মাটি আর মানুষের গল্প, তাদের জীবন সংগ্রামের গল্প পর্দায় তুলে এনে মানুষের বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি একজনই
আমজাদ হোসেন।
সোনালী দিনের সোনালী সিনেমার ইতিহাস রচনার অগ্রগামী তারই এমন একটি সিনেমাযা জীবন বোধের গল্প বলে।
১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার নাম এবং পোস্টার দেখে বোঝা যায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মানুষকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা । মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য দুমুঠো ভাত যখন সে না পাই তখন তার পরিস্থিতি কি করুন হতে পারে তা হয়তো আমরা দেখে উপলব্ধি করতে পারবোনা।
সুশীল সমাজের চোখে তাই এই আঙ্গুল দিয়ে এই কষ্ট আর এই অনৈতিকতা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই হয়তো নির্মিত হয়েছিল
সিনেমা °ভাত দে°
গরিব হতদরিদ্র সাইফুদ্দি বাউল গান গাওয়া তার পেশা আর নেশায়। দিনের পর দিন তিনি গানের নেশায় মাঠে মাঠে ঘুরেন।
ওদিকে তার স্ত্রীর সন্তান যেন
ক্ষুধার যন্ত্রণায় অসহায় প্রায় ।
ছোট্ট মেয়ে জরি যখন কান্না শুরু করে মায়ের কাছে তখন বাচ্চার কান্না শুনে ভাত চুরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে ধরা পড়েন।এবং তাদের হাতে শিকার হন বৎসনা এরপরে পেটের ক্ষুধার কাছে হার মানে স্বামী সন্তান সংসার। খাবারের লোভ এই একপ্রকার নৌকার মহাজনের সাথে
পালিয়ে যান বাউলের স্ত্রী।
সারা জীবন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাটানো ছেঁড়া কাপড় পরা একজন নারীকে যখন কেউ ভালোবেসে বুকে টেনে নেয় , এবং তার বদলে দুমুঠো খাবার দেয় তখন কি আর জগত সংসারের দায়-দায়িত্বের কথা মাথায় থাকে?
বেঁচে থাকাই যেখানে আসল দায়।
অসুস্থ বাবাকে নিয়ে শুরু হয় ছোট্ট জরির সংগ্রাম এই ছোট জরি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ছোট শিল্পী
আখি আলমগীর।
তিনি সে সময় যে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন।তিনি পুরস্কারও পেয়েছিলেন ইনফেক্ট এটার জন্য।
শহরের মেয়ে হয়েও গ্রামের হতদরিদ্র মেয়ের চরিত্রে তিনি অভিনয় করে নিজেকে সেই
ছোট বয়সেই প্রমাণ করেছিলেন।
আস্তে আস্তে বড় হয় জরি অসুস্থ বাবা বুঝতে পারেন না যে তার মেয়ে বড় হচ্ছে।
এর ওর বাড়ি কাঁথা সেলাই করে সংসার চলত
এবং তখন যখন এটাতে ঘর চলছে না তখন ধান কলে কাজ করতে যাই জরি।সেখানেই দুষ্ট লম্পট এজিদের নজরে আসে সে সেখান থেকে যখন পালিয়ে বাবার কাছে আসে তখন বাবা তার কাছে খাবার চাই।
কিন্তু জরি কিন্তু সে সময় কান্না করে বাবাকে বলে বাবা আমি বড় হয়েছি আমি যেখানেই কাজ করতে যাই সেখানে মানুষের নজর পড়ে আমার দিকে আমি
আর কাজ করবো না।
সমাজের একটি বিষয় এখানে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে আমার কাছে মনে হচ্ছে সিনেমার সব থেকে লক্ষণীয় বিষয়
লক্ষ্মণীয় দৃশ্য এটি।
যেখানে মানে আমাদের দেশের নারীর আবার সমাজের নারীরা যখন অসহায় হয়ে বা সংসার চালাতে গিয়ে খাবার আনতে গিয়ে বা অভাব অনটনে পড়ে
বাইরে কাজ করতে যায়।
তখন কিন্তু তাকে মানুষ হিসাবে না ভাগ্যবস্তু হিসেবে দেখা হয়।হোক সে ধনী গরিব পরিষ্কার-ওপরিষ্কার রাজা ধনি। তখন সে মানুষ নায় সে কেবল নারী।
শাসক এজিদের কাছে চাল চাইতে চাই জরির বাবাও। সে সময় বাউলকে চালের স্তুপ এর সামনে দাঁড় করিয়ে। এজি বলে চাচা এই চাল সব আপনার,
সে সময় একসাথে এত চাল সামনে পেয়ে আনোয়ার হোসেনের যে আকুতি না পাওয়ার বেদনা তা যেন
এক মুহূর্তের জন্যও তার কাছে সকল শোক ধরা দিয়েছে।
সারা জীবন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাটানো মানুষটা যখন এত তার কাঙ্খিত সেই চাল ভাত সামনে পাই তখন সে এই চরিত্রে এই দৃশ্যে তার যে আকুতি তা অনেক কাল
আপনার মগজে গেতে থাকবে।
জরি বাবা কে খুঁজতে গিয়ে দেখে তার বাবা মারা গেছে,
তার লাশ বাজারের মাঝখানে অর্থ লগ্ন অবস্থায় আর তা সবাই দেখছে।
এ দৃশ্য থেকে বোঝা যায় যে this movie was very head of its time
অর্থাৎ সময়ের আগেই তৈরি হয়েছিল এবং সময়ের আগেই বলেছিল সময়ের গল্প।
ঠিক যেমন আমরা এখন রাস্তায় কেউ বিপদে পড়লে আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে সবাই দেখি, ঠিক তেমনি জোরি যখন তার বাবার
লাশ জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করছিল।
তখন কেউ তার ভালোবেসে সান্তনার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।এই জরির চরিত্রে অভিনয় করেছেন মানে বড় জরির চরিত্রে অভিনয় করেছে
*শাবানা*
তিনি যে কি অসাধারণ দুর্দান্ত অভিনেত্রীতা এই সিনেমা দেখলেই বুঝে যাবেন আপনারা।আস্তে আস্তে কথা বলা গ্রামের মেয়ের চরিত্রে খুবই দারুণ অভিনয় করেছেন
শাবানা,
সেই সাথে যেই যেই দৃশ্যে তিনি কান্না করেছেন।সেই সেই দৃশ্য আপনার হৃদয়ে গিয়ে লাগবে এটা নিশ্চিত।
বাউল এর মৃত্যুর পর তার শীর্ষ কহর তার বাড়িতে আসে।
সে সময় তার গুরুর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ তার একমাত্র মেয়ে জরি কে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সে নিষ্কাধে তুলে নেয়।যখন এই অজানা অজানা গহরের মমতাই ভরসা পান জরি, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুধার্ত থাকা এই জরির মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দেয় গহর।
আর ঠিক তখনই তার মধ্যে এক ধরনের
আনন্দ সৃষ্টি হয়।
পুরুষের চরিত্রের এই দিকের সঙ্গে সে পরিচিত নয় যে তার শরীর দেখা না সে তাকে দেখে এবং তাকে নিয়ে ভাবে। এই গভীর আবেগ থেকেই
এক সূক্ষ্ম ভালোবাসার জন্ম দেয় জরির মনে।
গহর চরিত্রে ভিন্ন ফ্লেবার যোগ করেছেন আলমগীর, দুঃখ ভারাকান্ত সিনেমায় তিনি যেন আনেন শান্তির পরশ।
সব সময় সুরেলা ভঙ্গিতে কথা বলেন, এই গহর সিনেমার মধ্যে এক ধরনের সুখী সুখী ভাব নিয়ে আসেন।
সমাজের কোন কিছুই যেন তার স্পর্শ করছে না।
সেই সাথে বিনোদন দিয়েছে তারই শিষ্য সাধু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টেলি সামাদ, তিনি এই সিরিয়াস সিনেমায় এক ধরনের হাস্য রসাত্ত বিনোদন যোগ দেয়।
যেটা দর্শককে বেশ আনন্দ দেয়।
গল্পের এ পর্যায়ে আবারো হানা দেয় এজিদ, তারই হস্তক্ষেপে বিয়ে হয় জরি আর গহরের যদিও এজিত তেমনটা কিন্তু চাইনি।
এই এজিদ চরিত্রটি আমার কাছে কাল্পনিক একদমই মনে হয়নি,
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও যেমন সমাজে এজিদ ছিল তেমনি আজও আমাদের সমাজে এমন এজিদ কিন্তু উপস্থিত আছে।আমাদের আশেপাশেই আছে যারা মানুষের সুখ সহ্য করতে পারে না,
যারা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়।
তারা চিরকাল কেবল সূচক হয়ে থেকে যাই।এই চরিত্রের রাজিব যথাযথই অভিনয় করেছে।
সুখের সংসারে লাগে দুখের হাওয়া, ঘরে আবার খাবার নেই বাজার নেই। জরি চাইনা তার বাবার মত তার স্বামীও একদিন গান গাইতে গাইতে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাক।
বাধ্য হয়ে কাজে বের হয়ে পড়ে গহর,
সে এজিদের কাছেই কাজের জন্য যাই। এবং এজিদ তাকে কাজ দেয় এবং সে দীর্ঘদিনের জন্য অর্থ উপার্জনের আশায় বেরিয়ে পড়েন নৌকা নিয়ে।তখনো সে বুঝতে পারেনি দুষ্টু এজিদের মনে কি কামনা বাসনা ছিল, জরিকে একা পেয়ে অনেকবার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে এজিদ। এবং ব্যর্থ হয়ে
রাগান্বিত
এজিদ মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়ে দেয় জরির স্বামী গহরকে।
এবং সংগ্রাম বাচাতে জরি তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। আরো একবার শুরু হয় জরির সংগ্রাম।
না খেয়ে থাকা জোরি যখন মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবারের জন্য ঘুরছেন। তখন তার
মাথায় থাকে না সে নারী,সে কোন ঘরের স্ত্রী, সে কোন ঘরের মেয়ে।
তখন তার মাথায় কেবল একটাই চিন্তা খাবার একটুখানি ভাত।
খাদ্য যখন তার মৌলিক অধিকার আর এই অধিকার থেকে তখন যাকে বঞ্চিত করা হয়, তখন এই অধিকারটা কেড়ে নেয়াটাই তার কাছে সঠিক মনে হয়।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়,
শাবানা যখন খাবারের জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। তখন দেখা যায় তিনি একবার দৌড়ে গিয়ে মাজার থেকে খাবার আনছেন।আর একবার দেখা যায় যে তিনি মন্দিরে ঢুকে ঠাকুরের কাছ থেকে প্রসাদের খাবার
চুরি করে আনছেন।
তার তখন কেবল একটাই চাওয়া খাবার, হিন্দু হোক বা মুসলিম ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে তখন তার ধর্ম একটাই তা হল খাবার।
যে সমাজ এতদিন এতিম জরির দিকে হাত বাড়ায়নি।
স্বামী হারানো অসহায় মেয়েটির দিকে
দুটো সান্তনার কথা বলেনি।যে সমাজ ছেঁড়া কাপড় পরা জরির ক্ষুধার্ত মুখে দুমুঠো ভাত দেয়নি, সেই সমাজে আজ সিসি করছে।
কারণ সব হারানো মেয়েটি এখন চোর।
শেষ দৃশ্যে একজন নারীর অসহায় আর্তনাদ এবং স্বামীকে পেয়ে তার সকল কষ্ট উজার করে একসাথে দুজন করুন পরিণতিতে ঢোলে পড়াই
এই সিনেমার শিক্ষা।
কারণ জীবনের গল্প তো আসলে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলে হয় না। জীবনের গল্পে হার মানতে হয় অভাবের কাছে।
জীবনের গল্পে হার মানতে হয় সমাজের নিষ্ঠুরতার কাছে ক্ষমতার কাছে।
সিনেমায় গান একটি বিশাল গুরুত্ব বহন করেছে,
শেষ দৃশ্যে দেখা যায় যে। নেচে নেচে সাবানা একটি গান করছে।সেই গানটির ভাষা এরকম যে- °তিলে তিলে মইরা যামু তবুও তোকে ডাকবো না°
ঈশ্বরের প্রতি আক্ষেপ থেকে এই গানটি গাওয়া যে ঈশ্বর ধৈর্য ধরে থাকা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর বান্দার কষ্ট বা তার আর্তনাদ শুনেনি।
এক সময় তো সেই ধৈর্য ভাঙতেই হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় বলতে হয়-ঈশ্বর ওই গ্রামে থাকে ভদ্র পল্লীতে
এখানে তাহাদের খুঁজিয়ে পাওয়া যাইবে না।
সারপ্রাইজ! আমি মুভি রিভিউ করি কিন্তু মুভি ডাউনলোড লিংক কিংবা দেখার লিংক দিতে পারি না পাইরেসির কারণে।
তবে আপনাদের জন্য সুখবর এর বিষয়টি হল এই সিনেমাটি ইউটিউবে অফিশিয়াল ভাবে আপলোড থাকাই দেখার লিংক করে দিতে পারলাম।
সিনেমাটি দেখার লিংক নিচে।
সোনালী যুগের সোনালী সিনেমা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন চলতেই থাকবে। আপনিও আপনি আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন আপনি
কোন সিনেমার রিভিউ জানতে চান।
Nirjon Nahuel এর সেরা ৫ টি কষ্টের নাটকসকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশের বাজারে এলো Galaxy Watch 5
ভিডিও ব্লগিং শুরু করবেন কিভাবে? ব্লগিং করতে কি কি প্রয়োজন?
আজকের মত এ পর্যন্ত