Site icon Trickbd.com

সত্যিই কি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের র‍্যাম বাড়ানো সম্ভব? উল্টাপাল্টা টিউন পড়ে র‍্যাম বাড়ানোর চক্করে আপনার ফোনটি বেকার করার আগে এই টিউনটি অবশ্যই পড়ুন।

Unnamed

অনেকের মনে একটি কমন প্রশ্ন থাকে যে, আমাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের র‍্যাম বাড়ানো কীভাবে সম্ভব? অনেকে বলে ভাই জাস্ট বুদ্ধিটা বলে দিন, আমি ফোন রুট করে নিয়েছি, রুট করবো, ফোনের সাথে যা ইচ্ছা করে ফেলবো জাস্ট ফোনের র‍্যাম কীভাবে বাড়াবো শিখিয়ে দেন। তো চিন্তার কোন কারন নেই, আমি এই বিষয় নিয়েই আজ আলোচনা করতে চলেছি। বন্ধুরা ফোনের র‍্যাম বাড়ানোর চক্করে মাথা ফাটিয়ে ফেলার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নিন। আর সেটা হলো তাত্ত্বিক ভাবে দেখতে গেলে হয়তো আপনি আপনার ফোনের র‍্যাম বাড়াতে পারবেন কিন্তু লজিক্যালি বা বাস্তবিক ভাবে আপনি আপনার ফোনের র‍্যাম কখনোই বাড়াতে পারবেন না। কিছু বুঝলেন? না বুঝলে পড়তে থাকুন। এখন আমি এর কারন সমূহ বলবো এবং স্টোরেজ সম্পর্কে এখন একটু জ্ঞান নিয়ে নিন।

স্টোরেজ সম্পর্কেঃ

আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে বা যেকোনো ডিভাইজ যেখানে র‍্যাম এর বিষয়টি থাকে সেখানে র‍্যাম একটি অত্যন্ত দ্রুততর গতি সম্পূর্ণ মেমোরি হিসেবে কাজ করে থাকে।
দ্রুততর গতি সম্পূর্ণ মানে র‍্যামের রীড এবং রাইট স্পীড অনেক বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটি র‍্যামে যতো দ্রুত ডাটা পাঠানো যায় এবং র‍্যাম থেকে বেড় করা যায় তা একটি সাধারন হার্ডড্রাইভ বা আপনার মেমোরি কার্ড বা ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ থেকে কখনো করা সম্ভব নয়।
র‍্যামকে অনেক দ্রুততর গতি সম্পূর্ণ বানানোর কারন হলো যাতে এটি সেকেন্ডে অগুনতি নির্দেশ প্রসেসরের কাছে পাঠাতে পারে।প্রসেসর প্রথমে কোন টাস্ক সম্পূর্ণ করার জন্য ক্যাশ মেমোরির কাছে নির্দেশ খোঁজে।
ক্যাশ মেমোরি র‍্যাম থেকেও আরো দ্রুততম গতির হয়ে থাকে। যাই হোক, যদি প্রসেসর তার কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ফাইলটি ক্যাশ মেমোরির কাছে খুঁজে না পায় তখন দ্বিতীয়ত সে র‍্যামের কাছে আসে। আপনি যতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন বা আপনার ফোনে যতো টেম্পোরারি ফাইলস থাকে তা সকল কিন্তু র‍্যামে সংরক্ষিত থাকে। এবং র‍্যাম সে ডাটা গুলো লাগাতার প্রসেসরের কাছে সরবরাহ করতে থাকে অনেক দ্রুততর গতিতে। তো এই অবস্থায় বুঝতেই পারছেন যে র‍্যাম ফাস্ট হওয়াটা কতটা জরুরী। কারন র‍্যাম যদি ফাস্ট না হয় তবে আপনার সিস্টেমে যতো পাওয়ারফুল প্রসেসরই লাগানো থাক না কেন তা কোন কাজের হবে না। র‍্যাম যদি দ্রুত ডাটা আদান প্রদান করতে নাই পারে তো প্রসেসর কীভাবে তার সব শক্তি লাগিয়ে কাজ করবে?
তো এই ভাবেই দেখবেন যে আপনার কম্পিউটারে যে র‍্যাম লাগানো থাকে তার দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় একটি ৪ জিবি বা ৮ জিবি র‍্যামের মূল্য ১ টিবি বা ২ টিবি হার্ডড্রাইভের সমতুল্য হয়ে থাকে। একই ভাবে আপনার ফোনে যে র‍্যাম লাগানো থাকে ডিডিআর৩ বা ডিডিআর৪ সেটির মূল্য কখনো কখনো একটি সাধারন ৩২ জিবি বা ৬৪ জিবি মেমোরির মতো হয়ে থাকে আবার বেশিও হতে পারে।

ফোনের র‍্যাম বাড়ানো কখনোই সম্ভব নয়ঃ



এখন এমন কিছু লোক যারা সব সময় বলতে থাকে, “আমি আমার ফোনের র‍্যাম বাড়াবো, আমার ফোনে ২ জিবি র‍্যাম ছিল তা বাড়িয়ে আমি ৪ জিবি করে নিয়েছি”। হাঁ হয়তো তারা করেও থাকে। আর এটা করা অনেক সহজও। এর জন্য সবচেয়ে প্রথমে আপনার ফোনটি রুট করতে হবে।রুট করার পরে এমন কিছু অ্যাপ আছে যেমন র‍্যাম এক্সপেন্ডার নামক একটি অ্যাপ আছে যা আপনার র‍্যাম বাড়িয়ে দেবে।দেখুন এই অ্যাপ গুলো কি করে, এরা আপনার ফোনের মেমোরি কার্ডের কিছু অংশকে র‍্যামের কাজে ব্যবহার করে। অথবা আপনার ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজের কিছু অংশকে র‍্যাম হিসেবে কাজে নিয়ে থাকে।

কিন্তু শুধু বলার কথা র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার হবে মেমোরি কার্ড ফলে র‍্যাম তো বেড়ে যাবে কিন্তু এই প্রসেসে আপনার সিস্টেম আরো বেশি ডাউনগ্রেড হয়ে যাবে। দেখুন আপনার ফোনে এই অবস্থায় কিছু র‍্যাম থাকবে যা অনেক হাই স্পীড এবং কিছু র‍্যাম যা আপনি মেমোরি কার্ড থেকে বানিয়েছেন তা একদম বেকার গতির হবে। আপনার ফোনে একই সময়ে দুই ধরনের র‍্যাম থাকায় ফোন কখনোই তার রীড এবং রাইট স্পীড সামঞ্জস্য করতে পারবে না।

র‍্যামে অনেক বেশি ডাটা রীড রাইট হতে থাকে। কিন্তু আপনার মেমোরি কার্ডে যখন সমান তালে ডাটা রীড রাইট হতে থাকবে তখন আপনার মেমোরি কার্ড ফেল হয়ে যাবে। কেনোনা মেমোরি কার্ডকে এতো বেশি রীড রাইট করার জন্য তৈরি করা হয়না যতটা করার জন্য র‍্যাম বানানো হয়ে থাকে। আপনি যদি ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করেন তবে সেটিও এক্সময় নষ্ট হয়ে যাবে ফলে আপনার ফোন একদম বেকার হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু আমার কথা লোকজন শুনবে কেন তারা র‍্যাম কীভাবে বাড়াবে সর্বদা তার চক্করে লেগে থাকে। কীভাবে ২ জিবি র‍্যাম ৪ জিবি করবো, কীভাবে ৪ জিবি র‍্যাম ৮ জিবি করবো, সবসময় একই চিন্তা। অনলাইন থেকে দুই চারটা আর্টিকেল পড়ে বা ইউটিউব থেকে উল্টা সিধা ভিডিও দেখে সবাই ফোনের পেছনে লেগে পড়ে ফোনের র‍্যাম বাড়ানো নিয়ে।

শেষ কথা

আপনাদের কাছে আমার এটাই অনুরোধ, প্লিজ এসব উল্টাপাল্টা কাজ করে ফোনের র‍্যাম বাড়ানো থেকে বিরত থাকুন। আপনার ফোনের র‍্যাম যদি অনেক কম হয়ে থাকে তবে সেটা বিক্রি করে নতুন একটি ফোন কিনে ফেলুন। অথবা ফোনে কম অ্যাপস ব্যবহার করুন। ফোনকে ক্লিন রাখার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার ফোন আপনাকে ভালো পারফর্মেন্স দেবে। আশা করছি আজকের টিউনটি অনেক উপকারে আসবে। আপনার বন্ধুও যদি ফোনের র‍্যাম বাড়ানো নিয়ে পড়ে থাকে তবে আমি বলবো তাকে প্লিজ এই টিউনটি শেয়ার করুন।সকলে ভালো থাকুন, ধন্যবাদ।