একুয়াম্যান বর্তমান বিশ্বে আলোচিত সুপারহিরোদের মধ্যে একজন””
IMDB RATING : 7.1
কাহিনীর সুত্রপাত:
সমুদ্রের মধ্যে খুব উত্তাল ঢেউ বইছে বৈরি আবহাওয়ার মধ্য (Lighthouse keeper) থমাস কারি আটলান্টাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করেন।
আটলান্টা কে?
উনি হচ্ছেন পানির তলদেশে থাকা আটলান্টিস জাতির রাজকুমারী। শুরুতে আটলান্টা পানির ওপরে থাকা জগতে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছুটা ভুগলেও থমাসের সেবা-যত্নে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। পর্যায়ক্রমে থমাসের সাথে তার প্রণয় হয় এবং তাদের ঘরে জন্ম নেয় আর্থার নামের একটি ছেলে সন্তান।
আটলান্টিস ছেড়ে আটলান্টা স্থলে এসে বাস করছেন অনেক দিন পেরিয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে এবার আটলান্টাকে তার নিজের জগতে ফিরতে হবে। আটলান্টিসে যাওয়ার আগে তিনি আর্থারকে তার বাবার জিম্মায় রেখে যান। থমাসকে কথা দেন, কোনো একদিন সকালে তিনি আবার দেখা দেবেন।
দিন যায়, বছর যায়, আটলান্টা দেখা দেন না। কীভাবে দেখা দেবেন? আটলান্টিসে ফিরে যাওয়ার পর তার সাথে এক সম্ভ্রান্ত রাজার বিয়ে হয় এবং আটলান্টা সেখানে পুনরায় একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু আটলান্টিস জাতির রাজকুমারী হয়ে, স্থল জগতের একজন নগণ্য মানুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে সন্তান জন্ম দেয়ার ঘটনা পরবর্তীতে জানাজানি হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
এরপর পেরিয়ে যায় অনেকগুলো বছর। আর্থার এখন পূর্ণবয়স্ক যুবক। বাবাকে নিয়ে ছিমছাম জীবন তার। অন্যদিকে আটলান্টিসের বর্তমান শাসনভার পরিচালনা করছে ওর্ম মারিয়াস, আর্থারের মা আটলান্টার গর্ভে যার জন্ম হয়েছিল। আর্থার ও ওর্ম একই মায়ের সন্তান হলেও দু’জনের বাবা ভিন্ন।
স্থল জগতের মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে সাগরের পানি দূষিত করে যাচ্ছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পানির নিচের জগতে বসবাসরত প্রাণীরা। বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবদের পাশাপাশি সেই দূষণের শিকার হচ্ছে আটলান্টিসসহ আরো ৬টি জাতি। এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। ধ্বংস করে দিতে হবে স্থলে বসবাসরত দুনিয়ার জনগণকে। সেই লক্ষ্যে ওর্ম পানির নিচে বসবাসরত ৭টি জাতি গোষ্ঠীকে একত্রিত করতে চায়। সবাই এক জোট হয়ে সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে মানুষ জাতিকে কঠিন শিক্ষা দেয়াই ওর্মের প্রধান লক্ষ্য।
এছাড়া মানব জাতির প্রতি তার ব্যক্তিগত ক্ষোভও আছে। এই মানব জাতির একজনের সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণেই তার মাকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হতে হয়েছিল। অল্পবয়সে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হওয়ার কষ্ট এখন প্রচণ্ড ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
ওর্ম কি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? আর্থার তথা অ্যাকুয়াম্যান কি ওর্মের হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়? জানতে হলে দেখতে হবে ‘অ্যাকুয়াম্যান’ চলচ্চিত্রটি।
এবার আসুন রিভিউ দেখি
এই ছবিতে অ্যাকুয়াম্যানের অজিরিন স্টোরি তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে আহামরি কোনো জৌলুশ বা চাতুর্য না থাকলেও পরিচালক জেমস ওয়্যানের দুর্দান্ত পরিচালনা ও উপস্থাপনা শৈলির গুণে ১৪৩ মিনিট তথা ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট দীর্ঘ এই হলিউড চলচ্চিত্রটি দর্শকদেরকে ভরপুর বিনোদন দিতে সক্ষম হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সিনেমার প্রথমাংশের কাহিনীর তুলনায় দ্বিতীয়াংশের কাহিনীর গতি ছিল কিছুটা শ্লথ।
ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যের সাথে রয়েছে চোখ ছানাবড়া করে দেওয়ার মতো ক্যামেরার কারসাজি। আরো আছে দৃষ্টিনন্দন ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, বিশেষ করে পানির নিচের জগতের দৃশ্যগুলোর কথা আলাদা করে বলতেই হয়। ঝলমলে, আলোকোজ্জ্বল দৃশ্যগুলো ছিল মুগ্ধ হবার মতো।
‘অ্যাকুয়াম্যান’ চলচ্চিত্রটির সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন ডন মারগেস। তিনি এর আগে ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে নিজের চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি দক্ষতার জন্য জিতেছিলেন অস্কার! স্পাইডার-ম্যান (২০০২), সোর্স কোড (২০১১), দ্য কনজজুরিং (২০১৬) এর মতো চলচ্চিত্রগুলোর সিনেমাটোগ্রাফি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেসব অভিজ্ঞতার বদৌলতে ‘অ্যাকুয়াম্যান’ চলচ্চিত্রটি যেন হয়ে উঠেছিল আরো প্রাণবন্ত।
অভিনেতারা নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন। নাম ভূমিকায় জেসন মামোয়া এবং তার সৎ ভাই ওর্মের চরিত্রে অভিনয় করা প্যাট্রিক উইলিয়ামসের পারফর্মেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো। অ্যাকুয়াম্যানের মা আটলান্টা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী খ্যাতিমান অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। কোমল ও কঠোরতার মিশ্রণে আটলান্টা চরিত্রটিকে তিনি সফলভাবে পর্দায় উপস্থাপন দান করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছে স্পাইড্যার-ম্যান (২০০২) চলচ্চিত্রের গ্রিন গবলিন খ্যাত অভিনেতা উইলেম ডাফো। বরাবরের মতো এবারও তিনি নিজের চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন।
গল্প, অভিনয়, নজর কাড়া ভিজুয়্যাল ইফেক্ট; সবমিলিয়ে চলচ্চিত্র হিসেবে ‘অ্যাকুয়াম্যান’ নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। পরিবারের সবাইকে নিয়ে চাইলে চলচ্চিত্রটি দেখা যেতে পারে। আশা করা যায় অ্যাকশন, ড্রামা, রোমান্স, হালকা কিছু কৌতুক এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সচেতনতামূলক বার্তা সমৃদ্ধ ‘অ্যাকুয়্যামান’ দর্শকদেরকে হতাশ করবে না।
রেটিং
আইএমডিবি: ৭.১/১০ (১,৭১,০৭২টি ভোট)
রটেন টমেটোস: ৬৫% ফ্রেশ (৩৪৭টি রিভিউ)