গরম কম্বল আর প্রিয় মানুষটার স্পর্শ যদি ছাড়তে না পারেন,
তাহলে আপনাকে আজকের দিনের বেতন ছাড়তে
হবে। কারণ সকালে ঘুমানোর আনন্দ আর সঠিক টাইমে
অফিসে পৌছানোর আনন্দ, দুটো কখনওই এক সঙ্গে
পাওয়া যাবে না। তাই আপনাকে খুব ভোরেই উষ্নতার মায়া
ছেড়ে কুয়াশা আর শিশিরের প্রাচীর টপকে অফিসে
পৌছাইতে হবে, তবেই আপনি এসি করা রুমে অফিস করার
আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন, কিংবা আপনার
বর্তমানটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন। হ্যা হতে পারে কিছু
মানুষকে অফিসের গাড়ী এসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে
যায়, কিন্তু আপনাকে সেই অবস্থানে যেতে হলে, ঝুঁকি
আর সাময়িক আনন্দগুলো ত্যাগ করে, কুয়াশার প্রাচীর
টপকে নিয়মিত অফিসে পৌছাতে হবে।
আপনি যদি ঝুঁকি নিতে ভয় পান, যদি ভাবেন নিশ্চিত বর্তমানটাকে
ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে গিয়ে যদি জায়গা না পাই, টিকে
থাকতে না পারি, আবার পুরানো বর্তমানে ফিরে আসতে হয়,
এই ভেবে কচ্চপের মতো বর্তমানটাকে আগলে
বসে থাকেন, তাহলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। কারণ
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, সাফল্যের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে, আর যদি চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে না
পারেন, কিংবা একটা আলো-বাতাসহীন বদ্ধ স্যাতস্যাতে
রুমে নিজেকে আটকে রাখেন, তাহলে কখনওই
সাফল্যের চুড়ায় ওঠার সিড়ি খুঁজে পাবেননা । বড় জোর এই
ঘরের পাটাতনে উঠতে পারবেন।
জীবনে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলতে হলে একটা
নির্দিষ্ট লক্ষ্য মাত্রা থাকা চাই, তবে সে লক্ষ্যমাত্রা হতে
হবে, সাধ্যের কাছাকাছী এবং সময় উপযোগী। যদি
রবীন্দ্রনাথ হতে চান, তাহলে আপনার স্বপ্ন কখনওই পুরণ
হবেনা। কারণ সে সময় আজকের মতো প্রতিযোগিতা
ছিলনা, আর আপনার অতটা বয়সও হয়নি তাই জীবন সম্পর্কে
আপনার অভিজ্ঞতাও কম, এগুলো আপনার লক্ষ পুরণে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তাই ফলো করেন, এই
প্রজন্মের কাউকে, যে সম্প্রতি সফল হয়েছে, তাহলে
সে যে সুযোগগুলো পেয়েছে, সেগুলো
আপনার পাওয়ারও সুযোগ থাকবে। আর আপনি সফল
হবেনই, কারণ কোন কিছুর পেছনে নাছোড়বান্দার
মতো লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
মানুষ, যার সফল হওয়ার ক্ষমতা থাকে। মনের দুর্বলতার
প্রাচীর ভেঙ্গে তাকে বাইরে বেড় করে আনতে
হয়, হয়ত সবসময় সবার সে সাহস আর সুযোগ হয়না, তাই সে
সফল হওয়ার প্লাটফর্মে উঠতে পারেনা। তাই আমাদের রুম
থেকে বাইরে বেড় হতে হবে, মনে রাখতে হবে
বাইরে অনেক আলো, তার মাঝে আমি সাফল্যের চুড়ায়
পৌছানোর পথটা আরো স্পষ্ট দেখতে পাবো। আপন
যদি ভেবে থাকেন বাইরে থেকে কোন বুদ্ধিওয়ালা
লোক আপনার রুমে এসে আপনাকে সফলতার গল্প
শোনাবে, আর সেই গল্প শুনে আপনি আপনার
জীবনে সফল হবে, তাহলে আপনি কোনদিনই সফলতার
মুখ দেখতে পাবেননা। কারণ পৃথিবীর অনেক বয়স
হয়েছে, ওর সে শক্তি আর সময়ও নেই। তাই বড় কোন
সুযোগ বা প্লাটফর্ম পেতে হলে আপনাকেই চেনা
গন্ডীর বাইরে বেড় হয়ে আসতেই হবে, তাহলে
আপনি তাদের দেখা পাবেন। যারা আজ সফল, তারা কেউ না
কেউ আপনাকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে
দেবেনই। কারণ তাদের মনস্তাত্তিক ভাবগুলো এতটা
পরিপক্কতা পেয়েছে বিধায়ই তারা আজ সফল।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধু বলেছিল,
এখনও সময় আছে ঝুকি নাও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
যদি নাও শিখায় তবুও তোমাকে সফল হতে হলে, ঝুঁকি নিতেই
হবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর গতানুগতিক
ব্যাপার-স্যাপারগুলো টিকে থাকছেনা। ডাক্তারী পাশ করে
অনেকে ব্যবসায় নামছে, পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে অনেকে
খাবারের দোকান খুলেছেন, অনেকে সাহিত্যে
গ্রাজুয়েশন করে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষনা করছেন।
বিষ্মকর হলেও এটাই সত্যি। আর এর একমাত্র কারন হলো
আমরা ঝুকি নিতে ভয় পাই, নিজের উপর আস্থা নেই। কারণ
আমাদের শিক্ষব্যবস্থা এমন ভাবে আমাদের তৈরি করে যে
আমরা সহজে ঝুঁকি নিতে চাইনা। আমরা পাঠ্যবই থেকে
দাগানো অংশটুকু ঠাঠা মুখস্ত করে পরীক্ষা দিতে যাই,
কখনও সিলেবাসের বাইরে অংশটুকু পড়ার পেছনে সময়টুকু
ব্যয় করিনা। কারণ সেটা পড়লে আমাদের ভাল ফলাফলকে
ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে হয়। আমরা সেটা করতে চাইনা। আর
এভাবেই আমরা ঝুঁকি নেওয়ার সাহসটুকু বিকিয়ে দেই একটা
সার্টিফিকেটের কাছে।’ আর এই ভয়ই পরবর্তীতে আমার
সার্টিফিকেটগুলো মুল্যহীন করে দেয় ।
মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া
বশির কবির একটা সুন্দর কথা বলেছেন ‘লেগে থাকলে
থাকার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমি নতুন
প্রজন্মদের বলব, ‘টেক রিস্ক, ঝুঁকি নাও’। জিততে চাইলে
ঝুঁকি নিতে হবে। এজন্য সাহস এবং ধৈর্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।
আর এগুলো থাকলে যেকোন রিস্ক ফ্যাক্টরই তোমার
হয়ে কথা বলবে।’
নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ টাফটস
ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অবশ্যই
ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুঁকি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সফল হতে হলে পরিশ্রম ছাড়া সত্যিই আর কোনো উপায়
নেই। হ্যাঁ, ভাগ্য বলে হয়তো কিছু একটা আছে। কিন্তু তুমি
যত পরিশ্রম করবে, ভাগ্যও তোমাকে তত সহায়তা করবে।
তাই পরিশ্রম করো, আর সে কাজই বেছে নাও, যা তুমি
উপভোগ করো। জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। আমি
চাকরি পেয়েছি, বরখাস্ত হয়েছি, প্রশংসায় আপ্লুত হয়েছি,
নিন্দার ঝড়ও সহ্য করেছি। কিন্তু সবকিছুর পরও আমি বিশ্বাস
করতাম, আগামীকাল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।
সেই আশাতেই আমি আবার নতুনভাবে শুরু করতাম।’
আমরা সবসময় ভাবী, আমি যে চাকরিটায় আছি, সেটা নিরাপদ।
কোম্পানী আর বস কত ভাল। কিন্তু যেদিন আমার বস
থাকবে না? কিংবা আমার কথার চেয়ে বেশী গুরুত্ব
দেওয়ার মানুষ যদি এই কোম্পানীতে চলে আসে? তাই
অন্যের ভালবাসায় গুরুত্ব না দিয়ে বরং নিজের যোগ্যতা
বাড়ানোর জন্য বেশী গুরুত্ব দিন।
ঝুঁকি নিন, নিজের ভেতরে সবধরনের পরিবেশে মানিয়ে
নেওয়ার সাহস, ধৈর্য্য ও মনোবল তৈরি করুন। কারণ পৃথিবীটা
প্রতিযোগিতায় ভরা। এখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে
ঝুঁকি নিতেই হবে, নয়ত সময় একদিন আপনার বর্তমান অবস্থান
থেকে ছুড়ে ফেলে দেবে মাঝারি গোছের কিছু
মানুষের দলে।
ফেসবুকে আমি