পরনে হাল ফ্যাশানের পোশাক,
হাতে স্মার্টফোন৷ কিন্তু
পোশাককেই যদি স্মার্ট বা
বুদ্ধিমান করে তোলা যায়,
তাহলে কেমন হয়৷ ভবিষ্যতে এমন
বুদ্ধিমান পোশাক আমাদের
জীবনযাত্রা আমূল বদলে দিতে
চলেছে৷
এই পোশাকের মধ্যেই কম্পিউটার
লুকিয়ে রয়েছে৷ সেটি বাইরের
এলইডি ডিসপ্লে নিয়ন্ত্রণ করে৷
পোশাকের মালিকের হৃদযন্ত্রের
ছন্দ অনুযায়ী রং বদলায়৷ সেন্সর
নাড়ির ফ্রিকুয়েন্সি রেকর্ড
করে৷ পোশাকে সেলাই করা
তার সেই তথ্য
মাইক্রোকনট্রোলারে পাঠিয়ে
দেয়৷ সেখান থেকে ডিসপ্লে-
তে সংকেত যায়৷
বার্লিনের লিসা ওয়াসং এই
পোশাক ডিজাইন করেছেন৷ বছর
দুয়েক ধরে তিনি ফ্যাশন ও
প্রযুক্তির ইন্টারফেস নিয়ে কাজ
করছেন৷ বিশেষ করে শরীর ও
পোশাকের কম্বিনেশন তাঁর
কাছে বিস্ময়কর৷ ফ্যাশন-টেক
ডিজাইনার লিনা ওয়াসং
বলেন, ‘‘এটা আমরা খালি
চোখে দেখতে পারি না৷
আমাদের পেশি সব সময়ে সক্রিয়
থাকে৷ কিন্তু আমরা বা অনেকেই
ভাবেন না, সেগুলি কীভাবে
কাজ করে৷ মানুষ কী করছে,
কীভাবে সব চলছে, বিশেষ
পোশাক পরে তা বাইরে
দেখানো যেতে পারে৷”
নেদারল্যান্ডসের বরে
আকার্সডাইক ইনটেলিজেন্ট বা
বুদ্ধিমান পোশাক নিয়ে কাজ
করছেন৷ তিনি এক হাইটেক-
ওভারঅল ডিজাইন করেছেন৷ সেই
পোশাক ওয়াইফাই হটস্পট হয়ে
উঠতে পারে৷ এটিও আগামী
প্রজন্মের ‘কেজো’ পোশাকের
একটি উদাহরণ৷ ডিজাইনার
পাউলিন ফন ডঙেন সোলার সেল
লাগানো পোশাক তৈরি
করেছেন৷ সেই পোশাকে
স্মার্টফোন চার্জ করা যায়৷ তাঁর
কালেকশনের নাম ‘ওয়্যারেবেল
সোলার’৷
নেদারল্যান্ডসের এই ডিজাইনার
বুদ্ধিমান পোশাক বড় আকারে
তৈরি করতে চান৷ পাউলিন ফন
ডঙেন বলেন, ‘‘অনেকের কাছে
এমন ফ্যাশন অনেক দূরের কোনো
স্বপ্ন৷ আমাদের দেখাতে হবে, এর
মধ্যে কত বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে
রয়েছে৷ যখন কম্পিউটার ও
মোবাইল ফোন বাজারে এলো,
তখন অনেকেই জানতেন না,
তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর
এর কী প্রভাব পড়বে৷ আর আজ
আমরা এ সব ছাড়া থাকতেই
পারি না৷ ওয়্যারেবেল প্রযুক্তির
ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমনই হবে৷”
৭৫ বছর আগে পোর্টেবল
কম্পিউটার অভাবনীয় ছিল৷ ১৯৪১
সালে কনরাড সুসে বিশ্বের প্রথম
কম্পিউটার তৈরি করেন, যার
নাম ছিল জেড-থ্রি৷ ওজন প্রায়
এক টন৷ বর্তমানে ল্যাপটপ,
স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ
মোবাইল ইন্টারনেট যুগের সূচনা
করছে৷ আগনিয়েশকা
ভালোরস্কা বলেন, ‘‘কেউ ভাবে
না, যে এটা একটা প্রযুক্তি৷ বা
আইফোন একটা প্রযুক্তি৷ দৈনন্দিন
জীবনে আমি এটা ব্যবহার করছি৷
এটা কোনো যন্ত্র নয়, বরং
দৈনন্দিন জীবনের এক চলমান,
সামাজিক সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷”
ডিজাইনও এই পরিবর্তনের
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রেখেছে৷ কয়েক দশক ধরে
কম্পিউটার শুধু আকারে ছোট হয়ে
উঠছে না, আরও রঙিন হয়ে উঠছে৷
অ্যামেরিকার ‘অ্যাপেল’
কোম্পানি গত শতকের নব্বইয়ের
দশকে রংচংয়ে ডিভাইস
বাজারে এনে নতুন মানদণ্ড সৃষ্টি
করেছিল৷ তারা কম্পিউটারকে
সুন্দর জীবনের প্রতীক ও স্ট্যাটাস
সিম্বল করে তুলেছিল৷ আইফোন ও
আইপ্যাড এনে অ্যাপেল মানুষ ও
যন্ত্রের মধ্যে যোগাযোগের
ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দেয়৷
আগনিয়েশকা ভালোরস্কা
বলেন, ‘‘আমার মতে, ডিজাইন আরও
অনেক দূর এগিয়ে যাবে৷ কারণ
চালানো শিখতে হয়৷ অথচ কিছু
টাইপ করা, ক্লিক করা বা ট্যাপ
করা কিন্তু মোটেই সহজ নয়৷ তার
চেয়ে স্বাভাবিক হলো হাত-পা
নেড়ে কিছু বোঝানো, কথা
বলা, কথা শোনা৷ আমার ধারণা,
এই দিশায় আরও অগ্রগতি ঘটবে৷”
শরীর ও প্রযুক্তির মধ্যে ব্যবধান
কমে চলেছে৷ ‘ওয়্যারেবেলস’-এর
বাজার ফুলে ফেঁপে উঠছে৷ যেমন
স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস-ট্র্যাকার
হৃৎস্পন্দন রেকর্ড করে পদক্ষেপ
মেপে অঙ্ক কষে ক্যালোরি
বার্নিং-এর হার বার করে৷
স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে
সেই তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়৷
এমনকি ঘুমের সময়েও নজরদারি
চালিয়ে যাওয়া সম্ভব৷
ডিজাইনার লিসা ওয়াসং-এর
কাছে, এটা সবে শুরু৷ ফ্যাশন-টেক
ডিজাইনার লিনা ওয়াসং
বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে ওয়্যারেবেলস
ও ফ্যাশন প্রযুক্তি যদি এমনভাবে
বদলায়, যে পোশাক আমাদের
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী
নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবে,
সেটা দারুণ ব্যাপার হবে৷
শীতকালে কাঁপতে হবে না,
কারণ পোশাক তাপমাত্রা বুঝে
নিয়ে হিটিং সিস্টেম চালু
করে দেবে৷”
কাজের জগত হোক, অথবা অবসর
সময় – অন্য কোনো যন্ত্র আমাদের
জীবনযাত্রা এতটা বদলে
দেয়নি, যেমনটা কম্পিউটার
করতে পেরেছে৷
ধন্যবাদ
তথ্য প্রযুক্তি সেবায়, আপনাদের পাশে।
…♦ ♦….(ফেসবুকে আমি)..♦…♦.