মানুষ মরণশীল, তার আত্মা অমর। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, মহাপ্লাবনে মানুষের যখন সব কিছু কেড়ে নেয়, তখন ধনী গরীব সব সমান হয়ে যায়। সহায় সম্বলহীন মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় দিক বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। যখন ত্রাণ সামগ্রী বহনকারী হেলিকপ্টার বা অন্য কোন যানবাহন চোখে পড়ে, তখন সবাই ছুটতে থাকে ঐগুলির দিকে একটু সাহায্য পাওয়ার আশায়। ঠিক তেমনি মানুষের আত্মা যখন দেহ ত্যাগ করে, তখন তাহারা এতিম হয়ে যায়। ভাল কি মন্দ করার আর কোন সুযোগ থাকে না। পৃথিবীতে রেখে আসা পুত্র, কন্যা আত্মীয়-স্বজন ভালবাসার লোকের দোয়ার আশায় এতিম বেশে ছুটতে থাকে। আত্মাগুলি সর্বদা আশাবাদী তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে দুনিয়াবাসী দোয়া করে কি না? দুই ফোঁটা চোখের পানি নির্গত করে কি না? আমার বিশ্বাস আমরা যদি মানব কল্যাণের কাজ করে যাই, মানুষকে ভালবাসি তবে আমাদের বিদেহী আত্মার জন্যও দুনিয়াবাসী মঙ্গল কামনা করবে এবং চোখের পানি ফেলবে। তাই আসুন আমরা আমাদের মঙ্গলের জন্যই মানব কল্যাণের জন্য কিছু কাজ করে যাই।
এক গ্লাস পানি ও এক গ্লাস পেট্রোল হাতে নিয়ে যখন আগুনের প্রতি পেট্রোল নিক্ষেপ করা হয় তখন তাহা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে, আবার যখন আগুনের প্রতি পানি নিক্ষেপ করা হয় তখন তাহা নিভে যায়। ঠিক তেমনি একই চক্ষু হতে দুই প্রকার পানি নির্গত হয়। দুনিয়ার ঝামেলায় পড়ে দুঃখ কষ্ট পেলে চোখের পানি গড়াতে থাকে, আর মহান আল্লাহ তাআলার ভয় ও প্রেমেও চোখের পানি গড়াতে থাকে। প্রথমোক্ত দুনিয়ার ঝামেলায় নির্গত চোখের পানিতে দোযখের আগুন জ্বলতে থাকবে। আর আল্লাহর ভয় ও প্রেমে নির্গত চোখের পানিতে দোযখের আগুন নিভাতে থাকবে। তাই আসুন কঠোর পরিশ্রম করে দুনিয়ার ঝামেলা ও সমস্যার সমাধান করি এবং আত্মসুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার ভয় ও প্রেমে চোখের পানি নির্গত করি।
জমিতে ফসল বপন করলে আগাছার পরিমাণ যদি বেশি থাকে, তবে ফসল নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার যখন নিড়ানী দিয়ে আগাছ ফেলে দেওয়া হয় তখন ফসল সতেজ ও শক্তিশালী হয়। তখন সামান্য আগাছা জন্মালেও সতেজ ও শক্তিশালী ফসলের চাপে আগাছা নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার যখন তওবার মাধ্যমে চোখের পানি দ্বারা পাপ সমূহ ধৌত করা হয় তখন পূণ্য সতেজ ও শক্তিশালী হয়। পূণ্য যখন শক্তিশালী হবে সামান্য পাপ জন্মালেও শক্তিশালী পূণ্যের চাপে পাপ নিঃশেষ হয়ে যায়। সাবান দ্বারা কাপড় ধৌত করলে যখন ময়লা যায় তখন বুঝা যায় ময়লা গিয়ে কাপড় পরিষ্কার হচ্ছে। ঠিক তেমনি আল্লাহর ভয় ও প্রেমে তওবার মাধ্যমে যখন চোখের পানি ঝরতে থাকবে তখন বুঝতে হবে গুনাহসমূহ অন্তর থেকে মুছে যাচ্ছে।
তাই আসুন আল্লাহর ভয় ও প্রেমে তওবার মধ্যে বেশি বেশি চোখের পানি নির্গত করি। হাদীসে আছে গরীব লোক ধনী লোকের চেয়ে পাঁচ শত বৎসর আগে বেহেস্তে যাবে। আমার বিশ্বাস যাহাদের কিছুই নাই কিন্তু তাহারা অহংকার করে এবং নিজকে ধনী মনে করে এবং দর্পভরে চলে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে নিজকে ধনী প্রমাণ করতে চায় এবং অপর দিকে যাহাদের প্রচুর অর্থ সম্পদ আছে কিন্তু অহংকার করে না, নিজেকে মনে করে নিঃস্ব ও সম্বলহীন। প্রচুর সম্বল থাকা সত্ত্বেও মনে করে ‘আমি আমার নহি’ সুতরাং আমার বলতে কিছুই নেই, সব কিছুর মালিক আল্লাহ। আমার বিশ্বাস প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যে মনে করে আমার বলতে কিছুই নেই সেই গরীব এবং তাহারই পাঁচশত বৎসর পূর্বে বেহেস্তে যাওয়ার কথা, যাহাদের স্বভাব কোমল ও মানুষের নিকট দুর্বল বলিয়া পরিগণিত তাহারা বেহেস্তবাসীর দলভুক্ত। আর যাহাদের স্বভাব কঠোর ও মানুষের নিকট দাম্ভিক ও অহংকারী বলিয়া পরিগণিত তাহারা জাহান্নামীদের দলভুক্ত। তাই আসুন অহংকারকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাঁটি মানুষ হওয়ার শপথ নেই।
প্রতিশোধ নেওয়ার মনোভাব যখন অন্তরে থাকবে না তখনই বুঝতে হবে ক্রোধ সংবরণ হয়েছে। ক্রোধ সংবরণকারীই প্রকৃত বীর পুরুষ, যে কুস্তিতে হারাইয়া দেয়, সে প্রকৃত বীরপুরুষ নহে, বরং সেই প্রকৃত বীর পুরুষ, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখিল। আসুন আমরা হানাহানি, মারামারি বর্জন করি। প্রতিশোধ নয় ভালবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করি।
ভালো লাগলে আমাদের টেকব্লগবিডি সাইট টাই ঘুরে আসবেন ? TechBlogBD.Net