কিছু কথা:
বিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব জুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে নিজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে কয়জন নেতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বীরদর্পে লড়াই করে গেছেন, তাদের মধ্যে সেনুসী আন্দোলনের নেতা ওমর আল-মুখতার অন্যতম।
অকুতোভয় এই বীর দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইতালিয়ান শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ান মুজাহিদদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। সমসাময়িক অন্যান্য নেতার মতো ইতালিয়ানদের প্রস্তাব করা সুযোগ সুবিধার কাছে নিজেকে বিকিয়ে না দিয়ে, ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত আমৃত্যু লড়াই করে গিয়েছেন তিনি।
এমনকি মৃত্যুর সময়ও তাকে এতোটা ভীতসন্ত্রস্ত দেখা যায়নি। গাদ্দাফীর উদ্যোগে সিরীয়-আমেরিকান পরিচালক ওমর আল-মুখতারের শেষ বছরগুলো নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
‘লায়ন অফ দ্য ডেজার্ট’ নামে এ চলচ্চিত্রটি আরব বিশ্বে ক্লাসিক হিসেবে পরিচিত হয়। মুভিতে উঠে আসে বেদুইনদের মরণপণ লড়াই, ইতালির নৃশংস হত্যাকান্ড, বন্দিশিবিরে নির্মম অত্যাচার আর তৎকালীন পরিস্থিতির ঘটনা। মুভি রিলিজ এর পর রোমানদের অত্যাচারের মাত্রা দেখে ইতালিয়ানরা এত সমালোচনায় পড়েন যে ইতালিতে এই মুভি ব্যান করে দেয়া হয়। মুভিটির বিশেষত্ব হলো, এটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা এবং এর সকল চরিত্র বাস্তবিক।
এমনকি অনেক জায়গায় ওমর মুখতারের বিখ্যাত বাণীগুলোও হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত ছবিগুলোর আদলে মুভির চিত্রায়ন করা হয়েছে। যা আপনাকে মূল ঘটনা অনুধাবনের একদম শিকড় থেকে রসদ যোগাবে। ওমর মুখতারকে জানতে শুধু একটা মুভিই যথেষ্ট না, অনলাইনে অসংখ্য ফিচার রয়েছে তাকে নিয়ে।
ওমর আল-মুখতারের নাম লিবিয়ার প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে আছে। লিবিয়ার ১০ দিনারের নোটে তার ছবি আছে। আল-বেইদাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার নামে। এছাড়াও ত্রিপলী সহ বিভিন্ন স্থানে তার নামে বিভিন্ন রাস্তা, গ্রাম এবং মসজিদের নাম আছে।
শুধু লিবিয়া না, ওমর আল-মুখতারের নামে রাস্তা আছে মিসর, তিউনিসিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, জর্ডান, ফিলিস্তিন সহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতেও ওমর আল-মুখতারের নামে একটি মসজিদ আছে। গাদ্দাফীর মৃত্যুর পর লিবিয়ার পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত সহ সবকিছু আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেলেও ওমর আল-মুখতারের প্রতি লিবিয়ানদের শ্রদ্ধা আগের মতোই আছে।
তিনি সকল প্রকার রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে। যতদিন লিবিয়া থাকবে, যতদিন আরব বিশ্ব থাকবে, যতদিন বহিঃশক্তির আগ্রাসন এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ওমরের স্মৃতি মানুষের হৃদয়ে অটুট থাকবে।
সেনুসিদের নেতা মোহাম্মদ আল-মাহদি আস্-সেনুসি ওমর আল-মুখতার সম্পর্কে ঠিকই বলেছিলেন, “বিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের বিজয়ের জন্য ওমরের মতো শুধু দশ জন নেতা দরকার।”