রতা খুঁজে পাওয়া
যায়। আর তা হলো দেশে মাদক
বা তামাকের ভয়াল ছোবলের
প্রধান টার্গেটেই রয়েছে শিশু-
কিশোররা। তবে কোন পথে
এগুচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম,
একবারও কি আমরা তা ভেবে
দেখছি। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ
দুই ক্ষেত্রেই তামাক আর
মাদকের প্রধান ঝুকিঁর মাঝে
রয়েছে শিশু আর কিশোর-
কিশোরীরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান
অনুযায়ী দেশে বর্তমানে
মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত দেড়
কোটি।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের
’প্রিভিলেন্স অব মেটাল
ডিজঅর্ডার, এপিলেপসি,
মেন্টাল রিটার্ডেশেন অ্যান্ড
সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ অ্যামাং
চিলড্রেন অব ঢাকা ডিভিশন’
শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, ১১
থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েরাই
মাদকে বেশি আসক্ত। রাজধানী
ঢাকায় মাদকাসক্ত শিশুর ১৭
শতাংশই মেয়ে। নানাবিধ
অসঙ্গতি, সামাজিক
অবকাঠামোগত
নিরাপত্তাহীনতাই মেয়েদেরকে
মাদকে আসক্ত করছে বলেও
জরিপে উল্লেখ করা হয়।
♦♦♦Visit My Site ♦♦♦♦