২০১৬ সালে যখন অ্যাপেল ৭ (আইফোনের ভার্সন) মার্কেটে আসে তার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৪৯ মার্কিন ডলার। তার তিন বছর পর যখন অ্যাপেল ফ্লাগসিপ মার্কেটে আসে তার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫৪%। শুধু কি আইফোনের এতো দাম নাকি অ্যাপেলের যেকোনো প্রোডাক্টের দাম এমন বেশী হয়?
আসলে অ্যাপেল প্রোডাক্টের দাম বাজারের যেকোনো প্রোডাক্টের দামের চেয়ে একটু বেশী, এটা কি শুধুমাত্র অধিক মুনাফা লাভের আশায় নাকি এর পিছনে যুক্তিযোগ্য কোন কারন আছে? আজকে আমরা তা নিয়েই আলোচনা করবো।
অ্যাপেল কোম্পানির আরেকটি প্রোডাক্ট “ম্যাক মিনি” যা কিছুদিন আগে মার্কেটে এসেছে তার দাম ও কিন্তু ৬০% বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে, এতে অ্যাপেল কোম্পানির বিশাল অংকের মুনাফা তৈরি করবে বা করছে। এই মুনাফাই অ্যাপেলকে আমেরিকার প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানের মুকুট এনে দিয়েছে। অ্যাপলের বর্তমান বাজার মূল্য সুইজারল্যান্ডের মোট জিডিপির থেকও বেশী। যাই হোক এখন প্রশ্ন আসে কি এমন জিনিস বা এমন কি আছে অ্যাপলে যা এর প্রোডাক্টগুলো কে এতটা দামি করে দিচ্ছে? আসুন কারনগুলো জানি-
১। ব্রান্ড ভ্যলুঃ অ্যাপলের নিজস্ব ব্রান্ড আছে। আমরা সবাই মোটামুটি এটা জানি যে, কোন প্রোডাক্টের দামের অনেকটা নির্ভর করে তার ব্র্যান্ডের ভ্যালুর উপর। ধরুন আপনি একটি চিকেন ফ্রাই খাবেন, এখন চিকেন ফ্রাই এর মধ্যে এমন কিছু দেয়ার নাই যা দামের পার্থক্য অনেক করে দিবে। তারপরও দেখুন এই চিকেন ফ্রাই এর দাম ব্রান্ড ভেদে কতোটা উঠানামা করে। এটার কারন হচ্ছে ব্রান্ড ভ্যলু বা ব্রান্ড ইমেজ যাকে বলে। এই ব্রান্ড ভ্যলু চাইলেই তৈরি করা বা কিনে নেয়া যায় না। এটা ধিরে ধিরে কাস্টোমারের আস্থা, সার্ভিসের মান ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়।
২। নান্দনিক ডিজাইনঃ অ্যাপেলের ডিজাইনের জন্য এর অনেকটা দাম নির্ভর করে। আমি কোন কম্পানি কে ছোট করার উদ্দেশ্য থেকে বলছি না, আপনি বাজারের আর ১০ টা মোবাইল দেখবেন যার প্রায় অনেকেই অ্যাপলের ডিজাইন কেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের ডিজাইন তৈরি করে বাজারে এনেছে।
৩। কাস্টমার আস্থাশীলতাঃ দেখুন অ্যাপলের এতো দাম হওয়া সত্তেও সবাই কিনার জন্য প্রস্তুত। কারন তাদের মনের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে পেরেছে অ্যাপেল, যা অন্য কেউ অ্যাপলের মতো করতে পারে নাই।
৪। বৈশিষ্টে নতুনত্তঃ এখানেো বলতে হয় অ্যাপেলই কোন বৈশিষ্ট প্রথম আনে আর বাকি কম্পানিগুলো তা কপি করার চেষ্টা করে। সেইক্ষত্রে তাকে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি এবং তা নতুন প্রডাক্টে যোগ করতে যথেষ্ট খরচের ব্যপার হয় দাড়ায়। আর আইফোনের নতুন সংস্করণে আরো উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করে অ্যাপল। এসব পরিবর্তন উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। যেমন প্রথম বাজারে ছাড়ার সময় আইফোন এক্সের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ছিল ৬৪ জিবি। আর ১ হাজার ১৪৯ ডলারের আইফোন এক্সের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ছিল ২৫৬ জিবি।
আইফোন ১২ সিরিজের সঙ্গে নতুন ‘ম্যাগসেইফ’ ফিচারও এনেছে অ্যাপল। ডিভাইসটির পেছনে চুম্বক পাত যোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাডে ডিভাইসটি সহজে সঠিক স্থানে বসাতে পারবেন গ্রাহক। আর আইফোনের নতুন মডেলের প্রান্তগুলো আগের মডেলগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত তীক্ষ্ণ হবে বলে জানানো হয়েছে।
৫। উন্নত মানের হার্ডওয়্যারঃ অ্যাপেল তার প্রোডাক্টের কুয়ালিটির ব্যপারে এবং তাদের পারফরম্যন্সের ব্যপারে যথেষ্ট সতর্ক। যার কারনে তাদের চেষ্টা থাকে যেন তাদের প্রোডাক্ট সরবচ্চো ভালো পারফর্ম যাতে করে এবং কাস্টমার সন্তোষজনক থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, অ্যাপলের ১০৯৯ ডলারের একটা ফোনে ম্যাটেরিয়াল খরচ করা হয় ৪৯০ ডলারের। আমরা যদি একটু পার্থক্য করি, স্যামসাঙ এর সাথে, ৯৯৯ ডলারের ফোনে ম্যাটেরিয়াল খরচ করা হয়ছে ৪২০ ডলারের।
ফাইভ জি নেটওয়ার্কে কাজ করা অ্যাপলের প্রথম হ্যান্ডসেট হতে যাচ্ছে ‘আইফোন ১২’। শুধু তাই নয় আর অনেক চমক নিয়ে বাজারে এলো প্রতিক্ষিত আইফোন ১২। ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার অ্যাপল প্রধান টিম কুক অনলাইন ইভেন্টটি শুরু করেন হোমপড মিনি ডিভাইস উন্মোচনের মধ্য দিয়ে।
যেসব পরিবর্তন আসছে নতুন আইফোনে যা স্বাভাবিক ভাবেই বারিয়ে দিচ্ছে আইফোনের দাম –
চার্জার বিহীন ফোন
এই প্রথম আইফোনের সঙ্গে কোনো চার্জার অথবা হেডফোন দেয়া হচ্ছে না। অ্যাপল জানিয়েছে, পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি দামী আইফোন ১২ প্রো মডেলে স্ক্রিনটি বড় থাকবে এবং কম আলোয় ছবি তোলার সুবিধার্থে নতুন সেন্সর ব্যবহার করা হবে। ওএলইডি ডিসপ্লেটি নতুন ধরণের পদার্থ দিয়ে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, যেটি সহজে ভাঙবে না
সিরামিক শিল্ড
অ্যাপল জানিয়েছে, আইফোন ১২’তে আগের মডেলগুলোর মত ৬.১ ইঞ্চি (১৫.৫ সেমি) স্ক্রিন রয়েছে, তবে এখন জমকালো রঙয়ের সেটগুলোর জন্য এলসিডি’র বদলে ওএলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর কারণে নতুন আইফোন আগের চেয়ে ১১% বেশি সরু করে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে তাদের জন্য।
তারা আরো জানিয়েছে যে নতুন সেটের স্ক্রিন বেশি রেজোলিউশনের এবং এতে ডিসপ্লের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘সিরামিক শিল্ড’ ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে হাত থেকে পড়ে যাওয়ার হিসেবে আগের চেয়ে ‘চার গুণ বেশি’ সুবিধা পাওয়া যাবে।
ডেপথ সেন্সর
অপেক্ষাকৃত বেশি দামী মডেলগুলোতে বড় আকারের ডিসপ্লে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সেগুলোকে নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে – আইফোন প্রো’এর স্ক্রিন ৫.৮ ইঞ্চি থেকে ৬.১ ইঞ্চি এবং প্রো ম্যাক্সের স্ক্রিন ৬.৫ ইঞ্চি থেকে ৬.৭ ইঞ্চি। এছাড়াও এই সেটগুলোতে ‘লিডার’ (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) স্ক্যানার সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ফোনের আশেপাশের পরিবেশের জন্য একটি ডেপথ ম্যাপ তৈরি হয়, যার ফলে কম আলোতে অটোফোকাস ‘ছয় গুণ দ্রুততায়’ করা সম্ভব। এছাড়া অগমেন্টেড রিয়েলিটির কাজ করার জন্যও এই সেন্সর ব্যবহৃত হতে পারে, যদিও এই ক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
ফাইভ জি
স্যামসাং ২০১৯ সালে গ্যালাক্সি এস ১০ ফোন বাজারে ছাড়ে যা ফাইভ জি নেটওয়ার্কে কাজ করে এবং এর পর হুয়াওয়ে, ওয়ান প্লাস ও গুগলও এই ধরণের ফোন বাজারে ছাড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেসব ফোন সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ খুব একটা বেশি নেই।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের টমাস হাসন বলেন, অ্যাপল সাধারণত নতুন প্রযুক্তি বাজারে আনে না, তারা একটি প্রযুক্তি পরিপক্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে এবং ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে সেই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে।
স্মার্ট স্পিকার
নিজেদের স্মার্ট স্পিকার ‘হোমপড মিনি’র একটি নতুন ভার্সনও বাজারে ছেড়েছে অ্যাপল। এটি আরো ব্যাপক পরিসরের ভয়েস কমান্ড সমর্থন করে। পাশাপাশি এটিতে একটি হোম ইন্টারকম সিস্টেমও রয়েছে। অ্যাপলের প্রথম হোমপড ২০১৮ সালে বাজারে ছাড়া হয়, তবে এখন পর্যন্ত অ্যামাজন ও গুগলের স্পিকারের তুলনায় এটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
এবার আপনিই বলুন দাম কি খুব বেশী নেয়া হচ্ছে? একবার ব্যবহার করেই দেখুন না, কেন অ্যাপেলকে বেশী দাম দিচ্ছেন।