একটা সিনেমার সফলতা কোথায় ? দর্শকের হাসিতে নাকি কান্নায়? আমার মনে হয় গল্পের বাস্তবতায়।
এ ২০২২ সালে এসে সেলুলয়েডে অবাস্তব জিনিসের থেকে বাস্তব পরিচিত জিনিস এই অভ্যস্ত হতে চাই দর্শক, তবে ব্যতিক্রম আছেই থাকবেই। আজ এমনই এক বাস্তব ঘটনা নিয়ে নির্মিত সিনেমা পরান নিয়ে কথা বলবো।
যদিও অনেকেই ইতিমধ্যে ধারণা করেছেন ২০১৯ সালের বরগুনার রিফাত মিননি নির্ণয়ন কান্দনে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা।
কিন্তু নির্মাতা সে বিষয়ে নিশ্চিত করেননি। তবে শুধু এই ঘটনায় যে বাস্তবতায় এই সিনেমার তা কিন্তু নয় আমি বলেছি সমাজের অন্যান্য বাস্তবতার কথা।
সিনেমার গল্প নিয়ে কথা বলা যাক।
মফস্বল শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অনন্যা যার গন্ডিটা ছোট হলেও স্বপ্নটা না।
বাবা মার আদরের মেয়ে ওনন্যা কে কলেজে আসতে যেতে বিরক্ত করে এলাকার বখাটে ছেলে নোমান।
রাজনৈতিক শক্তিতে যাকে ধরা ছোঁয়া যায় না।
সবাইকে ভয় দেখানো এই ছেলেটা কে ভয় পাই না অনন্যা, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা মিশ্রিত এক সম্পর্কের জালে ঢুকে যেতে থাকে অনন্যা আর নোমান।
ঠিক সেই সময় গল্পে এন্ট্রি হয় লক্ষ্মী ছেলে সিফাতের। লেখাপড়ায় মেধাবী এই ছেলেটার সরলতার প্রেমে পড়ে যাই অনন্যা। ভালোবেসে ফেলেন সিফাত ও।
একা হয়ে পড়ে এলাকার ত্রাস বলে পরিচিত নোমান, তবে এতটা সহজেই কি নোমান ছেড়ে দিবে অনন্যা আর সিফাত কে? আপনার কি মনে হয়?
এখান থেকেই মূলত সিনেমা টুইস্ট শুরু হয়।
গল্প যেন আপনি জানেন কিন্তু তবুও জানেন না, আমার মনে হয় একটা ভালো সিনেমার অন্যতম দিক কিন্তু এটাই যখন সিনেমা রেখে দর্শক একমুহুর্তের জন্যও ছিট ছেড়ে উঠতে চায় না।
পরান সিনেমাটি কিন্তু প্রেমের গল্প আপনার আমার আশেপাশের গল্প তবুও এই সিনেমা রেখে এক মুহূর্ত ও আপনি উঠতে পারবেন না গ্যারান্টি। প্রতিটি দৃশ্যই আপনাকে অবাক হতে হবে। এখানেই নির্মাতার সার্থকতা।
এবার আসি শুরুতেই যেই বাস্তবতা নিয়ে কথা বলছিলাম সেই বিষয়ে।
অনন্যা চরিত্রটি একটি ফিকশনাল ক্যারেক্টার মনে হলেও আপনি খুঁজে দেখুন এই চরিত্রটি আপনি আপনার আশেপাশেই কিন্তু আছে।
ভালোবাসার ঘৃণা যে মুদ্রার এপিট ওপিট তা এই সিনেমা দেখলে আপনি বুঝবেন। এই ভালোবাসা আর ঘৃণার ধোঁয়াশা তেই কেউ হয়ে যায় রাজা কেউ আবার সর্বহারা।
সমাজের আরেকটি কালো অধ্যায় এই সিনেমায় অবলীলায় দেখানো হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, যুগ যুগ ধরেই রাজনৈতিক নেতা প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতায় যখন অপরাধের পাহাড় জমতে শুরু করে, কিন্তু কেউ দেখেও যেন দেখে না।
ঠিক যেন সবকিছু জেনেও চোখে কাপড় রেখে দেয়ার মত। তারপর যখন ভাইরাল হতে শুরু করে তখন আমরা ঝড় তুলি সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আজকের এই সিনেমাকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করব।
নেতিবাচক এবং ইতিবাচক।
প্রথমেই ইতিবাচক দিয়ে কথা বলি।
শুরুতেই অভিনয় নিয়ে আজকে কথা বলতে চাই অভিনয়ে একশো তে ১০০ পেয়েছেন শরিফুল রাজ।
একশন সিম কিংবা ইমোশনাল সিন নিজের সঙ্গেই যেন নিজে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করছিলেন শফিকুল রাজ।
আমার এক পর্যায়ে মনে হয়েছে রাজি হয়তো নোমান উনি হয়তো বাস্তব জীবনে এমনই এন্ট্রি সিন এই আপনি তার প্রেমে পড়ে যাবেন।
টক্সিসিটে থাকলেও অন্যরকম এক মাদকতা দিয়ে চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে কিন্তু রাজ।
আবার ইমোশনাল সিন আসলে তখন আপনার রাগ হবে না তখন আপনার চোখে পানি চলে আসবে।
রাজের সঙ্গে কিন্তু তার পুরো শরীর অভিনয় করেছে।
একজন নেশাগ্রস্ত যুবকের চরিত্র কিন্তু তিনি এখানেই পারফেক্টলি ফুটিয়ে তুলেছেন, তাকে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন ইয়াস রোহান। তিনিও সিফাত চরিত্রর সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছেন।
তার প্রত্যেকটি এক্সপেকশনে কিন্তু অভিনয় ছিল ঠিক তিনিও যখন পর্দায় এসেছেন তাকেও ভালোবেসেছেন দর্শক আবার তার করুন দৃশ্যে কিন্তু পানি ঝরেছে চোখের অনেকের। তবে অনেক দর্শক তো মানে হল থেকে বের হয়ে চোখের পানি মুছছিলেন।
তারা ইয়াস রোহানকে নিয়ে কথা বলছিল এবং বলছিল ইয়াস রোহানকে আর কিছুক্ষণ পর্দায় থাকলে হয়তো ভালো লাগতো যাইহোক সিনেমাটি দেখে আমি নিজেও গুজবংশ নিয়ে বের হয়েছি।
এছাড়া অন্যান্য জায়গায় ছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম রাশেদ মামুন অপু নিলি বাসার কাউকে আপনি সিনেমার চরিত্র ছাড়া বাইরের কিছু ভাবতে পারবেন না।
এতটাই সাবলীল অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পীরা।
একটি দৃশ্য ছিল যখন রাজ আর অপুর যেখানে তারা দুজন দুজনের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করছিলেন।
ঠিক ওই মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল যে দুজন শক্তিশালী অভিনেতাকে একসঙ্গে পদ দায় দেখা কত বড়ো প্রিভেলেট।
তো এই সিনটার কথা আমি বলবো না এটাও একটি টুইস্ট আপনারা সিনেমা হলে গেলেই বুঝতে পারবেন।
আর একজন অভিনেতা যিনি এখন এই মুহূর্তে বাংলা কনটেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে দিনে দিনে নিজেকে কিন্তু পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি হচ্ছেন নাসির উদ্দিন খান যাকে আমরা রূপালী নামে চিনি।
এছাড়াও সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুবই ভালো হয়েছে, রাজের এন্ট্রি সিন বা রাজ যখন এন্ট্রি করছিলেন বা প্রেমের সিনে বা তাদের ইমোশনাল সিনে।
খুবই কানেক্টিং ছিল খুবই ইনস্ট্রাক্টিভ ছিল অতিরঞ্জিত বা অবাস্তব কোন দৃশ্য ছিল না।
এছাড়াও আলাদা করে যদি কিছু আমরা বলি তাহলে সিনেমার গান নিয়ে বলতেই হয়। কারণ অসাধারণ কিছু গান রয়েছে সিনেমার মধ্যে। আপনি কিন্তু ঘরে বসেও দেখলেও গান টানবেন না আপনার মানে হল থেকে মানুষ যখন বের হচ্ছিল তখন আমরা দেখছিলাম লাস্টের গানটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে মানুষজন বেরোচ্ছে।
এ থেকেই বোঝা যায় কথাটা প্রভাব পড়েছে তাদের উপরে কারণ শেষের যে সজনী গো গানটি আসলেই হৃদয়ে লেগেছে দর্শকদের।
১০০ তে ১০০ দিতে পারেননি হচ্ছে বিদ্যা সিনহা মিম, যার স্ক্রিন টাইমিং সবচেয়ে বেশি ছিল অর্থাৎ তাকে সুযোগ সব চাইতে বেশি দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি কাজে লাগিয়েছেন অনেক কম।
শুরুতেই মিমকে ফাস্ট স্টেপে অনন্যা চরিত্রে ঠিক ফেলা যাচ্ছিল না, ঠিক বস ছিলেন না তবে সেকেন্ড ধাপে গিয়ে মিম আসলে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি স্টাডি করেই সেটে এসেছেন।
যতক্ষণ পুলিশ স্টেশনে ছিলেন ততক্ষণ আমার মনে হয়েছে যে মিমের দৃশ্য গুলো আরেকটু রিয়েলইস্টিক হওয়া দরকার ছিল।
খুব সাজানো গো জানো মেকআপ একটু বেমানান লেগেছে অবশ্য ইয়াস ও রাজের মেকআপ ও কিছুটা বেমানান লেগেছে কিছুটা বা কিছু কিছু জায়গায় আসলে ভালো লাগেনি।
আমাদের এই বাংলা সিনেমাতে বা বিভিন্ন কনটেন্টে কিন্তু একটা সমস্যা থাকে আমার মনে হয় এই মেকাপের দিকে নির্মাতাদের আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তবে মিমকে কিন্তু অন্যান্য সিনে খুবই সুন্দর লেগেছে তিনি একটা পর্যায়ে নিজেকে অনন্যা বানিয়ে ফেলেছিলেন।
এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে একদম পুরো দোস্ত নায়িকাকে দেখছি সিনেমায়।
আশা করছি বৃদ্ধাশীনা মিম বড় পর্দায় আরো নিয়মিত হবেন। এবং তার অভিনয়ের ঝুড়িতে শান দিবেন।
এছাড়াও সাউন্ডের সমস্যা কোথাও যেন থেকেই যাচ্ছে জানিনা আসলে আমরা সিনেমা যে হলে দেখি সেটার অসুবিধা কিনা।
কোথাও সাউন্ড খুব উপরে উঠে যাই আবার কোথাও খুব নিচে নেমে যাই যেটা খুবই কানে লাগে ইন ফ্যাক্ট চরিত্র গুলো যখন ডায়লগ ডেলিভারি দিচ্ছে তখন একই সমস্যা থেকে যাচ্ছে যার কারণে অনেক জায়গাতেই ঠোঁট মিলছে না চরিত্রগুলোর।
আরেকটু সমস্যা ছিল হচ্ছে কালারে, একই দৃশ্যে দু’রকম কালার দেখা গেছে।
এসব সূক্ষ্ম জিনিস আমার মনে হয় দর্শক না বুঝলেও আমার মনে হয় নির্মাতাদের আরেকটু নজর দেওয়া উচিত।
এছাড়া আরেকটা জিনিস সবচাইতে বেশি চোখে লেগেছে সেটা হচ্ছে পাইম্যাক্স সিনটার সময় টানটান উত্তেজনা ছিল হলে।
কিন্তু তবুও যেন একটু দুর্বল লেগেছে দৃশ্যটি।
ঠিক যেন দেখে আশ মেটে না এরকম একটা অবস্থা।
সব শেষ বলতে চাই সিনেমা হিট নাকি ফ্লপ সেটা বিচার করতে আমরা বসে নেই, সিনেমা দেখবেন কি দেখবেন না সেটা ও আপনাদের সিদ্ধান্ত।
আমরা শুধু চাই আপনি যদি ১০০ টাকা খরচ করেও জীবনের দুইটা ঘন্টা ব্যয় করেন তা যেন যথাযত হয়।
আর একটা কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাই সিনেমা অবশ্যই টিকিট কেটে হলে গিয়ে ই দেখবেন। তাহলেও হয়তো বাংলা সিনেমা ফিরে পাবে তার গৌরবের সোনালী অধ্যায়।
আজ এ পর্যন্তই একটা কথা বলে দিতে চাই এতক্ষণ যা বলেছি সব কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত।
ভিন্ন মত থাকতেই পারে আপনি অন্য কিছু মনে করতেই পারেন। তবে আপনি যদি ইতিমধ্যেই পরান দেশে থাকেন তবে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
আমি আবারও কথা দিচ্ছি ইনশাল্লাহ কিছুদিনের মধ্যে আমি আরো একটি সিনেমার রিভিউ নিয়ে হাজির হবো সে পর্যন্ত trickbd এর সঙ্গেই থাকবেন। ❤️