আপনি কি জানেন পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটার নাম কি?
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটার নাম হলো “জীবন”।
তাইবলে এই যে আপনি আমার লেখাটি পড়ছেন এখনি হুট করে যদি আপনি মারা যান বা ইন্তেকাল করেন তাহলে কি আমার খুব কষ্ট পাবো? সত্যি বলতে আমার আহামরি কষ্ট হবেনা কেননা প্রথমত আমি আপনাকে চিনিনা আর আপনি আমার আপনজনও নন তাই দুঃখ পাওয়ার স্বাভাবিক সহজাত যৌক্তিকতা নেই( সরি….সত্যটাই বললাম)! খুব বড়জোর আপনার মৃত্যুতে আমি পড়বো “ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” যেটা পড়াতে আপনার কোন ফায়দা আসবেনা বরং আমাকেও যে আমার সৃষ্টিকর্তার নিকট ফেরত যেতে হবে এটাই স্মরণ করলাম আরকি। সুতরাং পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসের নাম হলো “নিজের জীবন”।
আপনার জীবনের মূল্য কতোখানি??
অনেক সময় আমাদের মনে হয় এই লাইফটা আর ভাল্লাগে না, এরচেয়ে মরে গেল ভালো হতো। সবার জীবন কতো সাজানো-গোছানো-স্মার্ট আর আপনার লাইফটা ছন্নছাড়া যেন ঘোড়ার ডিম; আপনার মতোই এই বয়সে পাশের বাড়ির ছেলেটার কতো টাকা-পয়সা আর হাই ক্লাস জীবন যাপন করে আর আপনাকে রোজ বেগুন তরকারি আর তেলাপিয়া মাছের ঘ্যানঘেনে তরকারি খেয়ে কোচিং করতে ছুটতে হয়, তাও আবার পায়ে হেটে হেটে কোচিং যেতে হয়!!
আপনার কাছে কি মনে হয় এমন সস্তা জীবনের মূল্য কতো হতে পারে…১০০০ টাকা? ৫০০ টাকা? ১০০ টাকা নাকি ১ টাকারও মূল্য নেই আপনার জীবনের?!
আসুন একটা পরীক্ষা করি…. লেটস চেঞ্জ ইউর লাইফ হোয়াটএভার!!
এমন একটা সাদা পলিথিন খুজুন (বাজারে প্রায় সদাইপাতি কেনার সময় বা শপিং করার সময় এটা পাবেন) যেটার ভেতর আপনার মাথা পুরপুরি ঢুকতে পারে; এবার খুব একা একা নির্জন ঘরে সেই পলিথিনের ভেতর মাথা ঢোকান আর নিচ থেকে বায়ু যেন ঢুকতে বা বের হতে না পারে সেইভাবে চেপে ধরুন( বাড়ীর অন্য কারো সামনে করবেন না তাহলে নিশ্চিত বাধা দিবে নয়তো পাগল বলে মানসিক চিকিৎসা করাতে ছুটবে)।
এইবার নিঃশ্বাস নিন…..আস্তে আস্তে দেখবেন আপনার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে; তবুও চালিয়ে যান!
এরপর দেখবেন দম ভারী ভারী হয়ে যাচ্ছে….নো ম্যাটার তবুও চালিয়ে যান!
এরপর একটা সময় ভেতর থেকে কষ্ট ফিল হবে….সো হোয়্যাট আপনি চালিয়ে যান!
একটা সময় মনে হবে আর পারছেন না, বুকের ভেতর যেন কেই হাতুরীর আঘাতের মতোন ক্রমাগত বাড়ি দিচ্ছে, পলিথিনের ভেতর মুখ রেখে অসহ্য রকমের কষ্ট হচ্ছে….এইবার খুলে পলিথিন খুলে ফেলুন!!!
আপনার হয়তো মনে হতে পারে এটা কেমন মরণঘাতী এক্সপেরিমেন্ট করতে বলছি, আমাকে হয়তো মনে মনে কেউ ইতিমধ্যে গালাগালিও দিয়ে ফেলেছেন (ইটস কোয়াইট সিম্পল) কিন্তু বিশ্বাস করুন এই পরীক্ষাটিই আপনার জীবনের দর্শন পাল্টে দিবে। আপনারা অনেক সময় ইউটিউবে সোলাইমান শুখন কিংবা আইমান সাদিক এক মোটিভেশনাল স্পিস শুনেন তাতে কি আদতে কোন উপকার হয়?? তাদের কথাগুলো শুনতে ভাল্লাগে…তাদের কথার মাঝে যৌক্তিকতা খুজে পান….তাদের মতোন লাইফে আইকন স্টার আর সাকসেস হতে মনের মাঝে আলাদা একটা ফিলিংস তৈরী হয়….অতঃপর রাতে খাবার প্লেটে আবার দুপুরের বেগুন তরকারি আর ছোট্ট তেলাপিয়া দেখে আগের ঐসব মোটিভেশন সবই কোথায় যেন উবে যায়( সমস্যাটা ঐসব মোটিভেশন স্পিকারের নয় বরং সমস্যা হলো আপনার মনের ডায়াফ্রামে; আর আমি সেটারই রিকনসট্রশাকশন করছি)।
এইবার বলুন তো আপনার লাইফের মূল্য কতোখানি? ঐ পলিথিনের দিকে তাকান…দেখবেন আপনার নিঃশ্বাসে পলিথিনে ঘেমে গিয়েছে (সাদা ওয়াটার কালার পলিথিন হলে এটা দেখতে পারবেন) আর তাতে বিন্দু বিন্দু ফোটার মতোন পানি জমেছে….এটাই আপনার জীবনের মূল্য। বিশ্বাস করুন এইটুকু জীবনের মূল্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও বেশী!
তাহলে এবার আপনিই ডিসিশন নিন এমন জীবন শেষ করে দিবেন নাকি আবার নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন চিন্তা ধারাতে লাইফটা নতুন সাজাবেন?
[উল্লেখ্য উপরের পরীক্ষা করতে গিয়ে দূর্বল চিত্তের মানুষেরা হয়তো সেন্সলেস হতে পারেন বা বিপদ হতে পারে তাই এটা সকলের জন্য নয়। একান্তই করতে চাইলে হাতের কাছে পিন বা ঐরকম কিছু রাখবেন যেটা দিয়ে পলিথিন ছেড়া যাবে। আর যদি লেখার এই পর্যায়ে এসে ইতিমধ্যে আপনি নিজের লাইফের মূল্য ফিল করতে পারছেন তবে ফাইন…ইউ হ্যাভ নো নিড টু এক্সপেরিমেন্ট ;ইউ আর অলরেডি এক্সিলেন্ট। আর এটা আমি নিজের সাথেও করেছি, যদিও বাসায় তখন কেউ ছিলো না…থাকলে খবর ছিলো। মূলত উক্ত পরীক্ষাটি কেবলমাত্র আপনার রিয়েলাইজেশনের জন্যই বলেছি তাই এড়িয়ে যেতে ইনফ্লুয়েজ ও ইনকারেজ করছি]।
কার জীবন কতো দাম, দমে দমে হরদম!!
আচ্ছা আপনাী জীবন আর আমার জীবন কি সমান?
এবার আমার লাইফ নিয়ে প্যাঁচাল না পড়ি তবে এতোটুকু কাজের কথা বলি যে আমার মান্থলি ইনকাম (বেসিক আর্নিং) ৩০,০০০ টাকা (অবশ্যই সেটা নৈতিক ও হালাল পথে তবে জব সম্পর্কে জানা প্রাসঙ্গিক নয়)।
তাহলে এবার আপনার কি মনে হয় “আমার জীবন= আপনার জীবন” এটা করতে ৩০,০০০ টাকা লাগবে??
মোটেই না…আপনার লাইফের যতোটা মূল্য আপনার কাছে ঠিক যতোটা তেমনি আমার জীবনের মূল্যও আমার কাছে ততোটা!
সুতরাং অন্যকে দেখে হিংসা করবেন না এবং নিজেকে হীন মনে করবেন না!
লাইফের সকল সমস্যার সমাধান করুন মাত্র এক মিনিটে!
আমাদের সবার জীবনেই নানা রকম সমস্যা আছে; হয়তো আপনার মন খারাপ কারন আপনার ভালো একটা এনড্রোয়েড মোবাইল নেই, অথচ আমার মেজাজ খারাপ এই বৃষ্টির দিনে সরিষা ইলিশ আর ভুনা খিচুরী না খেয়ে বেরসকিকের মতোন রাতে জার্নি বাই বাস করতে হবে!
কষ্ট কিন্তু সেইম টু সেইম….তবে আপনার কাছে আমার কষ্ট’টাকে মনে হবে বিলাসিতা আর আপনার কষ্ট’টা হলো আমার নিকট ছোটলোকিপনা( কথার কথা বললাম..,আমি আসলে এমন নই)।
আচ্ছা আপনি যদি রাতের বেলা ভূতের ভয় পান তাহলে এমনটা ভাবুন যে ভূত আমার কি ক্ষতি করবে, বড়জোর ঘাড় মটকিয়ে মেরে ফেলবে তাইতো? আচ্ছা আপনি মৃত্যুর জন্য রেডি রেডি …. আর মনে মনে চিন্তা করুন যে আপনার জন্ম মৃত্যু সবই আল্লাহর অনেক আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
ব্যস ভূতের ভয় সলভড…. এরপর যদি সত্যি সত্যিও ভূত আসে তবে নিশ্চিত আপনাকে কাবু করতে পারবেনা!!
মনে করুন আপনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঝামেলাতে আছেন….মেয়েটা সবকিছু বুঝে শুধু আপনাকেই বুঝে না; এমন করে ভাবুন যে আপনাকে যখন সৃষ্টি করা হয়ছে তবে আপনার সঙ্গীকেও সৃষ্টি করা হয়েছে, সুতরাং নিশ্চিতরূপে আপনার তাকদীরে থাকলে তিনি অবশ্যই আপনার ঘরে আসবেন আর আপনার হাতও একদিন মেহেদী রাঙ্গা হবেই…তাতে থাক যতোই বিপত্তি!
কোন এক সময় ডেল কার্নেগীর একটা চটি বই কিনেছিলাম (বোধহয় ৩৫ টাকা দিয়ে) সেখানে পড়েছিলাম “সব সময় চূড়ান্ত বিপদের জন্য প্রস্তুত থাকো তাহলে কখনো ডিপ্রেশন তেমাকে ছুটে পারবে না” প্রস্তুত থাকা মানে মেনে নেওয়া নয় বরং নিজেকে সেভাবে এ্যারেঞ্জ রাখা; আর মানুষের চূড়ান্ত বিপদ হলো মৃত্যুভয় তাই সেভাবে প্রস্তুত থাকেন। একমাত্র মৃত্যু ভয় আপনাকে জীবনে একইসাথে সৎ ও সাকসেস উপহার দিতে পারে।
রিপোর্ট অফ লাইফ (LOV)
একটা সাদা কাগজ নিন এবং তাতে ১০ টা ছক কাটুন।
(১) প্রতিদিন নামায আদায় করেছেন কি না
(২) কুরআন তিলওয়াত করেছেন কি না
(৩) হাদিস পড়া পড়েছেন কি না
(৪) প্রতিদিন ইসলামি দাওয়াত দিয়েছেন কি না
(৫) কতোটুকু সময় পাঠ্যবই পড়েছেন
(৬) প্রতিদিন বিকালে একটু সময় বাইরে হাটতে গিয়েছেন কি না
(৭) মা বাবার হক আদায় করেছেন কি না
(৮) প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করেছেন কি না
(১০) ক্রিয়েটিভ কোন কাজ করেছেন কিনা
এইবার এই কাগজটা ১০০ টা ফটোকপি করে আনুন, টাকা কম থাকলে ৫০ টা কপি করুন, না হয় ২০ টা কপি করুন। তবুও যদি একান্তই সমস্যা থাকে তবে বলুন আমি ফটোকপি করার টাকা দিয়ে দিবো…
এইবার প্রতদিন ঐ কাগজটাতে রিপোর্ট পূরন করুন, কোন মিথ্যা রিপোর্ট তুলবেন না। এবার সপ্তাহ শেষে নিজেই নিজেকে বিচার করুন; দেখবেন ১ মাসের ভেতর আপনার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
আর রিপোর্ট গুলা যতোদিন বাচবেন সংরক্ষণ করুন কেননা বলতে পারেন এটাই আপনার এক প্রকার “মিনি খসরা আমলনামা”
শেষকথা:
শেষটাতে লেকচার নয় বরং শুভকামনা রইলো: তবে আমার লেখা পড়ে মনে মনে থ্যাংক ইউ বলে লাভ নেই বরং সেভাবে জীবনটা গড়তে পারলেই তবেই আমি স্বার্থক; নতুবা আমার লেখার মূল্য এক আনাও নয়!
ফেসবুকে আমি → নিশান আহম্মেদ নিয়ন
[অনেকেরই অভিযোগ যে ফেসবুকে রেসপন্স পাইনা; ইনশাল্লাহ কথা দিলাম আগামী সপ্তাহের ভেতর সকলের রিপ্লাই দেবার চেষ্টা করবো; ব্যস্ততা আমাকে অবসর দেইনা আশা করি আপনারা আমকে ক্ষমার দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞ করবেন]
পরবর্তী পর্বগুলো যথাক্রমে টেলিকাইনোসিস,একই ওয়াইফাই এর আওতায় অন্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক এটা নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।
আল্লাহ হাফেজ