স্বেচ্ছা অবসরের
অফারে বাংলালিংকের কর্মী ছাঁটাইয়ে বিশেষ
স্কিমে ৪৬৮ জন কর্মী আবেদন
করেছেন।
অপারেটরটির ‘ডিজিটাল বাংলালিংক’ হয়ে ওঠার পথে
ঘোষিত ‘ভলেন্টারি সেপারেশন
স্কিম’ (ভিএসএস) এ স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে
হচ্ছে এসব কর্মীকে।
ইতোমধ্যে ভিএসএসের এই অফারে চাকরি
ছাড়ার আবেদনের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি
পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল অপারেটরটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলালিংক কর্মকর্তারা জানান,
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ৪৪০ জন
কর্মী ভিএসএসে চাকরি ছাড়ার আবেদন করে।
তবে এর পরও আরও ২৮ জন কর্মীর
আবেদন জমা পড়েছে।
ফলে দেখা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের পরও
কেউ ভিএসএসে চাকরি ছাড়ার আবেদন করতে
চাইলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে।
যদিও কত সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে বা কত
সংখ্যক আবেদন নেয়া হবে সে বিষয়ে
কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছে
বাংলালিংকের পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে কত
সংখ্যক কর্মী চাকরি হারাবেন সেই বিষয়ে
জানতে চাইলে অপারেটরটির চিফ কর্মাশিয়াল
অফিসার (সিসিও) শিহাব আহমাদ জানিয়েছিলেন, সংখ্যা
এখনই ঠিক করা হয়নি। ডিজিটাল রূপান্তরের
পরিকল্পনায় কোম্পানির প্রয়োজনই এই সংখ্যা
চূড়ান্ত করে দেবে।
তখন তিনি বলেছিলেন ‘ভলেন্টারি সেপারেশন
স্কিম’ নামে কর্মীদের এই স্বেচ্ছা
অবসরের অফার যদি নির্ধারিত সময়ে কেউ না
নেয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে চাকরি
হারালে এই স্কিমের সুবিধা আর মিলবে না ।
উল্লেখিত ভিএসএস স্কিমে বলা হয়, এল ১৮
থেকে এল ২৭ এবং এল-ডিএস গ্রেডের
স্থায়ী কর্মীদের ২৪ মাসের মূল বেতনের
এল-১৪ থেকে এল-১৭ গ্রেডের
কর্মীদের মধ্যে যাদের গত ৩১ জানুয়ারি
পর্যন্ত স্থায়ী চাকরি কমপক্ষে দুই বছর
হয়েছে তাদের জন্য চার মাসের মূল
বেতনের সঙ্গে চাকরির প্রতি বছরের হিসাবে
চার মাসের মূল বেতনের অফার দেয়া
হয়েছে। যা সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮ মাসের
হবে।
এছাড়া আর এল-৩ থেকে এল-১৩ পর্যন্ত
গ্রেডের কর্মীদের মধ্যে যাদের গত ৩১
জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী চাকরি দুই বছর হয়েছে
তাদের জন্য চার মাসের মূল বেতনের সঙ্গে
চাকরির প্রতি বছরের হিসাবে তিন মাসের মূল
বেতনের অফার রয়েছে। এটি সব মিলিয়ে
সর্বোচ্চ ৩০ মাসের হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাকরিচ্যুতি, জিজ্ঞাসাবাদ,
স্বেচ্ছা অবসর অফারসহ বিভিন্ন ঘটনায়
অস্থিতিশীল সময় পার করছে অপারেটরটি।
এর মধ্যে কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে
অবরুদ্ধও থাকেন চিফ টেকনিক্যাল অফিসার
(সিটিও) পেরিহান এলহামি। অবস্থা এমন হয়েছে
যে কর্মী অসন্তোষের মুখে বাংলালিংকের
প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সব কার্যালয়
একদিনের জন্য বন্ধও ঘোষণা করা হয়।
উদ্ভুত পরিস্থিতে সংবাদ সম্মেলন করে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা
করে বাংলালিংক কর্মীরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে
নয় দফা দাবি রাখে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন
(প্রস্তাবিত)।
এর পর বাংলালিংকের সিইও হিসেবে দায়িত্ব
নেয়ার পর প্রথমবারের মতো ২৩ গত
ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমের সামনে আসেন এরিক
আস।
ওই সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ভবিষৎত
ব্যবসার ধরন এবং পরিকল্পনা তুলে ধরে
অপারেটরটির এই ডিজিটাল রূপান্তরের ঘোষণা
দেন বাংলালিংক সিইও।
যে ঘোষণায় তিনি জানান,‘কোম্পানির নতুন
যাত্রায় অনেক কর্মীই খাপ খাওয়াতে পারবেন
না। এ কারনেই স্বেচ্ছা অবসর অফার দেয়া
হয়েছে। যারা নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে
যাবেন।’
কর্মীদের এই চাকরি ছাড়ার বিষয়ে হতাশারও কিছু
দেখছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন,
‘কোনো সমস্যা দেখছি না। কোম্পানি ডিজিটাল
হতে যাচ্ছে। পুরানো মোবাইল কোম্পানির
ধারণা আর নেই। এখন পরিবর্তনের সময়।
গ্রাহক সেবার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা
বাড়াতে হবে। যারা কোম্পানির নতুন পথ চলায়
অবদান রাখতে পারবে তাদের জন্য সুযোগ
তো থাকছেই।’
এ দিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের ভিএসএসে
স্থিতাদেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলালিংকের সিইওসহ
৬ শীর্ষ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে
বলেছেন আদালত।
যেখানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভিএসএস কেনো
বাতিল করা হবে না এবং বাংলালিংক ইউনিয়ন কর্মকর্তা
ও সদস্যদের ছাঁটাই, বদলি , সাময়িক বরখাস্ত,
বরখাস্ত এবং বেতন বন্ধ রাখার বিষয়ে কেনো
নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না তা জানতে
চেয়েছে আদালত।
বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জ্বল
পাল এবং সাধারণ সম্পাদক মো.বখতিয়ার
হোসেনের করা মামলায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি
ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান
তাবাসসুম ইসলাম ১০ দিনের মধ্যে শীর্ষ ওই ৬
কর্মকর্তাকে এই জবাব দিতে বলেছেন।
তবে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষের আবেদনে
ভিএসএসের ওই স্থিতাদেশে সোমবার উচ্চ
আদালত স্থিতাদেশ দিয়েছেন।