বাঙ্গালী মুভি লাভারদের সাথে কোরিয়ান সিনেমা ওল্ডবয়ের আলোচনা আসলে তার সাথে আরেকটি মুভিরও আলোচনা হতে দেখেছি, ইনসেন্ডিস৷
যদিও বেশিরভাগেরই মন্তব্য, এই মুভি একেবারেই বোরিং! কিন্তু আমার মুভিটা দেখে মনে হল এটি পারফেক্ট মাস্টারপিস একটা মুভি৷ এবং এও বলে রাখা ভালো যে, যদি আপনার ড্রামা মুভি দেখার অভিজ্ঞতা না থাকে তো ভুলেও এটা দেখতে যাবেন না৷
২০০৪ সালে কানাডার মন্ট্রিলের এক থিয়েটারে যখন এ কাহিনীর নাট্যরূপ দেখছিলেন পরিচালক ডেনিস ভেলেনুয়েভে, তখন তারও এটিকে একটা ট্র্যু মাস্টারপিস মনে হয়েছে৷ যার কারণে তিনি ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন, এটিকে মুভিতে রুপ দিবেন৷
এরপর চার বছর চলে গেল, শুধু তার স্ক্রিন রাইটিং করতে করতেই৷ ডেনিস আরব কালচার সম্বন্ধে তেমন জানতেন না৷ ইনসেন্ডিসের মূল কাহিনীকার ওয়াজদা মাওয়াদ হচ্ছেন একজন এরাবিয়ান কানাডিয়ান নাট্যকার। গল্পের মূল চরিত্র নাওয়াল মারওয়ানের উপাদান মূলত একজন বাস্তব মানুষ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে চিত্রায়ণ করেছেন৷ নাওয়ালের জীবনের বিপ্লবী অংশ মিলে যায় লেবানিজ সিভিল ওয়ার কর্মী সোউহা বাশারার সাথে৷ বাশারার বাবা ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য৷ তারা ছিল খৃষ্টান৷ পরবর্তীতে বাশারা জাতীয়তাবাদী ভাবধারার ইসরায়েলের মদদপুষ্ট আর্মির জেনারেল এন্টনী লাহাদকে খুন করে৷ তৎক্ষনাত বাশারা লাহাদের গার্ডের হাতে ধরাশায়ী হয় এবং ১০ বছরের জন্য কারাগারে পুড়ে৷
মূল গল্প লেবানিজ সিভিল ওয়ার কে কেন্দ্র করেই। কিন্তু মুভিতে পরিচালক ডেনিস বিষয়টিকে অস্পষ্ট রেখেছেন। মুভি শুরু হয় নাওয়াল মারওয়ানের মৃত্যু দিয়ে৷ মরার সময় তার জমজ সন্তানের জন্য রেখে গিয়েছেন দুটি চিঠি৷ একটি তাদের ভাইয়ের জন্য, আরেকটি তাদের বাবার জন্য৷ এখন তাদের কাজ হল কে তাদের ভাই! কে তাদের বাবা! এদের খুঁজে বের করা। এবং তাদের হাতে চিঠি পৌঁছে দেওয়া৷ এ করতে গিয়েই তারা পৌঁছে যায় মধ্যপ্রাচ্য জার্নিতে৷ দীর্ঘ সে জার্নি শেষে তারা যে সত্যের মুখোমুখি হয়! এরচেয়ে তো নিজেদের মৃত্যুও ভালো ছিল!!!
মুভিটি যুদ্ধ কেন্দ্রীক হলেও এতে যুদ্ধের ধুন্ধুমার একশন নেই, নেই কোনো সৈনিকের অসম সাহসীকতা। বরং যুদ্ধ যে সমস্ত ক্ষত রেখে যায় সমাজে, যে সমস্ত হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে যায়, যে সমস্ত জীবন ক্ষত বিক্ষত করে দিয়ে যায় সেসবেরই এক কেন্দ্রীয় চরিত্রকে ধারণ করেছে এ মুভি৷ যুদ্ধের রেখে যাওয়া ক্ষতির ছাপ এ মুভি নতুন করে বুঝতে সহায়তা করে।
মুভিটিকে নিখুঁত করতে পরিচালক আরব কালচার বুঝার জন্য সেসব দেশগুলোয় ঘুরাঘুরি করেছেন৷ এরপর ২০১০ এ জর্ডানের আম্মানে ১৫ দিন শ্যুটিং করেন৷ বাকী শ্যুটিং ছিল মন্ট্রিলে৷
কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা নাওয়াল উরফে লুবনা আযাবালকে পেতে পরিচালকের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কানাডায় অনেক খোজাখুজি করেও এবং দুএকজন কে নির্বাচন করেও যখন নাওয়ালের চরিত্রে মনমতো কাউকে পাচ্ছিলেন না৷ তখন একদিন প্যারিসে পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় হয় বেলজিয়ান এক্ট্রেস লুবনার সাথে৷ লুবনা এর আগে পরিচিতি পেয়েছিলেন প্যারাডাইজ নাও মুভিটির মাধ্যমে৷ পরিচালক তার মাঝে এক বিশেষ সুবিধা পেয়েছিলেন৷ লুবনার বয়স তখন ছিল ৩০। কিন্তু তবু তার চেহারা এমন ঝকঝকে তকতকে ছিল যে ম্যাক আপের সাহায্যে তাকে সহজেই ১৮ বছরের করে ফেলা গিয়েছিল৷ সেজন্য একই চরিত্রের জন্য তাকে আর দুইজন অভিনেত্রী খুজতে হয়নি৷
মুক্তির পরপরই ব্যাপক দর্শক প্রিয় হয় মুভি৷ সাথে ক্রিটিকদের অজস্র পজিটিভ রিভিউয়ে ভেসে যায় ইনসেন্ডিস৷ সে বছর কানাডিয়ান বক্স অফিসে অন্যতম আয় করা মুভি ছিল এটি৷ সাথে ওয়ার্ল্ডওয়াইড গ্রসিং এও রেকর্ড করে৷ পরের বছর বেস্ট ফরেইন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম ক্যাটাগরিতে অস্কার বাগিয়ে নেয় এ মুভি৷
Director : Denis Villeneuve
Genre : War, Drama
Duration : 2h 10m
Cast : Lubna Azabal, Melissa Desomeax-poulin, Maxime Gaudette, Remy Girard
Language : Arabic, French
Country : Canada
Imdb : 8.3/10
Metacritic : 80%
Rotten Tomatoes : 93%
সাবসিন থেকে সাবটাইটেল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।