প্রোগ্রামিং এর মত এমন কাঠখোট্টা বিষয়ের সাথে এখন পর্যন্ত মানুষ কোমলমতি নারীর সম্পর্ক ভাবতে পারে না। আর তা যদি হয় প্রায় দেড়শো বছরেরও আগের সময় তবেতো কথাই নেই।
অথচ যে সময় মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হওয়া মানা, মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া মানা, নানান প্রতিবন্ধকতায় গলা পর্যন্ত ডুবে থাকা মেয়েগুলোর মাঝে থেকে কী না একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ হাতেখড়ি করিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। ভাবা যায়!
হ্যা, বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার হিসেবে স্বীকৃত মানুষটি একজন নারী। নাম তার অ্যাডা বায়রন। জন্ম ইংল্যান্ডে। রোমান্টিক কবি লর্ড বায়রন এবং অ্যানা ইসাবেলার মেয়ে তিনি। যদিও জন্মের এক মাসের মধ্যেই তারা আলাদা হয়ে যান এবং অ্যাডা ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবার সাথে আর দেখা হয়নি।
প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী
অ্যাডা বায়রন সে সময়ের কম্পিউটিং মেশিন এর জন্য প্রথমবারের মত মেশিন অ্যালগরিদম লেখেন যা শুধুমাত্র কাগজেই বিদ্যমান। কম্পিউটারের জনক স্যার চার্লস ব্যাবেজ সে সময় অর্থাৎ ১৮৪২ সালের দিকে একটি ভিন্নরকম মেকানিকাল কম্পিউটার ডিজাইন করছিলেন যেখানে গণিত সারণীগুলো সয়ংক্রিয়ভাবে এবং নির্ভুলভাবে কাজ করবে। তার সাথে দেখা হয় অ্যাডা বায়রনের। তিনি মেধাবী গণিতবিদ অ্যাডাকে দেখে মুগ্ধ হন। সে সময় গুটিকয়েক যে সব মানুষ ব্যাবেজ এর নতুন থিওরিগুলো বুঝতে পারতো তার মধ্যে অ্যাডা অন্যতম।
চার্লস ব্যাবেজ এর একটি অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন নিয়ে ফ্রেঞ্চ ভাষার লেকচার তৈরি করেছিলেন। যা অ্যাডা ইংরেজিতে অনুবাদ করে। অ্যাডা সেই লেকচারে কিছু ডাটা ইনপুট করে যা বার্নুলি সংখ্যা গণনা করতে পারবে। এটাই ছিল বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামিং। অনুবাদকৃত লেকচারটি প্রকাশ হয় ১৮৪৩ সালে। অ্যাডা আরো কিছু বিষয় বুঝতে পারেন যে সংখ্যা শুধুমাত্র গণনা ছাড়াও আরো অনেক কাজে লাগানো সম্ভব। সংখ্যার মাধ্যমে এরকম এনালিটিকাল ইঞ্জিন এর মত যন্ত্রে মিউজিক কম্পোজ, গ্রাফিক্স এবং বিজ্ঞানের আরো অনেক কাজ প্রকাশ করা সম্ভব। আর সত্যিই এসব সম্ভব হয় যা তিনি ১০০ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন।
অসাধারণ এই নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। বিশ্বে গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল বা প্রযুক্তি সবকিছুতেই সবার প্রথমে এই মানুষটির নাম উঠে আসবে বারবার। মেধার চিরন্তন সৌন্দর্য যে নারীকে ঘিরে থাকবে আজীবন.