স্বাস্থ্য ডেস্কঃ অতি পরিচিত সস্তা
একটি ফল হল কলা। সারা বছর পাওয়া
যায় এই ফলটি। কিন্তু এই ফলটি খেতে
আমরা অনেকেই পছন্দ করি না। আবার
অনেকে মনে করেন কলা শরীরকে
মোটা করে তোলে। অথচ নিয়মিত
কলা খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কলা দৈনন্দিন অনেক পুষ্টির চাহিদা
পূরণ করে দেহকে সুস্থ রাখে। তাই
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন
একটি কলা, আর দেখুন এর ম্যাজিক।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলার
রাখার উপকারিতা
১। কলা একটি আঁশযুক্ত ফল। এটি হজম
শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন
একটি করে কলা খান।কলার মধ্যে প্রচুর
পরিমান ফাইবার থাকায় পেট
পরিষ্কার রাখতে কলা অপরিহার্য্য।
২। শরীরে হিমোগ্লোবিন ও
ইনসুলিনের জন্য প্রচুর পরিমাণ
ভিটামিন-বি৬ প্রয়োজন। আর কলাতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি৬ আছে,
যা দেহে পুষ্টি যোগিয়ে থাকে।
৩। প্রতিদিন ৩টি করে কলা খেলে
আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে
সাহায্য করবে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের
সমস্যায় ভোগেন, তাদের প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় কলা রাখুন, দেখবেন
রক্তচাপ আপনার নিয়ন্ত্রনে চলে
এসেছে।
৪। প্রতিদিন ব্যায়াম করার আগে ২ টি
কলা খেয়ে নিন। এটি আপনার দেহের
রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখবে
এবং তার সাথে ব্লাড সুগারও
নিয়ন্ত্রন করবে।
৫। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন
আছে। ফলে নিয়মিত কলা গেলে
দেহের রক্ত শূন্যতা দূর হয়ে যায়।
৬। কলা ওজন কমাতেও সাহায্য করে
থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে,
কলা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি
দিয়ে থাকে। ফলে অন্য কোন খাবার
খাওয়ার রুচি ও আগ্রহ থাকে না। যা
ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৭। এক গবেষণায় বলা হয়েছে আঁশযুক্ত
খাবার কার্ডিওভাসকুলার রোগের
ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। প্রতিদিন কলা
খান আর হৃদ রোগ থেকে দূরে থাকুন।
৮। শরীরের পেশির সুস্থতার জন্যও কলা
বেশ উপকারী। ব্যায়ামের আগে
কিংবা পরে কলা খান এটি আপনার
পেশীর সমস্যা দূর করবে এবং পায়ের
মজবুত পেশী গঠনে সাহায্য করে।
৯। আমরা অনেকই মনে করে থাকি
আছে। কিন্তু মজার ঘটনা কলাতেও
পাওয়া যায় কিছু পরিমাণে
ভিটামিন সি। এছাড়া প্রয়োজনীয়
অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়
কলা থেকে।
১০। কলাতে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাগসিয়াম আছে যা বিষণ্ণতা দূর
করতে সাহায্য করে। আমরা অনেক সময়
বিভিন্ন করাণে বিষণ্ণতায় ভুগে
থাকি। এই বিষণ্ণতা দূর করতে কলা
অনেক বেশি কার্যকরী।
১১। কলা দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে
থাকে। কলাতে প্রচুর পরিমাণের
ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন,
মিনারেল আছে যা দেহের এনার্জি
লেভেল ঠিক রেখে শক্তি বৃদ্ধি করে
থাকে। প্রতিদিন নাস্তায় ১টি কলা
রাখুন এটি আপনাকে সারা দিনে
কাজে এনার্জি দিবে।
১২। কলাতে প্রচুর পরিমাণে
পটাশিয়াম আছে যা মস্তিষ্কে
অক্সিজেন সরবারহ করে থাকে। এটি
দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে
সাহায্য করে থাকে।
১৩। টানা ১ বছর ধরে পরীক্ষা
চালানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের
টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন পড়ুয়ার ওপর।
পরীক্ষার আগে টানা ব্রেকফাস্ট,
ব্রাঞ্চ ও লাঞ্চে কলা খাওয়ানো হয়
তাদের। দেখা গিয়েছিল কলার
মধ্যে থাকা পটাশিয়াম তাদের
মনসংযোগ বাড়ানোর ফলে অন্যদের
থেকে পরীক্ষায় ভাল করেছিলেন ওই
২০০ জন পড়ুয়া।
১৪।মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা
ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা
অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার আগে
কলার খোসা ঘষে দেখুন ত্বকের ফুলে
ওঠা অংশে।
১৫। নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের
সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা।
অত্যন্ত খারাপ পেটের রোগেও কলাই
একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া
যেতে পারে। কলা অস্বস্তি কমিয়ে
আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
১৬। অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়।
অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জ্বর হলে
ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা।
থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে
কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
১৭। পায়ের গোড়ালি ফেটে গেলে
এক্ষেত্রে কলা অনেক উপকার করে। শুধু
কলা থেঁতলে নিয়ে আপনার পায়ের
গোড়ালিতে লাগিয়ে নিন। এরপর
কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, যেন তা ধীরে
ধীরে চামরার ভেতর প্রবেশ করতে
ফাঁটা গোড়ালী নিয়ে দুশ্চিন্তা
করতে হবে না।
১৮। রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ
করেন কিন্তু ঘুম আসে না? কলা হলো এই
সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান। কলা
ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার
অ্যামিনো অ্যাসিড এর খুবই ভালো
উৎস। এই ট্রিপটোফেন সেরোটিন
নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপুর্ন
ভুমিকা পালন করে। এই হরমোন মনে
প্রশান্তি নিয়ে আসে, এমনকি
মেজাজ খারাপ থাকলে তা-ও
ভালো করে দিতে পারে। ঘুমানোর
প্রায় এক ঘন্টা আগে একটি কলা
খেয়ে নিন যাতে আপনার শরীর তা
হজম করে ট্রিপটোফেন তৈরি করতে
পারে আর আপনাকে উপহার দিতে
পারে আকটি শান্তিময় ঘুম।
১৯। মাথাব্যাথা ও মাইগ্রেন এর
ভয়ানক ব্যাথা আপনার সারাটা দিন
মাটি করে দিতে পারে। কিন্তু কলা-
ই পারে এই অবস্থা প্রতিরোধ করতে।
কলায় প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম
থাকায় এটি মাথাব্যাথার প্রকৃতিক
নিরাময় হিসেবে কাজ করে। তাই
এখন থেকে যে কোনো সময় আপনার
মাথা ব্যাথা শুরু হতে চাইলেই চট করে
একটি কলা খেয়ে ফেলুন।
২০। কলা মুড ভালো করতে কাজ করে,
বিষণ্ণতা কমায়। আর প্রতিদিন দুটি
কলা খাওয়া এই প্রক্রিয়াকে
ত্বরান্বিত করে। কলার মধ্যে থাকা
উপাদান মস্তিষ্কে সুখী হরমোনের
নিঃসরণ বাড়ায়। তাই বিষণ্ণতায়
ভুগলে দিনে দুটি করে কলা খান।
২১। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
হজমের সমস্যা থাকলে টানা এক মাস
দিনে দুটি করে কলা খেয়ে দেখতে
পারেন।
২২। কলা ক্যানসার প্রতিরোধে
কার্যকর ভুমিকা পালন করে ।
এরপর থেকে বাজারে গেলে বা
দোকান থেকে কোনো কিছু কিনতে
গেলে সাথে কলা কিনতে কখনো
ভুলে যাবে না যেন! নিয়মিত কলা
খান আর সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।