আমি আপনাকে কোন গল্প বলতে বসিনি কিংবা পৌরাণিক কালের জাদুবিদ্যাও শেখাতে আসিনি….আমি আপনাকে বাস্তবতার বিচারে বড়লোক হওয়ার একটা হিডেন সিক্রেট শেখাবো; শিখতে পারার যোগ্যতা আর মানসিকতা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার!
১০০ টাকার মূ্ল্য কতো???
আমরা স্বাভাবিকভাবেই জানি যে ১০০ টাকা = ১০০ টাকা। কিন্তু আপনি কি জানেন ইরানে বাংলাদেশী ১০০ টাকা = ৪৯০০০ ইরানি টাকা (রিয়েল) এর সমান। এছাড়াও আরো অনেক দেশ আছে যেখানে বাংলাদেশী টাকার মূল্য সেই দেশের কারেন্সিতে কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশী।
তাইবলে আমি আপনাকে এখনই বাকসো প্যাটরা গুছিয়ে দেশ ত্যাগের কথা বলছি না…বি কুল ম্যান!!!
আচ্ছা একটু বাস্তবতা বিচার করুন…
বাংলাদেশের অনেক মানুষই সৌদিআরব, ডুবাই, আরব আমিরাত, কুয়েত ইত্যাদি দেশে প্রবাসী হয় কেন জানেন? কারন সেখানে তাদের আঞ্চলিক মুদ্রার মান বাংলাদেশি কারেন্সিতে অনেক বেশী হয়। এমনকি আপনারা এই যে সারাদিন ফ্রিল্যান্সিং-ফ্রিল্যান্সিং করে মুখে ফেনা তুলেন সেখানেও কিন্তু আমেরিকান বা ঐসব দেশের ওয়ার্ক অর্ডার/প্রজেক্ট বেশী বিড হয় কেননা ১ ডলার= ৮৩ টাকা!
বিষয়টা এমন নয় যে “স্বামী বিদেশ…কিচ্ছু করার নাই” বরং আপনি দেশে থেকেই ঘরে বসে অনেক কিছু করতে পারেন যদি আপনার ভেতর তেমন ইচ্ছাশক্তি থাকে!!
লাইফে কোন কিছু ফ্রি নয়; আপনি আমাকে কিছু দিলে তবেই আমি আপনাকে রিটার্ন কিছু দিবো এটাই জগতের সবচেয়ে কঠিন সত্য। পৃথিবীর প্রত্যেকটা সম্পর্কই ট্রানজেকশনাল তাই নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা কাপুরুষের কাজ!
লাইফে স্টাবলিশ হতে হলে আপনাকে (১)প্রচুর টাকা নয়তো (২) মেধা,সময় এবং শ্রম দিতে হবে।
আমার মনে হয়না কেউ এটা স্বীকার করবেন যে তার নিকট প্রচুর টাকা আছে কেননা আপনার পকেটের ১০ টাকা আমার ১০০ টাকার কাছে ক্ষুদ্র অথচ একটা পথশিশুর কাছে সেটাই অনেক টাকা। সুতরাং আপনার-আমার জন্য মেধা+সময়+শ্রম দিয়েই সফল হতে হবে।
কি করলে লাইফে সফল হবেন??!!!
ভাত খেলে পেটের ক্ষুধা মিটে এই সহজ কথাটা পাগলেও জানে অথচ আমরা নিজেরা সুস্থ মস্তিষ্কেও কি করলে লাইফে সফল হতে পারবো সেটা বুঝে উঠতে পারিনা।ছোটকালে আমাদের বাপ-মা আমাদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন অথচ বাস্তবতা হলো আমরা বড়জোর কম্পাউন্ডার কিংবা ঠিকাদারি ফোরম্যান হতে পারবো কেননা আমাদের টাকা/ট্যালেন্ট দুটোই কম!!!
আচ্ছা আপনি যদি কম্পাউন্ডার না হয়ে একটা ঔষধের কোম্পানি দেন কিংবা ঠিকাদারি ফোরম্যান না হয়ে নিজেই কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক হন তাহলে কি আপনার অধরা স্বপ্নের খানিকটা হলেও ক্ষতপূরন হবে না???
স্বপ্ন পূরণে আমাদের চিন্তা চেতনা পরিবর্তন আর সফল হতে বাস্তবতার সাথে নিজেকে অভিযোজিত করে এমন কিছু করতে হবে যাতে টাকা আসবে…মানি ইজ দ্যা মেইন সিক্রেট অব সাকসেস!!!
ইন্টারনেট এমনই একটা নেটওয়ার্ক যেখানে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই পুরো দুনিয়া টোটালি ফ্লাট তাই আপনি চাইলেই যেকোনো কিছু করতে পারেন, ফিজিকালি কষ্ট না করে বাসায় বসেই গ্রেট বিজন্যেসম্যান হতে পারেন।
(১) আপনি চাইলে এ্যামাজন কিংবা আলিবাবার মতোন ওয়েবসাইট বানাতে পারেন যেখানে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে পারেন; বিষয়টা যদি ডোমেইন-হোস্টিং কোনার টাকাতে আটকে যায় তাহলে আপনি ব্লগার দিয়েও একটা ই-শপ তৈরী করতে পারেন। এমনি ১০ টা ই-শপ তৈরী করে আপনি আপনার ১০ টা বন্ধুকে দিয়ে দিন, তারাই সেটা চালাবে তাতে তাদের অর্ন হতে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা রেন্ট চার্জ হিসেবে আপনাকে সম্মানী দিবে; বিষয়টা অনেকটা অনলাইন শপিং প্লাজা তৈরি করার মতোন।
(২) আপনি ব্লগারে ইউটিউবের মতোন একটা প্লাটফর্ম তৈরী করতে পারেন তাতে উক্ত ভিডিওতে এডভারটাইজমেন্ট যুক্ত করে আর্নিং করতে পারবেন। বিষয়টা আদতে ইউটিউব হতে আর্নিং নয় বরং ইউটিউব ওয়েবসাইট’টি নিজে যেভাবে আর্নিং করে ঠিক সেভাবেই উপার্জন করার স্ট্যাটিস্টিকস।
(৪) আপনি চাইলে অনলাইন স্কুল তৈরী করতে পারেন যেখানে বিনামূল্য সকলে তাদের একাডেমীক পড়াশোনার লিসেনগুলা শিখতে এবং প্র্যাকটিস করতে পারবে। আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর অনলাইন এক্সামও নিতে পারেন যেখানে ব্রাইট স্টুডেন্ট’দের সার্টিফাইড করবেন তাতে আপনার অনলাইন স্কুলের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মেধাবী স্টুডেন্ট’দের মিচ্যুয়াল কম্পিটিশন বাড়বে। আপনি হয়তো টেন মিনিট স্কুলের কথা ভাবতে পারেন…এটলিস্ট ইলেভেন মিনিট স্কুল তো হতেই পারে তাইনা??
(৫) আপনার যদি ইলেকট্রনিক্সের ওপর আগ্রহ থাকে তবে আপনাকে দিয়েই দারুন কিছু হতে পারে। আপনি কি জানেন একটা 220k রেজিস্টার, একটা 547 NPN ট্রানজিস্টার এবং একটা ছোট LED এর দাম কতো? খুব বড়জোর সবমিলিয়ে ৭ টাকা মাত্র অথচ এই ৭ টাকা দিয়ে আপনি এমন একটা ডিভাইস বানাতে পারবেন যেটা গাছের পানির অভাব দেখা দিলে অটো সিগন্যাল দিবে।আপনি চাইলে মেটাল ডিটেক্টর, গোল্ড ডিটেক্টর, সাউন্ড এমপ্লিফায়ার, এফএম ট্রান্সমিটার, শকিং গান প্রভৃতি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তৈরী করতে পারেন এবং অনলাইনে সেগুলি বিক্রি করতে পারেন।
এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক্স এমনই একটা বিজন্যেস যেখানে আপনি নিশ্চিত খুবই বেশী পরিমানে বেনিফিট লাভ করতে পারেন।
মূলত কারো নিকট হতে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে শেখা/ টাকা খরচ করে কোর্স করার চাইতে আপনি ইন্টারনেট হতে এসব বিষয়ে পড়াশোনা করাটাই শ্রেয় হবে।
(৬) আপনি যদি ইলেকট্রনিকস এবং প্রোগামিং বিষয়ে একটু ভালোমতো জ্ঞান অর্জন করতে পারেন তবে রোবটিক্স নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। সত্য’টা হলো বাংলাদেশের রোবটিক্স ভবিষ্যত ক্ষীন হলেও এটার চাহিদা এবং মূল্যায়ন অনেক বেশী। তাই হাতে যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে এবং মাথাতে যদি রোবটের ভূত চাপে তাহলে আপনার ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারন নেই; আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে NAO V5 STANDARD EDITION ছোট্ট রোবটির মূল্য ১৬,০০০০০ টাকা(!) যেটা হিউম্যানবডির মতোই নড়াচড়া করতে এবং প্রোগামিং ডাটাকে ইফেক্টিভ ফিজিল্যাল মুভমেন্টে পরিণত করতে সক্ষম। কার্যত আপনি প্রথমে ছোট এমাউন্ট নিয়ে লাইন ফলোয়িং রোবট বানাতে পারেন এবং সেটা সেল করে যেটা লাভ পাবেন সেটা দিয়েই নতুন প্রজেক্টে কাজ শুরু করতে পারেন…এভাবেই এগিয়ে যেতে পারেন।
আপনি ইলেকট্রনিক্স ও রোবটিক্স এর উপর বেসিক হতে এক্সট্রিম পর্যন্ত পৌছাতে বিভিন্ন বই এবং ইন্টারনেট হতে আর্ডুইনো টিউটোরিয়াল প্র্যাকটিস করতে পারেন।
(৭) অনলাইন রেস্টুরেন্ট একটা ভালো বিজন্যেস হতে পারে। যেমন মনে করুন আপনি একটা লোকাল ফেসবুক গ্রুপ/পেইজ খুললেন যেখানে ঢাকার গুলশান এলাকার মানুষেরা যুক্ত থাকবে, এখন আপনার গ্রুপ/পেইজের প্রোডাক্ট হিসেবে খাবারের মেনুগুলা প্রেজেন্টেশন করুন। এবার কেউ তাতে অর্ডার করলে আপনি খাবার তৈরী করে নির্দিষ্ট পেমেন্টের বিপরীতে তাকে হোম ডেলিভারি সার্ভিস দিতে পারেন। এখানে বিশ্বস্ততা, সার্ভিস ভ্যালু, কাস্টমার রিভিউ ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাজটা একা হয়তো শুরু করা একটু কঠিন তবে ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে এমন একটা অর্গানাইজেশন তৈরী করতে পারলে আর ঠেকায় কে….!!!
(৮) এক্সচেঞ্জ বক্সের নাম শুনেছেন কখনো? না…এই নামটা আমি বানিয়ে বললাম, আপনি এমন একটা অনলাইন এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারেন যেখানে ইউজারেরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারবেন। মনে করুন আমার একটা পুরাতন ক্যামেরা আছে এটি আমি বিক্রি করলে বড়জোর ৫০০ টাকা পাবো, আমি সেটা আপনার ওয়েবসাইটে অন্যের সাথে এক্সচেঞ্জ করে একটা বাটন মোবাইল নিতে পারি। এক্ষেত্রে আমার পুরাতন প্রোডাক্টের মূল্যায়ন যেমন বাড়াবে তেমনি প্রয়োজনও মিটবে, অপরপক্ষে আপনার ওয়েবসাইটে আপনি এডভারটাইজমেন্ট হতেও ইনকাম করতে পারবেন। আইডিয়াটা পুরাতন আমলের মনে হলেও আজকের বৈচিত্র্যতার দিনে এটির কদর পাবেন আশাকরি।
(৯) আপনার পকেটে এখন কতো টাকা আছে? বড়জোর ৫০ টাকা তাইনা?? অথচ আপনার বোনের ভ্যানিটি ব্যাগে নিশ্চিত ১০০-৫০০ টাকা পাবেন-ই-পাবেন! কেন জানেন? কারন মেয়েরা টাকা জমাতে পছন্দ করে এবং বাড়তি খরচ না করে সৃজনশীল কাজেই টাকা খরচ করতে উৎসাহী হয়। আপনি মেয়েদের তৈরী শোপিস,হাতের কাজ ইত্যাদি আপনার অনলাইন ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন তাতে যেমন মেয়েদের আর্থিক অর্থ সংস্থান হবে তেমনি ফিমেইল ফেনোমেনার জন্য আলাদা করে কাস্টমার বাড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। বিষয়টা যেমন মানবিক তেমনি আর্থিক সংগতির বিচারে একটি ভালো উদ্দ্যোগ হতে পারে।
(১০) সব কথার আসল কথা হলো কনসানট্রেশন। উপরের ৩ নাম্বার পয়েন্ট’টি আমি ইচ্ছাকৃত মিস করেছি সেটা কি আপনি ফলো করেছেন??!!
হুমম…আপনাকে অবশ্যই আপনার কাজের প্রতি মনোযোগী এবং নিষ্ঠাবান হতে হবে নইলে আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না। একটু ব্যর্থ হলেই “ধুর…আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা” এই টাইপের সস্তা মেন্টালিটি বাদ দিতে হবে। আপনি ততোক্ষণ পর্যন্ত ট্রাই করবেন যতোক্ষন না সফল হতে পারছেন,থেমে গেলেই হেরে যাবেন।
সফলতা এমন একটা সোনার হরিণ নয় যাকে আপনি দৌড়ে ধরতে পারবেন না, তাই অহেতুক দৌড়ে নিজের স্ট্যামিনা নষ্ট করা বোকামী। আপনি যেখানে আছেন সেখানেই দাড়িয়ে থাকুন এবং এমন কিছু করুন যাতে হরিণ উল্টো আপনার নিকট চলে আসে…কি করবেন সেটা আপনার মাথার ব্রেইন হতেই বের করতে হবে।
একটি বিশেষ কথা:
আপনি কখনো অনলাইন ব্যাংকের কথা শুনেছেন? না….আমি আপনাকে সুইচ ব্যাংকের কথা বলছি না বরং এমন একটা ব্যাংকের কথা বলছি যেখান হতে আপনি আপনার প্রয়োজন মতোন লোন পাবেন এবং সেটাও কোন প্রকার ইন্টারেস্ট ছাড়া??!! কিন্তু কে দিবে আপনাকে লোন আর কেন দিবে??!!
এমনই একটা ফেসবুক গ্রুপ হলো MicroBank BD আপনারা সকলে আমন্ত্রিত।
এহ…আইছে নিজের গ্রুপ প্রমোট করতে; নাহ ভাই আমি কোন গ্রুপ প্রমোট করতে আসিনি বরং আমি এমন একটি মাইক্রো ফাইন্যানশিয়াল প্লাটফর্ম তৈরী করতে চাচ্ছি যেখান হতে সকলেই লাভবান হতে পারবেন। আমি নিজে হয়তো আপনাকে ১০০০ টাকা দিতে পারবো তবে ১০০০ মানুষকে ১০০০ টাকা দেওয়ার সাধ্য যেমন আমার নেই আবার সেটা সমীচিনও নয়। কিন্তু আমরা সবাই মিলে একসাথে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারি এটাই আসল উদ্দেশ্য….দ্যাটস অল।
শেষকথা: সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং আপনার সময়গুলো সুন্দর কাটুক সেই শুভকামনা ও আন্তরিক ভালোবাসা রইলো।
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ