প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কখনো না কখনো ভালো একজন শিক্ষক থাকে । আমার জীবনে আমার বাবা-মা, পরিবার আমার জীবনের শ্রেষ্ট শিক্ষক । এবং তার পর আমার স্কুল জীবনের শিক্ষক গুলোই ছিলো আমার সেরা শিক্ষক । একটা সময় ছিলো যখন স্কুলে যেতে ততোটা ভালো লাগতো না । কিভাবে স্কুল ফাকি দেওয়া যায় সেই চিন্তা গুলোই মাথাই বেশি ঘুরপাক খেতো । যখন একটু বড় হলাম স্কুলটাকে ভালো লাগা শুরু হলো শিক্ষক গুলোর বকা গুলো কে ভালোবসা মনে হওয়া শুরু হলো ঠিক এমন সময় করোণা নামক রোগাটি এসে সব ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করলো । সত্যি স্কুল লাইফের জীবনটাই সর্ণ যুগ ছিলো । এখন মনে হচ্ছে ওল্ড ইজ গোল্ড বাক্যটি হয়তো কোনো স্কুল জীবন মিস করা ছাত্রই প্রথম উচ্চারণ করেছিলো । সময়টা অল্প ছিলো না প্রিয় শিক্ষক গুলোর সাথেই অনেকটা বছরই কেটেছে কিন্ত তা আজ তা বড়ই অল্প মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোনো ভালো সপ্ন দেখছিলাম হঠাত সেই সপ্নটি ভেঙ্গে গেলো । আমার জীবনে আজ সত্যিই স্কুল লাইফটাকে খুবই মিস করছি । বিশেষ করে সেই সকল শিক্ষক গুলোকে কখনোই ভুলতে পারবো না যারা সব সময় আমাদের ভালোর জন্য নানান রকম রূপ ধারণ করেছে । কখনো বা আমাদের বন্ধু, কখনো বা ভয়ানক, কখনো বা ভালোবাসে আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছে , চিনিয়েছে জীবনে সফল হওয়ার সঠিক পথটি । প্রত্যেকটা শিক্ষককেই অনেক মনে পড়ে কিন্ত প্রত্যেকটা মানুষের কাছে কিছু প্রিয় শিক্ষক থাকে , আমার জীবনেও ছিল । এবং …
আজকে আমি আপনাদেরকে আমার প্রিয় সেই শিক্ষক গুলো সম্পর্কে জানাবো ।
লিস্টে দেওয়া প্রত্যেকটা শিক্ষকই ছিলো আমার দেখা সেরা শিক্ষক ।
১। সম্মানীয় নাজমুল কবির স্যারঃ ( Nazmul Kobir )
স্যারের সাথে প্রায় ৪ বছরের ও বেশি সময় ধরে জ্ঞান অর্জন করেছি । প্রিয় স্যার, একটু রাগী ছিলো কিন্ত আবার অনেকটা নরম মনের মানুষও ছিলো । স্যার অংক খুবই ভালো বোঝাতে পারেতো, আমার মনে হয় যারা অংকে একদমই কাচা ছাত্র তারাও স্যারের কাছ থেকে অংক শিখলে একবারেই যেকোনো অংক শিক্ষে যাবে । স্যারের শেক্ষানোর ধরণটাই একটু আলাদা ছিলো , স্যার একটা কথা বলতো যে, “যেকোনো যায়গায় আমার বোঝানোর পরও যদি কেউ না বোঝো তাহলে হাজার বার প্রশ্ন করবা কিন্ত যদি প্রশ্ন না করো না বুঝেও আর আমি যদি ধরি তাহলে যদি না পারো তাহলে কপালে দুঃখ আছে ।” একদিনের কথা মনে পড়ে গেলো , স্যার বোর্ডে একটি অংক বোঝাচ্ছিলো আমি অংকটার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম যেনো স্যার বুঝতে পারে আমি স্যারের অংক বুঝছি । কিন্ত এদিকে আমার মন ছিলো অন্যদিকে । আমি ভেবেছিলাম স্যার হয়তো ভাববে বাইজিত খুব ভালো ভাবে দেখছে হয়তো ও বুঝছে । কিন্ত না এমনটা শুধু ভাবনা ছিলো রিয়েলিটিটা সম্পূর্ণ আলাদা । স্যার এতো ছাত্রের ভীরে আমাকেই প্রশ্ন করে বসলো । আমি হা করে দারিয়ে আছি পরে স্যার বলা শুরু করলো “বাবাজি আমার কতো সুন্দর ভাবে তাকিয়ে ছিলো এই বুঝেছো ?” আমার কোনো জবাব ছিলো না । স্যার বললো এবার ভালোভাবে দেখ… আবারো স্যার বুঝিয়ে দিলো এবং বুঝে গেলাম । কেনো জানি স্যারের ক্লাস গুলো একদিনও কামাই করতাম না । শুধু আমিই না আমার সহপাঠি বন্ধুরাও সবাই স্যারের শেক্ষানো জিনিস গুলো খুবই মনোযোগ দিয়ে শিক্ষতো । স্যার মাঝে মাঝে পড়া না পারলে একটূ বকা দিতো আবার পড়া পারলে খুবই ভালোবাসতো । স্যার যখন বকতো তখন খুবই খারাপ লাগতো নিজেকে অসহায় মনে হতো , আবার স্যার যখন ভালোবাসতো তখন মনে হতো এটাই হয়তো পৃথিবীর সবথেকে বড় ভালোবাসা ।
২। সম্মানীয় কাজল মাহমুদ স্যারঃ ( Kajal Mahmud )
আমাদের স্কুলে কাজল স্যার ছিলো একজন বাংলা ভাষার পারদর্শী একজন শিক্ষক । বাংলা ভাষা তো সবাই পারে কিন্ত আমাদের স্যারের মতো কতোজনই বা পারে ? আমাদের স্যার কোনো কবির থেকে কোনো অংশে কম ছিলো না । শুধু তাই নয় আমাদের স্যার তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকেও অনেক এগিয়ে । কিন্ত কষ্টের বিষয় স্যারের ক্লাস খুব কমই করা হয়েছে করোণার জন্য । তারপরও অল্প কিছুদিনেই স্যারের প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরী হয়েছে । স্যার খুবই সহজ সরল একজন মানুষ ছিলেন এবং খুবই সুন্দর ভাবে পড়া বোঝাতেন । ইচ্ছা করতো স্যারের ক্লাস যেনো আর একটু থাকে । সপ্তম শ্রেণীতে একবার স্কুল পরীক্ষাই একবার স্যার গার্ডে ছিলো সামনে থেকে এক বন্ধু একটা অবজেক্টিভ জানতে চাইছিলো আমি বুঝতে পারছিলাম না ওকে কিভাবে উত্তরটা জানাবো স্যারকে অনেক সম্মান করতাম আবার ভয় ও পেতাম । দেখলাম স্যার কাগজে কি একটা লিখছিলো এমন সময় আমি আমার দুইটা আঙ্গুল মাথাই রেখে বন্ধুকে বুঝিয়ে দিলাম উত্তর (খ) হবে । স্যার দেখেও নি কিন্ত ২০ মিনিট পর হঠাত স্যার একটা ছোট গল্প বললো । গল্পটি একটা ঈগল আর কি একটা পাখির ছিলো , পরে বুঝলাম স্যার সব বুঝে ফেলেছে । স্যারের চোখ ফাকি দেওয়া অসম্ভব আমি কল্পনাও করতে পারি নি স্যার বুঝে ফেলবে । এটা থেকে স্যারের প্রতি সম্মান আরো ডাবল হয়ে গেলো । আর একটা কথা মনে পড়ে তখন অষ্টম শ্রেণিতে পরতাম একদিন স্যার কোনো একটি স্কুল ফাংশনের জন্য একজন ভদ্র ছেলে খুজছিলো । এমন সময় ক্লাসে সবাই বলতে লাগলো স্যার আমাকে নেন, আমিও বলতে লাগলাম স্যার আমাকে নেন । এক কথাই সবাই আমরা একসাথে বলছিলাম স্যার আমাকে নেন । কিন্ত স্যার সব সময় পড়ানোর পাশা-পাশি প্রত্যেকটা ছাত্র কে চিনে রাখতো কে কেমন, কাকে কোন কাজের জন্য সিলেক্ট করা যায় সেটা স্যার জানতো । তাই সবাইকে রিজেক্ট করে স্যার এই কাজের জন্য সঠিক মানুষটা কে বেছে নিলো । এই ঘটনার পর থেকে স্যারের প্রতি পুরো বিশ্বাস ছিলো যে, স্যার যেটাই করুক বা যেটাই সিলেক্ট করুক না কেনো সেটা সেই কাজের জন্য পারফেক্ট ।
যদিও দুইটি স্যারের কথাই বললাম কিন্ত স্কুলের প্রত্যকেটা শিক্ষকই ছিলো সেরা । আমার মনে হয় আমার স্কুলের শিক্ষক গুলোই পৃথিবীর সেরা শিক্ষক । এবার আসি স্কুল লাইফের বাইরে একজন কলেজ শিক্ষকের কথাই । যার কাছে হয়তো আমি কোনো ক্লাস করি নি, কিন্ত স্যারের সাথে যতোটুকু সময় কথা বলেছি সেটা ভার্সুয়াল জগতেই হোক কিংবা রিয়েল লাইফেই । স্যারের প্রত্যেকটা বাক্যই ছিলো এক একটা জ্ঞান ।
৩। সম্মানীয় সাদিকুল ইসলাম স্যারঃ ( Md Sadikul Islam )
প্রথমেই বলে নেই স্যার খুবই যুবক ফ্রেন্ডলী একজন শিক্ষক । শুধু শিক্ষকতাই নয় , স্যার পাশা-পাশি আরো অনেক রকম পেশাই সঙ্গে যুক্ত আছে । বলা যায় সাদিক স্যার হচ্ছে একের ভেতর সব । ভার্সুয়াল জগতে স্যারের সাথে পরিচয় তারপর স্যারের সাথে দেখা করার সুযোগ ও আমার হয়েছে । আমাদের স্যার একজন কলেজের শিক্ষক পাশা-পাশি একজন বড় ইউটিউবার । শুধু তাই নয় স্যারের অনলাইনে অনেকগুলো ওয়েবসাইট ও আছে । যেখানে স্যার নানান ধরণের কন্টেন্ট আপলোড করে থাকে । স্যার কে সেলিব্রেটিও বলা যায় কারণ স্যার তার ফেসবুক পেজেও যদি কখনো লাইভে আসে তাহলে তার লাইভ ভিউ সংখা ৫০ হাজার অতিক্রম করে ফেলে । স্যারের সাথে আমার খুব অল্পই কথা হয়েছে কিন্ত যেটুকুই কথা হোক না কেনো স্যারের প্রত্যকেটা কথাই ছিলো একেকটা জ্ঞান । কিছুদিন আগেও স্যার আমাকে একটা কথা বললো যে,
“বাইজিত কিছু জিনিস থাকে যা নির্ধারিত যেমন জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে আর কিছু থাকে যেটা মানুষ পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারে ভালো পরিশ্রম করলে ভালো ফল পাবে পরিশ্রম বিমুখ হলে অর্থাৎ পরিশ্রম না করলে ভালো ফল পাবে না একে বলে মুলাকা আরবিতে । কোনরকম হতাশ হওয়া যাবে না জীবনে সিংহের মতো অ্যাটিটিউড তৈরি করা লাগবে আর লক্ষ্য স্থির লক্ষ্য যদি পূরণ না হয় তাহলে লক্ষ্য নয় পরিবর্তন করতে হবে।”
সত্যি সাদিক স্যারের প্রত্যেকটা কথা একেকটা জ্ঞান, অনুপ্রেরণা ।
তো এই ছিলো আমার প্রিয় কিছু শিক্ষকের লিস্ট, আরো অনেক শিক্ষকই আছে যদি লিখতে শুরু করি তাহলে আমার কম্পিঊটারের কিবোর্ড হয়তো ভেঙ্গে যাবে কিন্ত স্যারদের সংখ্যা শেষ হবে না । প্রত্যেকটা মানুষের থেকেই শিক্ষা অর্জন করা যায় এটাও আমার কোনো একজন শিক্ষকই বলেছে । আমার মনে হয় সবারই কম বেশি লাইফে কিছু প্রিয় শিক্ষক থাকে । কমেন্টে আপনারাও আপনার প্রিয় শিক্ষকের বিষয় শেয়ার করতে পারেন । আর হ্যা এই পুরো লেখাটা অভ্র দিয়ে লেখা তাই কোনো বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।