যত বেশি সম্ভব পানি পান করা সবচাইতে বেশি প্রচলিত স্বাস্থ্য উপদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত বিষয়গুলো সত্য হলেও, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট জানিয়েছে পানি পান নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা এবং অতিরিক্ত পানি পান করার অসুবিধা সম্পর্কে। মতামত দিয়েছেন ভারতের আথ আয়ুর্ধেমাহ অ্যান্ড স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা ডা. পারমেশ্বর অরোরা।
পানি পান করা নিয়ে ভুল ধারণা
হজমের সমস্যা দূর করে: কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সমস্যার কারণ হজমের ক্ষমতা দূর্বল হওয়া, যার জন্য দায়ি বিভিন্ন হজমে সহায়ক এনজাইম। হজম ক্ষমতা দূর্বল হওয়া মানে হজমে সহায়ক এনজাইমগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হচ্ছে না অথবা এক অপরের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যাচ্ছে। হজমের সমস্যা সারাতে পানির কোনো ভূমিকা নেই, তাই পানি পান আপনার কোনো উপকারে আসবে না। বরং অতিরিক্ত পানি পান হজমের সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারে।
মুত্রনালীর প্রদাহ সারায়: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা মুত্রনালীর প্রদাহ হওয়ার কারণ ওই নালীতে প্রদাহ কিংবা তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। রোগটি সনাক্ত করতে পরীক্ষা করাতে হয়, চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হয়। বেশি পরিমাণে পানি পান করার মাধ্যমে জ্বালাপোড়া থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যেতে পারে তবে, রোগ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো বিকল্প নেই। এই রোগে আক্রান্ত অবস্থায় পান করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ফুটানো পানি ব্যবহার করা উচিৎ।
শরীরের বিষাক্ত উপাদান দূর করে: শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হয় নাইট্রোজেনভিত্তিক বর্জ্য পদার্থ ইউরিয়া। এই বর্জ্যকে মূত্রতে রূপান্তরিত করে শরীর থেকে বের করার দায়িত্ব বৃক্কের। এটি প্রাকৃতিক এবং সয়ংক্রিয় একটি প্রক্রিয়া। পানি পান করার সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার কোনো উপকারী সম্পর্ক নেই বরং বেশি পানি পান সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বেশি পানি পান করলে মূত্র তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে ঝামেলা হতে পারে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আয়ন মূত্রের সঙ্গে বের হয়ে যেতে পারে। এতে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার পরিণতি হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।
বেশি পানি পান করার কুফল: অতিরিক্ত পানি শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি রক্ত রক্তনালীতে চাপ ফেলে, ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বেশি পানি পান করলে শরীর ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি পানের আদর্শ পরিমাণ এবং পদ্ধতি
– সকালে খালি পেটে এক গ্লাস বা আড়াইশ মিলিলিটার পানি পান করতে হবে।
– খাওয়ার ঠিক পরপরই পানি খাওয়া যাবে না। বরং পুরো খাওয়ার মাঝে এক কাপ পরিমাণ বা দেড়শ মিলিলিটার পানি পান করতে হবে, চুমুকে চুমুকে।
– দুপুরের খাওয়ার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এক ঘণ্টা পরপর এক’দুই চুমুক পানি পান করতে হবে।
– পানি মুখে নিয়ে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড রেখে তারপর গলধঃকরণ করা উচিত।
– সবসময় ফুটানোর পানি পান করতে হবে। ফুটানোর ১২ ঘণ্টা পর ওই পানি পান না করাই ভালো।
– পানি পানের স্বাস্থ্যকর পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এটি নির্ভর করে আবহাওয়া এবং একজন ব্যক্তির শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণের উপর। পাশাপাশি সারাদিন অন্যান্য তরল কতটা পান করা হচ্ছে সেটাও হিসেবে রাখতে হবে।
– দৈনন্দিন খুঁটিনাটি সমস্যাগুলো সারাতে পানি পান করা সমস্যাগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে।
– মনে রাখতে হবে, পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে, কুসুম গরম পানি পান করতে হবে, এবং ধীরে পান করতে হবে।