Site icon Trickbd.com

আসুন দেখে নিই ওষুধ বা শুকনো খাবারের কনটেইনারের ভিতর সিলিকা জেলের প্যাকেট রাখা হয় কেন? পোস্টে বিস্তারিত।

Unnamed


আসসালামু আলাইকুম।
সবাই কেমন আছেন?
আল্লাহর রহমতে আমি ভালোই আছি
বরাবরের মতো আমি আজকেই একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। কি সম্পর্কে আজকে আমি পোস্ট করেছি তা আপনারা টাইটেল দেখেই বুঝে গিয়েছেন। তো আমি পোস্টের শুরুতে বেশি কথা বলবো না।
তো চলুন সরাসরি পোস্টে চলে যাওয়া যাক।

ভূমিকাঃ
অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ বা শুকনো খাবারের কনটেইনারে সিলিকা জেলের প্যাকেট রেখে দেয়া হয়। পেটুক লোকেরা যাতে খেয়ে না ফেলে সেজন্য লিখে রাখা হয়, ‘Do not eat’ বা ‘খেয়ো না’। ক্যামেরার লেন্স, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য, ট্রাভেল ব্যাগ, স্যুটকেসসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়কেও সিলিকা জেল থাকতে পারে।

১৬৪০ সালেও সিলিকা জেলের সাথে তখনকার বিজ্ঞানীদের পরিচয় ছিল। পানিশোষক এই পদার্থটি নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল তাদের মাঝে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যাস মুখোশে জলীয় বাষ্প শোষক হিসেবে সিলিকা জেল ব্যবহৃত হত আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পেনিসিলিন শুষ্ক রাখতে সিলিকা জেল ব্যবহৃত হত। এমনকি সামরিক যন্ত্রপাতিকে আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করতে সিলিকা জেল ব্যবহৃত হত বলে শোনা যায়।


সিলিকা জেল কি এবং কেনঃ
পানি বা বাষ্প শোষণের ক্ষমতার জন্যই সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয়। সিলিকা জেল আসলে সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO2), কোয়ার্টজও আসলে সিলিকন ডাই অক্সাইড; এমনকি বালুতেও সিলিকন ডাই অক্সাইড থাকে। সিলিকা জেলের অণুগুলোর ফাঁকে পানি বা বাষ্প শুষে নেয়ার মত যথেষ্ট জায়গা থাকায় এগুলো নিজের ওজনের ৪০ ভাগ পর্যন্ত পানি বা বাষ্প শুষে নিয়ে কোন কনটেইনারের আর্দ্রতা ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
সিলিকা জেল কি বার বার ব্যবহার করা যায়?
বাষ্প শুষে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য সিলিকা জেল কোন কাজে আসে না। তখন পুরনো প্যাকেট ফেলে দিয়ে নতুন প্যাকেট রাখতে হয়। কিন্তু পুরনো প্যাকেটও ঘণ্টাখানেক ৩০০° ফারেনহাইট বা ১৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে ফেলা যায়। এদিকে রঙিন সিলিকা জেলে ব্যবহৃত রাসায়নিক উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়, এদের বেশি উত্তপ্ত করা যায় না। কোনটি ১০৫° সেলসিয়াস আর কোনটি ১২০° সেলসিয়াসের বেশি উত্তপ্ত করা যায় না।

কিভাবে বুঝবেন সিলিকা জেল আর কাজ করছে না?
পুরনো সিলিকা জেলের প্যাকেট কিছুদিন পর ফেলে দিয়ে নতুন প্যাকেট রাখতে হয়। সাধারণ স্বচ্ছ সিলিকা জেল দেখে কিছু বোঝা যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে সিলিকা জেলের সাথে কোবাল্ট (২) ক্লোরাইড এবং মিথাইল ভায়োলেটের মত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। শুষ্ক অবস্থায় কোবাল্ট (২) ক্লোরাইড নীল দেখায় আর আর্দ্র অবস্থায় গোলাপি দেখায়। এদিকে মিথাইল ভায়োলেট নির্দেশক দু’রকম হতে পারে, একটি আর্দ্রতা বাড়ার সাথে সাথে কমলা থেকে সবুজ রং ধারণ করে অন্যটি কমলা থেকে বর্ণহীন পদার্থে পরিণত হয়।
সিলিকা জেল কি বিষাক্ত?
সিলিকা জেল কোনভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়, তবে খেয়ে ফেললে গুরুতর কিছু হওয়ার আশঙ্কাও নেই। কিন্তু নির্দেশক রাসায়নিক যুক্ত সিলিকা জেল খেয়ে ফেললে পেটে অস্বাচ্ছন্দ্য বা বমিভাব হতে পারে। তবে সিলিকা জেল খেয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি নেই। আর তাই খাবার বা ওষুধের কনটেইনারেও সিলিকা জেলের প্যাকেট রেখে দেয়া হয়।
কতটুকু সিলিকা জেল প্রয়োজন?
আপনার কনটেইনারে কতটা সিলিকা জেল লাগবে সেটা কনটেইনারে কি রাখা হচ্ছে, কনটেইনারের ধরন, পরিবেশ ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। মোটামুটিভাবে শুষ্ক পরিবেশে বায়ুরোধী কনটেইনারের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ২০০ গ্রাম সিলিকা জেল ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়।

ব্যবহৃত সিলিকা জেল কোথায় ফেলবেন?
সিলিকা জেল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, স্বাভাবিকভাবেই ফেলে দিতে পারেন। তবে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিকের আর্দ্রতা শোষণের জন্য সিলিকা জেল ব্যবহৃত হয়ে থাকলে সেই রাসায়নিক শোষণ করে সিলিকা জেলও বিষাক্ত হয়ে উঠতে পার, সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সিলিকা জেলের আরও কিছু ব্যবহারঃ
আপনার টুলবক্সের যন্ত্রপাতিগুলোকে মরিচা পরার হাত থেকে রক্ষা করতে, শেভিং রেজর বেশি দিন ব্যবহার করতে কিংবা কাপড়ের আলমারিতে কাপড় শুষ্ক রাখতে সিলিকা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
তো আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা নিয়ে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।
ধন্যবাদ