আসসালামু আলাইকুম।আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি।
অনেকদিন পর আমি আপনাদের জন্য আজকে একটি মুভি রিভিউ নিয়ে এলাম।রমজান মাস তাই মুভি নিয়ে এতদিন পোস্ট করি নি।কিন্তু এবার যে মুভিটি নিয়ে এসেছি সেটা একটি ইসলামিক মুভি।
Movie name : Fetih 1453 (2012)
IMDB rating : 6.7/10
Personal Rating : 9/10
Budget: 18.2 million USD
Box Office: 61.2 million USD
***হালকা স্পয়লার***
মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকেই চলে এসেছে লড়াই, বেঁধেছে যুদ্ধ। কখনো সে লড়াই অন্ন-বস্ত্রের জন্য, কখনো ক্ষমতার প্রলোভনে, কখনোবা সে লড়াই ধর্মযুদ্ধ!
পৃথিবীর প্রত্যেকটা জাতির রয়েছে এমন যুদ্ধ লড়াইয়ের ইতিহাস, দুনিয়ার প্রত্যেকটা ভুখন্ড হয়েছে রক্তে রঞ্জিত।ইতিহাস তাই কেবলই যুদ্ধের কথা বলে!
ইউরোপের কনস্ট্যান্টিনোপল(ইস্তানবুল) এমনই এক ভূখণ্ড যে জমিনের ইতিহাসের পরতে পরতে যুদ্ধের গল্প বুনা। সেসবেরই এক গল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ফেতিহ ১৪৫২ সিনেমার প্রেক্ষাপট।
উসমানীয় সালতানাতের সপ্তম শাসক “দ্বিতীয় মুহাম্মদ” এর শাসনামল কে পুঁজি করে যার স্ক্রিপ্ট। মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, মুসলিম বাহিনী কর্তৃক কনস্ট্যান্টিনোপল আক্রমণ ও বিজয়ের ইতিহাস সিনেমা শিল্পে তুলে ধরা।
পর্দায় আলো জ্বলে রাসূল (সঃ) এর ভবিষ্যৎবাণীর রেফারেন্স দিয়ে। যেখানে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এক মহান শাসক ও তার সৈন্যবাহিনী দ্বারা কনস্ট্যান্টিনোপলের বিজয় প্রসঙ্গে।
এরপর উসমানীয় সাম্রাজ্যের টাইমলাইনে প্রবেশ, দেখানো হয় দ্বিতীয় মুহাম্মদ এর সুলতান হয়ে উঠার যাত্রা। ধীরেধীরে রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠে সিনেমার পর্দা। দুই সাম্রাজ্য থেকে পুরো ইউরোপ কি করে এই খেলায় জড়িয়ে যায় সেটাই আস্তে আস্তে উঠে আসবে ডিরেক্টর ও অভিনেতাদের হাত ধরে। পুরো সিনেমা জুড়ে থাকবে ঐতিহাসিক রশদের ছড়াছড়ি।
ডিরেকশন খুব করেই প্রশংসার দাবীদার, অভিনয়ের কথা বলতে গেলে ফুল মার্ক দিতে হবে।
খুবই স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভিজ্যুয়ালাইজেশন দৃষ্টির আরাম দিবে পুরো আড়াইঘন্টা জুড়ে৷ ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যাবহার করা হয়নি খুব বেশি মিউজিক, যেটা দর্শকমনে ভাবগাম্ভীর্যের অনুভূতি দেয়। রানিংটাইম কিছুটা ধীরগতির মনে হতে পারে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে সুন্দর আবহ ই তৈরি করে।
সিনেমার সবচেয়ে শক্ত দিক এর ডায়লগ। বেশ ভারী এবং তাৎপর্যপূর্ণ ডায়লগে ভরপুর পুরো সিনেমা। যুদ্ধপ্রাক্কালে অটোমান সুলতান ও বাইজেন্টাইন সম্রাটের কথোপকথন দর্শকমনে শিহরণ জাগানিয়া, মুভির সিগনেচার সীন ও ধরা যেতে পারে যাকে। সিনেমাটোগ্রাফি সব মিলিয়ে আপ টু দ্যা মার্ক, সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে এর কলাকুশলী টিম।
দুর্বলদিক বলতে গেলে যুদ্ধকালীন দৃশ্যধারণ, খুব সুনিপুণ ভাবে উপস্থাপিত হয়নি যেগুলো। ভিএফএক্সের কাজও কিছুক্ষেত্রে একটু নড়বড়ে লেগেছে। তবুও ফাইট সীনগুলো উপভোগ্য ছিল। হ্যান্ড টু হ্যান্ড কম্ব্যাটগুলো ভয়াবহ মানের রিয়েলিস্টক ফিল দেয়।
খুব সহজভাবেই গল্প উপস্থাপিত হওয়ার চেস্টা থাকলেও ইতিহাস না জানাদের ক্ষেত্রে শুরুরদিকে দুর্বোধ্য লাগতে পারে।
পুরো সিনেমা শেষে এটুকুই বলা চলে, ইতিহাসের পাতা থেকে খুব যত্ন করে সিনেমায় গল্প ফুটানোর প্রয়াসটা সাগ্রিকভাবে সফল ছিল।
বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ প্লট, অসাধারণ মেকিং ও সিনেমাটোগ্রাফির সাথে গোল্ডেন মার্কের অভিনয় এই সিনেমাকে অলংকৃত করেছে। বিশেষ করে ইতিহাস প্রেমিদের জন্য মাস্টওয়াচ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া এই সিনেমা যে কারোর জন্যই উপভোগ্য এক প্যাকেজ।
“তোমরা (মুসলিমরা) অবশ্যই কন্সটান্টিনোপল বিজয় করবে। কতোই না অপূর্ব হবে সেই বিজয়ী সেনাপতি, কতোই না অপূর্ব হবে তার সেনাবাহিনী”
ভবিষ্যদ্বাণীটা করেছিলেন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। আর ওনার সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করেন উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ। যার কারনে ওনাকে ফাতিহ (বিজয়ী) উপাদি দেয়া হয়। কারন দীর্ঘ ১১০০ বছরেও বাজেন্টাইনদের এ শহরটা শতচেষ্টাতেও জয় করতে পারেনি কেউ। ১৪৫৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে সে কাজটিই করেন সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ। যার ফলে হাজার বছরের পুরানো বাজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে। উসমানী সালতানাত থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সূচনা হয় যা টিকেছিলো ১৯২৩ সাল পর্যন্ত।
আর সে ঐতিহাসিক যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে নির্মিত মুভি “ফাতিহ ১৪৫৩”। মুভিটি তুরস্কের সবচাইতে আলোচিত ব্যবসা সফল মুভি। মুভিটি দেখে এর প্রশংসা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। প্রশংসা করেন অনেক মুসলিম দেশের শাসকরাও। মুভিটিতে ঐতিহাসিক সে যুদ্ধের প্রতিটা ঘটনা দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন মুভির পরিচালক ফারুক আকসায়। সবার অভিনয়ও ছিলো অনেক ভালো। যুদ্ধের দৃশ্যও দারুন হয়েছে।
মুভির শুরুতে মুহাম্মদ (সাঃ) হাদিসটা দেখানো হয়েছে। এরপর সুলতান এর জন্ম। তার বেড়ে উঠা। সুলতানের সেনাপতি হাসানের কাছে তরবারি চালানো শেখা। সুলতানের পিতা দ্বিতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর নিজে সুলতান হওয়া। উজিরের সাথে মতবিরোধ। বাজেন্টাইন সম্রাটের নানা ষড়যন্ত্র। সুলতানের যুদ্ধ কৌশল। সুলতানের সেনাপতি হাসানের সাথে কামান বানানোর প্রকৌশলির মেয়ের প্রেম। তখনকার যুগের সবচেয়ে বড় কামান তৈরী করা।
দীর্ঘ ৪০ দিনের চেষ্টার পরেও শহরের রক্ষা করা দেয়াল ভাঙতে না পেরে সুলতান ও তার সেনাদের মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া। সব দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক। মুভির অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেনাপতি হাসানের সাথে বাজেন্টাইন সেনাপতির লড়াই। হাসানের মৃত্যু দৃশ্যটা সত্যি মনে দাগ কাটার মতো। মুভির প্রতিটা দৃশ্যই সত্যিকারের কাহিনী তুলে ধরেছে।
এবার ডাউনলোড করার পালা।
যারা হিন্দি/উর্দু ডাবিং এ দেখতে চান তারা এই লিংকে ক্লিক করে দেখুন/ ডাউনলোড করুন।
ফেসবুক থেকে ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য SnapTube ব্যবহার করতে পারেন।অথবা, ট্রিকবিডিতে আরো পোস্ট আছে ফেসবুক থেকে ভিডিও ডাউনলোড করা নিয়ে সেগুলো দেখতে পারেন।
যারা বাংলা সাবটাইটেল দিয়ে দেখতে চান তারা নিচ থেকে পছন্দমতো কোয়ালিটিতে মুভিটি ডাউনলোড করে নিন।
480p: Download Link Here
720p: Download Link Here
এবার বাংলা সাবটাইটেল ডাউনলোড করে নিন।
বাংলা সাবটাইটেলঃ Click Here
আরো মুভি রিভিউ পেতে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের সাইটঃ Tipsnewsbd
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।