মুঠোফোন অপারেটর রবি ও
এয়ারটেল একীভূত করার বিষয়ে
ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ
নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ
বিষয়ে একটি চূড়ান্ত মূল্যায়ন
গতকাল সোমবার ডাক ও
টেলিযোগাযোগ বিভাগে
পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
একীভূতকরণের (মার্জার) বিষয়ে
ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও এর
সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে
বিটিআরসি। এর একটি হলো, তৃতীয়
প্রজন্মের (থ্রিজি) লাইসেন্সের
মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত
এয়ারটেল একীভূত কোম্পানিতে
তাদের ২৫ শতাংশ মালিকানা
বিক্রি করতে পারবে না।
এয়ারটেলের থ্রিজি লাইসেন্সের
মেয়াদ শেষ হবে ২০২৮ সালে। অর্থাৎ
২০২৮ সাল পর্যন্ত এয়ারটেলকে
বাংলাদেশে থাকতে হবে। এই
শর্তের সঙ্গে একীভূত কোম্পানি
এয়ারটেলের তরঙ্গ ব্যবহার করতে
পারবে, যা হবে সব অপারেটরের
মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে
এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ আর
রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০
মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুটি
প্রতিষ্ঠানের তরঙ্গ এক হয়ে
দাঁড়াবে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ।
গ্রামীণফোনের কাছে বর্তমানে
সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ
আছে। খবর প্রথম আলোর।
তরঙ্গের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্তের
কারণ সম্পর্কে কমিশন সূত্রে জানা
গেছে, এয়ারটেলের মালিকানা
থাকার শর্তেই একীভূত কোম্পানি
তাদের তরঙ্গ ব্যবহার করতে পারবে।
এয়ারটেল যদি তাদের মালিকানা
অনুযায়ী সেই তরঙ্গ আর একীভূত
কোম্পানি ব্যবহার করতে পারবে
না। এয়ারটেল যাতে সেটি না করতে
পারে, সে জন্য এমন সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির সুপারিশ অনুযায়ী,
একীভূত কোম্পানিতে আপাতত রবির
০১৮ ও এয়ারটেলের ০১৬ দুটি কোডই
থাকবে। তবে ০১৬ কোডটি কত দিন
থাকবে বা সেটি দিয়ে নতুন নম্বর
গ্রাহকদের দেওয়া হবে কি না, সে
বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নেওয়ার ক্ষমতা মন্ত্রণালয় ও
আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়া
হয়েছে। একীভূত হওয়ার প্রস্তাবনায়
০১৬ কোডটি তিন বছর পর্যন্ত চালু
রাখার কথা জানিয়েছিল রবি-
এয়ারটেল।
বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
জানান, যেহেতু একীভূত
কোম্পানিতে দুটি অপারেটরই
থাকছে, তাই ০১৬ কোডটি এখনই বন্ধ
করে দেওয়া হলে তা
ব্যবহারকারীদের জন্য অসুবিধাজনক
হতে পারে। আবার শিগগিরই নম্বর
অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর
পরিবর্তনের (এমএনপি) সুবিধা চালু
হতে যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে এখনই
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।
বিষয়টি তাই আদালত ও
মন্ত্রণালয়ের ওপরই ছেড়ে দেওয়া
হচ্ছে।
বিটিআরসির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে
রবি-এয়ারটেলের কোনো কর্মীই
যাতে চাকরিচ্যুত না হন, সেটির
নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। তবে যেসব
কর্মী একীভূত কোম্পানিতে যোগ
দিতে চান না, তাঁদের জন্য স্বেচ্ছা
অবসর স্কিম (ভিআরএস) গ্রহণের
সুযোগ থাকবে। বর্তমানে
এয়ারটেলে স্থায়ীভাবে কর্মরত
আছেন ৪৭০ জন। একই সঙ্গে
বিক্রেতা, পরিবেশকের চুক্তিও
বাতিল না করার বিষয়টি নিশ্চিত
করার কথা বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির
চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ
গতকাল সাংবাদিকদের বলেন,
‘আমাদের দিক থেকে সবকিছু চূড়ান্ত
করে আজ (সোমবার) মন্ত্রণালয়ে
পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় ও
আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নেবেন।’
ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করতে
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি
আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে রবি ও
এয়ারটেলের মূল বিনিয়োগকারী
প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ
ও ভারতীয় এয়ারটেল। রবি-
এয়ারটেলের জমা দেওয়া প্রস্তাব
অনুযায়ী, একীভূত কোম্পানি ‘রবি’
নামেই বাংলাদেশে কার্যক্রম
চালাবে। এতে রবির মালিকানা
থাকবে ৭৫ শতাংশ আর এয়ারটেলের
মালিকানা থাকবে ২৫ শতাংশ।
রবি-এয়ারটেল একীভূত করার বিষয়ে
চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে
আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারকে
সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে আগামী ১১ এপ্রিল
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের
একক হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি
অনুষ্ঠিত হবে।