মোটিভেশানের পেছনের সাইকোলজিক্যাল কলকব্জা!
মোটিভেশান কি?
মোটিভেশান হলো এক প্রকার উদ্দীপনা যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করে; যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের সাবকনশিয়াস অংশটি পজেটিভ উদ্দীপনায় আলোড়িত হয়। এই আলোড়ন এর তাড়না এতোটাই প্রখর হয় যে সেটি এক সাইকোলজিক্যাল স্পার্ক তৈরী করে; এটি মূলত মস্তিষ্ক ডোপামিন এর মতো উদ্দীপক হরমোন নিঃসরণে ইলেক্ট্রিক ইম্পালসে সিগগ্যাল জেনারেট করে যা আমাদের উদ্ধুদ্ধ করে মাত্র!
মোটিভেশান কিভাবে কাজ করে?
মোটিভেশন বা পজেটিভ সাইকোলজিক্যাল উদ্দীপনা ইন্দ্রিয়গতভাবে ইফেক্ট ক্রিয়েট করে – সেটি হতে পারে কোন অপ্টিক্যাল-ভিজ্যুয়াল, অডিটরিয়াল এবং কিংবা সিক্স সেন্সের মাধ্যমে [সিক্স সেন্স বিষয়টি অবশ্য স্থিতিগতভাবে একটু সমালোচিত ফ্যাক্ট]; অথবা সবগুলোর একত্রিত সমন্বয়!
অপ্টিক্যাল-ভিজ্যুয়াল মোটিভেশান।
উপরের ইমেজটি ভালো করে দেখুন – এখানে লেখা মোটিভেশান বাক্যটি শুধুই উপদেশমূলক নয় বরং তা একরূপ নন-ভার্বাল আদেশ সূচক; এখানে বলা হচ্ছে “সাফল্য একদিন আসবেই” এটা এমন নিশ্চয়তা প্রদান করে যে “সফলতা লাভ করা সম্ভব” এবং পরবর্তীতে “মন থেকে চাওয়া” এর বিষয়টি মানসিকভাবে পজেটিভ ইনটেনসিটিতে উদ্ধুদ্ধ করছে এবং সবিশেষে আদেশসূচক ভাবে “পরিশ্রম করতে হবে” এমন উপদেশ দিচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে এই সফলতার সম্ভাবনায় নিশ্চয়তার সহিত পজেটিভ সাইকোলজিক্যাল ইনটেনসিটির সহিত লজিক্যাল নম্র আদেশসূচক ক্রিয়াবাচকতা পরস্পর যুক্ত হয়ে আপনার মস্তিষ্কে মোটিভেশান যোগাচ্ছে।
অপ্টিক্যাল বা ভিজ্যুয়াল মোটিভেশান শুধুমাত্র যে ইমেইজের মাধ্যমেই সংঘটিত হয় তা নয় বরং ভিডিও এর ক্ষেত্রেও আরও অধিকভাবে কার্যকরী – যেটার অন্যতম প্রকৃষ্ট নিদর্শন হলো বিভিন্ন মোটিভেশনাল মুভি; লেখার শুরুতেই বলেছি আর্টিকেলে আমি মোটিভেশনাল কোন কিছুই লিখবো না বরং মোটিভেশনের সাইকোলজিক্যাল এনালাইসিসে গুরুত্ব দিবো তাই কোন মোটিভেশান মুভি সাজেস্ট করবো না – আপনি চাইলে Google Search করে Best Motivational Movies in *Language* [Language যে ভাষার মুভি দেখতে পছন্দ করেন] লিখে সার্চ করতে পারেন।
অডিটরীয়াল মোটিভেশান
অডিটরিয়াল মোটিভেশানের ক্ষেত্রে এমন শব্দ বা বাক্য যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে – সেটা হতে পারে কোন গান [এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ না করলেই নয় যে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বেতার হতে যেসকল কণ্ঠশিল্পী স্বাধীনতা গান গাইতেন তারা পক্ষান্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে একরূপ মোটিভেশন যুগিয়েছে – এমনকি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে “মুক্তির মন্দির সোপানতলে কতো প্রাণ হলো বলিদান…” এবং আভাষ এর “তুমি আভাষ হয়ে আশা হতাশার মুখের বাণী…” গানটিও একরূপ মোটিভেশানে ক্রিয়াশীল হয়েছে] এছাড়াও প্রিয়জনের নিকট যেমন বাবা/মা এর মুখনিঃসৃত উপদেশ ও স্বান্তায় স্যাটিসফেকশনের সহিত মোটিভেশান পাওয়া যায়; উদাহরণস্বরূপ কোন পিতা যদি তার সন্তানকে এভাবে বলে “বাবা তোমার লক্ষ্য পূরণে তুমি যেটা ইচ্ছা হয় করো….আমি সবসময়ই তোমার পাশে আর সাথে আছি” তাহলে মানসিক নির্ভারতার সহিত সাইকোলজিক্যাল স্ট্যামিনাতে মোটিভেশান গেইন হয়।
সিক্স সেন্স মোটিভেশান
সিক্স সেন্স বিষয়টি বেশ বিতর্কিত একটি ফ্যাক্ট কেননা আলাদা করে সিক্স সেন্স আছে নাকি অন্যসকল ইন্দ্রিয়ের সম্মিলনে কমপ্লেক্স সেন্সেশন সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে; তদুপরি যেকোন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সহিত অবস্থা ও অবস্থানের সম্মিলনে মোটিভেশান ক্রিয়াশীল হতে পারে; যেমন হঠাৎ যদি রাস্তাতে একটি এক্সিডেন্ট দেখেন তাহলে নিশ্চিতভাবে ঐ সময়ে রাস্তা পারাপার আপনার তাৎক্ষণিক সতর্কতা কাজ করবে; অপরাপর প্রেমময়ী সময়ে প্রিয়তম বা প্রিয়তমার কথাতে আপনার মানসিক স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত হতে পারেন যেমন “প্রিয়তমার পারিবারিক বিবাহের তোড়জোড়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার প্রয়াস” ইত্যাদি।
সাইকো-কেমিক্যাল মোটিভেশান
এই বিষয়টি বেশ দীর্ঘ এবং জটিল তথাপি বেশ সেনসেটিভ তাই অনেকটা উহ্যভাবে বিষয়টির আপাত আলোচনা করা হলো; এমন বেশ কিছু উপাদান আছে যা কেমিক্যালি আপনার ব্রেইনে ডোপামিন হরমোনে আনন্দ ও খুশীর উদ্দীপনায় যেকোন উদ্দেশ্যে সফলকাম হতে আপনাকে নিয়ত প্রলুব্ধ করতে পারে; বলা বাহুল্য এটার প্রভাব বেশ তীব্র তথাপি অতি সাময়িক – এছাড়াও উক্ত কেমিক্যাল এর প্রভাব নিঃশেষিত হওয়ার পর ডোপামিনের মতো উদ্দীপক নিউরোট্রান্সমিশনের ল্যাকিংস ডিমোটিভ করতে পারে!
রিভার্স সাইকোলজিক্যাল মোটিভেশান
মোটিভেশান যে শুধুমাত্র অনুপ্রেরণা ও উপদেশমূলক হয়ে অনুপ্রাণিত করে তা নয় বরং অনেক সময় সেটা প্রতিযোগিতা জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জ / ইর্ষা বা হিংসা প্রভৃতি হতে ঐ অবস্থান গেইন করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি / রাগ বা ক্ষোভ হতে প্রলুব্ধ মানসিকতায় উদ্ধতস্বভাব ইত্যাদি হতেও তুলনামূলক অধিক শক্তিশালী মোটিভেশান ইনআরশিয়ার জন্ম হতে পারে।
মোটিভেশান কেন কাজ করে না?
“মোটিভেশান কাজ করে না” এমনটা ভাবনা ভুল কেননা অধিকাংশ সফল মানুষের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাদের জীবনে মোটিভেশানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট বিদ্যমান – তবে আপনার বা আমার মতো সাধারণ মানুষের জীবনে মোটিভেশান ইফেক্টিভ না হওয়ার কারন হলো “খুব তাৎক্ষণিক হরমোন্যাল ইমিটেশানে আমাদের সাবকনশিয়াস মাইন্ড খুব উদ্বুদ্ধ হয় বটে তথাপি পরিবেশ ও পরিস্থিতির সহিত সেটার ইমপ্লিমেন্টেশন করতে না পারা এবং আপন জীবনের সহিত মোটিভেশানের লজিক্যাল রিলেশনশিপ বা বন্ডিং তৈরী করতে না পারা” – বিষয়টা এমন যেন কোন মোটিভেশান যখন আপনার জীবনে ইফেক্টিভ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয় সেটা মস্তিষ্ক প্রিফন্টাল কর্টেক্সে লজিক্যাল ক্যালকুলেটিভ ইউমিট এবং মেমরী অংশের সহিত এই বার্তা বহন করে যে “মোটিভেশান আসলে কার্যকরী নয়” সুতরাং ঐ সময়ে সংশয়ী মানসিকতায় হরমোনাল ইমিটিং সিস্টেম পরিবর্তিত হয়; এমনটা হয় যে একটা সময় মোটিভেশন শুনলেই হয়তো আপনার গা জ্বালা করে….
মেডিটেশান ও মোটিভেশন
মোটিভেশানের স্পার্ক তথা সাইকোলজিক্যাল উদ্দীপনার সহিত যদি মেডিটেশন যা আসলে একটি লক্ষ্য পূরণে অটুট থাকার নিয়ত দৃঢ়তা – ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় এবং নিয়মানুবর্তিতা যুক্ত হয় তবে সেটি কেবলি মোটিভেশান না হয় সাবকনশিয়াস মাইন্ডে এক স্থায়ী তাড়নার উদ্ভব ঘটায়; যা সফল না হওয়া অবধি আপনাকে নিয়ত অনুপ্রাণিত করে এবং লজিক্যাল ইমপ্লিমেন্টেশনে প্রভাবিত করে; সেই অর্থে মোটিভেশান ও মেডিটেশন এর সমন্বয় দারুণ এক সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট বটে!
কনক্লুশন
মোটিভেশান যদি মিথ্যা গল্পও হয় তবে তাতে মস্তিষ্কের যে হরমোনাল ইমিটিং সিস্টেমে নিউরোট্রান্সমিশন প্রক্রিয়া তা অন্তত মিথ্যা নয় – এখন সেই ইম্পালসিভ সিগন্যাল কতোটা এমপ্লিফাই করে নিয়ত সাম্মুখে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন সেটা একান্ত আপনার ব্যক্তিগত বিষয়; মোটিভেশানের দোষ দিয়ে দায় এড়ানো যায় বটে তবে মস্তিষ্ক অন্তত আপনার সাথে মিথ্যা ছলনা করে না!
আমার ব্লগসাইট ঘুরে আসতে পারেন :- Discovery Mind
ফেসবুকে আমন্ত্রণ রইলো:-Humayun Shariar Himu
সবার জন্য শুভকামনা রইলো।