আসসালামু ওয়ালাইকুম।
আজ আপনাদের সামনে হাজির হলাম,
বিশেষ এক গেইম এর রিভিউ নিয়ে।
গেইম টির নাম ব্লু হোয়েল বা মরণ গেইম।
কিছু কথ :
ট্রিকবিডিতে কিছু আবুল আছে,এরা শুধু কে কি কপি করলো তা খুজে,এর মাধ্যমে কতো জনের উপকার হলো,তা দেখার তাদের সময় নাই।
এই সব আবুল দের বলতেছি,এই পোষ্ট ট্রিকবিডি তে আগে করা হয় নি।
মনে রাখবেন,দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয়,তবে দাগই ভালো।
•✓ ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ হলো একটি অনলাইন গেম যার উৎপত্তিস্থল ধরা হয় রাশিয়াকে।
•✓ গেমটি একটি অনলাইন গ্রুপের এডমিন নিয়ন্ত্রন করে। তাকে কিউরেটর বলা হয় । কিউরেটর অর্থাৎ যে Challenge দেয় ও Challenge সম্পূর্ণ করতে বাধ্য করায় ।
•✓ এই গেম যে তৈরি করেছিল সে গ্রেফতার হয়েছে ঠিকই; কিন্তু তার Copy বাজারে রয়ে গেছে, যা থেকে বিভিন্ন Criminal Minded মানুষ এখনও এই গেমকে জীবন্ত করে রেখেছে বিভিন্ন নামে ।
যেমন –
1) Blue Whale?
2) A Slient House
3) A Sea of Whales?
4) Wake me up at 4:20
•✓ পঞ্চাশটি ঝুঁকিপূর্ণ টাস্ক বা কাজের মাধ্যমে এই Game সম্পূর্ণ হয় । এডমিন খেলোয়াড়কে পঞ্চাশ দিনের জন্য পঞ্চাশটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ দিয়ে থাকেন । খেলোয়াড়রা সেই সব টাস্ক সম্পন্ন করে এডমিনকে প্রমানস্বরূপ ছবি বা ভিডিও পাঠান বা নিজেদের সোস্যাল মিডিয়ায় সেসব পোস্ট করেন।
•✓ প্রথম প্রথম ছোটোখাটো Challenge এর সম্মুখীন হতে হয় গেমারদের । যেমন – গান শোনা, Horror Music শোনা, ভোর ৪:২০ (4:20)-তে ঘুম থেকে উঠা ও Horror Movie দেখা । এরপর ধীরে ধীরে Game ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে এগোতে থাকে । যেমন – নিজের হাত ব্লেড দিয়ে কেটে তিমি অঙ্কন । Challenge সম্পূর্ণ করার পর প্রমাণ স্বরূপ ছবি তুলে বা Video Record করে কিউরেটর এর কাছে প্রেরণ করা ।
সর্বশেষ অর্থাৎ পঞ্চাশতম টাস্ক বা চ্যালেঞ্জটি হলো আত্মহত্যা করার! অর্থাৎ, আত্মহত্যা করতে পারলেই খেলোয়াড় বিজয়ী!
•✓ এই খেলার নিয়ম খুব কঠিন । অনুসরণ করাও খুব জরুরি । এই খেলার আরেকটি দিক হলো, একবার খেলায় অংশগ্রহন করলে খেলা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না! এমনকি কেউ বন্ধ করলে তাকে অনবরত মৃত্যুর ভয় দেখানোর প্রমাণও মিলেছে সব ক্ষেত্রেই (অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত যে ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে) । এই ভীতি প্রদর্শনকারী হলেন ‘কিউরেটর’ । তিনি গেমারকে ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার ভয় দেখান । তখন গেমার বাধ্য হয়, কিউরেটর এর কথা মেনে চলতে ।
•✓ Alternate Reality এর ওপর তৈরি এই Game. Virtual দুনিয়া ও আসল জগৎ মিলে এক Game. এখানে যে গেমার সে যা কিছু করে সব আসল জগৎ-এ অর্থাৎ বাস্তবে; কিন্তু গেমার এর কাজকর্ম – গেমারকে প্রমাণ করার জন্য Virtual দুনিয়াতে সম্পূর্ণ রূপে মিশে যেতে হয় । যে এসব করায় সে সামনে থাকেনা ঠিক, বাস্তবেও তাকে দেখা যায়না; কিন্তু এই কাজ করায় যে, সে Virtually এসব কাজ করায় । একে Alternate Reality বা অগমেন্টেড রিয়েলিটি বলে ।
•✓ এই গেমের জন্য এখনও যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের অধিকাংশ মেয়ে । সর্বমোট ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে । প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর ।
•✓ এই গেম কোনোরুপ মজার নয়, সম্পূর্ণ বাস্তব । যারা বা যে সব টিনেজারস’রা বিষণ্নতায় ভোগে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই খেলার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে । এমন একটা গ্রুপ হলো – F57
তখন গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা মনে করে হয়তো সেটি বিশেষ কোনো মনোরঞ্জনকারী ও আনন্দদায়ক খেলা…. সেই ভেবে বাকিরাও সম্মতি দেয় যে তারাও এই খেলার সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছুক । এভাবেই বিষন্নতায় (Depression) ভোগা কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা এই খেলার সাথে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন দেশে ।
•✓ প্রথম কথাবার্তায় কিউরেটর, গেমের সাথে সদ্য যুক্ত হওয়া ছেলে বা মেয়ের পরিচয় বিস্তারিতভাবে জেনে ফেলে । এমনভাবে কথার জালে ফেলে, যাতে তারা সব বলে দিতে বাধ্য হয়।
Blue Whale ? – A Challenge Game or A Suicide Game যাই বলা হোক না কেনো; টাকার জন্য এটি বিশেষ ভাবে তৈরি বলেই মনে করা হচ্ছে।
•✓ গেমটির নাম ব্লু হোয়েল কারণ —> এর মজার একটি কারণ আছে। নীল তিমি’র একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। জীবনের একটি পর্যায়ে নীল তিমি নিজেই চলে আসে সমুদ্র তীরে। ২০০৮ সালে ৫৫টি নীল তিমি একযোগে সমুদ্র সৈকতে চলে আসে। কিন্তু উদ্ধারকারীরা তাদেরকে সাগরে ফেরত পাঠালেও, তারা তীরের দিকে চলে আসে! আত্মহত্যাই যেন তাদের উদ্দেশ্য! ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার এই গেমটির সঙ্গে তাই বোধ হয় নীল তিমি বৈ অন্য কোনো নাম মানাতো না। তাই এই নামকরণ হয়েছে ।
•✓ ২০১৩ সালে এই প্রাণঘাতী গেম রাশিয়ায় প্রথম শুরু হলেও, সবার দৃষ্টিগোচরে আসে ২০১৬ সালে। একজন রাশিয়ান সাংবাদিক তার প্রতিবেদনে কমপক্ষে ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার সঙ্গে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমসটির সম্পৃক্ততা তুলে ধরেন। তখনই আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। এরপরের ঘটনাগুলো আরও চমকপ্রদক। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশিয়া ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, পাকিস্তান, ইতালিস সহ আরও ১৪টি দেশে বিভিন্ন নামে এই গেমটি অনেকদিন ধরেই চলে আসছে।
•✓ বেশ কয়েক জনকে এই খেলাটির নিয়ন্ত্রক বা এডমিন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধরা হলেও, থামানো যায়নি মৃত্যুর মিছিল । রাশিয়ায় এই গেমের ৪৯ তম পর্যায়ে থাকা এক গেমারের কাছ থেকেই তদন্তকারীরা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন ।
•✓ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ৫০ দিনের এই গোটা সময়ে গেমারদের বোঝানো হয় পৃথিবীর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে। এক কথায় ব্রেন ওয়াশ চলে। জীবনে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই – এই কথাটি কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় নিজের জীবন শেষ করে দিতে।
•✓ এবার আসি এই Game এর Challenge এর বিষয়ে । মোট ৫০ টি Challenge তা পূর্বে জানিয়েছি । সেগুলি হলো —–>
১) একটি ব্লেড দিয়ে নিজের হাতে F57 লেখা ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠানো ।
২) ভোর ৪:২০ তে উঠে, কিউরেটর এর পাঠানো ভয়ঙ্কর Video দেখতে হবে ।
৩) নিজের হাতে নোখে নোচার মতো ব্লেড দিয়ে কাটতে হবে, খুব গভীর নয় । মাত্র তিনটি দাগ কাটতে হবে ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠাতে হবে ।
৪) কোনো সাদা পাতায় তিমির ছবি নিজ হাতে অঙ্কন করতে হবে ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠাতে হবে ।
৫) যদি গেমার তিমি হতে ইচ্ছুক থাকে তাহলে পায়ে ব্লেড দিয়ে ‘Yes’ লিখতে হবে । যদি না, তাহলে শরীরে ব্লেড দিয়ে কাটাকাটি করতে হবে অসংখ্য ও নিজেকে সাজাতে দেওয়া ।
৬) সাংকেতিক ভাষায় বা গোপন অর্থে কিছু লিখতে হবে ।
৭) F40 ব্লেড দিয়ে হাতে লিখতে হবে ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠাতে হবে ।
৮) Social Media Site-এ Status দিতে হবে – “I am a Whale?”
৯) নিজের ভয় কাটাতে হবে ।
১০) ভোর ৪:২০ তে ঘুম থেকে উঠে ছাদে যেতে হবে । যত উঁচু ছাদ হবে তত ভালো ।
১১) ব্লেড দিয়ে নিজের হাতে তিমি অঙ্কন করতে হবে ও ছবি কিউরেটর কে পাঠাতে হবে ।
১২) সারাদিন Horror Movies দেখতে হবে ।
১৩) কিউরেটর এর পাঠানো Music শোনা ।
১৪) নিজের ঠোঁট কাটতে হবে ।
১৫) হাতে বার বার সূঁচ দিয়ে আঘাত করতে হবে ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠাতে হবে ।
১৬) নিজের সাথে কিছু যন্ত্রনাদায়ক করতে হবে ও ছবি তুলে কিউরেটর- কে পাঠাতে হবে ।
১৭) উঁচু ছাদে যেয়ে, কিছুক্ষণ কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ।
১৯) ক্রেনে ওঠা বা প্রয়াস করা ।
২০) কিউরেটর Check করবেন, গেমার এর প্রতি বিশ্বাস করা যায় কিনা!
২১) কোনো Whale এর সাথে কথা বলা । (এখানে Whale বলতে যে Game খেলছে অর্থাৎ গেমার কে বোঝাচ্ছে) —> গেমার বা হোয়েল দুটিই বলা যায় এই ক্ষেত্রে ।
অথবা, কিউরেটর এর সাথে কথা বলা ।
২২) ছাদে যেয়ে পা নীচের দিকে রেখে বসে যাওয়া।
২৩) সাংকেতিক ভাষায় বা গোপন অর্থে কিছু লিখতে হবে ।
২৪) গোপন কিছু কাজ করতে হবে ।
২৫) Whale এর সাথে দেখা করতে হবে ।
২৬) কিউরেটর মৃত্যুর তারিখ জানাবে । সেটা মেনে নিতে হবে ।
২৭) ভোর ৪:২০ তে উঠে নিজের এলাকা সংলগ্ন রেললাইন এর কাছে যেতে হবে ।
২৮) সারাদিন কারোর সাথে কথা না বলা ।
২৯) তিমির মতো আওয়াজ বের করা/ প্রয়াস করা।
৩০) ৩০ দিন থেকে ৪৯ দিন পর্যন্ত ভোর ৪:২০ তে ঘুম থেকে উঠে প্রত্যহ Horror Movie দেখতে হবে, ব্লেড এ করে শরীরে বিভিন্ন অংশে কাটতে হবে, Whale এর সাথে কথা বলতে হবে ।
৫০) ৫০ তম দিন অর্থাৎ খেলার শেষ দিন অর্থাৎ গেমার এর অন্য জগতে যাবার দিন অর্থাৎ গেমার এর বিজয়ী হবার দিন — উঁচু স্থান থেকে বা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিতে হবে । এতেই Game এর সমাপ্তি ঘটবে ।
•✓ এডমিনদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যোগাযোগ করার উপায় সম্পর্কে কাউকে বলা নিষেধ; টাস্ক শেষ করার সমস্ত প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মুছে ফেলার নির্দেশনাও থাকে — এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারী দল ।
•✓ সর্বশেষে কিছু কথা — বিষণ্নতা কাটাবার জন্য অনেক উপায় আছে…সেইসব উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে । যেমন —গান শোনা, ছবি আঁকা, পরিবারের সকলের সাথে ও এমনকি বন্ধুসকলের সাথে মন প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলা বা আরও বিভিন্ন উপায় যে যেরকম করে থাকে । কিন্তু Blue Whale এর সাথে যুক্ত হওয়া – এমনটা যেন কখনোই না হয় ।
তথ্য সূত্র – Google, Wikipedia, YouTube ও অন্যান্য কিছু বিশেষ সূত্র ।