“মানুষ চাইলে পারে না এমন কিছুই নেই” কথাটা আপনার আমার জন্য আসলে অনেকাংশেই মিথ্যা কেননা আমরা মনে করি “আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না”। আমরা সবাই জীবনে সফল হতে চাই, জীবনে কিছু করে দেখাতে চাই অথচ দিনশেষে ব্যর্থ হয়ে বিছানাতে শুয়ে পড়ি….এটাই যেন আমাদের প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে।
আসুন জীবনে সফল হওয়ার কিছু শর্ত মেনে চলি:
নিজেকে বিশ্বাস করুন: “আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটি হবেন” এই কথাটা আপনার বাবা-মা-ভাই-বোন যতোটা না অবিশ্বাস করবে তারচেয়ে বেশী উপহাস্যভাবে অবিশ্বাস করেন আপনি নিজেই!! আপনার মনে বদ্ধমূল ধারনা গেথে গিয়েছে যে “আপনি সফল হতে পারবেন না” তাই আপনি সফল হতে পারেন না।
সবার আগে নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখুন; মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না…এটাই হবে আপনার জীবনের আসল জিত আর সফলতার শক্ত ভিত।
লাইফে ফোকাস করুন: ছোটকালে যখন কেউ আমাদের জিজ্ঞাসা করতো “বাবু তুমি বড় হয়ে কি হবা?” তখন আমরা অনায়েসেই বলতাম যে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,পাইলট হবো; অথচ আজ এই বড় বেলাতে আমরা আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারি না; কাঁচুমাচু মুখ করে হারার আগেই হেরে যাই!
আপনার কি মনে হয় ছোটকালে আমরা বোকা ছিলাম আর বড় হয়ে বাস্তবতা বুঝে চালাক হয়ে গিয়েছি? আদতে সেই ছোটকালের ছোট্ট ব্রেইনটার মাঝে যতোটা Inertia আর Focuse ছিলো সেটা বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা হারিয়ে ফেলেছি [বলা উচিত ইচ্ছাকৃত হারিয়ে যেতে দিয়েছি] তাইতো বড় হয়েও বোকার মতোন আমরা ব্যর্থ হই।
টাকা ছাড়াও সফলতা সম্ভব: আমরা মনে করি যে আমাদের কাছে টাকা নেই তাই আমরা জীবনে সফলতা পাইনা; আসলে এটা ১০০% মিথ্যা কথা! টাকা থাকলে খুব বড়জোর আপনি- আমি লাইফে বিলাসিতা করতে পারি বটে তবে টাকার সাথে ব্রেইনের কোন যোগসূত্র নেই।
“টাকা থাকলে আমিও ডাক্তারি পড়তাম” এনিওয়্যে আপনি টাকার অভাবে মেডিকেলের কোন টার্মে গিয়ে আটকে গিয়েছেন বলুন? অথচ এমন অনেক ডাক্তার পাবেন [খোদ ডিএমসিতে] যারা অভাব অনটন জয় করে আজ সাদা এপ্রোণ গায়ে জড়িয়ে ডাক্তারী প্রফেশনে নিজেকে উজ্জ্বল করেছেন।
পিতা মাতার অতিবুদ্ধি: এই কথাটা বলার আগেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কেননা “পৃথিবীর সকল পিতা মাতা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন” তবে তাদের কিছু কিছু অযাচিত অমূলক চিন্তা চেতনা আমাদের লাইফের জন্য শুভফল বয়ে আনে না। উদাহরণস্বরূপ যেমন একটা সময়ে দরিদ্র পিতা-মাতা সন্তানকে কমার্স বা সায়েন্স নিতে দিতেন না কেননা তাতে আলাদা টিচারের খরচ দিতে হতো; অথচ কমার্স নিতে উৎসাহী ছেলেটা হয়তো আজ মুদি দেকানের পাক্কা হিসেবি দোকানদার আর সায়েন্স নিতে আগ্রহী ছেলেটা হয়তো এখন বাড়ী বাড়ী ইলেকট্রিকের কাজ করে বেড়ায়….আর্সের মানবিকতা লজিক বুঝে না!
যদি আপনার লাইফে এমনই পরিস্থিতি তৈরী হয় তবে আপনার পিতা মাতাকে বিনম্রতার সাথে যুক্তি দিয়ে আপনার মনের ভাব বোঝান; যুক্তি না খাটলে আবেগ কাজে লাগান….তাইবলে পিতা মাতাকে অসম্মান কিংবা অহেতুক রাগ-জিদ করে বসে রইবেন না।
নিজের রাগ কমান: এই জিনিসটা আমাদের সবার ভেতরেই কম বেশী আছে; প্রতিটা সুস্থ মানুষের ভেতরই রাগ-অভিমান থাকবে এটাই স্বাভাবিক তাইবলে অতিমাত্রাতে রাগ আমাদের অসুস্থ করে তোলো।
“আব্বা ব্যাট কিনে দেয়নি” এই রাগে যদি ভাত খাওয়া বন্ধ করেন তাহলে পেটের ক্ষুধার জ্বালাটা আপনাকেই সহ্য করতে হবে, এরচেয়ে ভাত খেয়ে ভরা পেটে আব্বার কাছ থেকে কিভাবে ব্যাট আদায় করা যায় এটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
দুঃশ্চিন্তা বাদ দিন: লাইফে টেনশন বা দুশ্চিন্তা করে অদ্যবধি কোন সমস্যার সমাধান কি হয়েছে? বরং সমস্যা সমাধানের উপায় হলো “চিন্তা” করা তাই আপনাকে “দুঃশ্চিন্তা হতে দুঃ নামের দুষ্ট শব্দটা বাদ দিতে হবে”।
মনে করুন আপনার কাল ফরম ফিলাপের লাস্ট ডেট অথচ কাছে টাকা নেই, এখন মুখ ভার করে দুঃশ্চিন্তা করে কি কোন লাভ হবে??
বরং আপনাকে চিন্তা করতে হবে কিভাবে টাকা ম্যানেজ করা যায়… তা হউক আপনার বন্ধুর কাছে কিংবা বিশেষ আত্মীয়ের কাছে সহায়তা চাওয়া। যদিওবা টাকা ম্যানেজ না হয় তবে অন্তত এইটুকু স্যাটিসফাইড তো হতে পারবেন যে আপনি চেষ্টার ত্রুটি রাখেন’নি।
প্রেম করুন মন দিয়ে: গুরুজনের পুরানো একটা উপদেশ প্রচলিত হলো “মেয়ে মানুষের পিছে ছুটলে পড়াশোনা হয়না” আসলেই কি কথাটা সত্য?
আমি জানি আজকের এই ইয়ং জেনারেশন কথাটা মনাতে নারাজ কিন্তু প্রেমে ছেকা খেয়ে পড়াশোনা লাটে তোলার উদাহরন নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়?!
আমি জানি আজকের দিনের ইয়ং জেনারেল পুরানো আমলের উপদেশ শুনবে না তাই রিলেশনশিপ’টা মনের মাঝেই রাখবেন তাকে মাথায় তুলে প্যানিক হবেন না।
রিলেশন ব্রেক হলে মন খারাপ করুন-কান্নাকাটি করুন তবে সেটা যেন ক্যারিয়ার গড়তে পথের কাটা না হয় এটা খেয়াল রাখবেন।
মনে রাখুন “পথে হাটতে হাটতে হোচল খেলে কিছুক্ষণ থমকে দাড়ান তবে পথচলা থামিয়ে দিবেন না”।
কপাল কুচকাবেন না: আমরা প্রায় সময় বিরক্তিতে কপাল কুচকায়; এটা সহজাত শরীরিক প্রবৃত্তি তবে এটা পরিহার করার চেষ্টা করবেন। কপাল কুচকালে যে শুধু আপনাকে দেখতেই খারাপ লাগে এমনটা নয় বরং এর নেগেটিভ ইফেক্ট আপনার ব্রেইন তথা সাইকোলজিতে পড়ে সুতরাং সদা হাস্যজ্জল থাকার চেস্টা করবেন।
উপরের কথা গুলো হয়তো আপনাকে রাতারাতি সফল মানুষে পরিণত করবে না সত্য; তবে আপনাকে পথ চলতে সহায়তা করবে। আপনার জীবনটাকে গড়ে নেবার দায়িত্ব আপনার সুতরাং অভিমান করে মুখ ভার করে বসে না থেকে আপনার রাজ্যের Boss হওয়ার জন্য এখনি কোমর বেধে কাজে লেগে পড়ুন… শুভকামনা আর ভালোবাসা রইলো।
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ