বাংলা চলচ্চিত্রের স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ। তার মৃত্যুকে ঘিরে যে রহস্য দানা বেঁধেছিল তার কূলকিনারা হয়নি আজও। এটা কি হত্যা ছিল নাকি আত্মহত্যা, আজও প্রবলভাবে জানতে উন্মূখ হয়ে আছে সালমান শাহ’র ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎ করে এক ভিডিও বার্তায় আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবি বললেন সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এও দাবি করছেন, এ খুনের সাথে তার স্বামীও জড়িত ছিল। চীনাদেরকে দিয়ে এই খুন করানো হয়। এমনকি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার পরিবারও। প্রবাসী রাবেয়া খাতুন বলেছেন, তিনি এ মামলার সাক্ষি হিসেবে আদালতে হাজির হতেও রাজি আছেন। এ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার দুই মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের এ ভিডিওটি নিয়ে তোলপাড় চলছে।
ভিডিওতে রাবেয়া সুলতানা রুবি সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে কাতর কণ্ঠে বলেন, ‘এই খুনের বিষয়ে আমি সব জানি। যেভাবেই হোক, আবার যেন মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমি যেমন করেই হোক আদালতে সাক্ষী দেবো।’
রুবি তার ভিডিওতে সালমানের মাকে উদ্দেশ্য করে বারবার বলেছেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে। প্লিজ কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।’
রুবি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাসব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। আমার হাসব্যান্ড করাইছে, এইটা সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডরে দিয়ে, সবাইরে দিয়ে, সব চাইনিজ মানুষ ছিলো। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, শালমান শাহ খুন হইছে।’
নিজের নাম প্রকাশ করে ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি রুবি, এখানে ভেগে আসছি, আমি ভেগে আসছি, এই কেস যেন না শেষ হয়। আমি যেভাবে পারি, ঠিকমতো যেন আমি সাক্ষী দিতে পারি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করেন।’
তাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে রুবি বলেন, ‘আমারেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, দয়া করে আমার জন্য দোয়া করেন। আমি ভালো নাই, আমি কী করবো আমি জানি না, এতটুক জানি যে সালমান শাহ ইমন আত্মহত্যা করে নাই। ইমনরে সামিরা, আমার হাজব্যান্ড ও সামিরার সমস্ত ফ্যামিলির সবাই মিলে খুন করছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরা কী মানুষ, পুরা চাইনিজ কমিউনিটি আপনারা জানেন না। আমি পুরা ভেগে আসছি এখানে, কোনো রকমে। দয়া করে একটুখানি কারোরে জানান। কারোরে জানান যে, এটা আত্মহত্যা না, এটা খুন। খুন হইছে। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির লাশ যদি কবর থেকে তুলে ঠিকমত আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।
রুবি আরও কয়েকজন এই খুনের সঙ্গে জড়িত আছেন দাবি করে বলেন, ‘এর মধ্যে আমার খালু মুন্তাজ হাসান আছে, আমার খালাত ভাই জুম্মান থাকতে পারে, আমার হাজব্যান্ড চ্যাং লিং চ্যাং, জন চ্যাং নামে বাংলাদেশে পরিচিত ছিলো। সাংহাই চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিল ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডে। দয়া করে কাউরে জানান।’
‘আমি ভেগে আসছি আমার জানের ওপর মায়ার জন্য। আমি লাস্ট মানুষ যে কি না জানে যে, এটা খুন। আমি এটা প্রমাণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। দয়া করে একটু সাহায্য করেন, একটু সাহায্য করেন। সাংঘাতিক অবস্থা, এরা আমারে বাসার মধ্যে খুন করার প্ল্যান করছিল। আশেপাশে সমস্ত, সুযোগ পায় নাই। আমার জামাইরে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম যে, তুমি আমারে খুন করতে চাও, তাই না? ও বলেছে যে, খুন করলে তো তোরে আমি কবেই খুন করে ফেলতাম। এইটা তো আমি জানি। এখন আবার খুন করতে চায়, কারণ এখন আবার কেইস ওপেন হইছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন, দয়া করে জানান।’
সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ভিডিওতে বলা হয়, ‘ভাবি, আপনার ছেলেরে খুন করা হইছে। আমার যা করার আমি করব, আমি ভেগে আছি ভাবি, নাইলে আমারেও মেরে ফেলত এরা সবাই মিলে। লুসি, আমার হাসব্যান্ড জন, সবাই মিলে আমার বাচ্চাটা, আমার বাচ্চা রিকি আর আমার জানের ওপর অনেক জিনিস আছে ভাবি। দয়া করে কিছু করেন ভাবি, কিছু করেন, কিছু করেন। যেখানেই যান ইনভেস্টিগেশন করেন। এটা খুন ছিল, ইমন আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই ভাবি, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই। আপনার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই, আপনার ছেলেরে খুন করানো হইছে। আমার বাপরেও মনে হয় মাইরা ফেলছে ভাবি, আমি জানি না, আমার ভাইটারেও মাইরা ফেলছে মনে হয়।’
‘দয়া করেন, আল্লাহ, আপনি দয়া করেন, কিছু করেন। আসসালামো আলাইকুম আবার। আল্লাহ হাফেজ, বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ দেখা হবে’-বলে শেষ করেন রুবি।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে সালমান শাহের রূপালী মর্দায় যাত্রা শুরু। চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর প্রতিটিই দর্শকপ্রিয়তা পায়।
সালমান শাহ মৃত্যুর পেছনে তার মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই সালমান শাহের স্ত্রী সামিরাকে দায়ী করে আসছিলেন। তিন ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। এতে সামিরা ছাড়াও আসামি ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেখানে একজন ছিলেন এই ভিডিও বার্তা প্রচারকারী রাবেয়া সুলতানা রুবির নামও রয়েছে। তিনি এই মামলার ৭ নম্বর আসামী।
সালমান শাহের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সামিরা পরে মুস্তাক ওয়াইজ নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সংসার করছেন থাইল্যান্ডে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তানও রয়েছে। আর রুবি তার স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে অবস্থান করছিলেন।
বাংলা চলচ্চিত্রে স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তার স্ত্রী সামিরা। কিন্তু সালমান শাহের পরিবার প্রথম থেকেই একে হত্যা বলে আসছিল।