ইন্টারনেটে বড় লোক হউন; কথাটা কি আসলেই সত্যি?
আসুন সত্যিকারের একটা গল্প শোনাই….
আজকাল তো নার্সারির বাচ্চাও এনড্রোয়েডে গেইম খেলে অথচ আমি সবার প্রথম মোবাইল হাতে পাই ফাইভে থাকতে, তাও একটা জাভা মোবাইল(মোবাইল কেনা নিয়ে আব্বুর হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছিলাম) সারাদিন টুকটুকি আননোন নাম্বারে মিসকল দিয়ে খেলা করতাম আর কল ব্যাক করলে ডাইভার্ট করে দিতাম অন্য আরেকটি আননোন নাম্বারে, হি হি হা হা! ঐ জাভা মোবাইল পেয়ে তাতে টেকটিউনসের মতোন ওয়েবসাইট হতে জানতে পারি ইলেকট্রনিক্স কি, ডোমেইন-হোস্টিং কি, হ্যাকিং কি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরপরের গল্পটা অর্নাস লাইফে রিলেশন-টিলেশনের পাশ কাটিয়ে উচ্ছনে যাওয়া ছেলেটি সারা রাত জেগে ইন্টারনেটে পড়ে থাকা;ছেলে তার গোল্লায় যাওয়ার অযুহাতে মায়ের কতো চিন্তাতে শেষমেশ বিয়ে দেবার অসফল আয়োজন! আমার প্রথম ইন্টারনেট থেকে উপার্জন হয় মাত্র ২৩০ টাকা তাও আবার মানি অর্ডারে;পরিমাণে নগণ্য হলেও সেই টাকা’টা আমার জীবনে অমূল্য সম্পদ। আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতিমাসে আমার ইনকাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা তাও আবার নিজের ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম থেকে যেখানে আমি বাসায় বসে হাফপ্যান্ট পড়েও নিজেই নিজের বস [এখানে আমি নিজেকে জাহির করছি না কিংবা প্রশংসাও করছি না বরং আপনাকে মোটিভেট করছি মাত্র ; আমি কি কাজ করি সেটা জানা আপনার জন্য মুখ্য নয় বরং আপনার সফলতাই আপনার টার্গেট হওয়া উচিত ]।
আপনি হয়তো ইউটিউবে সোলাইমান শুখন কিংবা আইমান সাদিক’কে চিনে থাকবেন; তারা আপনাকে মোটিভেশনে চড়িয়ে নাসার এসট্রোনেট হওয়া শেখায়,আইসিটি নিয়ে কল্পকথায় আপনাকে কোটিপতি বানায় কিংবা জাপানের আছিমনের তুলনায় রোবোটিক্সে আপনাকে রোবট বানিয়ে ফেলায়….কিন্তু তারা কেউ কি আপনাকে কখনো বলেছে যে “তুমি একটা সুলাইমান শুখন হও” কিংবা “কিভাবে একটা টেন মিনিট স্কুলের মতোন একটা অনলাইন ওয়েবসাইট বানাতে হয়” অথবা “তারা কেউ কি আপনার খরচ করা মেগাবাইটের বিনিময়ে আপনাকে দুই টাকা দামের একটা চকলেট উপহার দেয়”??!!!
আসলে এই জগতটাই স্বার্থপর আর স্বার্থের সাথে পরিপূর্ণ ইউটিলাইজেশন করেই আপনাকে সফল হতে হবে।
আজকের পোস্টে আমি আপনাকে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সিং শেখাবো না বরং ফ্রিল্যান্সারের মতোই একটা ওয়েবসাইট বানানো শেখাবো এবং সেটা হতে উপার্জন করার কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো; সো লেটস গো…..
ডোমেইন এবং হোস্টিং: যেহেতু এটা একটা ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম তাই সিরিয়াস হলে আপনাকে পেইড ডোমেইন ও হোস্টিং বিষয়ে উৎসাহিত করবো কেননা ফ্রি হোস্টিং যেমন অনিরাপদ তেমনি ফ্রি ডোমেইন দৃষ্টিকটু তবে আপাতত প্র্যাকটিস করতে আপনি ফ্রি হোস্টিং এবং ফ্রি ডোমেইন/সাবডোমেইন চুজ করতে পারেন। আমি কোন স্পেসিফিক ডোমেইন/হোস্টিং সাজেস্ট করবো না কেননা আমি এখানে প্রমোটিং করতে আসিনি, আমি আপনাকে শেখানোর জন্যই কিবোর্ড ধরেছি…আপনি ইন্টারনেট হতেই বেস্ট সার্ভিস এনালাইসিস করতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস: সাধারনত আপনার ভেতরে যদি কোডিং অভিজ্ঞতা না থাকে তবে আপনার জন্য নিজে পিএইচপি স্ক্রিপ্ট তৈরী করা যেমন কঠিন তেমনি অন্যের তৈরী করা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে তাকে নিজের সাইট’কে পরিপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও ইউনিক করাও দুঃসাধ্য প্রায়।
সেক্ষেত্র ব্লগিং প্লাটফর্ম ওয়ার্ডপ্রেস আপনাকে সহায়তা করবে; এমনকি দেশীয় ট্রিকবিডি আর টেকটিউনসের মতোন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো নিজেও ওয়ার্ডপ্রেসের পরিচয় বহন করে তাই আপনিও ওয়ার্ডপ্রেসে নির্ভার হতে পারেন…ডোন্ট বিং সো প্যানিক!!
আপনি আপনার হোস্টিং সিপ্যানেলের সফ্টাকুলাস এরিয়াতে অনায়েসেই ওয়ার্ডপ্রেস পেয়ে যাবেন, সেখান হতে মাত্র কয়েক ক্লিকেই ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে আপনার ওয়েবসাইট’টি তৈরী করে ফেলতে পারবেন।
থিম: ওয়ার্ডপ্রেসের ফিল্যান্সিং তথা মাইক্রোজব ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম টাইপের প্রায় সবগুলা থিমই পেইড যেমন FreelanceEngine,pricerr,taskerr ইত্যাদি; তবে আপনি চাইলে Google আপনাকে ফ্রিতেই এসব উপহার দিবে… শুধুৃমাত্র চাওয়ার স্টাইলটাই আপনাকে শিখে নিতে হবে।
আমরা আলোচনার সুবিধার্থে এবং কার্যত সহজ- সরল, ভিজ্যুয়ালি পারফেক্ট যেই পেইড থিম নিয়ে কাজ করবো আর সেটি হলো HireBee [ফ্রি ডাউনলোড লিংক → https://www.mediafire.com/download/ans16lta4sk9ioa] আপনি এটা থিমফরেস্টের মতোন ওয়েবসাইট হতেও কিনে নিতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনি যেই RAR ফাইলটি পাবেন সবার আগে সেটি UNRAR করুন এবং সেখান হতে থিমের স্পেসিফিক ফাইলগুলা ZIP করে নিবেন [RAR ফাইলটির ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিলাম→https://www.mediafire.com/download/w9jz6jd30ctnx4f]
কাজ: খুবই সহজ সোজা কাজ সবার আগে আপনার সাইটের এডমিন প্যানেলে প্রবেশ করুন এবার Appearance > Themes> Add new> upload theme [ ডাউনলোড করা থিমের zip ফাইলটি চুজ করে install now ক্লিক করুন]
স্ক্রিনশট দেখুন→
এবার আপনি আপনার সাইট ভিজিট করুন দেখুন আপনার মাইক্রোজব ওয়েবসাইট রেডি→
আপনি Dashboard হতে আপনার সাইট সম্পূর্ন মোডিফাই করতে পারবেন যেমন আপনার সাইটের আইকন/ লোগো পরিবর্তন করা,পাবলিক সাইনআপ অন/অফ করা, প্রজেক্ট ট্যাগ-ক্যাটাগরি-স্কিল-রিভিউ ইত্যাদি,পেমেন্ট অপশন মোডিফিকেশন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
মোটকথা আপনার সাইট’টিকে সম্পূর্ন আপনার মনের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। গড়পড়তা সকল ওয়ার্ডপ্রেস সাইট এবং থিমের একইরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন চলে তাই এখানে আর আলাদা করে সেসব ব্যাখ্যা বাঞ্চনীয় নয়।
তবুও স্ক্রিনশট দেখুন →
আসল কাজ: পোস্ট লেখার শুরুতে আমি একগাদা বকবক করেছিলাম মনে আছে? আসলে সেগুলি মোটেই লেকচার ছিলো না বরং সেইসব সত্য কথাগুলির মাঝেই কিন্তু আপনার সফলতা লুকিয়ে আছে…..জাস্ট আপনকে মাথা খাটিয়ে সেগুলি খুজে নিতে হবে।
আপনি এতো টাকা খরচ করে ডেমোইন- হোস্টিং কিনলেন,এতো কষ্ট করে ওয়েবসাইট বানালেন তা কি শুধুই শোঅফ করানোর জন্য??!
সুতরাং আপনাকে সবার আগে SEO করতে হবে আইমিন সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজ করতে হবে যেন আপনার সাইট’টি সার্চ ইঞ্জিন সহজেই খুজে পায়। আপনি সচারাচর Google আর Yahoo এর মতোন প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইটগুলোতে SEO করলেই এনাফ!
আচ্ছা SEO করলে তো ভিজিটর বাড়বে তাতে সাইট’টি জনপ্রিয় হবে সত্য তবে তাৎক্ষনিক পকেটে তো টাকা আসবে না তাইনা?? দেখুন একটা সময় সামু,টিটিসি,ইস্টিশন,ট্রিকবিডির,টিউনারপেইজের মতোন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোও কিন্তু খালি পকেটেই যাত্রা শুরু করেছিলো আর আজ তাদের ইনকামের কমতি নেই….সুতরাং এই যে এখনি দাও এখনি খাবো টাইপের ননসেন্স মেন্টালিটি বাদ দিন।
তবুও আপনার সাইট’টি দ্রুত জনপ্রিয় করতে আপনাকে একটু নাটক করতে হবে সেটা হলো আপনার সাইটে দুই/তিনটি একাউন্ট খুলুন তারপর পরস্পর মিছিমিছি প্রজেক্ট সাবমিট করুন এবং মিছিমিছি সাকসেসফুল ওয়ার্ক অর্ডার কমপ্লিট করুন তাহলে অন্যরা তাতে প্রলুব্ধ হবে…বাংলাদেশে এমন মাইক্রোজব ওয়েবসাইটের সংখ্যা আসলেই কম তাই বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে পারলে যে আপনি টপে উঠতে পারবেন এটা আমি নিয়ন গ্যারান্টি দিয়ে বললাম।
আপনি ফেসবুকে আরিফ আর হোসাইন’কে চিনেন?? তিনি একাধারে টেন মিনিট ইস্কুল, আমরাই বাংলাদেশ, এক টাকার আহারের মতোন নামী নামী সকল প্রজেক্টের বড় বড় পদে নিযুক্ত কিন্তু আসলে কি তিনি তাতে গায়ে খেটে কাজ করেন??? আসলে এখানে তিনি তার জনপ্রিয়তার বিপরীতে প্রমোটিং হেতু তাকে সম্মানিত করার জন্যই ঐসব পদ দেওয়া হয়েছে মাত্র…সুতরাং আপনাকে এইরূপ পথে হাটতে হবে কেননা পপুলারিটি ইজ দ্যা বেস্ট ইনভেস্টমেন্ট!
ইনকাম: আপনি আপনার ওয়েবসাইট হতে বিভিন্নভাবে ইনকাম করতে পারেন যেমন……
(১) পেইড প্রজেক্ট সাবমিশন এর দ্বারা আপনি সরাসরি পাবলিশার এর নিকট হতে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেমন আমি একটা ওয়েবসাইট বানাতে চাই এমন প্রজেক্টের সাবমিট করতে আমার প্রজেক্ট ভ্যালু যদি ১০০০ টাকা হয় তবে তাতে ১০% বেনিফিট হয় ১০০ টাকা যার বিপরীতে আপনি আমার প্রজেক্ট আপনার সাইটে এপ্রুভ করতে পারেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন যে ফ্রিল্যান্সারে তো ফ্রিতেই কাজটা করা যায় তাহলে টাকা দিয়ে কেউ কি সেধে সেধে প্রজেক্ট দিবে?
আচ্ছা মনে করুন আপনি বাসা হতে বাজারে মাছ কিনতে যাবেন, মাঝপথে রিকশা ভাড়া কি মাছওয়ালা দিবে নাকি আপনি দিবেন? আপনিই দিবেন কেননা প্রয়োজন তো আপনারই…ঠিক তেমনি যেসব পাবলিশারের প্রয়োজন তারা ঠিকই প্রজেক্ট সাবমিট করবে, আর এতে আপনার লাভের পাশাপাশি সাইটে স্পামিংটাও কমে যাবে।
ঠিক এমনি এডভান্স চিন্তা চেতনা নিয়ে টেকটিউনস যেমন তাদের টেকল্যান্সার নামে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলো…আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন?
(৩) এডসেন্স: একটু সচেতন হলে আশা করা যায় অতিদ্রুত গুগল মহাশয় হতে এডসেন্স মিলে যাবে তাতে ভিজিটর হতেও একটা ভালো এমাউন্ট প্রতিমাসে আর্ন করতে পারবেন।
তবুও যদি গুগল বাবু রাজী না হয় তবে রিভিনিউহিটস, চিতিকার মতোন এমন বহু বহু ওয়েবসাইট পাবেন যারা প্রায় নিঃশর্তে আপনার ওয়েবসাইটে এডভারটাইজমেন্টের বিপরীতে আপনাকে উপযুক্ত সম্মানী দিয়ে খুশী করবে।
(৪) দেশীয় এডভাটাইজমেন্ট: যদিওবা Google এর এডভারটাইজমেন্ট সিস্টেম খুবই স্মার্ট তাতে আইপি এবং কুকিজ বিবেচনায় সঠিক এড’টি শোঅফ করে তবুও এটা ১০০% প্রুফড হতে পারেনা তাই আপনি বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান/ ওয়েবসাইটের এতভারটাইজমেন্টের বিপরীতে বাংলা কাঁচা টাকা ইনকাম করতে পারবেন যেমনটা টেকটিউনস বা সামহোয়ারইনব্লগ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ Deep Web এ আমার তৈরী Freelancer এর মতোন মাইক্রোজব ওয়েবসাইট DLancer [লিংক → http://a6ayhwoj4zb2zsay.onion ] আমি তো শুধু দেখানোর চেষ্টা করেছি যে আপনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন যদি আপনি ভাবেন impossible= I am possible!
শেষকথা: একটা পিপড়ার তুলনায় আপনি অতিকায় আবার এই গ্যালাক্সির তুলনা আপনি একটা পিপড়ারও সমতুল্য নন; সুতরাং অহংকার পরিহার করে গ্যালাক্সি জয় করার চেষ্টা করুন….আরে ভাই চাঁদে না যেতে পারেন চাঁদের স্বপ্নটা তো দেখতেই পারেন যাতে লাইফটা অন্তত চাঁদের জোৎস্নার মতোই রূপালী রঙ্গিন হয়।
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ