শনি বা Saturn সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ । দুরত্বের দিক দিয়ে এর অবস্থান ৬ষ্ট । সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে শনি গ্রহ একটু ব্যাতিক্রম । এর চারদিকে ঘিরে থাকা অত্যাশ্চর্যকর রিং বা বলয় অন্যান্য গ্রহ থেকে একে ইউনিক লুক দিয়েছে । যার কারণে শনি গ্রহকে “The Jewel of the Solar System” বা সৌরজগতের রত্ন বলা হয় ।
চলুন সৌরজগতের মোস্ট বিউটিফুল গ্রহ শনি সম্পর্কে কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য জানা যাক…।
১। শনির নামকরণ
শনি গ্রহের নামকরণ করা হয় প্রাচিন রোমানীয় ঈশ্বরের নামে যিনি আরেক রোমানীয় ঈশ্বর জুপিটারের পিতা ছিলেন । তথ্যটি প্রথম রেকর্ড করা হয় ৮ম শতাব্দীতে ।
২। গ্যাসীয় গ্রহ
শনিকে একটি গ্যাসীয় বলের সাথে তুলনা করা যায় । কারণ এত বড় গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও পুরোটা জুড়ে শুধুমাত্রই গ্যাস । শনিতে কোন সলিড জায়গা নেই যেখানে আপনি পদার্পণ করতে পারবেন । শনি গ্রহ প্রধাণত হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা ভরপুর ।
৩। শনি পানিতে ভাসতে পারে
শনি গ্রহ শুধুমাত্রই গ্যাস দ্বারা আবৃত এবং এর ঘনত্ব পানির চেয়েও কম । তাই আপনি যদি এমন একটা বড় পাত্র তৈরি করতে পারেন যেখানে শনিকে রাখা যায় এবং পাত্রটি যদি পানি দ্বারা পূরণ করতে পারেন তাহলে দেখতে পারবেন শনি গ্রহ পানিতে ভেসে থাকছে ।
৪। শনির রিং বা বলয়
শনিকে চারদিক থেকে ঘিরে থাকা এর এর রিং বা বলয় একে সৌরজগতের ইউনিক গ্রহ হিসেবে পরিচয় দেয় । আপনি যখন ছবিতে এর রিংগুলো দেখবেন আপনি হয়ত ভাববেন এগুলো কোন সলিড পদার্থ দ্বারা তৈরি, কিন্তু আসলে তা না । শনিতে ৭টি গ্রুপে ৩০+ টি রিং রয়েছে । শনির রিংগুলো তৈরি হয়েছে এর চারপাশের ময়লা, আবর্জনা দ্বারা । শনি গ্রহ এত দ্রুত ঘুরছে যে, এর চারপাশের পাথর, বরফ এবং অন্যান্য ময়লা ঘূর্ণনের ফলে রিংয়ের মত তৈরি করে ফেলেছে ।
৫। শনির চাঁদ
এখন পর্যন্ত শনির ৬৭টি চাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে । সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান শনিতে অবস্থিত । শনি গ্রহ এসব উপগ্রহের প্রাউড অনার ।
৬। টাইটানে উড়তে পারা
টাইটান শনির সবচেয়ে বড় চাঁদ বা উপগ্রহ । টাইটানের মধ্যাকর্ষণ শক্তি খুবই দুর্বল এবং এর বায়ুমন্ডল একদম হালকা । যারফলে আপনি টাইটানে অনয়াসেই পাখির মতোই উড়তে পারবেন । ব্যাপারটা সত্যিই কুল…।
৭। আয়তন
শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ । এটা পৃথিবী থেকে প্রায় দশ গুণ প্রশস্ত । শনি গ্রহ এতই বড় যে, এটি অনায়াসেই ৭৫০টি পৃথিবী এর নিজের ভেতরে ধারণ করতে পারবে ।
৮। দ্রুততর আবর্তন
সোলার সিস্টেমে বৃহস্পতি গ্রহের পরেই শনি তার অক্ষের উপর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে আবর্তন করে । এত বড় গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও এটি তার নিজ অক্ষের উপর আবর্তন করতে লাগে মাত্র ১০ঘন্টা ৩৪ মিনিট যেখানে পৃথিবীর লাগে ২৪ ঘন্টা । এটি ৬২০০ মাইল প্রতি ঘন্টা গতিতে এর নিজ অক্ষের উপর আবর্তন করছে ।
৯। সো ফাস্ট, সো স্লো
শনি গ্রহ যেমন দ্রুতগতিতে নিজ অক্ষের উপর আবর্তন করে তেমনি অত্যন্ত ধীর গতিতে সূর্যের চারদিকে আবর্তন করে । এটা এতটাই স্লোভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে যে, সূর্যের চারদিকের একবার আবর্তন করতে এর প্রায় ২৯.৭ বছর লেগে যায় । যেখানে পৃথিবীর লাগে মাত্র ৩৬৫ দিন ।
১০। পৃথিবীর সাথে তুলনা করা যায় না
আপনি কখনও পৃথিবীর সাথে শনি গ্রহের তুলনা করবেন না । কারণ, প্রথমত শনি গ্রহ আমাদের গ্রহ থেকে প্রায় দশগুণ প্রশস্ত । তাছাড়া শনি গ্রহ এতটাই বড় যে, এটা পৃথিবীর মতো ৭৫০টি গ্রহকে এর ভিতরে অনায়াসে ধারণ করে নিতে পারবে ।
সোর্সসমূহঃ- wikimedia.org, space.com, Flickr, nasa.gov, space-facts.com, coolcosmos.ipac.caltech.edu, universetoday.com