Site icon Trickbd.com

ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা করবে রোবট?

Unnamed


গত বছরের ডিসেম্বরে অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায়
নোমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের
(এনআরআই) প্রকাশিত একটি
প্রতিবেদন চমকের সৃষ্টি করেছে।
সেখানে বলা হয়েছে,
প্রযুক্তিগতভাবে সামনের ১০
থেকে ২০ বছরের মধ্যে জাপানের
কর্মক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ কাজ করে
দেবে রোবট। প্রতিবেদনে আরো
বলা হয়, ভবিষ্যতে অফিসের
ক্লার্ক, ব্যাংক টেলার,
নিরাপত্তাকর্মী,
সুপারমার্কেটের দোকানদার,
ট্রেন অপারেটর, বিভিন্ন
খাবারের ডেলিভারি বয়,
ক্লিনারসহ আরো অনেক সাধারণ
কাজ রোবটদের দিয়েই করানো
হতে পারে। খবরটি জানিয়েছে
ভারতের আইটিবিষয়ক সাময়িকী
পিসি কোয়েস্ট।
তবে সবকিছুই তো আর রোবট দিয়ে
করা যাবে না। কিছু পেশা, যেমন
—ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী,
চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী,
অভিনয়শিল্পী, সমালোচক,
আইনজীবী, শিক্ষক,
আলোকচিত্রশিল্পী, টিভি
সম্প্রচারকারক, লেখক—এঁদের
বিকল্প কখনোই রোবট হবে না বলে
উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। তবে
মজার বিষয়, এনআরআই প্রতিবেদনে
সাংবাদিকতা পেশা যে
রোবটকে দিয়ে হবে না, সেটি
কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি। প্রযুক্তির
যে অগ্রগতি হয়েছে আজকাল
সেখানে যে রোবট, মানুষ
সাংবাদিকের পদ দখল করবে না,
সে কথা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি,
যেখানে স্বয়ংক্রিয়তা আর
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রকৌশল ও
চিকিৎসা খাতেই সীমাবদ্ধ নেই।
এটি এখন সাংবাদিকতাতেও
স্থান করে নিয়েছে।
সাংবাদিকতা এমন একটি ক্ষেত্র
হয়ে উঠতে পারে, যেখানে
রোবটদের ব্যবহার করা হবে
সাংবাদিকতার পরিমাণগত
বিষয়গুলো উৎপাদনে।
রোবট সাংবাদিকতা বিষয়টা
শুনতে যতই কাল্পনিক লাগুক না
কেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে
এটি সামনের দিনে আমাদের
জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠছে।
আমরা এরই মধ্যে হয়তো জানি,
বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট
প্রেসের (এপি) ওয়ার্ডস্মিথ
সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে
কলেজভিত্তিক খেলাধুলার

প্রতিবেদনগুলো নিজেই তৈরি
করে। সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে
নর্থ ক্যারোলাইনার অটোমেটেড
ইনসাইটস নামে একটি কোম্পানি।
এই সফটওয়্যার তৈরিতে এপিও
বিনিয়োগ করেছে।
বিশেষ অ্যালগরিদম বা
কম্পিউটারের ভাষার মাধ্যমে
বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি করে
ওয়ার্ডস্মিথ সফটওয়্যার। একই
সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন
করপোরেট সংস্থার ত্রৈমাসিক
আয়ের খতিয়ানের ওপর ভিত্তি
করে প্রতিবেদন তৈরি করা শুরু
করে দিয়েছে এপি। এরই মধ্যে
বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট
প্রেস ঘোষণা করেছে যে তারা
এ কাজে ওয়ার্ডস্মিথই ব্যবহার
করবে। ফলে প্রতি তিন মাসে এরা
চার হাজার ৪০০টি করপোরেট
আয়ের রিপোর্ট নিয়ে প্রতিবেদন
রচনায় সক্ষম হবে, যা একজন মানুষের
তুলনায় ১০ গুণ বেশি।
শুধু এপি নয়, পশ্চিমা অনেক সংবাদ
সংস্থা রোবট সাংবাদিকতা
নিয়ে বেশ জোরেশোরে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে
দিয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদন ও
মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনায় তথ্য
স্থানান্তরের জন্য কম্পিউটার
প্রোগ্রাম ব্যবহার দিন দিন
বাড়ছে।
পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা ও রোবট বিশাল
তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য বিশ্লেষণ
করে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করে
রাখা কাজ নিজেরা বুঝে নিতে
পারবে। কাজেই এটা খুব সহজে
বলাই যায়, নিয়মিত সরকারি
ঘোষণা, সব পরিসংখ্যান, প্রেস
বিজ্ঞপ্তি-সংক্রান্ত
প্রতিবেদনগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ও রোবটের হাতে চলে যাবে।
অন্যদিকে মানুষের হাতে থাকবে
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, গভীর
বিশ্লেষণ আর মানবিক আবেগ সমৃদ্ধ
খবর ও কাহিনী।
বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনের
ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
ব্যবহার না করার পেছনে যে
যুক্তিটি কাজ করছে তা হলো
একজন মানুষ প্রতিবেদক যেভাবে
সম্পূর্ণরূপে কাঠামোগত ও নতুন
অর্থনৈতিক মোড়গুলো বুঝতে
পারবে, সেভাবে কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার রোবট পারবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন খাতে
স্বয়ংক্রিয়তার ফলে বিভিন্ন
জায়গায় মানুষ চাকরি হারাচ্ছে।
তবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে
বিষয়টি অন্য রকম। স্বয়ংক্রিয়তা
প্রতিবেদককে বরং বিভিন্ন
জটিল হিসাব, পরিসংখ্যান
ইত্যাদি ঝামেলা থেকে মুক্তি
দেবে। তবে সাংবাদিকদের জন্য
এআই রোবট নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে
দাঁড়াতে পারে, যখন এআই
প্রযুক্তিটি আরো উন্নত হয়ে নাক
গলাতে শুরু করবে সম্পাদকীয়,
তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও মানুষের
আগ্রহমূলক সংবাদগুলোতে। তবে
ভুলে গেলে চলবে না, মানুষ একসময়
গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রযুক্তির সহয়তায় এমন
যন্ত্র তৈরি করেছিল, যা দিয়ে
অনেক গোপন বার্তা উদ্ধার করা
গিয়েছিল, এতে মানুষের কষ্ট
কমেছিল। কাজেই ভবিষ্যতেও
যন্ত্র, অর্থাৎ রোবট মানুষের কাঁধ
থেকে কাজের বোঝা লাঘব
করবে।
সম্প্রতি চায়নার একজন রোবট
প্রতিবেদক, শিয়াও নান, চায়নার
সংবাদমাধ্যম সাউদার্ন
মেট্রোপলিস ডেইলিতে
প্রথমবারের মতো একটি প্রবন্ধ
লিখেছে। বসন্তের ছুটিতে চীনা
যাত্রীদের বাড়ি ফেরার ভিড়
নিয়ে যন্ত্রটি ৩০০ শব্দের
প্রতিবেদন লিখেছে। চীনে নববর্ষ
উদযাপনের জন্য দেশটির
বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর থেকে এই
ছুটিতে বাড়ি ফেরে।
এই রোবট তৈরি করেছেন পেকিং
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়ান
সিয়াওজুন, তিনি কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত যন্ত্র
উৎপাদনে কাজ করছেন।
যতই রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
তৈরি হোক, মানুষের প্রেরণা ও
আবেগ তাতে পাওয়া যাবে না।
যদিও আজকের দিনে বলা হয়, কিছু
কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও ছাপিয়ে
যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবশ্য এরই
মধ্যে দাবা, জাপানি শোগি ও
পোকার খেলা শিখে গেছে
এবং এসব খেলায় জয়ও পাচ্ছে।
পরিশেষে আমরা একটা বিষয়ে
একমত হতে পারি যে কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকদের
বিভিন্ন অনুসন্ধানী কাজে বৃহৎ
তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে
একটি প্রাসঙ্গিক দিক তুলে ধরতে
সহায়তা করবে। পাশাপাশি
প্রযুক্তি সংবাদ কক্ষের দক্ষতা
বৃদ্ধি করবে। সাংবাদিকতা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা আরো
শক্তিশালী হয়ে উঠবে কি না,
আমরা তা জানতে পারব অদূর
ভবিষ্যতেই।