জরুরী মুহূর্তে সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা কখনো কখনো জীবন্ত এবং মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য গড়ে দেয়।
কিন্তু মানব দেহ সংক্রান্ত কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এবং উপদেশ সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে বদলে যেতে পারে।
অর্থাৎ আমরা যতই মানব দেহ সম্পর্কে জানতে পারছি, ততই বুঝতে পারছি কিছু কিছু ধারণা এখন পুরনো হয়ে গেছে।
প্রাচীন সেসব পদ্ধতি থেকেও ভালো এবং সময় উপযোগী নতুন কিছু পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে।
আজ আমরা ঠিক তেমনই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
এবং আমরা আরো জানবো সেই পুরোনো প্রথা গুলোর পরিবর্তে নতুন কী কী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে।
>>প্রচলিত ধারণা<<
>>পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানে মাখন লাগানো<<
এই প্রচলিত পদ্ধতি বহুকাল ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে।
গ্রামীণ এলাকায় এই পদ্ধতি খুবই প্রচলিত, বিশেষ করে সে সকল এলাকায় মাখন খুব সহজলভ্য।
খোলা বাতাসে অধিকাংশ পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানই অনেক কষ্টদায়ক।
এই ক্ষত স্থানকে শীতল কিছু, যেমন মাখন দ্বারা ঢেকে রাখলে কিছুটা সময়ের জন্য জ্বালাপোড়া থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়, তবে খুব দ্রুতই সেই ব্যথা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
এর কারণ সেই ক্ষতস্থানকে সম্পূর্ণ ঠান্ডা করার আগেই শীতল কিছু দ্বারা বদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যার ফলে সেই ক্ষতস্থানের চামড়া পুড়তেই থাকবে।
>সঠিক ধারণা<<
>>পুড়ে যাওয়া স্থানে পানি দেওয়া<<
প্রায় সকল ধরনের পোড়া বা ক্ষত স্থানে প্রথম করণীয় বিষয় হচ্ছে, পুড়ে যাওয়া জায়গার সাথে লেগে থাকা যে কোনো কিছু না সরিয়ে প্রচুর পরিমানে ঠান্ডা পানি অনেকক্ষণ ধরে দেওয়া।
মনে রাখতে হবে পানি দেওয়ার এই সময় কাল অবশ্যই যত বেশি হয় ততই ভালো, অন্তত ২০ মিনিট ধরে দেওয়া।
দীর্ঘক্ষণ ধরে ঠান্ডা পানি ঢালার উদ্দেশ্য হচ্ছে জায়গাটাকে পুরোপুরি ঠান্ডা করা এবং সাথে সাথে অসাড় করে ফেলা।
ক্ষতস্থানটি সম্পূর্ণরূপে ঠান্ডা হওয়ার পরে ক্ষতস্থানে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করা এবং তার পরে পরিষ্কার কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে বা জড়িয়ে রাখা যেতে পারে যেন সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে।
>প্রচলিত ধারণা<<
>>সবার ক্ষেত্রে চেস্ট কম্প্রেশনে প্রয়োজন নেই<<
চেস্ট কম্প্রেশন হচ্ছে সেই পদ্ধতি যা দ্বারা খালি হাতে হৃদপিন্ড বরাবর বা উপরে চাপ দিয়ে থেমে যাওয়া হৃদপিন্ডকে সচল করার সম্ভব।
এই পদ্ধতিকে সিপিআরও বলা হয়। যদি কারো হৃদপিন্ড থেমে যায় তবে হাসপাতালে নেওয়া বা মেডিকেল সাহায্য আসার আগে এটি হচ্ছে তার বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।
কিন্তু অনেকেই নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের কোন রোগীকে সিপিআর দিতে চান না।
আবার অনেকে মনে করেন, রোগীর যদি চেস্ট কম্প্রেশনের প্রয়োজন না হয় তবে তা ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হবে।
>>সঠিক ধারণা<<
>যে কারো ক্ষেত্রে চেস্ট কম্প্রেশনে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম<<
যদি আপনি দেখেন পালস চেক করে এবং বুকের কাছে কান নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস শুনে।
যদি এগুলোর কিছুই না পাওয়া যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে ইমারজেন্সি সার্ভিসে খবর দিয়ে সিপিআর দেওয়া শুরু করতে হয়।
আপনি যদি নিশ্চিত না হয়ে থাকেন যে, রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক কিনা তবুও আপনি এই সিপিআর শুরু করতে পারেন।
এ ধরনের সিপিআর রোগীকে আরো বড় কোন ঝুঁকিতে ফেলে দেয় না। কাজেই আপনি নিশ্চিত না হলেও যদি মনে করেন, তবে সিপিআর দিতে দেরি করবেন না।
বলা যায় না এভাবেই হয়তো একজন রোগীর জীবন আপনি বাঁচিয়ে দিতে পারেন!
>প্রচলিত ধারণা<<
>>মুখে মুখ লাগিয়ে প্রশ্বাস দেওয়া এবং চেস্ট কম্প্রেশন করাই হচ্ছে সঠিক সিপিআর<<
এই সিপিআর করার নির্দেশনা কালের পরিবর্তনে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে।
রোগীর বুকে ১৫ বার দ্রুত চাপ দেওয়া, এরপর মুখে ২ বার প্রশ্বাস দেওয়া এবং এই দুই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আদর্শ সিপিআর এর প্রক্রিয়া।
এরপর আবিষ্কৃত হয় ২ বার প্রশ্বাস এবং এরপর ৩০ বার বুকে চাপ দেয়াও আসলে আগের পদ্ধতির মতোই সমান কার্যকরী।
আর এই পদ্ধতিটাকেই আদর্শ নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং জরুরি সময়ে এই নির্দেশনাগুলোই দেওয়া হতো।
>>সঠিক ধারণা<<
>>মুখে মুখ লাগিয়ে প্রশ্বাস দেওয়া সবসময় জরুরি নয়<<
উপরের উল্লেখিত ঘটনা গুলোর পরে চিকিৎসকদের পরবর্তী আইডিয়া ছিলো রোগীর মুখে কোনো প্রশ্বাস দেওয়া ছাড়াই সিপিআর করা এবং পর্যবেক্ষণ করা যে, এতে কোনো ক্ষতি হয় কিনা।
একটু বিরতি দিয়ে বুকে চাপ দিতে থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
যদিও এতে রক্ত পুরোপুরিভাবে পরিশোধিত হয় না কিন্তু তবুও তা দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে।
উপরোক্ত ৩টি পদ্ধতি বিভিন্নভাবে তুলনা করে দেখা যায়, শুধুমাত্র ২টির মাঝে কিছু পার্থক্য পাওয়া যায়।
কিন্তু যখন এসব পরিসংখ্যান উপাত্ত থেকে ফলাফলগুলো একত্রিত করা হলো তখন দেখা গেলো, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি সার্ভিস থেকে শোনা নির্দেশনায় প্রশ্বাস মুখে না দিয়ে শুধু বুকে চাপ দেওয়া হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে রোগীর সুস্থ হবার সম্ভাবনা প্রায় ২২% বেড়ে গিয়েছে।
(ফলাফলগুলোতে শিশুদের এবং ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের ঘটনাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ এসব ক্ষেত্রে রোগীর মুখে প্রশ্বাস দেয়াটা জরুরি)।
যদিও অনেকেই এখনো রোগীর মুখে মুখ লাগিয়ে সিপিআর করার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে ভোগেন।
>প্রচলিত ধারণা<<
>নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোধ করতে মাথা পেছনে হেলে রাখতে হয়<<
এটি খুব সাধারণ একটি ধারণা মাত্র। মানুষের অনেক কারণেই নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
আমরা খুব ছোট থেকেই শুনে এসেছি,, যে কোন কারণেই হোক না কেন রক্ত পড়লে মাথা পিছন দিকে হেলান দিয়ে রাখতে হয় বা মাথা উঁচু করে রাখতে হবে।
এতে করে নাক দিয়ে রক্ত আর বের হতে পারবে না।
>>সঠিক ধারণা<<
>>নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সামনে ঝুঁকে থাকা উচিত<<
মাথা পেছনে হেলান দিয়ে রাখলে রক্ত নাকের ভেতর দিয়ে গলা হয়ে পাকস্থলিতে প্রবেশ করতে পারে অথবা শ্বাসনালীতে আটকে কাশির উদ্রেক হতে পারে যা আরো ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
তাই নাক দিয়ে রক্ত পড়লে কখনোই মাথা পেছনে হেলান দিয়ে রাখা উচিত নয়।
এর বদলে আমরা যা করতে পারি তা হচ্ছে নাকের নরম অংশে চাপ দিয়ে ধরে রাখতে পারি এবং সামনের দিকে ১০ মিনিট ঝুঁকে থাকতে পারি।
এতে রক্ত পড়া বন্ধ হতে পারে বা ক্ষতস্থান থাকলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
কিন্তু যদি ৩০ মিনিটের মাঝে রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বি:দ্র: উপরের সবগুলো চিকিৎসা শুধু মাত্র প্রথমিক ভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং বই থেকে সংগ্রহীত। তাই যত তারাতাড়ি সম্ভব ডাক্তার এর শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেওয়া অবশ্যই উচিত।