আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে স্মার্টফোন থেকে সর্বদা নীল রঙের আলো নির্গত হয়। এ কারণে ঝলমলে রোদের মাঝেও স্মার্টফোনের কার্যক্রমকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পান আপনি। এই ধরনের আলো আপনার অন্যান্য ডিভাইস, যেমন—ল্যাপটপ, টিভি, এসব গেজেট থেকেও নির্গত হয়।
মূলত সূর্যের আলোর অনুকরণে স্মার্টফোনের এই আলো তৈরি করা হয়েছে। আর আপনার মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা সূর্যের আলো যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করতে থাকবে, এতে আপনার ঘুম আসা বাধাগ্রস্ত হবে। যেহেতু সূর্যের আলো এবং স্মার্টফোনের আলো একই ধরনের হয়, রাতে যখন আপনি স্মার্টফোন চালান তখন এই আলো আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে তোলে। মস্তিষ্ক দিন ভেবে নিয়ে মেলাটোনিন নিঃসৃত করতে থাকে, ফলে আপনি রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ঘুমানোর দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে যেকোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। মস্তিষ্কের পাইনিল গ্ল্যান্ড থেকে মেলাটোনিন নির্গত হয়। নীল আলো অনিদ্রার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন আলোকসংবেদনশীলতাকে, যার নাম মেলানোপসিন। এই মেলানোপসিন রেটিনার স্নায়ুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে কোষ, সেটার মধ্যে পাওয়া যায়, যা নীল আলো পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে।
চলুন স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী বোল্ড স্কাইয়ের সৌজন্যে দেখে আসি কীভাবে স্মার্টফোন আমাদের মন, মস্তিষ্ক ও শরীরের ক্ষতি করছে।
১. স্মার্টফোনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে কিশোর-কিশোরীদের ওপর। এ ক্ষেত্রে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে অনেকখানি সংবেদনশীল। কারণ, স্মার্টফোনের কারণে কিশোর-কিশোরীদের বেশি রাত জাগা হয়। ফলে কিশোর বয়সে তাদের প্রাকৃতিক সারকাডিয়ান রিদম (কিশোর বয়সের শারীরবৃত্তিক বৃদ্ধি) ব্যাহত হয়।
২. বাসায় লাগানো ওয়াই-ফাই এবং হাতে থাকা স্মার্টফোনের তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৩. ঘুমানোর আগে স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং ঘুমানোর আগে টিভি, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন জাতীয় সব ধরনের ডিভাইস বন্ধ করে ঘুমানো জরুরি।
৪. এ ছাড়া আপনি ইন্টারনেট থেকে ফ্লাক্স ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দাগুলো রাত ও দিনে সমন্বয় করে নিতে পারবে। এতে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আলোটি আপনার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
৫. স্মার্টফোনের আলো স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে। ফলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে ঘুম থেকে দ্রুত ওঠা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
৬. রাতের বেলায় অতিরিক্ত আলোর প্রভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এটি বুক এবং প্রস্টেট (মূত্রস্থলির গ্রিবাসংলগ্ন গ্রন্থিবিশেষ) ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
৭. স্বাভাবিক ঘুমের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাতের ফলে পরের দিন সকালে একাগ্রতা ও মনোযোগ অনেকখানি হ্রাস পায়।