Site icon Trickbd.com

দেশীয় ব্র‍্যান্ডের ১০ হাজারের বাজেট ফোন Symphony Innova 20!! ক্রয়ের আগে দেখে নিন সম্পূর্ণ রিভিউ।

আসসালামু আলাইকুম

আশা করি সকলেই অনেক ভালো আছেন। আজকে অনেকদিন পর আপনাদের জন্য একটি মোবাইল রিভিউ নিয়ে পোস্ট লিখতে যাচ্ছি। আজকে যে মোবাইলের রিভিউ নিয়ে পোস্ট লিখতে যাচ্ছি সেটা হলো আমাদের দেশীয় ব্র‍্যান্ড Symphony এর Innova 20 ফোনের রিভিউ। এই ফোনটির দাম মাত্র ১০,১৯৯ টাকা, অর্থাৎ ১০,২০০ টাকাই। এত কম দাম হওয়ার পরেও এটা অনেক ভালো কিছুই অফার করছে আমাদের।

যাদের বাজেট ১০ হাজারের কাছাকাছি, কিংবা পরিবারের মুরব্বিদের জন্য একটা মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই ফোনটা হতে পারে একটা বেস্ট চয়েজ। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মোবাইল ফোনটির রিভিউ দেখে নেওয়া যাক।

 

Symphony Innova 20

ফোনটির বক্স Symphony এর অন্যান্য ফোনগুলোর মতই মোটামুটি। আর এই ফোনের বক্সে পেয়ে যাবেন একটি ইয়ারফোন যা এখন কোনো কোম্পানি দেয় না তেমন একটা। এছাড়াও এতে রয়েছে সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক যা এই মুহুর্তে আমরা ২০-২৫ হাজার টাকার ফোনেও মাঝে মাঝে পাই না আর ১০ হাজারের কাছাকাছি দামের ফোনে তো নেই বললেই চলে। এরপরেও এরা এটা দেওয়ায় একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়।

 

ডিজাইন

এই ফোনটা এমনিতে দেখতে অনেকটা সুন্দর। ক্যামেরা সেট আপ আর ডিজাইন আপনাকে Iphone এর মতো একটা ভাইভ দিবে। এর বডি ফ্রেম স্কয়ার বক্সি শেইপের মতো। এর রেয়ার সম্পূর্ণ প্লাস্টিক বডি বিল্ড। তেমন একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট না বসলেই স্ক্র‍্যাচ লাগার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে তাই একটা ব্যাক কভার ইউজ করবেন। এই ফোনের আরো একটি ভালো দিক হলো এটি খুব বেশি মোটা না। মাত্র ৮.৮ মিলিমিটারের থিকনেস এটার।

এই ফোনের পাওয়ার অন / অফ বাটনটাই ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে কাজ করবে। অন্যান্য ফোনের মতোই এই পাওয়ার বাটন ফোনের ডান সাইডে রয়েছে এবং পাওয়ার বাটনের উপরেই রয়েছে ভলিউম লকার। ফোনটির নিচের দিকে রয়েছে স্পিকার, চার্জিং পোর্ট, ৩.৫ মিমি হেডফোন পোর্ট। উপরের দিকে রয়েছে সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক এবং বাম সাইডে রয়েছে সিম কার্ড স্লট।

 

ডিসপ্লে

এই ফোনটির ডিসপ্লের সাইজ হলো ৬.৫২ ইঞ্চি যা একটি স্ট্যান্ডার্ড সাইজ। ফোনটির ডিসপ্লেটি HD+ এর। তবে বাজেট বিবেচনা করলে আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে। কারণ এই প্রাইজের কোনো ফোনে এখন পর্যন্ত HD+ এর থেকে ভালো ডিসপ্লে কোনো কোম্পানিই দেয় নি। তবে ভালো বিষয় এতে রয়েছে ৯০ হার্জ এর রিফ্রেস রেট।

এই ফোনটি বাজেট ফোন হওয়ার পরেও এতে পাওয়া যাবে পান্স হোল কাটআউটের ফ্রন্ট ক্যামেরা, যা আসলেই একটি ভালো বিষয়, কেননা এই মূহুর্তে এসে ওয়াটার ড্রপ নচ মানান সই না। এই ফোনটির বাজেট অনুযায়ী ডিসপ্লে নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও চিন ব্যাজেল গুলো আরেকটু ন্যারো রাখলে ফোনটা দেখতে সুন্দর হতো। এটাতে তেমন একটা টাচ রেস্পন নিয়ে সমস্যা না থাকলেও এপ ওপেন / ক্লোজ হতে হালকা সময় নেয়। আর ডিরেক্ট সান লাইটেও এই ফোন ব্যবহার করতে পারবেন তবে একটু স্ট্রাগল করতে হবে।

 

পার্ফরমেন্স

এই ফোনটিতে প্রসেসর হিসেবে রয়েছে Unisoc T606 নামক একটি প্রসেসর। এবং এটা রান করছে এন্ড্রয়েড ১৩ । বর্তমান সময়ে বাজেট ফোন গুলোতে এই প্রসেসর খুব ভালোই রাজত্ব করছে। কয়েক মাস আগে লঞ্চ হওয়া ১৫-১৬ হাজার টাকার ফোনেও এই প্রসেসর ব্যবহার হতে দেখা গেছে। তবে এই ফোনে যদি এই T606 এর মতো প্রসেসর না দিয়ে Mediatek Helio G সিরিজের G85, G88 এর মতো প্রসেসর দিতে তাহলে বলতে পারতাম এই বাজেটের সেটা পার্ফরমার।

তবে এই T606 প্রসেসর যে একবারে খারাপ বিষয়টা তেমন না। রেগুলার কাজ গুলো ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারবে এটি। আর ১০ হাজার টাকায় ফোন কিনে তো আপনি গেমিং এর আশা করতে পারেন না, এটা আপনিও জানেন। তবে সময় কাটানোর জন্য 2D গেম গুলো খেলতে পারবেন। আর এটায় 4/128 GB র‍্যাম ও স্টোরেজ থাকায় মাল্টিটাস্কিং এ খুব বেশি ভালো রেজাল্ট পাবেন না। একসাথে ৩-৪ টা এপ নিয়ে কাজ করতে পারবেন তবে এর বেশি হলে ব্যাকগ্রাউন্ড এর এপ ক্র‍্যাস হতে পারে।

সোজা কথা হলো, আপনি গেমিং আর মাল্টিটাস্কিং বাদে নরমালি ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব এগুলো দেখে টাইম পার করতে চাইলে এই ফোনটি কিনতে পারেন। তবে গেমিং এর আশা করলে এটা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

 

ক্যামেরা

এই রেয়ারে রয়েছে ট্রিপল ক্যামেরা সেট আপ। এর মেইন ক্যামেরা ৫০ মেগা পিক্সেল আর বাকি ২ টি সহকারি সেন্সর ২ মেগাপিক্সেল করে। আর ফ্রন্ট ক্যামেরা ৮ মেগা পিক্সেল। সহকারি ক্যামেরা তেমন কাজের না হলেও মেইন ক্যামেরা দিয়ে বাজেট অনুযায়ী মোটামুটি ভালো একটা রেজাল্ট পেয়ে যাবেন।

এর ক্যামেরা নিয়েও বেশি আশা রাখবেন না। সোজা কথায় চলার মতো একটা রেজাল্ট দিবে এটা। তবে যদি ১০ হাজারের অন্যান্য ফোনের সাথে তুলনা করেন তাহলে হেড টু হেড রেজাল্ট দিবে কিন্তু ১৫-২০ হাজারের ফোনের ক্যামেরা থেকে এটা অনেকটাই পিছিয়ে থাকবে।

লো লাইটে অনেক নয়েজের দেখা পাবেন এর সাথে প্রোপার লাইটেও বেশ কন্ট্রাস্ট্রি ভাইব দেয়। স্মুথনেস বেশি হওয়ার জন্য শার্পনেস এ ঘাটতি দেখা দেয়। তবে এর ভালো বিষয় হলো এটাতে কালার একটু বুস্ট করে প্রেজেন্ট করায় কালারফুল ছবি গুলো দেখতে কিছুটা ভালো লাগে।

 

ব্যাটারি

এর ব্যাটারি হিসেবে রয়েছে 5000 mAh এর একটি ব্যাটারি যা চার্জ করার জন্য ফোনের বক্সেই পাওয়া যাবে ১৮ ওয়ার্টের একটি USB Type C এর চার্জার। যারা হেভি ইউজার তাদের ১ দিন চলে যাবে এই ফোন দিয়ে আর যারা রেগুলার ইউজার তাদের ২ দিন অনায়াসে এই ফোন চার্জিং ব্যাকআপ দিতে পারবে।

 

ফোনের ভালো দিক গুলো

১. ফ্রন্ট ক্যামেরা পান্স হোল দেওয়া হয়েছে।
২. ৯০ হার্জ রিফ্রেসরেট দেওয়া হয়েছে।
৩. সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক রয়েছে।
৪. 5000 mAh এর বড় ব্যাটারি এবং ১৮ ওয়ার্টের চার্জার।
৫. ডিসপ্লে কালার রিপ্রেজেন্টেশন ভালো।
৬. ফোনের সাথে বক্সেই ব্যাক কভার আর ইয়ারফোন পাওয়া যাবে।

 

ফোনের খারাপ দিক গুলো

১. প্রসেসর হিসেবে Unisoc T606 রয়েছে, তবে এর থেকে ভালো প্রসেসর দেওয়া যেতো।
২. চিন ব্যাজেলগুলো মোটা, এগুলো আরো একটু ন্যারো করা যেতো।
৩. র‍্যাম মাত্র ৪ জিবি।
৪. জায়রো স্কোপ সেন্সর নেই।
৫. এটাতে মনো স্পিকার রয়েছে।

 

শেষ কথা

যাদের বাজেট একদম কম বা ১০ হাজারের কাছাকাছি তারা এই ফোনটি নিজেদের চয়েজ লিস্টে রাখতে পারেন। অথবা বাড়ির দাদা-বাবা বা মায়ের জন্য যারা ফোন কিনতে চাচ্ছেন তারাও এটাকে দেখতে পারেন। তবে যারা গেমিং করতে চান আবার ক্যামেরা ভালো চান তারা এটা থেকে দূরেই থাকবেন।

তো এই ছিলো আজকের পোস্ট, যদি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর এই ফোন নিয়ে অন্য কিছু জানতে হলেও কমেন্ট করতে পারেন। আর যারা এই ফোন ব্যবহার করছেন তারা নিজেদের ইউজার এক্সপেরিয়েন্সটা কমেন্টে জানাবেন এতে যারা এটা ক্রয় করার কথা চিন্তা করছেন তাদের অনেক উপকার হবে। আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই ছিল। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্টে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।