Site icon Trickbd.com

(ব্ল্যাক ম্যাজিক) কালো যাদুর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভূত হলো এমন এক জিনিস,যা মৃত ব্যক্তির আত্মা। আর তা জীবিত ব্যক্তির সামনে দৃশ্য আকার ধারণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম।
ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্প কম-বেশি সবারই জানা। এসব গল্পে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় আবার কখনো বা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। আর এসব ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী বা কোনো কাজ করার বিদ্যাকে নেক্রোম্যান্সি বা কালো জাদু বলে। ভূডূ হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা।

 

ভূডূবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। অন্যদিকে শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভূডূর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য_এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। বিদেশি সিনেমায় এমনকি ভারতীয় সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায়, একজন দুষ্ট ব্যক্তি একটি পুতুলের গায়ে সুঁচ ফুটিয়ে আরেক জায়গায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করছে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। বাংলায় একে ফুঁক দেওয়া, কবজ করা অথবা বাণ মারা বলে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ওঝা বলে। আর এ প্রক্রিয়াটিই বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত।

 

ব্ল্যাক ম্যাজিক এর উৎপত্তিঃ

খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনেরও আগের কথা। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রচলন ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। যা

AFRICAN BLACK MAGIC বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এ বিদ্যা দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে আসছে। এ বিদ্যায় পারদর্শীদের ডাকি বা ওঝা বলে আর আফ্রিকান ভাষায় এদের বলে কিনডকি ।

অদ্ভুদ ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা

মূলত প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতির সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূত বা আত্মাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সে যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। আর এসব আয়োজনের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল মৃত আত্মার সন্তুষ্টি আনয়ন। মূলত আত্মাসংক্রান্ত সেই ধ্যান-ধারণাথেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর বিবর্তন। আদিম সমাজে উইচ-ডক্টর বা রোজারা এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন। অতিন্দ্রীয় শক্তির বলে প্রেতাত্মাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আর প্রেতাত্মাদের দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারতেন খুব সহজেই। সে কারণে ওই সময় রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। বর্তমান কালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো। রোজারা তাদের ডাকিনীবিদ্যা খাটিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারত। চোর বা হত্যাকারী ধরা ও শাস্তি প্রদানে রোজাদের অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। এছাড়াও তারা জাদু বিদ্যার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিকার করতেন। তারা তাদের শিশুদের রোগা ক্রান্ত্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন।

 

কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিন বিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো । রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতা পাতা ব্যবহার এবং রোগের সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করত।

কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিতেন। তারা জাদুকরী গান,প্রার্থনা এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করত। এর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনকে প্রভাবিত করা। রোজারা সবসময় রঙিন পোশাক পরত,মুখোশ ধারণ এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করত। কেউ কেউ পশুর চামড়াও পরিধান করত। বস্তুত মানুষকে সম্মোহিত করত। আর লোকজন বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী।

ভূডূ (Voodoo) হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। শোনা যায়,ভূডূবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভূডূর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য হলো_এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। ভূডূ এক ধরনের অপবিদ্যা। যারা ভূডূবিদ্যা জানে,তারা নাকি ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি তার ক্ষতি করতে পারে। তাই এ বিদ্যায় পারদর্শীদের অনেকেই এড়িয়ে চলেন।

তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ কবিরাজ। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস
ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। অস্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা প্রথম শামানদের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করেন। জানা যায়,শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা।ইচ্ছা করলেই নাকি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বর্গবা নরকে স্বচ্ছন্দে প্রবেশ করতে পারে। শামানদের প্রধান বাসস্থান এক সময়
সাইবেরিয়া হলেও সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়।
তারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা জায়গায়।

শামান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরা ঞ্চলেও। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ারসিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের গাইড। আর জাতীয়তাবাদীরা শামানকে মনে করে প্রাচীন সাংস্কৃতিক জ্ঞানের বাহক। শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মাঝে আছে আত্মার অস্তিত্ব। ‘ভূডূ’ কথার অর্থও ‘আত্মা’. এই শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ের আত্মীয়। ভূডূ চর্চার উৎপত্তি হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা ব্যাপক। ব্রাজিল,জ্যামাইকাতেও কিন্তু কম ভূডূ চর্চা হয় না। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম। যেমন, হাইতিতে বলা হয় ভূডূ,ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকাতে ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম অফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভূডূতে সেখানকার কমপক্ষে পঁচিশ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভূডূ চিকিৎসকদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে। শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের বিশ্বাস গভীর। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশপরম্পরায় এ বিশ্বাস চলে আসছেতাদের মাঝে।