আসসালামু আলাইকুম।আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি।
১৬ই মে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে দেশের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন এর উপন্যাস অবলম্বনে টেলিফিল্ম “মরণোত্তম”।
আজকে এই টেলিফিল্ম টির রিভিউ এবং ডাউনলোড লিংক নিয়ে হাজির হলাম।তো চলুন শুরু করা যাক।
***হালকা স্পয়লার***
‘আপনি কি রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে পারবেন যে, আমার টাকার বানানো রাস্তার ৬ মাসে এই হাল হয় ক্যান?’
‘পারবেন না।‘
কবি সাহেব বলছিলেন তার সঙ্গী পথচারীকে।
– এই প্রশ্ন করাটা কি আমার কাজ?
– সেইটাই। আপনি ক্যান প্রশ্ন করবেন? আপনি তো মরেন নাই। আজকে ছগির মরছে। আপনার কি? কালকে আপনি মরবেন আর হাসু বলবে আমার কি?
সাদাত হোসাইন’র একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে সঞ্জয় সমদ্দার নির্মিত ‘মরণোত্তম’ শুরু হয় সময়োপযোগী সাহসী এবং শক্তিশালী কিছু সংলাপের মধ্য দিয়ে। রোড এক্সিডেন্ট প্রসঙ্গে সংলাপগুলো বলেন গ্রামে ঘুরতে আসা এক শহুরে ভবঘুরে কবি।
কবি তার পথচারী বন্ধুটিকে উদ্দেশ্য করে যে কথা গুলো বলেন তা যেন এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের হাহাকার ব্যঙ্গাত্মক ভাবে রাষ্ট্রের প্রতি ছুঁড়ে দেয়া।
– আচ্ছা বলেনতো, এই সময়ে সবচেয়ে সস্তা কি?
– এই ধরেন বাঙ্গি
– (হেসে) এই সময়ে মরার চেয়ে সস্তা আর কিছু নাই।
বুঝতে পারি ‘মরণোত্তম’ নামের ছবিটি হতে যাচ্ছে সংবেদনশীল দর্শকদের জন্য তৈরী একটি সময়োপযোগী ছবি।
তবে ‘মরণোত্তম’- এর শুরুটা রোড এক্সিডেন্ট নিয়ে কিছু সাহসী ও শক্তিশালী সংলাপের মধ্য দিয়ে হলেও মূলত এর গল্প এক অসহায় স্কুল শিক্ষককে নিয়ে যিনি তার দশম শ্রেনী পড়ুয়া ছাত্রীর ধর্ষনের বিচার চাইতে ঢাকায় আসেন।
এরকম গল্প খুব যে নতুন তা বলবো না, তবে বার বার এ ধারার গল্প পর্দায় আসলেও সংবেদনশীল দর্শকদের কাছে এর প্রয়োজনীয়তা সমানভাবে থেকে যায়।
শুরুতে রোড এক্সিডেন্ট নিয়ে সংলাপের বিষয়ে বলছিলাম। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে এক সময়ের বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। মরণোত্তম- এর প্রধান চরিত্রে ইলিয়াস কাঞ্চন থাকায় শুরুর ঐ সংলাপগুলো আরো ইম্প্যাক্টফুল হয়ে ওঠে যেন। যদিও সংলাপগুলো মরণোত্তম- এর আরেক চরিত্র (ইমতিয়াজ বর্ষন) – এর মুখ থেকে আমরা শুনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন ছবিতে একজন সৎ এবং নিরীহ স্কুল মাস্টার, যার সরল বিশ্বাসের মূল্য দিতে হয় তার স্কুল ছাত্রীকে।
প্রধান চরিত্রে ইলিয়াস কাঞ্চন যেন চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়ে নিজেই চরিত্র হয়ে উঠেছেন। তিনি যে চরিত্রটির অসহায়ত্ব অনুভব করতে পেরেছেন তা তার অভিনয়ে ফুটে উঠেছে। শহুরে ভবঘুরে কবি চরিত্রে ইমতিয়াজ বর্ষনও মানানসই। স্কুল ছাত্রী চরিত্রে মাহীমা নামের মেয়েটা দুর্দান্ত। তার অসহায়ত্ব সে তার অভিনয়ে স্বার্থকভাবে তুলতে পেরেছে, যার ফলে দর্শক সহজে তার অসহায়ত্বকে অনুভব করতে পারবে।
বদমাশ চেয়ারম্যান চরিত্রে শহিদুজ্জামান সেলিম ঠিকঠাক। বাকি যারা ছিলেন সবাই স্বাভাবিক অভিনয়টা করেছেন।
আগেই বলেছি যে, সাদাত হোসাইনের গল্প সরল। কিন্তু সরল গল্পের মাধ্যমে যে মেসেজ তিনি দিতে চেয়েছেন বর্তমান সময়ে তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এ কারনেই গল্পটি শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে বলা যায়।
যদিও চরিত্রে, সংলাপে ‘হুমায়ূনীয়’ প্রভাব স্পষ্ট তারপরও গল্প এবং সংলাপ বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাহসী ও শক্তিশালী হওয়ায় সাদাত হোসাইনকে বাহবা দিতেই হয়।
‘এই দুনিয়াটাইতো একটা মিথ্যার দুনিয়া হয়ে গেছে। কলি যুগে সত্য অচল।’
‘এখানে জোর যার মুল্লুকতো তার হবেই। এদেশে টাকার কাছে সব বিক্রি হয়।’
এরকম নিদারুণ সত্য, সাহসী এবং শক্তিশালী সংলাপের জন্য লেখক বিশেষ প্রশংসার দাবীদার।
ইসতিয়াক অয়নের চিত্রনাট্য এবং সঞ্জয় সমদ্দারের নির্মান স্টাইলও সরল ধারার। তবে যে অসহায়ত্ব, যে হতাশা, বিষন্নতা পর্দায় উঠে আসা দরকার ছিল তা তারা তুলে ধরতে অনেকাংশে সফল হয়েছেন।
‘মরণোত্তম’ হয়তো তথাকথিত বিনোদন দিতে সক্ষম নাও হতে পারে তবে এর বিষয়বস্তু, গল্প এবং সংলাপের কারনে সংবেদনশীল দর্শকরা ছবিটিকে অনুভব করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।
‘যেখানে জীবনের চেয়ে মৃত্যু উত্তম, যেখানে জীবিত মানুষটির চেয়ে মৃত মানুষটি গুরুত্বপূর্ন, সেখানে মরণই উত্তম।‘
‘মরণোত্তম’ এভাবেই এই নষ্ট-ভ্রষ্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে তীরষ্কার করে যায়।
[রিভিউর কিছু অংশ অনলাইন থেকে নেয়া।]
এবার ডাউনলোড করার পালা।
আমি নিচে গুগল ড্রাইভ সার্ভারের লিংক দিয়ে দিচ্ছি।আপনারা গুগল একাউন্টে লগিন করে পছন্দমতো কোয়ালিটিতে ডাউনলোড করে নিন।
ঘুরে আসতে পারেন আমাদের নতুন সাইট: HealthAnyTips
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।